ছোটবেলায় বিয়ে দেখতাম এক রকম আর গত কয়েক বছরে মানুষের বিয়ে দেখে যা বুঝলাম, এখন আর আগের যুগের মতো নাই, কোটি কোটি টাকার ব্যাকাপ না থাকলে এখন আর বিয়ে করা যায়না।
এখনকার গায়ে হলুদ আগের মত বাড়ির ছাদে প্যান্ডেল টাঙ্গাইয়া করলে পোষায় না। এর জন্য পুংপাং চাইনিজ রেস্ট্রুরেন্ট অথবা বিশাল কনভেনশন হল বুক দেওন লাগে। সেই লেভেলের স্টেজ করন লাগে। সেই সেভেলের ডেকোরেশন করা লাগে। বর কনেরে আগে হলুদে বাসা থেকেই সাজায় দিতো, এখন হলুদেও পার্লারে যাওন লাগে। শুধু কনে গেলে হয় না, লগে পুরা এক ব্যাটেলিয়নেরো পালিশ করায়া আনন লাগে।
স্কুল ড্রেসের লাহান হলুদেও এখন আগত গেস্টদের সবাইকে একি কালারের শাড়ী পাঞ্জাবী দেওন লাগে। ডিজে আনন লাগে, নাচ গানের শিল্পীও ভাড়া করা লাগে।
ওপেন সিক্রেট খরচ আরেকটা হচ্ছে মিড নাইটে ফ্রেন্ড, কাজিন দের কে মদের বোতলের আবদার, না করা যাবে না। যেই মাইয়া বাপের জনমে কফিও খায় নাই হেও হেইদিন দুই এক প্যাগ মারে, বিদেশী সিগারেট টানে!! আর পোলাডির কথা নাহয় বাদই দিলাম।
হেরপর যেনতেন জায়গায় বিয়া করন যাইবোনা তাইলে নিজেদের গেস্টদের ফেসবুকে চেকিন দিতে ইজ্জতে বাধবে। সো লাখটাকা ভাড়ার কনভেসশন সেন্টার বুক দেও। যেই কনভেনশন সেন্টারের ভাড়া প্রায় লাখ দশেক টাকা তার খাওনের রেট নিশ্চই কাকেলা ডাব্বার মত না ১০০০ টাকার প্লেট ২০০০ নিবে।
এই ডাবল রেটকে এবার হাজার খানেক গেস্ট দিয়ে গুন করেন। সাথে আবার জনপ্রতি ইউনিক গর্জিয়াস কার্ডের খরচ দিয়াও গুন কইরেন। খরচের ডিজিট আটাইতে নরমাল ক্যাল্কুলেটারেও কস্ট হইয়া যাইবো।
এখনকার বিয়েতে সব কিছুর চেয়ে ইম্পর্টেন্ট পার্ট হচ্ছে ফটোগ্রাফি। নামি দামী ফটোগ্রাফার ডাইক্কা প্রি ওয়েডিং, ওয়েডিং, পোষ্ট ওয়েডিং ফটোগ্রাফি কইরা ঐখানেই প্রায় দুই চার লাখ টাকার ধাক্কা সামলাও।
এডিতো সাইডের ব্যাপার স্যাপার, আসল খরচের জায়গাই তো বাদ দিসি।
মিনিমাম ৫-১০ ভরি স্বর্ণ না হইলে মাইয়ারে সাজান যায় না, আর জয়াকে বিয়ে করতে হইলে ডায়মন্ড এর আংটি, হার, চুড়ি, ইয়ার রিং সেট দিতে হবে নাহলে তো বিয়েই হবেনা। শাড়ীর ও নাম্বার আছে, বিয়ার প্রথম শাড়ী, দ্বিতীয় শাড়ী তৃতীয় শাড়ী!! কোনোটার দাম ১-২ লাখের কম না। সাথে আবার বান্ধবীদের ফুল গ্যাং সহ পার্লার খরচ তো আছেই।
পোলাডিও কম যায় না। এখন পোলাগোরেও পার্লারে যাওন লাগে। ১৫-২০ দিন আগের থেকে ফেসিয়াল ফুসিয়াল স্পা মারন লাগে। যেই পোলা ইহো জনমে কোনদিন ২০০ টাকার উপ্রে ঘড়ি পিন্দে নাই তারে বিয়ার দিন রাডো/রোলেক্স পিন্দন লাগবো। এক্সপেন্সিভ শেরোয়ানী/ সুট কোট এইসব তো আছেই। আজীবন খুর দিয়া শেভ করা পোলার বিয়াতে ফিউশন রেজার লাগে 😑
‘গেট ধরা’ আগে ছিলো বিয়েতে মজার পার্ট এখন আতঙ্কের পার্ট। সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে শুরু এক লাখ দুই লাখ এখন কমন ব্যাপার গেটে!! কাবিনের সময় চলে আরেক কামড়াকামড়ি। কাবিনের টাকা দেওয়ার ক্ষমতা পোলার আসলেই আছে কি নাই তাঁর দিকে কারো খবর নাই, ৫০-৮০ লাখ প্লাস কাবিন না হইলে সমাজে ইজ্জত থাকে না!
এরপরও দেখবেন কাউরে খুশি করন যায় না। মাইনষে বিয়াতে আইবো, গলা সমান খাইবো এরপর টুথপিক দিয়া দাঁত খোঁচাইতে খোঁচাইতে মাংস সিদ্ধ হয় নাই/ পোলা মোডা/ মাইয়া কালা/ মেয়ের শাশুড়ির ননদের ভাসুরের তালতো ভাইয়ের খালতো বইনের চোখ ট্যারা, এইসব কইতে কইতে আপনার খাইয়া আপনারেই খোঁচায় যাইবো
এখনো কিচ্ছা শেষ হয় নাই। হানিমুন বাকি আছে। বাপের জনমে এসি ট্যাক্সিক্যাবে চড়ার এক্সপেরিয়ান্স না থাকলেও বিমানে কইরা কক্সবাজার যাইতে হবে এন্ড বিমানে উডার মূহুর্তে একটা আর নাইম্মা আরেকটা চেকিন দিতে হবে। আপনি যেই লেভেলেরই পাব্লিক হন না ক্যান হানিমুনে অবশ্যই ফাইভস্টার হোটেলে থাকতে হবে। বাত্তি নিভানির মোমেন্ট ছাড়া বাকি সব মোমেন্টের ছবি ফেসবুকে দিতে হবে।
আর ইনফিনিটি পুলে বউ জামাই গলা সমান পানিতে নাইম্মা একটা সেলফি ফেসবুকে না দিলে এ যুগে হানিমুন সম্পন্ন হয় না। এটা তো বললাম শুধুমাত্র মধ্যবিত্ত দের জন্য আর যদি পোলার টাকা থাকে তাইলে তো মালদ্বীপ, সুইজারল্যান্ড, প্যারিসে যাবে হানিমুন করতে। সেখানে গিয়েও প্রোফেসোনাল বিদেশী ফটোগ্রাফার দিয়ে শুট করাতে হবে তারপর সেই ছবি ফেসবুকে আপলোড করতে হবে
এতো কিছু করার পরে যদি সুখি হয় তাইলে তো আলহামদুলিল্লা, মাগর স্যাড নিউজ ইজ ‘ডিভোর্স’ ব্যাপারটা এখন ক্যান্সারের মতই এভেলেভেল হয়ে গেছে। আর সাংসারিক ঝগড়াঝাটি কইরা শুধু সামাজিক সম্মান রক্ষার্থে ফেইক হাসি দিয়া নিয়ম রক্ষার সংসার করে যাচ্ছে এমন কাপলের সংখ্যা কোন অংশে কম না।
হইবোও না বা ক্যান? এতোক্ষন যেই আয়োজনের কেচ্ছা কাহিনি বললাম এটা কিন্তু কোন কোটিপতির ঘরের বিয়ের হিসাব ছিলো না। মিডেল্কক্লাস ফ্যামেলির হিসাব দিলাম জাস্ট
একটা মিডেলক্লাস ফ্যামেলির ছেলে পড়াশুনা শেষে কয় টাকাই বা কামাইতে পারে বা ছেলে মেয়ের বাবা মার কয় টাকাই বা সেইভিংস থাকে যে একটা পোলামাইয়া বিয়া দিতে এমন হাতি ঘোড়ার আয়োজন করার ক্যাপাসিটি থাকবে?
‘লোকে কি বলবে’ বা মাইনষেরে একটু দেখানোর জন্য মধ্যবিত্ত দের বিবাহিত জীবনের শুরুটাই করা লাগে লোনের বোঝা নিয়ে। কেউ তা উত্রায় যাইতে পারে আর বেশিরভাগই টানাটানির মধ্যে পড়ে। আর এই টানা টানির মাঝে একজনে ধর্য্যহারা হইলেই সংসারে টানপড়োন শুরু হয়, ক্ষেত্রবিশেষে সংসারও শেষ হয়ে যায়।
শুধু “লোকে কি বলবে” ব্যাপারটাই শেষ হয় না। সংসারের আগে, সংসারের সময় বা সংসার ভাঙ্গার পরেও ‘লোকের বলা’ চলতেই থাকে।
ধন্যবাদ।
বিয়ে করা ফরজ