বদর যোদ্ধাদের মর্যাদা

8 22
Avatar for Jon12
Written by
4 years ago

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

আসসালামু আলাইকুম

আমি আশা করি মহান ও করুণাময় আল্লাহর রহমতে সকলেই সুস্থ ও ভালো আছেন। এই করোনা মহামারীর সময়, সবাই খুব অসহায় অবস্থায় রয়েছে। আজ আমি আপনাদের সাথে বদর যোদ্ধাদের মর্যাদা সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল লিখেছি । আমি আশা করি সবাই আমার আর্টিকেলটা পছন্দ করবেন ।

বিভিন্ন সহীহ রেওয়ায়াত থেকে জানা যায় যে, বদর যুদ্ধের পর মক্কা বিজয়ের কিছু আগে মক্কার সারা নাম্নী একজন গায়িকা মহিলা মদীনায় আগমন করে। রাসূল(সা) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি হিজরত করতে এসেছ? সে বললো, না। রাসূল(সা) বললেন, তাহলে কি করতে এসেছ? সে বললো, আপনারা মক্কার সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোক ছিলেন।

আপনাদের উপর নির্ভর করেই আমি জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন মক্কার বড় বড় সর্দাররা বদর যুদ্ধে নিহত হয়েছে। আর আপনারাও এখানে চলে এসেছেন। ফলে আমার জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমি অনন্যোপায় হয়ে আপনাদের সাহায্য চাইতে এসেছি। রাসূল(সা) বললেন, তুমি মক্কার পেশাদার গায়িকা। যে যুবকরা তোমার গানে মুগ্ধ হয়ে তোমাকে অনেক অর্থ দিত তারা কোথায়?

সে বললো, বদর যুদ্ধের পর তাদের গান বাজনার জৌলুস শেষ হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত তারা কেউ আমার খোঁজ নেয়নি। অতঃপর রাসূল(সা) কোরেশ বংশীয় মোহাজেরদেরকে তাকে সাহায্য করার জন্য উৎসাহ দিলেন। তাঁরা তাকে কিছু নগদ অর্থ ও কাপড় চোপড় দিয়ে বিদায় দিল।

এ সময় মক্কার কাফেররা হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তি ভঙ্গ করেছে। ফলে রাসূল(সা) কাফেরদের বিরুদ্ধে একটি চূড়ান্ত অভিযান পরিচালনার সংকল্প নিয়ে গোপনে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এই প্রস্তুতির কথা যেন কিছুতেই মক্কার লোকেরা আগে ভাগে জানতে না পারে, সেজন্য তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে গোপনীয়তা রক্ষা করতে যাচ্ছিলেন।

মদীনায় যারা প্রথম প্রথম হিজরত করেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন বিশিষ্ট সাহাবী হাতেম ইবনে আবি বালতা’য়া। ইয়েমেনী বংশোদ্ভূত এই সাহাবী ইসলাম গ্রহণের পর মক্কায়ই স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। মক্কায় তাঁর রক্ত সম্পর্কীয় বা ঘনিষ্ঠ কোন আত্মীয় স্বজন ছিল না। তিনি হিজরত করে মদীনায় চলে যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা মক্কায়ই ছিল।

রাসূল(সা) ও অন্যান্য সাহাবীদের হিজরতের পর মক্কায় অবস্থানরত মুসলমানদের উপর কাফেররা নানাভাবে জুলুম করতো। যে সব মোহাজিরের আত্মীয় স্বজন মক্কায় ছিল, তাদের সন্তান সন্তনিরা কোন রকমে নিরাপদ থাকতো। হাতেবের কোন আত্মীয় স্বজন না থাকায় তার পরিবার পরিজন মারাত্মক ঝুঁকি ও ‍ সম্মুখীন ছিল।

তাই তিনি ভাবলেন, তার পরিবারকে রক্ষা করার মত কেউ যখন নেই, তখন তিনি যদি মক্কাবাসীদের উপকার করে তাদের সহানুভূতি অর্জন করেন, তাহলে তারা হয়তো তার পরিবারের উপর জুলুম করবে না। তাই ঐ গায়িকা মহিলার মক্কা গমনকে তিনি একটি সুবর্ণ সুযোগ মনে করলেন।

হাতেবের নিশ্চিত বিশ্বাস ছিল যে, রাসূল(সা) কে আল্লাহ তায়ালা মক্কা অভিযানে বিজয় দান করবেন। তাই তিনি যদি আগেভাগে মক্কা অভিযানের বিষয়টি মক্কাবাসীর নিকট ফাঁস করে দেন, তাহলে তাঁর কিংবা ইসলামের কোন ক্ষতি হবে না।

তিনি ভাবলেন, একটি পত্র লিখে মক্কাবাসীকে জানিয়ে দিবেন যে, রাসূল(সা)মক্কা অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে তাঁর পরিবারের হেফাজতের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তাই তিনি একটি চিঠি লিখে গায়িকা সারার হাতে দিয়ে দিলেন, যাতে সে মক্কার বিশিষ্ট লোকদের নিকট তা পৌঁছিয়ে দেয়। গায়িকা চিঠিটি নিয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। (তাফসীরে কুরতুবী, মাযহারী)।

এদিকে রাসূল(সা) কে আল্লাহ ওহীর মাধ্যমে ব্যাপারটা জানিয়ে দিলেন এবং মহিলাটি কোন পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাও জানালেন।

বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, রাসূল(সা) হযরত আলী, আবু মুরসাদ ও যুবাইর ইবনুল আওয়ামকে আদেশ দিলেন ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে মহিলাকে ধরার জন্য। তার কাছে মক্কাবাসীর নামে হাতেব ইবনে বালতায়ার চিঠি আছে।

তাকে পাকড়াও করে চিঠিটি উদ্ধার করে নিয়ে এস। তারা দ্রুত ঘোড়া ছুটিয়ে গিয়ে পথিমধ্যেই তাকে ধরে ফেললেন। তারা মহিলাকে বললেন, তোমার কাছে একটা চিঠি আছে ওটা দিয়ে দাও।

সে বললো, আমার কাছে কোন চিঠি নেই। তারা প্রাথমিক তল্লাশীতে কোন চিঠি পেলেন না, কিন্তু তারা দমলেন না। কেননা রাসূল(সা) এর কথা মিথ্যা হতে পারে না। তাই তারা কঠোর ভাষায় বললেন, চিঠিটা বের করে দাও। নচেত আমরা তোমাকে নগ্ন করে তল্লাশী করবো।

সে নিরুপায় হয়ে চিঠিটা বের করে দিল। আমরা চিঠিটা নিয়ে রাসূল(সা) এর কাছে হাজির হলাম। হযরত ওমর(রা) ঘটনা শুনেই রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বললেনঃ হে রাসূল! এই ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও সমস্ত মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সে আমাদের গোপন তথ্য কাফেরদের কাছে লিখে পাঠিয়েছে। অতএব, অনুমতি দিন। আমি ওর গর্দান উড়িয়ে দিই।

রাসূল(সা) হাতেবকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার এই কাজের কারণ কি? হাতেব বললেন, হে রাসূল! আমার ঈমানে কোন ত্রুটি হয়নি। ব্যাপার এই যে, আমি ভাবলাম, আমি যদি মক্কাবাসীর একটু উপকার করি, তাহলে তারা আমার পরিবারের কোন ক্ষতি করবে না। ভেবে দেখুন, আমিই একমাত্র মোহাজের, যার কোন আপনজন মক্কায় নেই। অথচ আমার পরিবার মক্কায় রয়েছে। অন্য সবার স্বগোত্রীয়রা তাদের পরিবারের তদারকী করে। কিন্তু আমার তেমন কেউ নেই।

রাসূল(সা) হাতেবের বক্তব্য শুনে বললেন, সে সত্য বলেছে। অতএব, তোমরা তার সম্পর্কে ভাল ছাড়া মন্দ বলো না। হযরত ওমর(রা) তথাপি ঈমানের আবেগে অধীর হয়ে তার আগের কথাটি পুনরায় উচ্চারণ করলেন। তখন রাসূল(সা) বললেন, সে একজন বদর যোদ্ধা। আল্লাহ তায়ালা বদর যোদ্ধাদের সকল গোনাহ মাফ করেছেন এবং তাদের জন্য জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছেন।

কোন কোন রেওয়ায়াতে আছে, রাসূল(সা)বলেন-“আল্লাহ হয়তো বদর যোদ্ধাদের বলে দিয়েছেন, তোমরা যা খুশী তাই কর”। এই কথা শুনে হযরত ওমর(রা) চোখের পানি ফেলে দিয়ে বললেন, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলই(সা) ভাল জানেন। (ইবনে কাছির)।

কোন কোন রেওয়ায়াতে হাতেবের এ উক্তিও বর্ণিত হয়েছে-আমি এই কাজ ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতি করার জন্য করিনি। কেননা আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, রাসূল(সা) বিজয়ী হবেনই। মক্কাবাসী জেনে গেলেও ক্ষতি হবে না।

শিক্ষাঃ

(১) এই ঘটনা হতে প্রমাণিত হয় যে, বদর যুদ্ধের ন্যায় ঈমানের অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সাহাবায়ে কিরামের ভুলত্রুটি আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। আর এ ধরনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মুমিনদেরকে তাদের ভুল ত্রুটির জন্য সন্দেহের চোখে দেখা উচিত নয় এবং বিনা তদন্তে ত্বড়িত সিদ্ধান্ত নেয়াও উচিত নয়।

(২) ক্ষমার ঘোষণা সত্ত্বেও এটা মানতে হবে যে, এ ধরনের কাজ ভুল। মুসলমানদের স্বার্থের ক্ষতিকর কোন কাজ কোন অবস্থায়ই করা চাই না।

হয়ত হাতেবের এই ঘটনাকে উপলক্ষ্য করে সূরা মুমতাহিনা নাযিল হয় এবং তাতে এ কাজের কঠোর সমালোচনা করে মুসলমানদেরকে কাফেরদের সাহায্য ও সহানুভূতি গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়।

কাজটি যদি ভুল ও অন্যায় না হতো তাহলে রাসূল(সা) চিঠিটা আটকাতেন না এবং সূরা মুমতাহিনায় এর সমালোচনা হতো না।

---###---

আমার আর্টিকেলট যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে দয়া করে

লাইক,কমেন্ট,এবং সাবস্ক্রাইব করবেন।

সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ ।

5
$ 0.00
Avatar for Jon12
Written by
4 years ago

Comments

অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই এই রকম একটি হাদিস সম্পর্কে লেখা লেখার জন্য। আপনার লেখাটি পড়ে আমার অনেক ভালো লাগলো‌‌। এরকম লেখা আপনি আর লিখবেন।

$ 0.00
4 years ago

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।ইনশাআল্লাহ এই রকম লেখা আরও লিখব।

$ 0.00
4 years ago

ধন্যবাদ ভাই আপনাকে মুসলমানদের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল এই বদরের প্রান্তরের যুদ্ধ। আপনি এই যোদ্ধাদের মর্যাদা সম্পর্কে অনেক ভালো লিখেছেন।আসলে আমাদের এই সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী আর সেই জানাটা আপনার জন্য সম্ভব হয়েছে।

$ 0.00
4 years ago

ধন্যবাদ ভাই এটা আমার কর্তব্য ছিল।

$ 0.00
4 years ago

nice

$ 0.00
4 years ago

ধন্যবাদ আপনাকে।

$ 0.00
4 years ago