হাবিব ওয়াহিদ

0 14
Avatar for John_Cena
4 years ago

২০০৪-২০০৫ সালের সময়কার কথা। পাড়ার মোড়ের সিডির দোকান, কিংবা পাশ দিয়ে সাঁই করে ছুটে চলে যাওয়া গাড়ি থেকে হঠাৎ শোনা যেতে লাগলো নতুন কিছু কণ্ঠ। কণ্ঠগুলো নতুন, কিন্তু গানগুলো সবার চেনা। এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই ফোক গান, কিছু গান পুরোনো দিনের যেগুলো লতা মঙ্গেশকর আর আশা ভোঁসলের কণ্ঠে খুব জনপ্রিয়। কিন্তু, হঠাৎ করে সেসব পুরোনো গানই নতুন করে শোনা যাওয়ার কারণ কি? একটাই কারণ- সঙ্গীতায়োজনে নতুনত্ব, পরিচিত শব্দে বললে 'ফিউশন'। আর, এসবের পেছনে যিনি কান্ডারী, তাঁর নাম 'হাবিব ওয়াহিদ'।

জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। পরবর্তীতে মিউজিক নিয়ে পড়াশুনা করতে পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। সেখানে বিখ্যাত সব মিউজিক প্রডিউসারদের সাথে কাজ করতেন। একসময় সেখানে পরিচয় হয় সিলেটি রেস্টুরেন্ট মালিক কায়া এর সাথে। তাঁকে ভোকালিস্ট করে ২০০৩ সালে বের করেন প্রথম এ্যালবাম 'কৃৃষ্ণ'। এ্যালবামের প্রতিটা ফোক গানের মিউজিক তিনিই প্রযোজনা করেন। টাইটেল ট্র্যাক সমেত এ্যালবামটি নিদারুণ সাফল্য পায়। তবে, পর্দার পেছনে কাজ করায় 'হাবিব ওয়াহিদ' নামটা তখন যেন অপরিচিতই থেকে যায়।

পরবর্তীতে ২০০৪ সালে নিজের সঙ্গীতায়োজনে আরেকটি ফোক এ্যালবাম বের করেন। নাম 'মায়া'। ভোকালে সেই কায়া, সাথে নতুন কণ্ঠ হেলাল। এই এ্যালবামও দারুণ হিট। এবারও রয়ে গেলেন আড়ালে।

২০০৫ সালে বের করেন তৃতীয় এ্যালবাম 'ময়না গো'। এ্যালবামে এবার নতুন দুটি নারীকণ্ঠ। জুলির কণ্ঠে এ্যালবামের টাইটেল ট্র্যাক 'ময়না গো' আর নিঝুমের কণ্ঠে 'দেশলাই' দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। আর এই এ্যালবামের মাধ্যমে সঙ্গীত পরিচালক থেকে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। তাঁর আবেগী কণ্ঠের 'দিন গেলো তোমারও পথ চাহিয়া' তরুণ হৃদয়ে যেন ঝড় তোলে। তুলবেই বা না কেন? গানটি যেন হাজারো তরুণ হৃদয়ের আকুতি! রাতারাতি, 'হাবিব' নামটি সবার মধ্যে পরিচিতি লাভ করে। এই এ্যালবামের আরেকটি গান 'এসো বৃষ্টি নামাই' গানেও তিনি কণ্ঠ দেন। মিউজিক ভিডিওসমেত সেটিও জনপ্রিয় হয়। এই এ্যালবামের 'পাহারাদার' গানে কণ্ঠ দেন তাঁর স্বনামধন্য পপগায়ক পিতা ফেরদৌস ওয়াহিদ। ২০০৬ সালে বের করেন প্রথম সলো এ্যালবাম 'শোনো'। এ্যালবামটির 'স্বপ্নের চেয়ে মধুর', 'মন মুনিয়া', 'জাদু', 'এলোমেলো মন, 'পরাণ পাখি', 'এখনই নামবে বৃষ্টি' সহ প্রতিটি গান জনপ্রিয় হয়। মজার বিষয় হচ্ছে, তরুণসমাজের প্রিয় শিল্পী হাবিব যে দেশের অন্যতম খ্যাতিমান পপসিঙ্গার ফেরদৌস ওয়াহিদ, সেটা তখনও অনেকেরই জানা ছিল না।

সাফল্যের ধারাবাহিকতায়, ২০০৭ সালে দর্শকের সাথে পরিচয় করান আরেক প্রবাসী শিল্পীকে আরেকটি নতুন এ্যালবামের মাধ্যমে। মিক্স ঘরানার 'পাঞ্জাবিওয়ালা' নামের ওই এ্যালবামের টাইটেল ট্র্যাকটি জনপ্রিয়তা পায়, পরিচিতি পান শিরিন জাওয়াদ, যার ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে তিনি ফুয়াদ আল মুক্তাদিরের সঙ্গীতে 'মাতওয়ালি' এ্যালবাম প্রকাশ করেন, আর সেই এ্যালবামের টাইটেল ট্র্যাক সহ 'নদী' গানটি শ্রোতানন্দিত হয়।

২০০৮ সালে বের করেন দুটি এ্যালবাম। 'বলছি তোমাকে' নামের প্রথম সলো এ্যালবামে পরিচিত করান নতুন মুখ ন্যান্সিকে। 'আকাঙ্ক্ষা', 'শুভ্রচাঁদ', ও ন্যান্সির সাথে ডুয়েট 'গোধূলি লগন' সহ এ্যালবামের ৯টি গানই দর্শকপ্রিয়তা পায়। একই সালে সালে প্রকাশ করেন 'অবশেষে' নামক পিতা ফেরদৌস ওয়াহিদের সাথে ডুয়েট এ্যালবাম। এ এ্যালবামের 'কেন এমন হয়', 'কাটে না মায়াবী রাত' শ্রোতাপ্রিয় হয়। ২০১১ সালে প্রকাশ করেন 'আহ্বান'। এতে ন্যান্সির সাথে ডুয়েট 'ঠিকানা' গানটি শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। এরই মধ্যে কণ্ঠ দিয়েছেন অর্থহীন ও ওয়ারফেজ ব্যান্ডের সাথে 'সমর্পণ' নামের মিক্সড ফোক এ্যালবামে। দরদী গলায় গেয়েছেন 'কেন পিরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি।"

এ্যালবামের পাশাপাশি তিনি বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল নির্মাণ করতে শুরু করেন। সঙ্গীত পরিচালনার পাশাপাশি সেগুলোতে কণ্ঠও দিতে থাকেন তিনি। বাংলালিংক, ল্যাব এইড, গ্রামীণফোন, ক্যাটস আই, একমি চা, হোটেল সি স্টার, মেরিল স্প্যাশ বিউটি সোপ, মুক্তা ড্রিংকিং ওয়াটার, গ্রামীণ ফোন, ওয়ারিদ টেলিকম, প্রাণ, তোশিবা টিভি, মেরিল লিপ জেল, সিটিসেল সহ অসংখ্য জিঙ্গেল তিনি নির্মাণ করেছেন। বাবা ফেরদৌস ওয়াহিদের সাথে মডেল হয়েছেন এবি ব্যাংকের বিজ্ঞাপনে। এনটিভির সুপরিচিত ধারাবাহিক নাটক 'রমিজের আয়না' এর টাইটেল ট্র্যাকে মিউজিকের পাশাপাশি কণ্ঠ দিয়েছেন।

সঙ্গীতের এত ক্ষেত্রে যাঁর বিচরণ, চলচ্চিত্রেী সঙ্গীতেই বা কেন বাদ যাবেন তিনি! শুরুটা ২০০৬ সালে 'হৃদয়ের কথা' এর সেই জনপ্রিয় গান 'ভালোবাসব বাসব রে বন্ধু' দিয়ে। এরপর কাজ করেছেন বহু ছবিতে। 'আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা', 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার', এই তো প্রেম, আয়নাবাজি, চন্দ্রগ্রহণ, প্রজাপতি, সুইটহার্ট, ছুঁয়ে দিলে মন সহ বিভিন্ন ঘরানার সিনেমায়। গান গেয়েছেন হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র 'আমার আছে জল' এ। কাজ করেছেন করেছেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের সাথেও।

বলতে গেলে, যেখানে হাত দিয়েছেন, সেখানেই সোনা ফলেছে। যেন এলেন, দেখলেন আর জয় করলেন। আর এসবের স্বীকৃতস্বরূপ জিতেছেন সম্মাননা। সেরা সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারই জিতেছেন ৫ বার। আর 'প্রজাপতি' সিনেমার জন্য সেরা সঙ্গীতপরিচালক হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

অনিয়মিতভাবে হলেও, এখনও কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক গানও উপহার দিয়েছেন ভক্তদের। সেগুলো পরিচিতও হয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগই, বিশেষ করে তাঁর গাওয়া গানগুলো কেন যেন সেই আগের মতন করে মনে জায়গা করে নিতে পারেনি। আশা করি, সামনে আরও সুন্দর সুন্দর কাজ উপহার দেবেন তিনি।

যাইহোক, একসময়ের তুমুল জনপ্রিয়, অনেকের কৈশোর রাঙ্গানো এ শিল্পী আজ পদার্পণ করলেন ৪১ তম বসন্তে। শুভ জন্মদিন হাবিব ওয়াহিদ ❤।

Sponsors of John_Cena
empty
empty
empty

2
$ 0.00
Sponsors of John_Cena
empty
empty
empty
Avatar for John_Cena
4 years ago

Comments