.
রিতিক। বলিউডের সবচেয়ে সুদর্শন সুপারস্টার। যাকে দেখলে খুব খুব আফসোস লাগে, ওর সাথে যারা এক্ট্রেস থাকে তাদের দেখে হিংসে লাগে...
হুম বাবা রাকেশ রোশানও বেশ হ্যান্ডসাম ছিলেন। তিনি অভিনেতা হিসেবে কতখানি ভালো ছিলেন জানা নেই, কিন্তু তিনি ডিরেক্টর হিসবে বেশ ভালো অবস্থানেই থেকেছেন। সেই সুবাদে রিতিকের বলিউডে পথচলাটা সহজ ছিলো।
কিন্তু বাবা রাকেশ রোশান ছেলেকে ইন্ড্রিডিউস করাতে যথেষ্ট সময় নিয়েছেন। তার কারণও ছিলো, রিতিক ছোটবেলা থেকে ভীষণ তোতলা ছিলো। এদিকে ছোটবেলা থেকেই ডান্সের প্রতি ভীষণ ঝোঁক ছিলো। কিন্তু একবার আহত হবার পর, ডক্টর তাকে বলেছিলো জীবনে আর কখনো ডান্স করতে পারবেনা।
কিন্তু এটা রিতিক, বাস্তব জীবনে যে সুপারহিরোর থেকে কোনো অংশে কম নয়। যে ছেলে নিজের বাপের প্রোডাকশনে টিবয় হিসেবে কাজ করার মানসিকতা নিয়ে বড় হয়েছে, সেই ছেলে এতো সহজে গিভ আপ করবে, তা কি হয়। এজন্যই রিতিককে আমার সুপারহিরো মনে হয়। সকল তোতলানো ভেঙে সে এখন যথেষ্ট স্পষ্ট করে কথা বলতে পারে। ডক্টরের সকল নিষেধাজ্ঞা ভেঙে রিতিক ইন্ডিয়ার বেস্ট ডান্সার। বডি ফিটনেসেও তার নিষেধাজ্ঞা ছিলো, সেখানেও সে জয়ী। তার প্রথম মুভির আগে সালমান খানের কাছে ট্রেইনিং করেছিলো।
এমন একটি মানুষ মুভিজগতে এসে যে আলোড়ন তৈরি করবে, তা অনুমিতই ছিলো। তাইতো সে প্রথম মুভি দিয়েই তৈরি করলো ইতিহাস। সে বছর ডেবিউ ফ্লিমফেয়ার, লিড এক্টরের ফ্লিমফেয়ার জিতে নিলো। ব্যাপারটা এমন হলো,
এলেন
দেখালেন
জয় করলেন কোটি মানুষের হ্নদয়....
কিন্তু দ্বিতীয় মুভি মুখ থুবড়ে পড়লো। কোয়ি মিল গেয়া রিলিজের আগ পর্যন্ত রিতিকের ক্যারিয়ারে বেশ ভরাডুবি ছিলো। তার কারণ তার স্ক্রিপ্ট চয়েজ। আমার চোখে রিতিক রোমান্টিক ক্যারেক্টারে পার্ফেক্ট না। তাইতো কোয়ি মিল গেয়ার আগে তার প্রায় সব রোমান্টিক মুভিগুলোই ফ্লপ ছিলো। টানা ৭টি মুভি ডাহা ফ্লপ মেরে ওর ক্যারিয়ারের ২৪টা বেজে যায়। ও ধরেই নিয়েছিলো আর ফিরতে পারবেনা।
কিন্তু ছেলের ক্যারিয়ারের এমন অবস্থা দেখে তার বাবাই সারথি হয়ে আবির্ভূত হলেন।
তৈরি করলেন ইন্ডিয়ার প্রথম সাই-ফাই জনরার ইতিহাস সৃষ্টি কারী মুভি Koi... Mil Gaya(2003)
এই মুভির ক্যারেক্টারের জন্য রিতিক হুইলচেয়ারে লাইফ লিড করতো। রোহিত ক্যারেক্টারটার মত লাইফ লিড করতো। তাইতো ফিরে পেলো কাংখিত সাফল্য। এই মুভিই বদলে দিলো রিতিককে। এই মুভির পর থেকে স্ক্রিপ্ট চয়েজ ও আমির খানের মত প্রতিটা ক্যারেক্টারের জন্য আলাদা প্রিপারেশান নিয়ে হাজির হতে শিখে......
রিতিক এই পর্যন্ত যতগুলো মুভি করেছে, তার মধ্য থেকে তিনটি মুভি তুলে ধরছিঃ
স্পয়লারবিহীন
.
🟣05. Dhoom 2(2006)
ধুম-১ একের বিশাল সাকসেসের পর পরিচালক Sanjay Gadhvi নিয়ে আসেন৷ হাজির করেন এক ভিন্ন রিতিককে। এতো স্টাইলিশ, এতো স্মার্ট, এতো ভিন্ন ভিন্ন লুকস পুরো অডিয়েন্সকে চমকে দেয় রিতিক।
তখনকার সময়ে রিতিকের সাথে ঐশ্বরিয়া এই জুটিটি তাক লাগিয়ে দেয়। কী সং, কী ডান্স, কী বুদ্ধিমত্তা, কী একশন সব দিক থেকেই মুভিটি বাজিমাৎ করে।
মুভিটির জন্য সেবছর ফ্লিমফেয়ার জিতে নেয় রিতিক।
.
🔵04. Super 30 (2019)
আনন্দ কুমারের উপর নির্মিত এই বায়োগ্রাফিক্যাল মুভিটি গত বছরের সেরা কাজগুলোর একটা ছিলো।
পুরো চরিত্রের জন্য একেবারে মিশে গিয়েছিলো রিতিক। একেবারে গোবেচারা টাইপ গেট আপ নিয়ে হাজির হয়, রিতিক।
বক্স অফিসেও বেশ বাজিমাৎ করে।
Vikas Bahl এর পরিচালনা চমৎকার ছিলো।
তাইতো মুভিটি ক্রিটিকস থেকে শুরু করে অডিয়েন্স পর্যন্ত সবাইকে খুশি করে।
.
🟢03. Koi... Mil Gaya(2003)
ইন্ডিয়ার প্রথম সাই-ফাই মুভি কিনা জানিনা, তবে সাই-ফাই মুভি হিসেবে ইন্ডিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় মুভির মধ্যে একটা।
মুভিটি পরিচালনা করেছেন রিতিকের আব্বা রাকেশ রোশান। মুভিটি এমন একটা সময়ে রিলিজ পেয়েছিলো যখন একের একের ফ্লপ মুভি দিয়ে রিতিকের ক্যারিয়ারে ভরাডুবি চলছিলো। এই মুভিটি যদি বক্সঅফিসে সফল না হতো, তাহলে সম্ভবত রিতিককে আর এক্টর হিসেবে দেখা যেত না।
মুভিটিতে রিতিকের ক্যারিয়ারের বেস্ট পারফর্মেন্স বলা যায়। প্রতিবন্ধী চরিত্রে একেবারে হা করে দেয়া মুভি দিয়েছে। এই মুভির জন্য ওয়েট লস থেকে শুরু করে, দিনের পর দিন বাসায় প্রতিবন্ধীর মত আচরণ করে রপ্ত করেছিলো রোহিত ক্যারেক্টারটিকে।
তাইতো এতো এতো ডেডিকেশান অসফল হয়নি। বরং প্রতিবন্ধী ক্যারেক্টারটিকে ট্রেন্ডসেটিং করে ছাড়ে।
.
🟡02. Jodhaa Akbar(2008)
রিতিক-ঐশ্বরিয়ার দ্বিতীয় জুটির এই মুভিটি ইতিহাসের বাস্তব চরিত্র যোধা ও আকবরকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে। এখন যে ইতিহাসের নামে যাচ্ছেতাই বানায়, তখন কিন্তু এমন ছিলোনা। আবার ইতিহাসের মুভিগুলোও তেমন সাড়া ফেলতে পারতো না।
তাই সবাই যখন ধরে নিয়েছিলো মুভিটি ফ্লপ খাবে, সেখানে লগান খ্যাত পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকর আবার নিজের ক্লাস দেখান।
পুরো মুভিতে রিতিক-ঐশ্বরিয়ার চমৎকার রসায়ন ফুটে উঠে। রিতিক ধুম-২ এর পর আরও একটি ক্যারিয়ার বেস্ট পারফর্মেন্স দেয়।
.
🔴01. Guzaarish (2010)
এই মুভিটা আমার চোখে রিতিকের এখন পর্যন্ত বেস্ট পারফর্মেন্স। অসাধারণ ক্লাসিকাল এই মুভিটি লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন সঞ্জয় লীলা বানশালী। মুভিটি তারও পরিচালনার সেরা একটি মুভিতে।
মুভিটিতে বাড়তি কিছু নেই। একেবারে খাপের খাপ একটি ক্লাসিকাল একটি মুভি যা দেখলে শুধু চোখের নয় মনেরও শান্তির ফোয়ারা ফুটে চলে।
মুভিতে রিতিক যা অভিনয় দিয়েছে, আহা চোখে লেগে থাকার মত একটি অবিস্মরণীয় পারফর্মেন্স ছিলো। আর মজার একটি ব্যাপার হচ্ছে এই মুভিটিও ঐশ্বরিয়ার সাথে।
রিতিক-ঐশ্বরিয়ার জুটি এট ছিলো তৃতীয় মুভি। আসলে ওরা যে তিনটি মুভি করেছে, তিনটিই তিন দিকে থেকে সেরা।