সকালের তাজা পত্রিকার পাতাটা ভিজে যাচ্ছে।
এটা মুহিনের চোখের পানি। অনার্স পড়ুয়া তরুণ
ছেলেটা কাঁদছে। বড্ড বেমানান দৃশ্য। তবে কারণটা বেশ যথার্থ!
গল্পটা এখান থেকেই শুরু করা যায়।
মুহিন আর রিফাত খুব ভালো বন্ধু। কলেজ শেষ
করে এখন ভার্সিটিতে। একই মেসে থাকে। দুজনেই
যথেষ্ট স্মার্ট। তবে মুহিন অপেক্ষাকৃত কম চালাক!
রিফাতকে প্লেবয় বললে ভুল হবেনা।
মেয়ে পটানোতে জুড়ি নেই তার। ইন্টারেই
মাস্তি হয়েছে তিনজনের সাথে!
ওর সৎ সঙ্গ পেয়ে সহজ সরল মুহিনের মধ্যে বেশ পরিবর্তন!
একঘেয়ে কিছুদিন কাটানোর পর রিফাত চার নম্বর
মাস্তির জন্য অনিমাকে সিলেক্ট করলো ! আর
মুহিনের জন্য খুঁজে দিলো রাহিকে।আর এই
খোঁজাখুঁজি সম্পন্ন হলো অবশ্যই জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে! সপ্তাহ খানেকের মধ্যে রিফাত নাম্বারের ব্যবস্থা করে ফেললেও মুহিনের অবস্থা কেরোসিন! নাম্বারতো দূরে থাক চ্যাটেই সুবিধা করতে পারছেনা।
মেয়ে আসে তো আসেনা। রিপ্লাই দেয় না।
মোটকথা পাত্তাই দেয়না! মুহিন এইটারে বাদ
দিতে চায়। কিন্তু রাহির প্রোফাইল পিকচারের
দিকে তাকিয়ে বাদ দেয়ার চিন্তা বাদ করে দেয় ছেলেটা।এই চোখের মায়া এড়াতে হলে রাহিকে খুব
করে ছুঁয়ে দেখতে হবে।
আজ কেন যেন রিফাতের মন মেজাজ চরম খারাপ। মাস চারেক হতে চললো।এতো বার ডেটিং হলো অথচ আস কাজটাই হচ্ছেনা। আজ একবার ট্রাই
করা দেখা যেতে পারে।অনিমার ক্লাস বোধহয় শেষ। রিফাত কল
দিলো তাকে।
জান! কই তুমি?
কলেজ থেকে মাত্র বের হইছি।
একটু আসতে পারবে?
কোথায়?
আমার মেসে
কেন? মেসে কি জন্য?
আমি খুব অসুস্থ অনু..জ্বর...বিছানা থেকে উঠতেই পারছি না। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
আমার তো বাসায় যেতে হবে। তুমি তো জানোই।
দেরি হলে মা বকবে।আর আমিতো তোমার মেস চিনিই না।
-পাঁচ মিনিটের জন্য আসো জান।
তুমি রিকশা নিয়ে _ এখানে নামো।
মুহিনকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
একটু ভেবেই অনিমা রাজি হয়ে যায়।
-আচ্ছা। আসছি ..কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না।
মুহুর্তেই রিফাতের মেজাজ ফুরফুরে হয়ে গেলো!
-দোস্ত, অনিমারে একটু নিয়া আয় তো।
-কইত্থেকে নিয়া আসবো?
-গলির মাথায় রিকশা নিয়া নামবো। তুই
খালি রুমে দিয়া যাবি। আমি কল দিলে আবার আসবি।
অনিমা নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করে।
রিফাতকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে।
এতো ভালোবাসা পেলে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করাটা তো কিছু না।
রিকশা থামতেই স্বপ্নবিলাসী অনিমা বাস্তবে ফিরে আসে।
মুহিন আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিলো। কুশল বিনিময়
হতে হতেই বাসায় পৌঁছে যায় ওরা।
-তুমি ভিতরে যাও। রিফাত আছে। আমি একটু দোকান থেকে আসছি।
-ওকে ভাইয়া।
রিফাতের রুমে...
-কি হইছে তোমার?
-খুব জ্বর!
-কই জ্বর? স্বাভাবিকই তো লাগছে!
-বুকের ভিতরে জ্বর অনু...
অনিমার হাত দুটো বুকে টেনে নেয় রিফাত।
-তুমি আমার সাথে ফাজলামো করলা কেন?
-এমনিই। দেখতে ইচ্ছে করছিলো খুব!
-দেখা হয়েছে ...এখন ছাড়ো....বাসায় যে..
-অনিমা আই লাভ ইউ ...
রিফাত অনিমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে।
-কি শুরু করলা এইসব? ছাড়ো....
প্রেমিক প্রেমিকার জন্য এটা হয়তোবা আবেগঘন
মুহুর্ত!কিন্তু ওদের বুকে আবেগ নেই। অনিমার বুকে ভয় আর রিফাতের বুকে পশুত্ব!
-রিফাত প্লিজ ...ছাড়ো... এমন কোরোনা প্লিজ
-চুপ থাকো অনু...আমাকে ভালোবাসো না? -
-বাসি রিফাত ...
-তাহলে একদম চুপ...মনে করো তুমি ভালোবেসে কিছু একটা গিফট করছো।
নির্মম বাস্তবতার শিকার অনিমা। খুব
দামী জিনিস গিফট করতে হচ্ছে! ভালোবাসার
মানুষটি ঝাপসা হয়ে আসছে।মেয়েটা বোধহয়
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
মুহিন রিফাতের কল পেয়েই মেসে চলে আসলো...
-দোস্ত খাইলাম রে! আহ...
-বাসায় দিয়া আইছোস?
-হ রে রিক্সায় উঠায়া দিছি ..
-ঝামেলা টামেলা হইবো নাকি?
-কিসের ঝামেলা?
-বাসায় যদি বইলা দেয়!
-ধ্যাত পাগল হইছোস? কিচ্ছু হইবো না
-কাজটা কি ভালো হইলো?
-চুপ থাক..তুইও তো ভালো কাজ করবি...
কি খবর তোর টার?
-আমারে দিয়া হইবো না রে...প্রথমটাতেই ফেল মারুম ..
-হইবো হইবো লাইগা থাক..না পারলে আমি তো আছিই..
রিফাত খুব বদলে গেছে। অনিমার অন্তত তাই
মনে হচ্ছে। এড়িয়ে চলার জন্য যা করা দরকার সবই
করছে রিফাত। স্বপ্নবিলাসী মেয়েটা বুঝতে পারছে,
ভাঙন ধরেছে স্বপ্নে....এবার শুধু বিলীন হওয়ার
অপেক্ষা।
ওদিকে রিফাতের কথামতো মুহিন লেগে থাকে।
লেগে থাকার ফলাফল ভালো হয়। আনাড়ি মুহিনের
সরলতা ভালো লাগে রাহির। কথা বিনিময় হয়।
সময়ের চাকায় করে মুহিন -রাহির সম্পর্কটাও
এগিয়ে যায় অনেকটা পথ।
মুহিন এবার রিফাতের দেখানো পথে হাঁটতে চায়।
বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় পাত্তা না দেয়া সেই মেয়েটির
ভালোবাসা।
সম্প্রতি ইন্টারমিডিয়েট শেষ করা তরুনীটার
মনে কোন আনন্দ কিংবা উচ্ছ্বলতা নেই। অথচ তার
বান্ধবীরা কি মজাটাই না করছে! অনিমা সিদ্ধান্ত
নেয় রিফাতের সাথে রিলেশনের
ব্যাপারে ফাইনালি কথা বলবে।
-হ্যালো। কে বলছেন?
-রিফাত। আমি....
-আমি কে?
-আমি অনিমা
-ওহ,তুমি! ফোন দিয়েছো কেন?
-একটু দেখা করতে পারবা?
-কিসের দেখা? তোমার সাথে আমার রিলেশন তো আগেই
শেষ হয়ে গেছে।
-তাই!? ওকে ...এমনিই একবার দেখা করো প্লিজ।
এটাই লাস্ট।
-আচ্ছা। কোথায়?
-টিএসসিতে ...যেখানে প্রথম দেখা হয়েছিল।
-ওকে ... রাখছি
ভেজা মোবাইলটা ওভাবে রেখেই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলো অনিমা। আজ একটা নীল
শাড়ি পড়াই যায়। রিফাতের পছন্দ বলে নয়। অনিমার ধারণা কষ্টের রং নীল! সে তো কষ্ট পেতেই যাচ্ছে।আগ থেকেই জড়িয়ে নিলো রংটাকে!
২০ মিনিট দেরি হলো রিফাতের।
-কি বলবা বলো...আমার একটা জরুরী কাজ আছে।
-তুমি আমাকে বিয়ে করবানা? রিফাত!
-কি?? বিয়ে?? মাথা ঠিক আছে? পতিতাদের
বিয়ে করে কেও?
-ওহ! তাই নাকি? আমাকে ভালোবাসছিলা কেন?
-কই ভালোবাসছিলাম? আর
তুমি তো আগে ভালো ছিলা।
-আমি আগে ভালো ছিলাম? আর এখন খারাপ? তোমার খুশির জন্য আমার সব বিলিয়ে দেয়ায় খারাপ হয়ে গেলাম?
-হ্যাঁ! হ্যাঁ! হ্যাঁ! তুই একটা ফাউল মেয়ে! ইউজেস মাল!আমারে আর জ্বালাবি না। বেশি কষ্ট পাইলে বিষ খায়া মর।
খানিকটা দৌড়ে দৌড়ে একটা মেয়ে রিক্সায় চড়লো।চোখের পানি লুকানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা। উপস্থিত দর্শকেরা বিষয়টা ছ্যাঁকা বিষয়ক ঘটনা ভেবে খুব মজা পেলো অযথাই!
আর রিক্সার হুটের নিচে বসা মেয়েটির মাথায়
নিয়ে যাচ্ছে পতিতা হওয়ার অপবাদ।
বেশ কিছুদিন পরে ...
আজ ইন্টার পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়েছে ।
রাহি গোল্ডেন পেয়েছে। এই উপলক্ষে দামী কিছু
একটা দেয়ার কথা ভাবছে মুহিন। দামী গিফটের
বিনিময়ে দামী গিফট পেতে খুব একটা বেগ
পোহাতে হবেনা বোধহয়!
এমনটা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়া মুহিন
সকালে উঠে পত্রিকা খুলেই স্তম্ভিত হয়ে পড়লো।
প্রতিটা পাতা জুড়েই সাফল্যের ছবি।
তবে দৃষ্টি আটকে গেলো এক কলামের ছোট্ট
শিরোনামের উপরে।অনিমার ছবি। শিরোনামে আত্মহত্যা। আর নিচে সফলতার গল্প। জিপিএ 5 পাওয়ার পরেও তরুনীর আত্মহত্যা! পুলিশের ধারণা কাংখিত সাফল্য
অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার আশংকায় তরুনী আগেই
আত্মহত্যা করেছে। পরিবারের ধারণা নেই কোন!
তবে পেছনের গল্পটা মুহিনের খুব জানা আছে।
একটা অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। কেউ ধরা পরবেনা এই মামলায়।
তবে মুহিন বিবেকের কাছে ধরা পরে গেছে।
রাহিকে প্রথম থেকে ভালোবাসতে হবে।
পত্রিকার ভেজা পাতাটা শুকিয়ে যাচ্ছে।
মুহিনের কানে প্রতিধ্বনি হচ্ছে বারবার ...
"ভাইয়া..ভাইয়া..রিফাত কল ধরছে না কেন?
ভাইয়া...ওর দিকে একটু খেয়াল রাখবেন..
ভাইয়া..ভাইয়া...ও এমন করছে কেন? ..ওকে একটু
বুঝান...."
অনিমার স্বপ্ন বিলীনের শেষ মুহূর্তে ওর
কাছে মুহিন গেলে দেখতে পেতো, নীল ওড়নায়
ঝুলে থাকা মেয়েটার চেহারায় কোন অপবাদ নেই।
নিষ্পাপ চেহারায় শুধু ছোপ ছোপ নীল কষ্ট জমাট
বেঁধেছে।
5
19
So sade story yr well writing