এই বাচ্চাটা এখন বড় হয়ে গেছে আর আমাদের সামনে আছে।
সাগর বলল…
তুই উনার ছোট মেয়ে আছে বলতে জানতিস।
হ্যাঁ বাবার কাছে ছোট বেলা থেকে এসব গল্প শুনতাম। কিন্তু ও এখানে কেন? ওর বাবার এত টাকা কিন্তু ও এরকম নর্মাল তার মধ্যে এখানে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। (ঐশী)
সাগর ঐশীকে পুরো ঘটনাটা বলল যেটা মেঘ ওকে বলেছে।
ও মাই গড!তোর কি মনে হয় লুৎফর রহমানের আ্যক্সিডেন্ট হয়েছিল নাকি…(ঐশী)
সেটাই তো খুঁজে বের করতে হবে।
তুই ওর জন্য এত কিছু কেন করছিস? শুধু মাত্র মনুষ্যত্ব এর খাতিরে নাকি!(ঐশী)
অনেক রাত হয়ে গেছে বাড়ি যা আর হ্যাঁ কাল সকালে আমি কেসের কাজে বাইরে যাচ্ছি ফিরবো আট দশ দিন পর।
সাগর উঠে চলে এলো।
সাগর মেঘের রুমের দরজায় নক করে বলল…
মেঘ।
হ্যাঁ বলুন স্যার।
ওয়ার্ডড্রবের নিচের দিকে ব্যাগ আছে আজ শপিং এ যা যা কেনা হয়েছে আর তাছাড়া তোমার প্রয়োজনীয় সব কিছু আজ রাতের মধ্যে প্যাক করবে কাল তুমি আমার সাথে যাবে।
__কোথায়?
__আমাকে কেসের কাজে দশদিনের জন্য রংপুরের বাহিরে যেতে হবে তুমি ও আমার সাথে যাবে। তোমাকে এখানে একা রেখে যাওয়া যাবে না।
কিন্তু আমি কি করবো গিয়ে... তোমার পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে তার উপর এখন তোমার দুলাভাই রংপুরে লোক পাঠিয়ে তোমাকে খুঁজছে তাই এখন এখানে না থাকাই ভালো।
__হুম তবুও...
__নো আর্গ্রিমেন্ট।আর হ্যাঁ দয়া করে বই প্যাক করবে না বই এর দরকার নেই। কাল সকালে দেখা হচ্ছে। গুড নাইট মেঘ।
সাগর বেড়িয়ে চলে গেল
অদ্ভুত লোক তো! নিজেই বলে যায় আমার কথাটা শোনার প্রয়োজনই মনে করে না....
বেলা দশটা সাগর গাড়িতে বসে আছে কিন্তু মেঘ এখনো আসেনি। সাগর বারবার ঘড়ি দেখছে। কোথায় কি করছে মেয়ে টা, আমার লেট হচ্ছে তো!
সাগর নিজের মনে বকবক করছে।মেঘ সামনে থেকে হেটে আসছে নীল শাড়ির সাথে ঠোঁট লাল লিপস্টিক চোখে কাজল। মাথার চুল ছেড়ে দেওয়া। সাগর ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে খেয়াল এ করেনি মেঘ কখন ওর সামনে চলে এসেছে।
মেঘ গাড়িতে উঠে বসল।
মেঘ সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে বলল…
সরি স্যার একটু লেট হয়ে গেল।
একটু না অনেকটাই।
সাগর গাড়ি স্টার্ট করলো। অনেকটা দূরেই যেতে হবে চার পাঁচ ঘণ্টার রাস্তা।
মেঘ চুপচাপ বসে আছে। সাগর ড্রাইভ করার মাঝে মেঘের দিকে তাকাচ্ছে।
মেঘ
হুম।
চুপচাপ বসে কেন! তুমি কি বোর ফিল করছো?
না! কিন্তু আপনি তো কথা কম বলেন তাই বাদ্ধো হয়ে আমিও চুপচাপ বসে আছি।
আমি কথা কম বলি এটা তোমাকে কে বলেছে?
মেঘ এক নিঃশ্বাসে বলল…
সবাই বলে আপনি গোমরা মুখো, রাগচটা অত্যাধিক গম্ভীর একটা মানুষ।
সাগর গাড়িতে ব্রেক মেরে মেঘের দিকে রাগী লুকে তাকালো। মেঘ বুঝলো ও একটু বেশি বলে ফেলেছে।
মেঘ ঢোক গিলে বলল…
না মানে ওই আরকি সবাই বলে...
তোমার ও কি তাই মনে হয়! আমি রাগচটা, গম্ভীর আর কি যেন বলছিলে ও হ্যাঁ গোমরা মুখো!
মেঘ মুখ ফসকে বলে ফেলল…
না... না তো আপনি তো স্বপ্নে দেখা রাজকুমারের মতো।
এই রে মেঘ... কি করছিস!কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ।
মেঘ নিজেই নিজেকে বলল।
কি বললে তুমি
না কিছুনা চলুন দেরি হচ্ছে।
সাগর আবার ড্রাইভিং এ মন দিল।
মেঘ বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়লো। মেঘের দিকে জানলাটা খোলা থাকায় মেঘের সামনের চুল গুলো মুখের উপর এসে পড়ছিল। সাগর মেঘের দিকের জানলাটা বন্ধ করে দিল। পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে ওরা পৌঁছে গেল। সাগর একটা কটেজ নিয়েছে সাধারণ লোকালয়ের থেকে একটু বেশি ভিতরে কটেজটা। সাগর মেঘকে ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে কটেজের ভেতরে গেল। মেঘ ঘুরে ঘুরে দেখল কটেজটা খুব সুন্দর তবে খুব একটা বড়ো না বাট তিনটে রুম ডাইনিং কিচেন সব মিলিয়ে সুন্দর। কটেজটা বড়ো খোলা মাঠের উপর। মাঠের শেষে যে একটা নদী আছে এটা মেঘ বুঝতে পারছে,মাঝে মাঝে নদীর জল বয়ে যাওয়ার আওয়াজ আসছে।
মেঘ যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।
সাগরের আওয়াজে মেঘের ধ্যান ভাঙ্গলো এতক্ষণ ও পরিবেশের মোহে মোহিত হয়ে ছিল। মেঘ রুমে ঢুকে দেখল রুমটা বেশ সুন্দর সাজানো গোছানো। রুমে একটা বুক সেলফ আছে যাতে বিভিন্ন রকমের বই সাজানো তাছাড়া একটা ব্যালকানিও আছে।মেঘ ফ্রেশ হয়ে বাইরে এলো। সাগর খাওয়ার টেবিলে বসে ওর জন্যই অপেক্ষা করছিল। দুজনে চুপচাপ খেয়ে যে যার রুমে চলে গেল। মেঘ রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। সাগর মেঘের রুমে বলতে এসেছিল যে ও এখন বেরোচ্ছে কিন্তু এসে দেখল মেঘ ঘুমিয়ে পড়েছে। মেঘের এক হাত বিছানার বাইরে ঝুলছে। সাগর ওর হাতটা ঠিক করে দিয়ে এসিটা অন করে দিল। মনের অজান্তেই মেঘের কপালে ঠোঁট ছোয়ালো। কিন্তু ধ্যান ভাঙ্গতেই ছিটকে সড়ে আসে।
এটা আমি কি করছি! না না এটা ঠিক নয়। ওর অসহায়তার সুযোগ নিচ্ছি আমি! নিজেকে সামলাতে হবে কন্ট্রোল করতে হবে নিজেকে। সাগর নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগল। সাগর বেড়িয়ে চলে গেল নিজের কাজে। সন্ধ্যা বেলা সাগর ফিরতেই মেঘ, সাগরকে কফি এনে দিল।
সাগর খুব রুডলী বলল…
তোমাকে কে বলেছে এসব করতে!
সামান্য কফি করেছি আমার এটুকু করতে কোনো অসুবিধা হয়নি।
আমার অসুবিধা আছে। তোমাকে আমার জন্য কিছু করতে হবে না তুমি নিজেকে নিয়ে থাকো। আর হ্যাঁ আমার সামনে থেকে যাও।
মেঘ মাথা নিচু করে চলে গেল।
সরি মায়াবতী আমি তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমার মনটা বেইমান,তিন বছর পর তোমাকে নিজের এত কাছে পেয়ে সে যে তোমার থেকে দূরে থাকতে পারবেনা। তাই বাদ্ধো হয়ে তোমার সাথে এরকম ব্যাবহার করলাম যাতে তুমি নিজেই আমার থেকে দূরে থাকো।
রাতে খেতে ডাকলেও মেঘ এলো না। তাই সাগর বাদ্ধ হয়ে নিজ ডাকতে যায়।
__কি ব্যাপার মেঘ তুমি খেতে যাওনি কেন? তোমাকে কি এবার ডাকতে আসতে হবে নাকি?
মেঘ মন দিয়ে একটা বই পড়ছিল। বইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকেই উত্তর দিল....
__কোনো দরকার নেই আমাকে ডাকতে আসার। এমনিতে আপনি আমাকে অনেক হেল্প করেছেন।আমাকে নিয়ে বেশি ভাবার দরকার নেই।
__তুমি কি বলতে চাইছো?
মেঘ বইটা বন্ধ করে সাগরের মুখের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিল।কিন্তু,এই হাসিটার কারন সাগর বুঝতে পারলো না।
আপনি তখন ঠিক বলেছেন স্যার, আমার আপনাকে নিয়ে ভাবার কোনো কারণ ছিল না।তেমনি আমাকে নিয়ে ভাবার আপনার কাছে কোনো কারন আছে কি…?
তুমি..
এই বইটা খুব ভালো। পড়ে দেখবেন।
সাগরের হাতে বইটা দিয়ে মেঘ বেরিয়ে গেল।
কি হল খেতে আসবেন নাকি আমি খেয়ে নেব?
মেঘ বাইরে থেকে চিৎকার করে বলল…
হোয়াট দ্যা..
সাগর অবাক হয়ে গেল।
সাগর ডাইনিং টেবিলে এসে দেখল মেঘ খেতে শুরু করে দিয়েছে। মেঘের মুখ দেখে মনে হচ্ছে কিছু হয়নি। সাগর খেতে খেতে মেঘকে বলল....
সরি আসলে তখন তোমাকে ওভাবে বলতে চাইনি।
ইটস ওকে স্যার। আমারই ভুল আপনার জন্য কিছু করার অধিকার আমার নেই। আমি সেটা বুঝতে পেরেছি।
মেঘ কথাটা বলে উঠে চলে গেল।
মেয়েটা অদ্ভুত তো!(সাগর)
সাগর মেঘের রুমে গিয়ে দেখল মেঘ ব্যালকানী তে বসে আছে।
মেঘ!
বলুন স্যার।
কাল ভোর পাঁচটায় রেড়ি থাকবে।
সাগর কথাটা বলে চলে গেল।
স্যার কি পাগল হয়ে গেল ভোর পাঁচটায় কোথায় যাবো তার উপর এখন ভোরে একটু একটু ঠান্ডা।ধুর,স্যার মনে হয় ইর্য়াকি মারছে।ভোর পাঁচটা....
সাগর মেঘেক ডেকেই যাচ্ছে কিন্তু,মেঘ তো নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে।
সাগর রুমে ঢুকে মেঘকে ঘুমাতে দেখে প্রচন্ড রেগে গেল।
পাশে থাকা পানির গ্লাস তুলে,মেঘের মুখে পানি ছুড়ে মারলো।
এমনিতেই ঠন্ডা ঠান্ডা ভাব,তার উপর ভোর বেলা হঠাৎ এরকম পানি পড়াতে মেঘ লাফিয়ে উঠে বলল…
__এটা আপনি কি করলেন?
__তোমাকে কাল রাতে বলেছিলাম ভোর পাঁচটায় রেডি থাকতে আর তুমি পরে পরে ঘুমাচ্ছো.!
__কি করবো ভোরবেলায়।
__চলো দেখতে পাবে। তোমার কাছে দশ মিনিট সময় আছে রেডি হয়ে এসো।
সাগর বেড়িয়ে নিচে চলে গেল।
মেঘ, সাগরের গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে রেডি হয়ে নিচে গেল।
কটেজের পাশে বিশাল বড়ো খোলা মাঠ বাইরেটা এখনো কিছুটা অন্ধকার।
__স্যার বাইরে অন্ধকার, চলুন ভিতরে যাই।
__দাড়াও। তোমাকে কি ঘুমাতে নিয়ে এসেছি এখানে!
__আপনি তো এসেছেন আপনার কাজে।
__ইয়েস। আমি এখানে আমার কাজ করবো আর তুমি তোমার কাজ করবে।
আমার আবার কি কাজ? চোখের সামনে এই খোলা মাঠ টা দেখতে পাচ্ছো তো?এখন তুমি এখানে দৌড়াবে।
মেঘ হাসতে হাসতে বলল…
__স্যার সকাল সকাল জোকটা ভালো ছিল।
__শাট আপ। আমি কোনো জোক বলিনি। তুমি এখানে সত্যি দৌড়াবে। ক্যারাটে, বন্দুক চালানো এগুলো রংপুরে যাওয়ার পর।
__স্যার আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আমি উকিল হবো পুলিশ না।
আমি ও উকিল তুমি হয়তো জানো। আর তোমাকে কে বলেছে এসব শুধু পুলিশ'রা শিখে। সব মেয়েদেরই এগুলো শেখা উচিত।অন্য কারোর জন্য না হলেও নিজের আত্মরক্ষার জন্য।উকিলদের শত্রুর অভাব হয় না।নিজের সেফটি নিজেকেই দেখতে হয়,আমিও এসব শিখেছি। তার মধ্যে তোমার তো অলরেডি শত্রু আছে তোমার জামাই বাবু। তাই বকবক না করে যেটা বলছি করো। স্যার আপনি তো আছেন! এসব শিখে আমি কি করবো?
__আমি কি সবসময় তোমাকে বাঁচাবো নাকি! আমার কি আর কোনো কাজ নেই। আর তুমি আমার কে হও যে তোমার জন্য করবো। নিজের টা নিজে করা শিখ।
ঠিকই তো বলেছেন।কে হন আপনি আমার, যে আমার জন্য সব কিছু করবেন।মেঘ মনে মনে ভাবলো
__কি হল এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও.... রান।
মেঘ ছুটলো খোলা মাঠের দিকে।সাগর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মেঘের দিকে আর মনে মনে ভাবল ....তোমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতেই হবে শত্রুদের সাথে তুমি নিজে লড়বে আর আমি তো আছি সারাজীবন তোমার পাশে। আজ থেকে শুরু হলো শত্রুদের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ানোর জায়গায়,তাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই।
মেঘ জোরে আরো জোরে দৌড়াও। সাগর চিৎকার করে বলল।
ভোর বেলা ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে দৌড় করাচ্ছে তার উপর নিজে দাঁড়িয়ে আছে আর আমি দৌড়ে মরছি, আল্লাহ্ জানে এই প্রফেসর কত জ্বালাবে আমাকে!
মেঘ দৌড়াতে দৌড়াতে বিড় বিড় করছে।
সকাল সাতটা.....
__যাও মেঘ, ফ্রেশ হয়ে নাও আজ এতটাই থাক। একটু পরে ব্রেকফাস্ট টেবিলে দেখা হচ্ছে।
মেঘ সকালের এই হালকা ঠান্ডায় ও ঘেমে একাকার, নিজের রুমে চলে গেল।আটটার সময় সাগর এসে খাবার টেবিলে বসল। মেঘকে ডাকল কিন্তু মেঘের কোনো আওয়াজ পেলো না। শেষে বাদ্ধো হয়ে মেঘের রুমে গেল।মেঘ বিছানা জুড়ে ঘুমাচ্ছে, ভিজে চুল বিছানার বাইরে ঝুলছে চুল থেকে টপ টপ করে জল পড়ে মেঝে টা ভিজে গেছে। মেঘকে দেখে সাগর বুঝতে পারছে না,রাগ করবে নাকি ওর ঘুমের প্রতি পাগলামি দেখে হাসবে।
সাগর টাওয়াল নিয়ে এসে মেঘের চুলটা মুছে দেয়। থাই গ্লাস টা লক করে পর্দা ফেলে দেয়,যাতে রোদ না লাগে। সাগর মেঘকে দেখছে। ভিজে চুল বিছানাময় ছিটিয়ে আছে, মুখটা দেখে যে কেউ প্রেমে পড়তে বাদ্ধ হবে।
না সাগর এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে নিজেকে ধরে রাখতে পারবি না। চল ভাই কাজে যা।
সাগর নিজের মাথায় চাটি মেরে বলল।
ব্রেকফাস্ট করে সাগর নিজের কাজে চলে গেল। মেঘ নিজের রুমে ঘুমিয়ে আছে।
বেলা এগারোটা মেঘের ঘুম ভাঙ্গলো।
বাপরে! এত বেলা অব্দি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্যার তো আজ আমায় কাঁচা গিলে ফেলবে।
মেঘ বাইরে বেরিয়ে দেখল স্টাফরা কিচেনে কাজ করছে।
__ম্যাডাম। আপনি উঠে পড়েছেন চলুন ব্রেকফাস্ট করবেন। (স্টাফ)
__স্যার কোথায়?
__স্যার তো কাজে বেরিয়েছেন। বলে গেছেন আপনাকে খেয়ে নিতে।স্যার দুপুরে ফিরে আসবেন।
যাক বাবা জোর বাঁচান বেঁচে গেছি। এখন থাকলে হাজার টা কথা শোনাতো।
মেঘ বিড়বিড় করে বলল।
__ম্যাডাম কিছু বলছেন!! (স্টাফ)
__না চলুন খেয়ে নেই,আমার এমনিতে ও খিদে পেয়েছে।
মেঘ খেয়ে নিজের রুমে চলে গেল।
ধুর এখানে করার মত কোনো কাজই নেই। একা বসে বসে বোর ও হয়ে গেছি। এখানে কেউ নেই যে গল্প করে কাটাবো।
মেঘ রুম থেকে বেরিয়ে সোজা কিচেনে চলে এলো।
_±কি রান্না করছো তোমরা? আমাকে বলো আমি হেল্প করছি(মেঘ)
__না না ম্যাডাম কোনো দরকার নেই। স্যার শুনলে রাগ করবে যে।
__এই কে কি বলবে হ্যাঁ!!! আমি বলছি তো আমাকে বলো আমি হেল্প করছি। আমি রুমে বসে বসে জাস্ট বোর হয়ে যাচ্ছি।
মেঘের জেদ এর কাছে কুক হার মেনে নেয়। মেঘ নিজের মনের মত রান্না করছে আর কুক ওকে হেল্প করছে। সাথে কিছুটা গল্প আড্ডা।
সাগর দুপুরে ফিরে আসতে মেঘ সাগরের সাথে খেতে বসে।
সাগর খেতে খেতে বলল…
__তো মেঘ,ঘুম কেমন হল?
সাগরের কথা শুনে মেঘ বিষম খেলো।
জানতাম তো ঠিক ঘুম নিয়ে টুকবে।
মেঘ মনে মনে বলল।
__আরে বললে না তো কেমন ঘুম হলো!(সাগর)
__ভালো।
__তুমি তো সুখ বিলাসিতায় থাকার মানুষ।
__ওটা আগে ছিল এখন নেই।
__তুমি ভুল জানো মেঘ।তুমি এখনো সৌখিন রয়ে গেছো। তা না হলে ওই টুকু দৌড়ে কেউ ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরে নাকি!
__ইউ....
__কুল ডাউন। এত রাগ কোথা থেকে আসে।
মেঘ রাগ করে উঠে চলে গেল।
সাগর মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো। মায়াবতী রাগলেও তো দেখতে ভালো লাগলো।
সাগর মনে মনে হাসল।
সাগর রুমে যাওয়ার সময় কুককে দেখে বলল...
__আজকের খাবারটা খুব টেস্টি ছিল।
__আজ ম্যাম রান্না করেছে আমি না।
__ওহ।
সাগর মেঘের রুমে গিয়ে দেখল,মেঘ মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।
__মেঘ...
মেঘ কোনো জবাব দিল না।
__আরে এখনো রেগে আছো নাকি!!! আমি তো এমনি বলেছি। আচ্ছা চলো তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো।
__কি?
__চলো দেখতে পাবে।
মেঘ সাগরের সাথে বেরিয়ে গেল কটেজ থেকে। মাঠ পেরিয়ে চলে এলো নদীর পাড়ে।
__ওয়াও। ইটস আ্যমেজিং।(মেঘ)
__এটা ইছামতি নদী। আর ওই যে ওপার দেখা যাচ্ছে ওটা ভারত।
সাগর নদীর ওপারটা ইঙ্গিত করে বলল।
__তার মানে আমরা প্রায় বর্ডারে
দাঁড়িয়ে আছি।(মেঘ)
__বলতে পারো। নদীর এপারে বাংলাদেশ আর ওপারে ভারত। ইছামতি নদী দুটো দেশের মাঝখান থেকে বয়ে যাচ্ছে।
__যাই হোক জায়গাটা দারুন। ইচ্ছে করছে সাঁতরে নদীর ওপারে ভারত এ চলে যাই।
__তাই নাকি!এই নদীটা অনেক গভীর এতে অনেক কুমীর আছে।তুমি একবার জলে নেমে দেখো তুমি ওদের খাবার হয়ে যাবে। তার উপর উইথ আউট পারমিশন এ ভারত গেলে আগে গুলি মেরে তারপর জিজ্ঞেস করবে কেন এসেছো। বুঝলে!
__আপনি বড্ড বেশি কথা বলেন।চুপচাপ এখানে বসুন তো।
মেঘের কাছে ধমক খেয়ে সাগর মেঘের পাশে বসে পরে।
বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে ওরা কটেজে ফিরে যায়।
দেখতে দেখতে তিনদিন কেটে যায়।
সকালে মেঘ দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল সাগর নিজের মতো বেরিয়ে গেছে।দুপুরে মেঘ রান্না ঘরে কাজে ব্যস্ত তখনই কলিং বেল এর শব্দ কানে আসে।
উফফ এখন এই দুপুরে আবার কে এলো?
__আমি এখুনি দেখছি ম্যাডাম।(কুক)
__না দরকার নেই। আমি লঙ্কা গুলো মিক্সিতে বেঁটে দিয়েছি তুমি লঙ্কা গুলো দেখো আমি আসছি।
__ম্যাডাম আপনার হাতে তো লঙ্কা গুঁড়ো লেগে আছে হাত টা ধুয়ে নিন।
__এসে ধুয়ে নেব। আগে দেখি কে এসেছে!
মেঘ দরজা খুলতেই দেখল একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে গায়ে কালো কোট পড়া।
__কাকে চাই?
__উকিল সাহেব বাড়িতে নেই বুঝি।
__না নেই। দরকার থাকলে পরে আসুন।
__আরে ম্যাডাম দাড়ান দাড়ান। উকিল সাহেব নেই এতো ভালো কথা। আমার যে আপনাকে দরকার।
লোকটা মেঘকে ঠেলে ভিতরে চলে এলো।
মেঘ অবাক হয়ে বলল…
__তা আমাকে আপনার কি দরকার!
__তোমাকে দরকার ছিল না কিন্তু এখন দরকার।
মেঘকে পা থেকে মাথা অব্দি দেখে লোকটা বলল।
মেঘ বুঝলো লোকটা মোটেও সুবিধার নয়।
মেঘ লোকটার সামনে এসে দাড়িয়ে বলল…
__আরে আপনার আমাকে দরকার!
__হ্যাঁ। উকিল সাহেবের কাছে এত খাসা একটা জিনিস আছে বলে জানতাম না তো।
লোকটা মেঘের গালে হাত বোলাতে বোলাতে বলল।
মেঘ আর সহ্য করতে না পেরে নিজের ডান হাতটা লোকটার নাক বরাবর ঘুষি মারলো। লোকটা হঠাৎ এমন ঘটায় একটু পিছিয়ে যায়।মেঘ নিজের লঙ্কা মাখা হাতটা ওর মুখে ঘষে দেয়। লোকটা জ্বালায় ছটপট করছিল। মেঘ দৌড়ে রান্না ঘর থেকে মরিচের গুঁড়ো এনে লোকটার মুখে ছুড়ে মারলো। সে সহ্য করতে না পেরে বসে পরে। মেঘ সেই সুযোগে কুকের সাহায্য নিয়ে লোকটাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে।
__ম্যাডাম হয়ে গেছে আর এ পালাতে পারবে না।(কুক)
__ঠিক বলেছেন রান্না ঘর থেকে সাঁড়াশি নিয়ে আসেন তো।
__কেন ম্যাডাম?
__আরে নিয়ে আসেন,তারপর বলছি।
লোকটার জ্বলন কিছুটা কমেছে এতক্ষণ সে খেয়ালী করেনি তাকে বেঁধে দিয়েছে।
__এই মেয়ে তুমি জানো আমি কে!তুমি আমাকে বেঁধে রেখেছো এখুনি খবর দিলে আমার লোক তোমাকে এমন ভাবে মেরে হাওয়া করে দেবে যে তোমার উকিল সাহেব ও তোমার লাশ খুঁজে পাবে না।
__এই বুড়ো চুপ কর। কে তুই হে.. তুই জানিস আমি কে! আমি মেঘ,মেঘ ইসলাম। আর তুই কি না আমাকে ছুঁতে গেছিলি!
__নিন ম্যাডাম সাঁড়াশি।
মেঘ কুককে বলল…
__এবার দেখেন এর কি করি।
এই তুই আমার গালে হাত দিয়ে ছিলি না এবার দেখ তোর কি হয়।
মেঘ লোকটার আঙুলে সাঁড়াশিটা দিয়ে চেপে ধরে। লোকটা চিৎকার করে ওঠে। মেঘ আরো জোড়ে চেপে ধরে নিজের রাগ মেটাচ্ছে।
বিকেলে সাগর বাড়ি ফিরে ড্রইং রুমে লোকটা কে বাঁধা অবস্থায় দেখে অবাক হয়। পাঁচ দিন ধরে তোকে খুঁজছি আর তুই কি না এখানে তাও আবার এই অবস্থায়!
__স্যার আমি কোটে নিজের সব কালোবাজারি ব্যবসার কথা শিকার করবো প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন।(লোকটা)
__বাপরে রংপুরের নাম্বার ওয়ান পাওয়ার ফুল হাত জোর করছে আমার সামনে!কি হল দিনুভাই এর?
__আপনার ওয়াইফ খুব সাংঘাতিক, পারলে অত্যাচার করে মেরে ফেলতো।
আমার ওয়াইফ!কার কথা বলছে?মেঘের।
সাগর মনে মনে ভাবল।
মেঘ,মেঘ…সাগর চিৎকার করে ডাকল
__আরে স্যার আপনি কখন এলেন।
মেঘ সাগরেন গলা শুনে বেরিয়ে এলো।
__তুমি ওকে এভাবে বেঁধে রেখেছো?
__হ্যাঁ।
__সত্য!তুমি ওকে ধরেছো!
__আরে হ্যাঁ। ও এসেছিল আমার কাছে দরকারে তাই ওর দরকার পূরন করেছি।
__মানে!
__মানে ওর আমাকে খুব ভালো লেগেছিল তো!
মেঘ লোকটার আঙুল ধরে মুড়ে দিল।
এমনিতেই সাঁড়াশির চাপে আঙ্গুল এর হাল বেহাল তার মধ্যে মেঘ আবার আঙুল মুড়ে দিতে লোকটা চিৎকার করে উঠল।
__স্যার প্লিজ আমাকে বাঁচান!
সাগর শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেঘের কান্ড কারখানা দেখছে।
__মেঘ তুমি এখন রুমে যাও।
আমি ওকে পুলিশের কাছো পাঠানোর ব্যবস্থা করি।
মেঘ নিজের রুমে চলে গেল।
পুলিশ এসে দিনুভাই কে নিয়ে গেল। সাগর মেঘের রুমে গিয়ে দেখল মেঘ বই পড়ছে।
__আসতে পারি।
__আরে স্যার আসুন।আর আমার রুমে আসতে হঠাৎ পারমিশন!
__না মানে…ও এখানে কখন এলো আর এই অবস্থা কি করে!
মেঘ শুরু থেকে সব সাগরকে বলল।
__ওয়াও মেঘ, আমি পাঁচ দিনে যা করতে পারিনি তুমি এক দিনে সেটা করেছো।
__ও তার মানে এর বিরুদ্ধে আপনি কেস লড়ছেন!
__হ্যাঁ। বাই দা ওয়ে তুমি যে এরকম নিষ্ঠুর আর দাদ্জাল আমি সেটা জানতাম না। কি হাল করছো লোকটার!
__আমার গায়ে হাত দেওয়া তো দূরের কেউ চেষ্টা করলেও তাকে আমি খুন করে দেবো।
মেঘের সিরিয়াসনেস কাটানোর জন্য সাগর কথা কথাটা ঘুরিয়ে দিয়ে বলল…
__যা তোমার বরের ব্যাড লাক।
__কেন?
সাগর হাসতে হাসতে বলল…
__তুমি তো বললে গায়ে হাত দিলে খুন করে ফেলবে। তোমার বর ও তার মানে তোমাকে ছুঁতে পারবেনা।
__ভালবেসে ছোঁয়া আর শরীরের লোভে ছোঁয়ার মধ্যে অনেক তফাত। যাকে বলে লাভ অর লষ্ট(love or lust)
__সময় মত ভালবাসার মানুষ ঠিক পেয়ে যাবে। ডোন্ট ওয়ারি।
__দুনিয়ায় ভাল মানুষের এত অভাব এর মধ্যে আবার ভালবাসার মানুষ খোঁজা টা বোকামি।
__তোমার ধারনাটা ভুল মেঘ।একদিন তুমি নিজের ভালোবাসার মানুষের খোঁজ পাবে সেদিন তোমার ভুল ধারণা টা ভেঙ্গে যাবে। আর তাছাড়া তুমি এখনো ছোট পড়াশোনা শেষ করো বড় হও দেখবে তোমার ভালোবাসার মানুষ ঠিক ধরা দেবে।
__এই আপনি আমাকে ছোট বলেন কেন বলুনতো!আমি থার্ড ইয়ারের এক্সাম দিয়ে দিয়েছি আমার ভোটার কার্ড, লাইসেন্স সব আছে।
__তুমি কি নিজেকে বড় মনে করো।
__অবশ্যই।
__এক মিনিট। তোমার ভুল ধারণাটা আমি এখুনি ভেঙে দিচ্ছি। আচ্ছা বল তোমার বয়স কত?
__বাইশ বছর।
__মাত্র বাইশ
__এরকম ভাবে বলছেন কেন?
বাইশ বছরের একটা মেয়ে কে বাচ্চা বলবো না তো কি বলব? তাছাড়া ফোনের জন্য আগের দিন মুখ ফুলিয়ে বসে ছিলে এরকম বাচ্চারা করে।
আপনি!ধুর আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।
'মেঘ মুখ ঘুরিয়ে বসল'
আচ্ছা কথা বলতে হবে না ব্যাগ প্যাক করে রাখো কাল আমরা রংপুর ব্যাক করবো।
কাল কেন?আমাদের তো আরো পরে ফেরার কথা ছিল।
হ্যাঁ কিন্তু এখানের কাজ তো হয়ে গেছে তাই ফিরে যাবো।
ধুর আমি ভাবলাম আর একবার নদীর পাড়ে যাবো।
ঠিক আছে, আজ রাতে নিয়ে যাবো।
সত্যি!
হুম।
মেঘ খুশি হয়ে সাগরকে জড়িয়ে ধরে। সাগর অবাক হয়।
মেঘ কি করছে বুঝতে পেরে সাগরকে ছেড়ে দেয়।
সরি স্যার আসলে....
তোমার এসব কথা পরে শুনবো আগে কিছু খেয়ে নেই,আমার খুব খিদে পেয়েছে।
হ্যাঁ আসুন।
মেঘ দৌড়ে বেরিয়ে গেল।
সাগর ওখানে দাঁড়িয়ে হাসলো।
0
19