এই কি জীবন৷

1 5
Avatar for Jamshed
3 years ago

বিকালের পাঁচটা-ছয়টার দিকে রাগ, বিরক্তি, রাস্তার জ্যাম, বাসের ভিড় সবই মনে হয় চরমে ওঠে! লোকাল বাসগুলোতে মানুষের জীবন হাতে নিয়ে লাফিয়ে উঠার চেষ্টা বুঝিয়ে দেয় যে, বেঁচে থাকাকে একটু কম বিরক্তিকর করার জন্য বেঁচে থাকার ব্যপারটাকেই বেচে দিতে মানুষের কোন ভয় নেই!

বাসের পেছনের দিকটায় ছিল রাতুল। কোন মতে বসার জায়গা পেয়েছে। বসেই খেয়াল করলো, হেল্পারের সাথে এক যাত্রীর বেশ তর্ক চলছে। হেল্পার মরিয়া হয়ে বলছে, “মামা আপনি ভাড়া দিবেন বলছিলেন, কিন্তু দেন নাই। ভাল করে মনে করেন” আর হেল্পারের মামা বলছে, “ফাইজলামি করো কেন? ভাড়াতো আমি দিছি।” হেল্পার যতোই বুঝাক না কেন, কোন কাজই হচ্ছে না। এক পর্যায় হাল ছেড়ে দিল হেল্পার। মামার কাছে পরাজয় মানতেই হচ্ছে। তবে, রাতুল কিন্তু খেয়াল করেছে যে হেল্পার যখন ভাড়া তুলছিল তখন এই লোকই বলেছিল যে একটু পর দিচ্ছে। এরপর পেছন থেকে ভাড়া কালেক্ট করে সামনে যাওয়ার পরেই এই তর্ক-বিতর্ক। তার মানে ভাড়া আসলেই দেয় নাই।

চেকার উঠলো বাসে।“স্টুডেন্ট আইডি কার্ড আছে কার কার; হাত তুলেন”। রাতুল হাত তুললো। ভাড়া না দেয়া হেল্পারের মামাও কিন্তু হাত তুললো। যদিও ওই লোকের চেহারা দেখে আদৌ ছাত্র নাকি বয়স্ক কোন ছাত্র নেতা সে সন্দেহ করা যেতেই পারে! চেকার কিংবা হেল্পার কারোরই সবার আইডি কার্ড চেক করার মতো সময় নেই। চেকার নামার পর হেল্পার বাঁকি ভাড়াগুলো তুলতে শুরু করলো। যাত্রীর চাপে কোন মতে দাঁড়িয়ে থাকায় ভাড়াটা তখনো দিতে পারেনি রাতুল। হেল্পার এবার ভাড়া নিতে আসলো রাতুল তিরিশ টাকা হাতে দিল হেল্পারের। স্টুডেন্ট হিসেবে পনেরো টাকা দেয়ার কথা রাতুলের। হেল্পার কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই রাতুল বললো, “মামা, আমি স্টুডেন্ট না। জব করি। এমনিই হাত তুলছিলাম। তুমি তিরিশ টাকাই রাখো। ভাড়াতো পনেরো টাকা কাটছে। তুমি এইটা দিয়ে চা সিগারেট খাইও” বলেই সামনের ভাড়া না দেয়া ছেলেটার দিকে তাকালো রাতুল, হেল্পারও তাকালো অন্য মনস্কভাবে। সেই লোক এতক্ষণ হেল্পার আর রাতুলের কথাগুলো শুনছিল। ওরা তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিলো।

বাস থেকে নেমে নিজের মেসের দিকে হাঁটলো রাতুল। এভাবেই দিন কাটছে গত তিনটা বছর ধরে। কাছের বন্ধুদেরকে নিজে হাতেই দূরে সরিয়ে দিয়েছে ও। এখন বন্ধু বলতে ফেসবুকে বানানো এক-দুইজন যারা জানে রাতুল একটা প্রাইভেট ফার্মে বেশ স্যালারিতে নয়টা-পাঁচটা জব করে। রাতুল সকাল নয়টায় ঢোকে লাইব্রেরিতে। বের হয় বিকাল পাঁচটায়। চাকরীর প্রিপারেশন শেষ হয়ে আবার শুরু হয়; কিন্তু রাতুল জবের দেখা পায় না। সম্বল বলতে ওর বাচ্চা বাচ্চা চেহারাটা। সে চেহারায় হতাশা বা ক্লান্তির কোন ছাপ রাখতে দেয়নি ও। কারন নয়টা-পাঁচটা সময়টা ও নিজেকে পড়ার মাঝে ডুবিয়ে রেখে সব ভুলে থাকে আর দিন শেষে নিজেই নিজেকে বলে, “আহ! সারাটা দিন অফিসের প্যারা...মাস গেলে স্যালারি দিয়ে সুখ কেনা...এই কি জীবন?”

সেদিন মাঝ রাতে রাতুলের ঘুম ভাঙলো। উঠে বসে থাকলো কিছুক্ষন। কানের কাছে এসে কেউ যেন বললো, “এই কি জীবন?

5
$ 0.00
Sponsors of Jamshed
empty
empty
empty
Avatar for Jamshed
3 years ago

Comments

Nice article!

$ 0.00
3 years ago