ভারতের ইতিহাস

5 49
Avatar for Jahidur123
4 years ago

ভারতবর্ষের যে ইতিহাস আমরা পড়ি এবং মুখস্থ করিয়া পরীক্ষা দিই, তাহা ভারতবর্ষের নিশীথকালের একটা দুঃস্বপ্নকাহিনীমাত্র। কোথা হইতে কাহারা আসিল, কাটাকাটি মারামারি পড়িয়া গেল, বাপে-ছেলেয় ভাইয়ে-ভাইয়ে সিংহাসন লইয়া টানাটানি চলিতে লাগিল, একদল যদি বা যায় কোথা হইতে আর-একদল উঠিয়া পড়ে–পাঠান-মোগল পর্তুগীজ-ফরাসী-ইংরাজ সকলে মিলিয়া এই স্বপ্নকে উত্তরোত্তর জটিল করিয়া তুলিয়াছে।কিন্তু বিদেশ যখন ছিল দেশ তখনো ছিল, নহিলে এই-সমস্ত উপদ্রবের মধ্যে কবীর নানক চৈতন্য তুকারাম ইঁহাদিগকে জন্ম দিল কে? তখন যে কেবল দিল্লি এবং আগ্রা ছিল তাহা নহে, কাশী এবং নবদ্বীপও ছিল। তখন প্রকৃত ভারতবর্ষের মধ্যে যে জীবনস্রোত বহিতেছিল, যে চেষ্টার তরঙ্গ উঠিতেছিল, যে সামাজিক পরিবর্তন ঘটিতেছিল, তাহার বিবরণ ইতিহাসে পাওয়া যায় না।

কিন্তু বর্তমান পাঠ্যগ্রন্থের বহির্‌ভূত সেই ভারতবর্ষের সঙ্গেই আমাদের যোগ। সেই যোগের বহুবর্ষকালব্যাপী ঐতিহাসিক সূত্র বিলুপ্ত হইয়া গেলে আমাদের হৃদয় আশ্রয় পায় না। আমরা ভরতবর্ষের আগাছা-পরগাছা নহি; বহুশত শতাব্দীর মধ্য দিয়া আমাদের শতসহস্র শিকড় ভারতবর্ষের মর্মস্থান অধিকার করিয়া আছে। কিন্তু দুরদৃষ্টক্রমে এমন ইতিহাস আমাদিগকে পড়িতে হয় যে, ঠিক সেই কথাটাই আমাদের ছেলেরা ভুলিয়া যায়। মনে হয়, ভারতবর্ষের মধ্যে আমরা যেন কেহই না, আগন্তুকবর্গই যেন সব।

নিজের দেশের সঙ্গে নিজের সম্বন্ধ এইরূপ অকিঞ্চিৎকর বলিয়া জানিলে, কোথা হইতে আমরা প্রাণ আকর্ষণ করিব? এরূপ অবস্থায় বিদেশকে স্বদেশের স্থানে বসাইতে আমাদের মনে দ্বিধামাত্র হয় না–ভারতবর্ষের অগৌরবে আমাদের প্রাণান্তকর লজ্জাবোধ হইতে পারে না। আমরা অনায়াসেই বলিয়া থাকি, পূর্বে আমাদের কিছুই ছিল না, এবং এখন আমাদিগকে অশনবসন আচারব্যবহার সমস্তই বিদেশীর কাছ হইতে ভিক্ষা করিয়া লইতে হইবে।দক্ষিণ এশিয়া প্রাথমিক চারটি স্থান এর মধ্যে অন্যতম যেখানে মানব সভ্যতা শুরু হয় – মিশর, চীন  এবং ইরাক (টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস) -এর অনুরূপ। দক্ষিণ এশিয়ায় সভ্যতা সিন্ধু  নদীর তীরেই শুরু হয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়া  ভূখণ্ডের তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন   পর্বতমালা, নদী এবং বিশাল ত্রিভূজীয় আকৃতির উপদ্বীপের ভারতপ্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ এর মত বিভিন্ন লিখিত চিহ্ন সহ হাজার হাজার প্রতীক চিহ্ন রয়েছে যা এখনো  অনুবাদ করা সম্ভবপর হয়ে উঠেনি । এই প্রতীকগুলির মধ্যে বেশিরভাগ নরম মাটিতে  সীলমোহর দিয়ে খোদাই করা। একটি সীল যা বর্তমানের একটি স্ট্যাম্প অনুরূপ,   নরম কাদামাটি একটি ছাপ তোলার কাজে এই সীলমোহর গুলো ব্যবহার করা হতো। সীলগুলির মধ্যে  কিছু ছিলো সিলিন্ডার আকৃতির মতো যা কখনও কখনও মাটির উপর ঘুরিয়ে ছাপ দেওয়া হতো। মেসোপটেমিয়াতে সিন্ধু স্ক্রিপ্টের কিছু  প্রতীক আবিষ্কৃত হয়েছে, যা নির্দেশ করে যে তারা নিয়মিত বাণিজ্য পরিচালনা করে থাকতো এবং এটাই ছিলো তাদের প্রধান পেশা।

প্রত্নতত্ত্ববিদরা শহরগুলির ধ্বংসাবশেষ  খুঁজে পেয়েছেন যা প্রমান করে সেই সময়ের অবিশ্বাস্যভাবে  পরিকল্পিত শহরের ও তাদের শৈল্পিক ছোঁয়ার  অনির্বাণ নিদর্শন । ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে প্রতিটি বড় শহর ৮০০০০ এর মতো লোকজন বসবাস করতে পারতো, তাই  এটিকে প্রাচীন ভারতের সর্ববৃহৎ আদি  জনবহুল সভ্যতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ভবনগুলি কাদামাটির-ইট থেকে তৈরি করা হয়েছিল, এটিগুলোকে একটি চুল্লির  মধ্যে পোড়ানো হয়েছিল যাতে মাটিগুলো পাথরের মতো কঠিন হয়ে যায়।  পরিকল্পনাকারিরা  শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও করেন অত্যন্ত সুনিপূণভাবে। শহরের বাড়িগুলি প্রধান সড়কের পাশেই নির্মিত হয়েছিল, কখনও কখনও বহুতলা বাড়ির হদিসও পাওয়া পায়। এবং অধিকাংশ শহরে  তাদের ঘরবাড়িতে জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিলো । পানি নিষ্কাশন প্রযুক্তি এতটাই সুনিপূণ ছিলো যা আজ থকে ৩০০০ বছর আগের মানুষের বিচক্ষ্ণতার পরিচয় বহন করে এবং তা আজকের দিনের আধুনিক প্রযুক্তিকেও হার মানায়। যাইহোক, অধিকাংশ মানুষ শহুরে এলাকায় বসবাস করেন নি। বেশিরভাগ মানুষ গ্রামাঞ্চলে বসবাস করত চাষাবাদের জন্য।

6
$ 0.01
$ 0.01 from @Eera24
Avatar for Jahidur123
4 years ago

Comments

Thank you for sharing this information ☺️☺️ keep working like this 😊😊 And i love it. All the best for you future 🤗🤗

$ 0.00
4 years ago

নিজের দেশের সঙ্গে নিজের সম্বন্ধ এইরূপ অকিঞ্চিৎকর বলিয়া জানিলে, কোথা হইতে আমরা প্রাণ আকর্ষণ করিব? এরূপ অবস্থায় বিদেশকে স্বদেশের স্থানে বসাইতে আমাদের মনে দ্বিধামাত্র হয় না–ভারতবর্ষের অগৌরবে আমাদের প্রাণান্তকর লজ্জাবোধ হইতে পারে না। আমরা অনায়াসেই বলিয়া থাকি, পূর্বে আমাদের কিছুই ছিল না, এবং এখন আমাদিগকে অশনবসন আচারব্যবহার সমস্তই বিদেশীর কাছ হইতে ভিক্ষা করিয়া লইতে হইবে।দক্ষিণ এশিয়া প্রাথমিক চারটি স্থান এর মধ্যে অন্যতম যেখানে মানব সভ্যতা শুরু হয় – মিশর, চীন এবং ইরাক (টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস) -এর অনুরূপ। দক্ষিণ এশিয়ায় সভ্যতা সিন্ধু নদীর তীরেই শুরু হয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়া ভূখণ্ডের তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন পর্বতমালা, নদী এবং বিশাল ত্রিভূজীয় আকৃতির উপদ্বীপের ভারতপ্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ এর মত বিভিন্ন লিখিত চিহ্ন সহ হাজার হাজার প্রতীক চিহ্ন রয়েছে যা এখনো অনুবাদ করা সম্ভবপর হয়ে উঠেনি । এই প্রতীকগুলির মধ্যে বেশিরভাগ নরম মাটিতে সীলমোহর দিয়ে খোদাই করা। একটি সীল যা বর্তমানের একটি স্ট্যাম্প অনুরূপ, নরম কাদামাটি একটি ছাপ তোলার কাজে এই সীলমোহর গুলো ব্যবহার করা হতো। সীলগুলির মধ্যে কিছু ছিলো সিলিন্ডার আকৃতির মতো যা কখনও কখনও মাটির উপর ঘুরিয়ে ছাপ দেওয়া হতো। মেসোপটেমিয়াতে সিন্ধু স্ক্রিপ্টের কিছু প্রতীক আবিষ্কৃত হয়েছে, যা নির্দেশ করে যে তারা নিয়মিত বাণিজ্য পরিচালনা করে থাকতো এবং এটাই ছিলো তাদের প্রধান পেশা।

প্রত্নতত্ত্ববিদরা শহরগুলির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন যা প্রমান করে সেই সময়ের অবিশ্বাস্যভাবে পরিকল্পিত শহরের ও তাদের শৈল্পিক ছোঁয়ার অনির্বাণ নিদর্শন । ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে প্রতিটি বড় শহর ৮০০০০ এর মতো লোকজন বসবাস করতে পারতো, তাই এটিকে প্রাচীন ভারতের সর্ববৃহৎ আদি জনবহুল সভ্যতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ভবনগুলি কাদামাটির-ইট থেকে তৈরি করা হয়েছিল, এটিগুলোকে একটি চুল্লির মধ্যে পোড়ানো হয়েছিল যাতে মাটিগুলো পাথরের মতো কঠিন হয়ে যায়। পরিকল্পনাকারিরা শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও করেন অত্যন্ত সুনিপূণভাবে। শহরের বাড়িগুলি প্রধান সড়কের পাশেই নির্মিত হয়েছিল, কখনও কখনও বহুতলা বাড়ির হদিসও পাওয়া পায়। এবং অধিকাংশ শহরে তাদের ঘরবাড়িতে জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিলো

$ 0.00
4 years ago

-একদল উঠিয়া পড়ে–পাঠান-মোগল পর্তুগীজ-ফরাসী-ইংরাজ সকলে মিলিয়া এই স্বপ্নকে উত্তরোত্তর জটিল করিয়া তুলিয়াছে।কিন্তু বিদেশ যখন ছিল দেশ তখনো ছিল, নহিলে এই-সমস্ত উপদ্রবের মধ্যে কবীর নানক চৈতন্য তুকারাম ইঁহাদিগকে জন্ম দিল কে? তখন যে কেবল দিল্লি এবং আগ্রা ছিল তাহা নহে, কাশী এবং নবদ্বীপও ছিল। তখন প্রকৃত ভারতবর্ষের মধ্যে যে জীবনস্রোত বহিতেছিল, যে চেষ্টার তরঙ্গ উঠিতেছিল, যে সামাজিক পরিবর্তন ঘটিতেছিল, তাহার বিবরণ ইতিহাসে পাওয়া যায় না।

কিন্তু বর্তমান পাঠ্যগ্রন্থের বহির্‌ভূত সেই ভারতবর্ষের সঙ্গেই আমাদের যোগ। সেই যোগের বহুবর্ষকালব্যাপী ঐতিহাসিক সূত্র বিলুপ্ত হইয়া গেলে আমাদের হৃদয় আশ্রয় পায় না। আমরা ভরতবর্ষের আগাছা-পরগাছা নহি; বহুশত শতাব্দীর মধ্য দিয়া আমাদের শতসহস্র শিকড় ভারতবর্ষের মর্মস্থান অধিকার করিয়া আছে। কিন্তু দুরদৃষ্টক্রমে এমন ইতিহাস আমাদিগকে পড়িতে হয় যে, ঠিক সেই কথাটাই আমাদের ছেলেরা ভুলিয়া যায়। মনে হয়, ভারতবর্ষের মধ্যে আমরা যেন কেহই না, আগন্তুকবর্গই যেন সব।

নিজের দেশের সঙ্গে নিজের সম্বন্ধ এইরূপ অকিঞ্চিৎকর বলিয়া জানিলে, কোথা হইতে আমরা প্রাণ আকর্ষণ করিব? এরূপ অবস্থায় বিদেশকে স্বদেশের স্থানে বসাইতে আমাদের মনে দ্বিধামাত্র হয় না–ভারতবর্ষের অগৌরবে আমাদের প্রাণান্তকর লজ্জাবোধ হইতে পারে না। আমরা অনায়াসেই বলিয়া থাকি, পূর্বে আমাদের কিছুই ছিল না, এবং এখন আমাদিগকে অশনবসন আচারব্যবহার সমস্তই বিদেশীর কাছ হইতে ভিক্ষা করিয়া লইতে হইবে।দক্ষিণ এশিয়া প্রাথমিক চারটি স্থান এর মধ্যে অন্যতম যেখানে মানব সভ্যতা শুরু হয় – মিশর, চীন এবং ইরাক (টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস) -এর অনুরূপ। দক্ষিণ এশিয়ায় সভ্যতা সিন্ধু নদীর তীরেই শুরু হয়েছিল।

$ 0.00
4 years ago

Nice to know the history

$ 0.00
4 years ago

NC

$ 0.00
4 years ago