ভয়ংকর সেই রাত
.
.
গ্রামটির নাম সবুজগ্রাম। নামের মতই সুন্দর সবুজ ছায়াময়। গ্রামের মানুষ অনেক ভালো মনের। সবাই সবার সাথে মিশে চলে।
সেখানে আমার বাড়ি। আমার একটা বন্ধু ছিলো, সাগর।
আমরা দুজন পাশের গ্রামের মাদ্রাসায় পড়তাম। যেখানে যেতে মাঝখানে দিয়ে একটা বিল পরে।
এরপরে রসুলপুর। রসুলপুর গ্রামের শেষ মাথায় আমাদের মাদ্রাসা ছিলো। এটা গ্রামের একটু বাহিরেই। আমরা ছাত্ররা লজিং বাড়িতে খেতাম আর মাদ্রাসায় পড়তাম এবং ঘুমাতাম।
আমি আর সাগর ছিলাম একই বয়সি এবং মাদ্রাসার সবচাইতে সাহসী।আমরা রাত বিরেতে এর বাড়ির ফল মুল চুরি করতাম। এই সাহসই আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের মাদ্রাসার স্থপতির বাড়ি মাদ্রাসার পাশেই ছিলো। অনেক পুরনো আমলের। কিন্তু গত ১০ বছর যাবৎ কেও থাকে না। বাড়ির কিছুটা অংশ ভেঙ্গে গেছে।উনি এখন শহরে থাকেন।
আমাদের জীবন ভালো ভাবেই কেটে যাচ্ছিলো৷
কিন্তু এভাবে আমার জীবনটা পালটে যাবে কখনও ভাবি নি।
সেদিন ছিলো শনিবার, রোজার ঈদের ছুটিতে সবাই যার যার বাড়ি গিয়েছে। বলা হয়েছিলো যে রবিবার মাদ্রাসা খোলা।
আমি আর সাগর শনিবারেই মাদ্রাসায় যাওয়ার সিদ্বান্ত নিলাম কারণ মাদ্রাসার স্থপতির বাড়িতে ডাব দেখেছিলাম, সাগর আর আমি এগুলা খাবো সিদ্বান্ত নিলাম।
শনিবার দুপুরে আমরা রওয়ানা দিলাম মাদ্রাসায়।দুপুরের একটু পরেই পৌঁছে গেলাম। গিয়ে দেখি মাদ্রাসার গেইট খোলা। ভাবলাম হুজুর আছে নাকি। দেখি হুজুর আছেন।
কিন্তু উনি রাতে বাড়িতে থাকেন। মাদ্রাসা থেকে 20মিনিট হাটলেই লোকালয় সেখানের প্রথম বাড়িটি হুজুরের।
আমাদের দেখে হুজুর বললেন আমি একটু সায়দাবাদ যাবো৷ তোরা আজকে আসলি কেন?
আমরা বললাম, হুজুর ভালো লাগেনা তাই এসে পড়লাম।
হুজুর বললেন আচ্ছা তোরা আজকে থাক, কাল তো সবাই এসেই পরবে।
আমরা আর হুজুর কে বুঝতে দেই নাই। যে আমরা চুরির ধান্দায় আছি। আমরা বললাম হুজুর তারাতারি যান আকাশে মেঘ করতেসে। পরে আবার সমস্যায় পরে যাবেন।
হুজুর বললেন আচ্ছা আমি গেলাম। তোরা সাবধানে থাকিস।
হুজুর যাওয়ায় আমরা দুজন অনেক খুশি হয়েছিলাম।
হুজুর যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে ৩জন লোক এসে হাজির হল।
তাদের ৩য় জনের হাত এবং পা বাধা ছিলো। মনে হল পাগল।
অপর দুইজন এসে বললেন হুজুর কই।
আমি বললাম, সায়দাবাদ গেছে। কাল দুপুরে আসবে।
তাদের একজনে বলল, তাইলে তারে এখানে রাইখা যাই।
আমি জিজ্ঞাস করলাম, উনার কি হইসে।
উত্তর দিলো, জ্বীনে ধরসে। পরে তারা সেই পাগলটাকে নিয়ে স্থপতির বাড়ির ভাঙ্গা অংশে নিয়ে বেধে রেখে এসে বসে রইল। আমি বললাম উনাকে নিয়ে যান।
তারা বলে আমরা অনেক দূরের গ্রাম থেকে আসছি। তোমরা থাকো আমরা চা খাইয়া আসি। বলে তারা গেলো।
আমি আর সাগর গেলাম দেখতে পাগল্ টাকে। গিয়ে দেখি সে ভালো মানুষের মত বসে আছে।
আমি জিজ্ঞাস করলাম, অই নাম কি?
কোন উত্তর দিলো না। সাগর জিজ্ঞাস করলো কোন উত্তর দিলো না। আমি সাগর কে বললাম চল মাদ্রাসায় যাই। রাতে ডাব পারমু।
আমরা এসে মাদ্রাসায় ঢুকে পরলাম। মাগরিবের পরেও দেখি ওই লোক দুইটা আসে না। আমরা বুঝতে পারলাম যে তারা ভেগেছে পাগলটাকে রেখে।
আমি ভাবলাম যে কাল হুজুর তো এসেই পরবে, তখন দেখি হুজুর কি বলে।
আমি আর সাগর নামাজ পড়ে খাইতে গেলাম। লজিং থেকে আইসা দুজনেই নামাজ পড়ে শুয়ে পড়লাম।
তখন সাগর বলল, কি রে ঘুমাইয়া পড়লে হবে আমাদের না ডাব পারতে হবে।
আমি বললাম, আরে একটু ঘুমাইয়া নেই।
রাত তখন অনেক 12টা হবে, হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো।কিসের শব্দে।
আমি উঠে দেখি সাগরের ঘুমও ভেঙ্গে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি বললাম, কি রে শব্দ কিসের? চলতো দেখি।
সাগর বলল, আরে বাদ দে। চল ডাব পারি গিয়া।
আমি বললাম, চল যাই।
ডাব পাড়তে গিয়ে দেখি স্থপতির বাড়ির ভাঙ্গা অংশ থেকে সেই আওয়াজটা আসছে। অনেক টা গোঙ্গানির মত। আমরা আস্তে আস্তে সেদিকে যেতে লাগলাম।
গিয়ে দেখি পাগল লোকটা বসে বসে গোঙ্গাচ্ছে। আমি সাগরের দিকে সাগর আমার দিকে তাকালো।
আমি এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাস করলাম, কি হয়েছে আপনার এমন করছেন কেন?
সাগরের হাতের আলো ছিলো সেই আলোয় লোকটাকে আমার দিকে তাকাতে দেখলাম। দেখে আমার সব সাহস কোথায় যেন উড়ে গেলো। ভয়ংকর কড়া লাল চোখ দেখে আমি দু পা পিছিয়ে এলাম। আমি জিজ্ঞাস করলাম কি হয়েছে আপনার?
সাগর পেছন থেকে বলল, আরে কথা না বললে আমরা সাহায্য করবো কিভাবে।
লোকটার আওয়াজ শুনলাম এই প্রথম, শুনেই পিলে চমকে গেলো। আমি এখনো ভুলতে পারিনি সেই আওয়াজ। অনেক মোটা এবং অনেক জোর সেই কন্ঠে। লোকটা বলল, তোমরা চলে যাও এখান থেকে।
আমি সাগরকে বললাম, আরে বাদ দে। চল যাই।
সাগর বলল আরে দাড়া সে বললেই চলে যাবো নাকি। সাগরের কথা শেষ হবার আগেই লোকটা বলল,
সে আসতেছে তোমরা চলে যাও।
আমি সাগরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কিরে কি বলে এইসব।
এমন সময় দেখি বাইরের দিকে অনেক ঝড়বাতাস বইতে লাগলো। একটু আগে না দেখলাম আকাশ খালি। এখন দেখি অবস্থা খারাপ।
লোকটা বলতে লাগলো, চলে যাও তোমরা চলে যাও। নাইলে মারা পড়বা।
হঠাৎ করেই বাজ পড়লো কাছাকাছি কোথায় যেন। বাজের সাথেসাথে সাগরের হাতের আলোটা নিভে গেলো। সেটা আর জ্বালাতে পারছিলো না।
তখন আরো একটা বাজ পড়লো। আমি সেই আলোয় দেখতে পেলাম। লোকটা মোচড়াচ্ছে তার শরীর আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। আর লোকটা শেষ বারের মত চিৎকার দিয়ে বলল পালাও বলছি নাইলে মারা পরবে।
সে এসে গেছে।
আমরা বাইরের বাজের আলোয় দেখতে পেলাম লোকটা দাড়াচ্ছে হাতের শেকল ছিড়ে পড়ে গেলো।
এবং যেটা দেখলাম লোকটা দাঁড়িয়ে পরেছে। লোকটা লম্বা হয়ে ছাদ পর্যন্ত গেছে। চোখ দিয়ে আগুন বেরুচ্ছে।
আমি শুধু সাগরকে এটাই বললাম,"পালা"।
দুজনেই দৌড় লাগালাম। একটু পরে দেখলাম আমরা আগের জায়গায় পড়ে আছি।
কারণ এখান থেকে ৪০কদম হাটলেই মাদ্রাসা।
সাগরকে কান্নাসুরে বললাম, আমরা ফেসে গেছিরে বাচতে পারবো না।
সাগর তার হাতের আলোটা ছুড়ে মারলো ওটার দিকে।
সেটা এখন সাগরের দিকে এগুতে লাগলো। আমি সাগর কে বললাম এবার এগুতে পারছি। চল পালাই।
হঠাৎ ওটা দেয়ালে থাপ্পড় দিলো দেয়াল ভেঙ্গে পড়তে লাগলো আমাদের উপরে। সাগর আর আমি জানপ্রাণ দিয়ে দৌড়াতে লাগলাম। হঠাৎ সাগর হোচট খেয়ে পড়ে গিয়ে পা মচকে ফেললো। সাগর কে আমি ধরতে গেলাম, সাগর আমাকে বলল এভাবে গেলে দুজনেই মারা পরবো। তুই যা মানুষ নিয়ে আয়। আমি আছি। তুই যা, আমি বললাম না একত্রে যাবো নাইলে তোকে মেরে ফেলবে। সাগর আমাকে থাপ্পড় মেরে বলল, আমাকে কিচ্ছু করতে পারবে না। তুই যা, আমি আছি। আমি বললাম তুই লুকিয়ে পর আমি এক্ষুনি মানুষ নিয়ে আসছি। আমি দৌড় দিলাম। পেছনে দেখলাম সেটা ভয়ংকর আওয়াজ করতে করতে এগিয়ে আসছে।
আমি দৌড়ে সামনের বাড়িতে যাওয়ার আগেই সাগরের গগনবিদারী চিৎকারে আমার বুক ফেটে গেলো। আমি খালি দৌড়ে সেই বাড়িতে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিয়েই পড়ে গেলাম।
* পর দিন বিকেলে জ্ঞান ফেরার পর দেখলাম আমি হুজুরের বাড়িতে।।
উঠেই সাগর বলে দৌড় দিলাম, বাইরে বেরিয়ে দেখি অনেক মানুষ। আমি সাগর কে খুজতে লাগলাম। সবাই দেখি আমার দিকে তাকায়। পরে আমার সাথের একজন কে পেলাম তাকে জিজ্ঞাসা করার আগেই সে আমাকে বলল, দোস্তরে সাগর নাই।
আমি বললাম কি হইসে, সে বলল। সাগরের শরীরের ছিন্নভিন্ন করে ফেলা হয়েছে। মাথাটা অনেক দুরে পড়ে আছে। বড় বড় নখের আচড় এবং শরীরে একফোঁটা রক্ত নেই।
সেই পাগলের শেকল পাওয়া যায় সেখানে।
আমি শুনে আবার বেহুঁশ হয়ে গেলাম।
সেদিনের পর থেকে আমি আর কারো সাথে সাহস দেখাইনা। কারো ক্ষতি করি না। খালি একটা কথাই বাজে "তুই যা, আমি আছি।"
Great writer,, khub valo lagche,, apnar 2 ta article vuter porlam,, ro likhben asa kori,, opekkhay thaklam, tnx