অ্যাডভেঞ্চার
#ভূতুড়ে_লাইটহাউজ
লেখকঃ jahid123
ডিসেম্বর মাস। আটলান্টিক মহাসাগরের অতল জলরাশীর ভেতরে মাথা তুলে আছে জনশূন্য এক চিলতে আইল্যান্ড। আটলান্টিকের নীল জলরাশীর মাঝে হঠাৎ করেই যেন মাথা তুলেছে সামুদ্রিক আইল্যান্ডটা। এর বুকের উপর জেগে রয়েছে একটা লাইটহাউজ। আর কেউ নেই দ্বীপে।
ফ্ল্যানেল আইলে বাকি দ্বীপগুলো পার করে ওদের বোটটা এসে থামলো আইলিন মোর আইল্যান্ডের ল্যান্ডের ঠিক সামনে। ছোট একটা লাফ দিয়ে বোট থেকে নামলো সাকিব। মাথার উপরে সোজা তাকাতেই আইল্যান্ডের একেবারে মাঝখানে জেগে থাকা লাইটহাউজের চূড়াটা চোখে পড়ল তার। রিচার্ড বোটটাকে পাথরের একপ্রান্তে বাধছিলো এতক্ষন। এবার সে-ও এসে দাঁড়ালো সাকিবের পাশে। তার দিকে না তাকিয়েই সাকিব বলল, "এ তো.. একেবারে নতুন লাইটহাউজই মনে হচ্ছে।"
"হ্যাঁ, একেবারেই নতুন। দু'বছর আগে তৈরি।"
"হুম। তৈরি হওয়ার আগে কী ছিলো এখানে?"
"কিছুই না।" মাথা নেড়ে বলল রিচার্ড। "বাকি আইল্যান্ড গুলোর মতই ফাঁকা পড়ে ছিলো। চারদিক বহুদূর পর্যন্ত পানি ছাড়া আর কিছু নেই বলেই দশ বছর আগেই 'NLB' সিদ্ধান্ত নেয় একটা লাইট হাউজ তৈরি করবে এখানে। তৈরি হবার বছর দুয়েকের মধ্যেই তো এ ঘটনা।"
কথাটা সত্যি। এই আইলিন মোর আইল্যান্ডে দাঁড়িয়ে চারিদিকে তাকালে বিক্ষিপ্ত কয়েকটা ন্যাড়া আইল্যান্ড আর আটলান্টিক মহাসাগরের নীল জলরাশী ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। আইল্যান্ডটাও একেবারেই ছোট। দৈর্ঘ্য প্রস্থ মিলে এক কিলোমিটারের খানিক কম। কিছুটা পাথুরে জমি চারপাশ ঘিরে থাকা সমুদ্র আর সাত তলা উঁচু একটা লাইটহাউজ ছাড়া আর কিছুই নেই এখানে।
এক সপ্তাহ আগেই এই লাইটহাউজ থেকে নাকি তিনজন রক্ষী গায়েব হয়ে গেছে। লাইট হাউজটা দেখাশোনার দায়িত্ব ছিলো তাদের উপর। আপাতত নতুন লোক যতদিন না বহাল হচ্ছে ততদিন সাকিব আর রিচার্ডের দায়িত্ব হলো লাইটহাউজটা অপারেট করা। যদিও কাজটা আসলে তাদের নয়। অনেকটা জোর করেই এখানে এসেছে তারা। তাতে অবশ্য রিচার্ডের বাবা মি. বেরিংটন বেশি একটা অমত করেননি। আসলে কাজটা ছিলো তার। কিন্তু তার জরুরি একটা কাজ পড়ে যাওয়াতে ইংল্যান্ডে যেতে হয় তাকে। তাই নিজের কাজটা ছেলেদের উপরেই দিয়েছেন তিনি।
ও হ্যাঁ, সাকিব স্কটল্যান্ডে এসেছে গত সপ্তাহে। এসেছিলো আসলে ইংল্যান্ডে। জেমস রয় আর ক্রিস্টিনার বিয়েতে। রয় আর ক্রিস্টিনা অবশ্য ল্যারি আর লুককেও দাওয়াত করেছিলো, কিন্তু জরুরি কাজ থাকাতে আসতে পারেনি তারা। সাকিব অবশ্য চেয়েছিলো রাফিমকে সঙ্গে আনতে, কিন্তু সে-ও তার বাবার সাথে আগেই শিকাগোতে গিয়ে বসে আছে। সেখানে নাকি তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। অগত্যা একাই আসতে হলো সাকিবকে। রিচার্ড হলো রয়'এর কাজিন। স্কটল্যান্ডে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো সাকিবের। তাই রয়'ই তাকে ব্যবস্থা করে দিয়েছে। পাঠিয়ে দিয়েছে রিচার্ডদের বাড়িতে। আর এখানে এসেই এমন একটা অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করতে চায়নি সাকিব। রিচার্ডকে নিয়ে চলে এসেছে এখানে। নির্জন এই আইল্যান্ডটাই।
সাকিবের পাশে পাশে হাঁটতে শুরু করেছে রিচার্ড। লাইটহাউজের চূড়াটা দেখতে দেখতে সাকিব বলল, "যে তিনজন গায়েব হয়েছে তাদের নাম কী যেন?"
"থমাস মার্শাল, জেমস ডুকাথ আর ডোনাল্ড ম্যাকার্থার।"
"থমাস, জেমস, ডোলান্ড।" বিড়বিড় করল সাকিব। এখানে আসার আগে নর্দান লাইটহাউজের এক কর্মকর্তার কাছে গোটা ঘটনাটাই শুনেছে সে। সে ঘটনা যতটা চমকপ্রদ ততটাই রহস্যজনক।
মনের মধ্যে পুরো ব্যাপারটাই একবার গুছিয়ে নিলো সাকিব। লাইটহাউজটা তৈরি হওয়ার পর থেকে মোট চারজনকে সেটা দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। গোটা দ্বীপে ওই চারজন ছাড়া আর কোনো জনপ্রাণী থাকতো না। এই চারজনের মধ্যে তিনজন দ্বীপেই থাকতো। একজন খাবারদাবার বা প্রয়োজনিয় জিনিসপত্র আনতে স্কটল্যান্ডের মূল ভূখণ্ডে পাড়ি দিতো। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রত্যেকের উপরেই পড়ত দায়িত্বটা।
দ্বীপে যে গোলমেলে কিছু একটা ঘটছে, সেটা প্রথম নজরে আসে ১৫ই ডিসেম্বর। রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটার কাছাকাছি। আল্টার নামের এক স্টিমার জনা তিরিশেক যাত্রী নিয়ে দ্বীপের ধার ঘেসে পাড়ি দিচ্ছিলো। সেই স্টিমারের লোকজনেরা লক্ষ্য করে লাইটহাউজের মাথায় আলো জ্বলছে না। গোটা আইল্যান্ডটা একটা গা ছমছমে অন্ধকারে ঢেকে আছে। ব্যাপারটা স্বাভাবিক নয়। এমন অন্ধকার রাতেও আলো জ্বালায়নি রক্ষীরা? আলো যদি কোনোভাবে নষ্টও হয়ে থাকে, তাহলে আইল্যান্ডের ল্যান্ডিং-এ রক্ষীদের সাপ্লাই বক্স নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার কথা।
স্কটল্যান্ডে ফিরে এসে নর্দান লাইট হাউজ বোর্ডকে ব্যাপারটা জানায় স্টিমারের লোকেরা। বোর্ড তখন ঘটনাটা খতিয়ে দেখতে জোসেফ মুর নামে এক রিলিফ কিপারের নেতৃত্বে হেসপারেস নামে একটা জাহাজ পাঠায়। আবহাওয়া ভালো ছিলো না বলে হেসপারেসের আইলিন মোরে পৌঁছাতে বেশ কয়েকটা দিন লেগে যায়। ২৬শে ডিসেম্বর আইল্যান্ডে এসে লাইটহাউজের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যান জোসেফ। লাইটহাউজের বাইরে যেখানে সবুজ পতাকা লাগানো থাকে সেখান থেকে পতাকা গায়েব। দূর থেকে জাহাজ আসতে দেখলে সেই জাহাজকে স্বাগত জানাতে লাইটহাউজের রক্ষীদের বাইরে বেরিয়ে আসার কথা। অথচ গোটা আইল্যান্ডটা ফাঁকা। কোথাও কেউ নেই। সামনে পৌঁছে মুর দেখেন, লাইট হাউজেরদরজা বাইরে থেকে বন্ধ। সেটা খুলে ভেতরে ঢুকে কাউকে খুঁজে পান না তিনি। জাহাজে এসে আবার দু'জন লোককে নিয়ে লাইটহাউজে ফিরে যান মুর। প্রাথমিকভাবে তাদের ধারনা হয়েছিলো, ঝড়বৃষ্টির মাঝে পাথরে পা পিছলে সমুদ্রে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিলো তাদের তিন জনের। কিন্তু লাইটহাউজের ভেতরটা খতিয়ে দেখতে কয়েকটা অদ্ভুত ব্যাপার চোখে পড়ে তাদের। মুর বুঝতে পারেন, পানিতে পড়ে মৃত্যুর থিয়োরি টা অসম্ভব।
তাহলে?
সাকিব আর রিচার্ড মিনিট দশেক ঘাসের জমির উপর দিয়ে হেঁটে লাইটহাউজের সামনে এসে দাঁড়াল। এই কয়দিনে বেশ কয়েকবার তদন্ত হয়ে গিয়েছে। ঘাসের উপর মানুষের পায়ের ছাপের স্পষ্ট দাগ হয়ে হয়ে আছে৷ লাইটহাউজের বাইরে লাগোয়া দরজাটা এখন বন্ধ।
হঠাৎ রিচার্ড বলল, "জায়গাটাকে ঘিরে কিছু গুজব চালু ছিলো। এ ঘটনার পর থেকে সেটা আরও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে কাগজপত্রে যেভাবে লেখা হচ্ছে তাতে...."
"কিরকম গুজব?" ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল সাকিব।
"মানে...এই ধরনের আইল্যান্ডকে ঘিরে যেরকম গুজব রটে আরকি। একসময় সব আইল্যান্ডই মাটির তলায় ছিলো। প্রায় ছয়শো বছর আগে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াতে উপরে উঠে আসে। আশপাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকেই নাকি এই দ্বীপের উপরে কিছু বড় ছায়াকে আনাগোনা করতে দেখেছে। কেউ কেউ বলে দ্বীপটাকে নাকি মাঝে মাঝে দেখা যায় না। সমুদ্রের বুকে কিছুক্ষণের জন্য গায়েব হয়ে যায়।"
"ভ্যানিশিং আইল্যান্ড?"
"হ্যাঁ, সেটাই। ভয়ে অনেক জাহাজই এপথ দিয়ে যাতায়াত করতে চাইতো না। অনেকটা সেকারণেই তৈরি হয়েছিলো লাইটহাউজটা।"
"আর সেই লাইট হাউজ থেকেই এবার রক্ষী গায়েব হয়ে গেল। আচ্ছা তোমার কী মনে হয়? কী ঘটেছিলো এখানে?"
রিচার্ড একটু হাসলো। মাথার টুপিটা কপালের উপরে টেনে নিয়ে বলল, "ভুতপ্রেতের কথা বাদ দিলে ব্যখ্যা তো একটাই, আবহাওয়া খারাপ ছিলো, পাড়ে রাখা সাপ্লাইবক্সগুলো হয়তো তুলে আনতে গিয়েছিলো তিনজন, এমন সময় পাথর ভেঙে তিনজনের নিচে পড়ে যায়।"
সাকিব লাইটহাউজের দরজায় একটা হাত রাখলো। বলল, "এই ব্যাখ্যাটা ভূতপ্রেতের থেকেও বেশি আজগুবি।"
"কেন?"
"বলছি, আগে ভিতরে চলো।"
লাইটহাউজের বাইরের দরজায় বড় প্যাডলক ঝুলছে। পকেট থেকে চাবি বের করে খুলে ফেলল রিচার্ড।
যে-কোন লাইটহাউজেই একেবারে গোড়ার সঙ্গে লাগোয়া একটা ঘর থাকে। রক্ষীদের থাকার ঘর। ঘরের ভেতরের দিকে হেঁটে গেলে একটা সিড়ি চোখে পড়ে। সেই সিড়ি সাপের মতো পেচিয়ে সোজা উপরে ওঠে। সেটা ধরে উঠতে থাকলে ওয়াচ টাওয়ারে পৌঁছানো যায়। এখন রক্ষীদের ঘরের ভেতরে এসে দাঁড়িয়েছে ওরা। একই মাপের মোট তিনটে ঘর। প্রথম ঘরটার ডানদিকে বাথরুমের দরজা। দরজার ঠিক উপরে ঝুলছে একটা ঘড়ি। সাকিব আঙ্গুল তুলে সেদিকে নির্দেশ করে বলল, "মুরের জবানবন্দি অনুযায়ী মুর এ ঘরে ঢুকেই লক্ষ্য করেন ঘড়িটা বন্ধ। তিনটে আঠারো বেজে থেমে গেছে ঘড়িটা।"
"এ থেকে কী প্রমাণ হয়?"
"কিছুই না। নির্জন আইল্যান্ডে তিনটে মানুষের তাড়াহুড়োর কিছুই থাকতো না। ঘড়ি তেমন কাজে লাগার কথা নয়। যাইহোক এদিকে তাকাও।" উল্টোদিকের দেওয়ালে নির্দেশ করল সাকিব। "অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়ছে?" সেদিকের দেওয়ালে একটা হ্যাঙারে তিনটে জামাকাপড় ঝোলানোর হুক লাগানো। দু'টো খালি। একটা থেকে ঝুলছে একটা অয়েলস্কিন। খারাপ আবহাওয়ায় বাইরে যেতে হলে রক্ষীদের কাছে অয়েলস্কিন গায়ে চাপানো বাধ্যতামুলক।
"অস্বাভাবিক কিছু তো..."
"যদি খারাপ আবহাওয়ায় তিনজনই বাইরে যায় এবং আছড়ে পড়া ঢেউতে তাদের তিনজনই সমুদ্রে গিয়ে পড়ে তাহলে এখানে একটাও অয়েলস্কিন থাকার কথা নয়। একটা আছে তারমানে অন্তত একজন বাইরে যায়নি।"
"মানে বলছ, তিনজনের মধ্যে দু'জন সমুদ্রে গিয়ে পড়ে মরেছে? তাহলে বাকি একজন গেল কোথায়?"
"আমি কিন্তু কিছুই বলিনি।" কথাটা বলে সাকিব ভেতরের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। "মুর ঘরে ঢুকে দেখেন টেবিলের উপরে অর্ধভুক্ত খাবার পড়ে আছে। বিছানার চাদরে মানুষের শোয়ার দাগ। ঠিক যেন ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট খেতে খেতে ভ্যানিশ হয়ে গেছে তিনজন মানুষ। কোথাও কোন মারপিট বা ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই। কেবল," ঘরের ভেতর ঢুকে সে বিশেষ একটা কোণা নির্দেশ করে, "ওই ফায়ারপ্লেসটার সামনে একটা চেয়ার উলটে পড়ে ছিলো। যেন তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে ওটা পড়ে গেছে।" ফায়ারপ্লেসের সামনে এগিয়ে গেল সাকিব। ম্যান্টলপিসের উপরে রাখা ল্যাম্পটা পরীক্ষা করে বিড়বিড় করে বলল, "হুম, ল্যাম্পটা সদ্য পরিষ্কার করে রিফিল করা হয়েছিলো। চলো, কাজে লাগা যাক।"
ঘরটা পেরিয়ে সিড়ি বেয়ে ওয়াচটাওয়ারে উঠতে শুরু করল ওরা। এতগুলো সিড়ি ভেঙে উপরে উঠার অভ্যাস না থাকলে কাজটা করা ভারী কষ্টকর। দু-তিনটে তলা উঠে খানিক দম নিয়ে আবার উঠতে থাকলো। শেষে প্রায় আধঘন্টা পরে ওয়াচটাওয়ারের মেঝেতে পা রেখে সেখানেই বসে পড়ে ওরা। সাততলা সিড়ি উঠা চাট্টিখানি কথা নয়। রিচার্ড অতটা ক্লান্ত হয়নি। দম নিয়ে সে টাওয়ারের দিকে এগিয়ে গেল। টাওয়ারের বেশিরভাগটা জুড়েই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা লেন্স। প্রায় দু'টো মানুষের সমান বড় সেটা। রাতে ক্লক ওয়ার্ক চালু থাকলে টাওয়ারের চারপাশে ঘুরতে থাকে লেন্সটা। সেই আলো সমুদ্রের বহুদূর অবধি ছড়িয়ে পড়ে। লেন্সটা আপাতত বন্ধ। ঠিক যেন একটা অতিকায় মৃত প্রাণীর চোখ তাকিয়ে আছে সমুদ্রের দিকে। সাকিব বসা থেকে উঠে সেটার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। পকেট থেকে নোটবই বের করে বললাম, "পনেরো তারিখ রাতে আল্টারের যাত্রীরা লক্ষ্য করে লাইটহাউজের আলো জ্বলছে না। মানে ধরে নিচ্ছি পনেরো তারিখের আগে টাওয়ারের রক্ষী তিনজন যেকোনো ভাবে গায়েব হয়েছে।"
"৯ ডিসেম্বরে এদিকটায় বেশ বড় ধরনের ঝড়ঝাপটা হয়।" বলল রিচার্ড। "ওয়েসল্যাণ্ডিংএর একটা বড় অংশ বাজ পড়ে ভেঙে যায়। ওই অংশটা ভেঙে পড়ার সাথে সাথেই..."
"ওরাও পানিতে পড়ে যায়?"
"এ ছাড়া তো আর কিছু সমাধান দেখছি না।"
এতক্ষণে বুকের মধ্যে কিছুটা নিঃশ্বাস পেয়েছে সাকিব। কাধের ব্যাগ থেকে একটা ছোট ডাইরি বের করে সে রিচার্ডের দিকে এগিয়ে দিলো। সেটা হাতে নিয়ে ভালো করে দেখেশুনে সে বলল, "এটা তো একটা লগবই মনে হচ্ছে।"
"হুম। এটা লাইটহাউজের তিন রক্ষীর দিনপঞ্জি। 'NLB'র থেকে স্পেশাল পারমিশন করে নিয়ে আসতে হয়েছে। অবশ্য সেটা আমার দ্বারা সম্ভব হতো না। বেরিংটন আংকেলই এনে দিয়েছে। যাহোক, এতে শেষ এন্ট্রি আছে পনেরোই ডিসেম্বর সকালে। "স্টর্ম এন্ডেড, সী কাম, গড ইজ ওভারঅল।"
"মানে নয় তারিখে যে ঝড় হয়, তাতে এরা মারা যায়নি?"
"নয় তারিখের ঝড় এবং ওয়েসল্যান্ডিংয়ের অনেকটা জায়গা ভেঙে যাওয়ার কথা লেখা আছে এতে।" লগবুকটা দেখিয়ে বলল সাকিব। "পনেরো তারিখ সকাল অবধি তিনজন রক্ষী অক্ষত ছিলো তাতে সন্দেহ নেই। আশ্চর্যের কথা হলো, রাডার বলছে নয় তারিখের ঝড়ঝাপটার পর আবার সতেরো তাখির অবধি এই জায়গাটা শান্তই ছিলো। তাহলে পনেরো তারিখ রক্ষীদের লাস্ট এন্ট্রিতে যে ঝড় থেমে যাওয়ার কথা লেখা আছে সেটা এলো কোথা থেকে?"
কিছু একটা ভেবে মাথা নাড়লো রিচার্ড। তারপর বলল, "তাছাড়া পনেরো তারিখে সকালে তারা যদি অক্ষত থাকে তাহলে সেদিনই রাতে লাইটহাউজের আলো জ্বলছিলো না কেন? সকাল থেকে রাতের মধ্যেই কি তাহলে.."
"হতেই পারে। লেন্সের আলো আসে একতলার প্যারাফিনের রিজার্ভার থেকে। দু'ঘন্টা অন্তর প্যারাফিনের ট্যাংক চেঞ্জ করতে হতো রক্ষীদের। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ যদি আলো না জ্বলে তাহলে, পনেরো তারিখ সকাল থেকে রাত আটটার মধ্যে যেকোনো সময় তারা গায়েব হয়ে থাকতে পারে। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো," লগের বেশ কয়েকটা পাতা উলটে পালটে দেখালো সে। "লগের লেখার মধ্যে কয়েকটা লাইন কেউ পেন দিয়ে কেটে দিয়েছে। দেখতে পাচ্ছো?"
কেটে দেওয়া লাইনগুলো দেখতে দেখতে রিচার্ড বলল, "ভারী অদ্ভুত ব্যাপার তো। কী লিখা ছিলো এখানে?"
জবাবে সাকিব বলল, "সেটা আর জানার উপায় নেই।" টাওয়ারের একেবারে মাঝামাঝি স্থানে একটা টেবিলের উপরে লগবুকটা রেখে দিয়ে বলল, "আপাতত গোটা দিনটা পড়ে আছে। তুমি নিচে গিয়ে বিশ্রাম নেও, আমি আইল্যান্ডটা একটু ঘুরে দেখি।"
"আচ্ছা ঠিকাছে।"
চলবে......
Wow amazing story i really love this story