গল্প: অপির গুপ্তধন

4 29
Avatar for Jahid123
3 years ago

লেখক: jahid123

এক হাতে মশাল জ্বালিয়ে দুর্গম পাহাড়ে অপি সম্মুখে এগিয়ে চলছে।একটি বড় পাথর খন্ডের পাশে এসে হাতের মশালটি উঁচু করে চারদিকটা অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষন করতে লাগলো সে। তার গলায় ঝুলানো দিক নির্দেশক যন্ত্রটাকে টি-শার্টের সাথে আলতো ঘষে পরিষ্কার করে এবার তার তিগ্ন দৃষ্টি তার দিকে।

: ইয়েস, আই ডু ইট! আমার ম্যাপ যদি ঠিক হয়ে থাকে তাহলে আমি কাঙ্খিত লক্ষে পৌছে গেছি।

এবার সে তার ব্যাগ থেকে চামড়ায় মলার্ট করা একটি মোটা বই বের করে পৃষ্টা উল্টাতে শুরু করে দিলো।তার দৃষ্টি আটকে গেলো এক জরাজীর্ণ পাতায়।বিলম্ব না করে ব্যাগ থেকে একটা ম্যাগনিফাই গ্লাস বের করে মশালের আলোয় চুলছেড়া বিশ্লেষন।

অপি ব্যাগ থেকে এবার একটি বড় ব্রাশ বের করে বড় পাথর খন্ডটির গায়ে লেগে থাকা স্যাওলা পরিষ্কার করতে শুরু করলো সে। পাথরের গায়ে খুদাই করা দুর্বোধ্য ভাষায় কিছু লেখা সে আবিষ্কার করলো এবং সেই সাথে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক চিহ্ন।পাথরের গায়ে খুদাই করা সেই লেখার সাথে অপির বইয়ের লেখা মিলে যেতেই সে তার আনন্দ যেনো ধরে রাখতে পারছিলো না।একটি শাবোল হাতে প্রস্তুরটির গোড়ায় অপি খুড়তে শুরু করে দিলো।বেশি পরিশ্রম করতে হলো না তাকে।বেড়িয়ে এলো এক সুড়ঙ্গ পথ।সেখানে ভেজা শ্যাত শ্যাতে একটি সিড়ি সার্কেল আকারে নিচের দিকে নেমে গিয়েছে।অপি এক পা দু পা করে মশাল হাতে এগিয়ে চললো সুড়ঙ্গে।খুব সাবধানে অপি সিড়ির ধাপ গুলো অতিক্রম করছে।কে জানে কতদূর পর্যন্ত এ সিঁড়ি পথ বিস্তৃত।সে যতই নিচের দিকে অবতরন করছে জমাট বাধা অন্ধকার যেনো তাকে ঘিরে ধরছে।সেই সাথে বিলিন হয়ে যাচ্ছে ঝিঁঝি পোকার ডাক।কিছুক্ষনের মধ্যে সে পৌছে গেলো একটি বিশাল কক্ষে।উপর থেকে নেমে আসা গাছের শেকড়ে সমস্ত কক্ষটায় এক ভুতুরে অবস্থা বিরাজ করেছে।অপি খুব সাবধানে শেকড় গুলো সরিয়ে সামনে অগ্রসর হতে থাকলো। তার পদধ্বনী কক্ষের প্রাচিরে ধাক্কা লেগে বার বার প্রতিধ্বনী সৃষ্টি হতে লাগলো।মশালের ক্ষিন আলোয় সে লক্ষ করলো কক্ষের দেয়াল গুলোতে বিচিত্র সব চিত্র আঁকা।বিভিন্ন জন্তু জানোয়ার আর দেবদেবীর অবয়ব তৈরি করা হয়েছে পাথুরে দেয়াল কেটে।কক্ষের মেঝেতেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন আকারের পাথর।তার মন বিসন্নতায় ভরে উঠলো এটা ভেবে সে যে গুপ্তধনের নেশায় এখানে এসেছে তার কোনো নমুনাই মিললো না এখানে।কিন্তু এরকমটা তো হওয়ার কথা ছিলো না।কোথাও এক রহস্য যেনো সে উৎঘাটন করতে পাচ্ছে না।ঘুরতে ঘুরতে সে পাথরের দেয়ালে এক নক্ষত্র আকৃতির বস্তু দেখতে পেলো।ভয়ে ভয়ে সে ঐ বস্তুটাতে হাত রাখতেই সমস্ত কক্ষে যেনো ভূকম্পনের সৃস্টি হলো এবং স্বয়ংক্রিয় ভাবে পাথুরে দেয়াল দু ভাগ হয়ে একটি গোহা মুখ বেরিয়ে আসলো।তার বুঝতে অসুবিধা হলো না এটাই গুপ্তধন অব্ধি পৌছার মূল ফটক।সে ঐ গোহা পথ ধরে সতর্কতা দৃষ্টিতে হাঁটতে শুরু করে দিলো।অপি অবাক হয়ে লক্ষ করলো সেই গোহা পথে অসংখ্য মাংসবিহীন হাড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।সে ভয়ে আঁতকে উঠলো এটা দেখে এগুলো কোনো জন্তু জানোয়ারের হাড় নয় বরং মানুষের অস্থি।এটা বুঝতে বাকি রইলো না কালে কালে অনেক মানুষ এই গুপ্তদনের নেশায় এখানে পাড়ি জমিয়েছে।কেউ বেঁচে ফিরতে পারে নি।এসব দৃশ্য দেখে মৃত্যুর ভয় অপিকে গ্রাস করে ফেলেছে।তার পা যেনো অসাড় হয়ে আসছে ভয়ের তাড়নায়।কিন্তু এবার সে মনে সাহস ফিরিয়ে আনলো এটা ভেবে যে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে সে পিছু হটবে না।জীবনকে বাজি লাগিয়ে সে ঐ গুপ্তধনের দাড়প্রান্তে পৌছবেই।অপি আবার সম্মুখ্যে অগ্রসর হতে থাকলো।এদিকে মশালের তেল ফুরিয়ে এসেছে।নিভু নিভু মশাল হাতে সে এগিয়ে চলেছে।হঠাত পা পিছলে নিচে পড়ে গেলো।একটা বড় পাথরের সাথে আঘাত লেগে অপির মাথে ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করলো।এদিকে মশালটা নিভে গিয়েছে।অন্ধকার এবং ভয় তাকে গিলে ধরেছে।তার মনে হতে লাগলো জীবন নিয়ে হয়তো সে আর ফিরে আসতে পারবে না।কিন্তু এটা ভেবে সে অবাগ হলো তার মাথা ফেটে রক্ত ঝড়ছে কিন্তু কোনো ব্যথা অনুভব হচ্ছে না।অপি উঠে দাড়ালো এবং অন্ধকারে দুই হাত সামনের দিকে প্রসস্ত করে পা টিপে টিপে হাটতে শুরু করে দিলো।হঠাত একটা বড় পাথরের উপর হাত পড়তেই সমস্ত কক্ষ আলোয় ঝলমল করে উঠলো।সেই আরোর ঝলকানীতে অপির দু চোখ ঝালাপালা হওয়ার উপক্রম।সে চোখ খুলে যা দেখলো তাতে সে তার আনন্দ ধরে রাখতে পারলো না।বিশাল বিশাল একেটটা হিরা খন্ড থেকে বিচিত্র সব আলো বের হচ্ছে।মেঝেতে সাড়ি সাড়ি হাড়ি ভর্তি সোনা, মনি মুক্তায় ঠাসা।অপি পাগলের মত দুহাত ভরে সোনা ব্যাগে ভরতে শুরু করে দিলো।এবার সে শাবলের তিগ্ন প্রান্ত দিয়ে দেয়ালের গায়ে লেগে থাকা একটি হিরার টুকটায় আঘাত করতেই আবার সমস্ত কক্ষ জুড়ে কম্পনের সৃষ্টি হলো, এবং বিকট শব্দে সব কিছু ভেঙ্গে পড়তে আরম্ভ করলো।বিশাল বিশাল পাথর খন্ড উপর থেকে ভেঙ্গে পড়ছে।অপি বিলম্ব না করে সোনায় ভর্তি ব্যাগ কাধে ওঠানোর চেষ্ঠা করলো।কিন্তু সোনায় ঠাসা ব্যাগের ওজন এতটাই বেশি হয়েছে যে কোনো ক্রমেই সে তা কাধ অব্ধি তু্লতে পারলো না।অতপর সে ব্যাগের হাতল ধরে জোড়ে জোড়ে টানতে শুরু করে দিলো।

এবার সে প্রবল এক ঝাকুনি অনুভব করলো।

অপি,,,,এই অপি,,,,এটা কেমন পাগলামো?

অপি লক্ষ করলো সে তার ভাইয়ার এক পা ঘাড়ে তু্লে টানাটানি করছে।

অপি ভাইয়ার পা ছেড়ে পাগলের মত বলতে শুরু করলো

সোনা,,, আমার সোনা ভর্তি ব্যাগ কোথায়?

এই বলে সে বিছানার নিচে এদিকে ওদিকে খুঁজতে শুরু করে দিলো।

অতর আবার এক ঝাকুনি।

: এই অপি,,, কিসের সোনা ভর্তি ব্যাগ,,কি সব অাবল তাবল বকছিস?

এবার তার ঘুমের ঘোড় কেটে গিয়েছে।

: ইয়ে মানে ভাইয়া.........

: আজকাল গাঁজা টাজা খাওয়া হয় নাকি? প্রতিদিন মাঝরাতে এসব পাগলামো কেনো করিস?

অপি ফ্যাল ফ্যাল করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

: ইস ভাইয়া কি সুন্দর এক এডভেন্সার স্বপ্ন দেখছিলাম।আরেকটু পরে ডাক দিলেই তো পারতে।

: তুই যে ভাবে পা ধরে টানাটানি করছিলি, একটু পর ডাকলে মেঝেতে পড়ে দিব্যি আমার মাথা ফেটে যেতো।যত্তসব ফালতো স্বপ্ন! নে ঘুমা এখন।বেশি বকবক করলে পাগলা গারদে রেখে আসবো, বুঝলি?

অপি চুপ করে ভাইয়ার পাশে শুয়ে স্বপ্নের কথা ভেবে মুচকি হেসে আবার ঘুমিয়ে যায়।

5
$ 0.00
Avatar for Jahid123
3 years ago

Comments

woo its really horrorable

$ 0.00
3 years ago

Your articles are always beautiful. Very nicely written.

$ 0.00
3 years ago

Wow! What a dream!

$ 0.00
3 years ago

Very nice story.

$ 0.00
3 years ago