লেখকঃ jahid123
ক্লাস শেষ করে কলেজ এর করিডর দিয়ে হাঁটছি। হঠাৎমনে হোল দরকারি একটা নোট্স টেবিল এ রেখে আসছি। আবার ফিরে গেলাম ক্লাস রুমে। সত্যি তো, নোট্স টা আসলেই টেবিল এ রেখেছিলাম। নোট্স গুলো ব্যাগে ভরে, ব্যাগ এর চেইন লাগাতে লাগাতে পিছু ফিরতেই, হটাত করে একটা বিশাল মূর্তি আমার সামনে এসে হাজির, আমি কিছু বুঝার আগেই বুক ধরফর করে উঠলো আর চোখ এ অন্ধকার দেখতে লাগলাম। খেয়াল করলাম কে জেন আমার বুক চাপ্রে দিচ্ছে আর হেসে হেসে বলছে,
;কিরে, ভয় পেলি নাকি? হাহাহা;
কণ্ঠ শুনে আমার আর বুঝতে দেরি হোল না যে এটা রাকিব, আমার বন্ধু। শুধু বন্ধু বললে ভুল হবে, রাকিব আমার শৈশব থেকে কাছের এবং বাল্ল কালের বন্ধু। যাকে এক কথায় বলে বেস্ট ফ্রেন্ড। অনেক চঞ্চল স্বভাবের, আর কি করলে মানুষ হার্ট অ্যাটাক করবে, এটাও যে সে বোঝে না, তা আজকে টের পেলাম।
;রাকিব... গাধা একটা, এভাবে কেও ভয় দেখায়? আর একটু হলে তো হার্ট অ্যাটাক হত আমার।;
রাকিব হাস্তে হাস্তে আমার কাঁধ এ হাত রেখে বলল,
;হয়ছে ভাই, তুমি সব কিছু তেই হার্ট অ্যাটাক করো। ভয় দেখানো লাগে না। ভীতু কোথাকার, চল বের হই, নাকি আজকে ক্লাস রুমেই থেকে যাবি?;
রাকিব আর আমি একটা গাছ তলায় বশে আড্ডা দিচ্ছি, হটাত করে রাকিব আমাকে জিজ্ঞেশ করলো,
;কিরে, এখনো ভয় কাটেনি?;
;আমি ভয় পাইনি, এমনি মুড অফ।;
;ভয় পেয়েছিস কি পাস নি সেটা তো তখনি দেখলাম। যাই হোক, তা মুখ গুমরা কেন? কি হয়েছে?;
একটু চুপ থেকে আবার বললাম,
;আমার পাশের বাড়ীতে একজন বৃদ্ধা আছে, খুব বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না রে।;
রাকিব একটু কৌতূহল নিয়ে তাকাল,
;বৃদ্ধা সুবিধার না? মানে কি? কোন সমস্যা হচ্ছে?;
;না তেমন কোন সমস্যা না, কিন্তু একটু অধভুত আচরণ করে আর কি। আমার কাছে মনে হয় যে আমাকে দেখলে কিছু বলতে থাকে।;
রাকিব হাসতে হাসতে আবার বলল,
;হাহাহা ভাই, বৃদ্ধা মানুষ, তা বয়স কত বললি যেন?;
;৯০ এর ওপর হবে।; উত্তর দিলাম,
;হে, ৯০ এর ওপর, তা ভাই ৯০ এর ওপর বৃদ্ধা একটু অধভুত ব্যাবহার করতেই পারে। আর বললি না যে বির বির করে কি যেন বলে? দেখ তোকে আবার প্রপোজ না করে বসে হাহাহাহা;
;রাকিব মার খাবি আমার কাছে, সব কিছু তে ফাজলামি।;
;আরে না ফাজলামি না সিরিয়াস, লাভ ইউ বললে রাজি হয়ে যাস, না করিশ না। হাহাহা;
আমি মজা করে আমার কাধের ব্যাগ ছুরে মারলাম রাকিব এর মাথায়। এর পর বললাম,
;শোন, সামননের মাসে আমার জন্ম দিন, মনে আছে তো? ফ্রী থাকিস।;
রাকিব বলল,
;দোস্ত এইটা কি ভুলার জিনিস? আর আনটির বীফ কারি না খেলে হবে? ভাই আনটি কে বল একটা রেস্টুরেন্ট দিতে, এতো জোস বীফ রান্না করে আনটি, অথছ একটা রেস্টুরেন্ট নাই।;
রাকিব কে থামিয়ে দিয়ে বল্লাম,
;ভাই থাম, আমি যাই, যেটা বল্লাম মনে রাখ, নেক্সট মান্থ ১৩ তারিখ, বাসায় চলে আসবি সকাল এ। ওকে?;
;ভাই মনে থাকবে ডোন্ট ওয়ারি, আর আমি যেটা বললাম সেটা ও মাথায় রাখিস, আই লাভ ইউ বললে রাজি হয়ে যাস, হাহাহা;।
বলেই রাকিব দউরে পালাল। আমিও একটা হাশি দিয়ে মাটি থেকে ব্যাগ তা তুলে সাইকেল নিয়ে বাড়ির দিকে হাটা দিলাম।
আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। বাড়ির কাছে আসতেই দেখি সেই বৃদ্ধা দারিয়ে আছে আমাদের বাড়ির দিকে মুখ করে। যেখানে স্কুবি মাটি খুরে ছিল, হাত তুলে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে সেখানে একবার দেখাচ্ছে, আবার আমাদের বাড়ির দিকে একবার দেখাচ্ছে আর কি যেন বির বির করে বলছে। আমি একটু কাছে যেয়ে দেখার চেষ্টা করলাম যে কি হচ্ছে। আমাকে দেখা মাত্র সে হটাত করেই থেমে গেল, একদম বরফ এর মূর্তির মত শান্ত। আমি ও দারিয়ে রইলাম কৌতূহল এ যে কি হচ্ছে। হটাত করেই আচমকা সে আমার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকাতে লাগল এবং এবার আমার দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে কি যেন বির বির করে মন্ত্রের মত বলতে লাগল। এক পরজায় সে ঠোঁট নাড়ানো বন্ধ করে দুই দাঁত এর পাটি ঠক ঠক করে একে অপরের সাথে আঘাত করতে থাকল। এতো জোরে শব্দ হচ্ছে যে আমি দুরে দারিয়ে শুনতে পাচ্ছি। তার মুখ দিয়ে এবার অনাবরত লালা পরতে থাকল। লালা তে তার থুঁতনি ভিজে জেতে লাগল। এটা দেখে ভয় এ আমার মেরুদণ্ডে হটাত কেমন ঠাণ্ডা অনুভব করলাম। আমি আর সাহস পেলাম না দেখার। এটা স্বাভাবিক হতে পারে না। এটা কোন ভাবেই স্বাভাবিক না। এটা ভেবেই আমি দউরে ঘর এর ভেতর চলে গেলাম। ঘড়ে ঢুকে আমি চেয়ার এ বসে পরলাম আর তারা হুড়ো করে মগ থেকে গ্লাস এ পানি ঢেলে পান করতে থাকলাম। এতো টাই ভয় পেয়েচছিলাম যে আমি ঢোঁক নিতে পারছি না। মা আমাকে দেখে চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেশ করলো,
;কি বেপার অয়ন? তুমি ঠিক আছ?;
আমি কোন মতে পানি শেষ করে গ্লাস টা রেখে মুখ মুছতে থাকলাম। একটু হাপাচ্ছিলাম। কিছু সময় সান্ত থেকে মা কে উত্তর দিলাম,
;আমি ঠিক আছি মা, হেটে এশেছি তাই একটু ক্লান্ত লাগছে। তেমন কিছু না।;
;অহ আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে তারাতারি ফ্রেশ হয়ে নাও, আমি খাবার বেরে দিচ্ছি। আরেকটা কথা, পরশু থেকে রাত এ তোমার নতুন টিচার আসবে।;
; নতুন টিচার? কেন কি হোল?;
অবাক হয়ে মা কে প্রশ্ন করলাম।
;তোমার টিচার ইমেইল করেছে যে তার শিফটিং হয়েছে, সে আর এই শহর এ নেই, আমাকে কল দিয়ে বলল তোমাকে নাকি কল দিয়েছিল ধরো নি। এসএমএস ও করেছে বলল।;
আমি পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে দেখলাম একটা মিস কল আর এসএমএস এসেছে, যেখানে টিচার লিখেছেন তিনি আর আশ্তে পারবেন না।
;হুম এসএমএস এসেছিল কিন্তু খেয়াল করি নি মা। যাই হোক, আমি যাই ফ্রেশ হই।;
বলে ব্যাগ নিয়ে আমার রুম এর দিকে যাচ্ছি। স্কুবি কে ডাকলাম কিন্তু স্কুবি এর সরা পেলাম না।
;মা স্কুবি কোথায়?;
;জানি না, অনেক্ষন ধরেই নেই। ওত এমন মাঝে মধ্যে বাইরে থেকে ঘুরে আসে। চিন্তা করোনা। চলে আসবে।;
আমি হুম বলে চলে গেলাম আমার রুম এ। ফ্রেশ হয়ে কাপড় পালটে বিছানায় শুয়ে বই পরছি, কিন্তু মন বসছেনা না। মাথার মধ্যে বৃদ্ধার কথা ঘুরছে। মন কিছু তেই শান্ত হচ্ছে না, উনাকে আমার স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। আর তাছাড়া এতো বয়স্ক মানুষ অথচ একা থাকে, কখনো কাউকে আশে পাশে দেখি না। কিছু একটা তো আছেই।
ভাবছি আর এর মধ্যে মা হটাত ঘড়ের দরজায় করা নেরে বলল
;অয়ন, আমি একটু দোকান এ যাচ্ছি, লবন ফুরিয়ে গেছে।;
;আমি এনে দিচ্ছি মা?;
;নাহ, তোমাকে আনতে হবে না, তুমি রেস্ট নাও।;
আমি বললানম ঠিক আছে মা, তুমি যাও আমি গেট বন্ধ করছি।;
মা চলে গেলেন, এরপর অনেক ক্ষণ চিন্তা করে ভাবলাম নাহ, আজকে দেখবোই যে বৃদ্ধা আ্সলে কে? কেন এ্সেছে এখানে? যেমন ভাবা তেমন কাজ। ঘর থেকে বের হয়ে বৃদ্ধার বাড়ির পাশে গিয়ে দারালাম। ২ তলা বাড়ি। নিচে সব জানাল দরজা বন্ধ, লাইট ও অফ। অন্ধকার হউয়া তে ওপর তলার লাইট টা ভাল মত দেখা যাচ্ছে। জানালার পাশ ঘেঁষে একটা গাছ আছে। আমি কোন রকম এ গাছ টা তে ওঠতে লাগলাম। যখন উঠে জানালা বরাবর গেলাম, দেখতে পেলাম জানালার সাথেই রাখা ড্রেসিং টেবিল এর সামনে বৃদ্ধা সাদা গাউন পরে চেয়ার এ বসে আছে। আর এক নাগারে ড্রেসিং টেবিল এর আয়নার দিকে তাকিয়ে সেই আগের মতই বির বির করে কি জেন বলে চলেছে।
আমি অনেকক্ষন দেখতে থাকলাম এবং বুঝার চেষ্টা করলাম যে কি হচ্ছে। হটাত করেই বৃদ্ধা কোন শব্দ করা বন্ধ করে আচমকা আমার দিকে তাকাল, আর আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বড়ো বড়ো চোখ এ বির বির করতে লাগল। আমি কিছু বুঝতে না পেয়ে ভয় এ গাছ থেকে লাফ দেই এবং নিচে পরে ভালই ব্যাথা পাই। কোন মতে উঠে, আমি দউরে ঘর এ চলে যাই, আর আমার রুম এ দরজা বন্ধ করে চাদর মুরে শুয়ে পরি।...........................
হটাত করে মেইন গেট এ চিল্লা চিল্লি শুনতে পাই। চাদর সরিয়ে দেখি যে সকাল ৭টা বাজে। কখন ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল নাই। আমি তারাতারি করে নিচে নামলাম, দেখি যে মা একজন প্রতিবেশীর সাথে কথা বলছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
;মা কি হয়েছে?;
;কিছু হয় নি অয়ন তুমি ওপরে যাও।;
;মা কিছু একটা তো হয়েছে? কি ব্যাপার?;
মা একটু চুপ থেকে বলল,
;বাড়ির পেছনে যেয়ে দেখ।;
আমি কথা না বারিয়ে মা এর কথা মত বাড়ির পেছনে গেলাম, এবং যা দেখলাম আমি প্রস্তুত ছিলাম না দেখার জন্য। স্কুবি কে কউ ছিরে টুকরো টুকরো করেছে। ধারালো কিছু দিয়ে কাটা হয় নি, ছিরেছে কেউ। মনে হচ্ছে হাত দিয়ে টেনে টেনে ছিরেছে। আমি এতো টা ভয় পেয়েছিলাম যে আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। শুধু দারিয়ে দারিয়ে দেখেই চলেছি। অনেকক্ষন এমন কেটে গেল সময়। হটাত আমার কি মনে হোল একবার বৃদ্ধার ২তলা জানালায় তাকালাম। দেখি যে বৃদ্ধা জানালার কাছে দারিয়ে আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বির বির করছে মন্ত্রের মতো। এবার আর আমি শান্ত থাকতে পারলাম না। এবার কিছু একটা করতেই হবে। এই বৃদ্ধা খুন করেছে স্কুবি কে। ও একটা ডাইনি। আমি মা কে এখনি সব বলব এবং পুলিস কে সব জানাবো। এই ভেবে বাড়ির সামনে যেয়ে মা কে বললাম,
;মা, আমি জানি কি হয়েছে এখানে, আস আমার সাথে উপরে, কথা আছে।;
supper post