-জানিস তো ইদানীং কেন জানি এই মর্ডান যুগে থেকে থেকে কিছু একটা মিসিং বলে মনে হচ্ছে।
-কি রে সেটা? আমার তো এমনটা মনে হয় না। দেখ দেখ, কি সুন্দর একটা ড্রেসের ট্রেন্ড বেরিয়েছে। দেখলেই শুধু নিতে ইচ্ছে করে।হায় আল্লাহ! দোস্ত এবারের ওয়েস্টার্ন ড্রেসের কালেকশনটা দেখেছিস মারাত্মক ইয়ার!
-তুই থামবি নীলিমা। আমি কি বলছি তা না শুনে তুই ট্রেন্ড নিয়ে পড়েছিস। কি মিসিং জানিস তো এই যে মডার্ন যুগে থেকে থেকে তুই ভুলেই গিয়েছিস তোর ছোট্টবেলার মধুর স্মৃতিগুলো। এসব বাদ দিয়ে একবার মনে করে দেখ কতটা সুন্দর ছিল দিনগুলো, কি আশ্চর্য সব অনুভূতি! নীলিমা তোর কি মনে পড়ে পুকুরে কত লাফালাফি করেছিলাম। তুই সাতাঁর শিখতে গিয়ে কত ফাজলামি করেছিলি।আর বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে কত মজা লাগতো!একবার তো পুকুরে নেমে হাটুঁপানিতে মাছ ধরেছিলাম। কাদাঁয় মাখামাখি হয়ে কি আজব মামদো ভূতগুলোর মতো দেখাচ্ছিল আমাকে হাহাহা!
শীতের রাতে কম্বল জড়িয়ে নিজেকে আড়াল করার কত চেষ্টা করতাম যেন শীত এসে আমাকে ছুতেঁ না পারে।কিন্তু প্রথম প্রথম ঠাণ্ডা লাগলেও পরে আর লাগতো না। আর জানিস খুব ভোরে উঠতাম, উঠেই সোজা রাস্তায় বেরিয়ে পড়তাম ভাপা পিঠা,চিতুই পিঠা এসব খাওয়ার জন্য!খেজুরের রস আর তালের রস জানিস তো দেখতাম কলসিটা তখনো গাছে আটকানো কিন্তু সুযোগ বুঝে এক ঢিল মেরে ফাটিয়ে দিতাম কলসিটা আর টাটকা খেজুরের রস আহ্! যা ছিল টেস্টটা এখনো মুখে মনে হয় লেগেই রয়েছে।
ঈদের সময় জানিস তো সবাই বাসার যখন একসাথে হতাম কি যে মজা হতো! সারাদিন লুডু, গোল্লাছুট, কিতকিত,লুকোচুরি, সাত পাতা, ছি বুড়ি, কাবাডি, বরফ পানি, জুতো চোর, মাংস চোর এসব খেলা হতো। ক্রিকেট খেলতাম জানিস চাচারা,ভাইয়েরা সহ।সেই খেলা হতো! ঈদের রাতে নীলিমা জানিস তো আমরা তো তখন বেশ ছোট মেহেদী দেয়া নিয়ে আমাদের ঝগড়া লাগতো কিন্তু ছোট ফুপি বড় থেকে শুরু করতেন লাগিয়ে দেয়া।শীতের রাতে লেপের বাহিরে হাত বের করে রাখতাম মেহেদী শুকোনোর জন্য আর সকালে উঠে যখন দেখতাম লেপে রঙ লেগে একাকার আর এতো বকা খেতাম সবাই আমরা হাহাহা! আর জানিস আমরা সবাই হাত দেখিয়ে বেড়াতাম যে কারটা বেশি রঙ হয়েছে।
সবাই মিলে গল্প করে একসাথে বসে রাতের খাবার খাওয়ার যে কি মজা তা তোকে বলে বুঝাতে পারবো না! আর যখন কারেন্ট চলে যেতো আমরা সবাই বাহিরে উঠোনে আসতাম আর রাতের আকাশের তারাগুলো কি জ্বলজ্বল করতো।মাথার উপর ইয়া বড় একটা চাদঁ আলো দিচ্ছে পাশেই বাশঁবাগান আর মৃদু হাওয়া বইছে। কি যে অপরূপ সৌন্দর্য্য আর কি যে এক মনমুগ্ধকর অনুভূতি!
যাগ্ গে তুই মনে হয় আমাকে এখন ব্যাকডেটেড মনে করছিস তাই না?
-ধুর গাধি! তুই যেগুলো বললি আসলেই রে এই মডার্ন যুগে থেকে থেকে ওসব স্মৃতি মনেই নেই। তবে সে স্মৃতিগুলো কিন্তু এ আপডেটেড যুগের চেয়ে অনেক সুন্দর ছিল!
-হুম তারপরেও তো অনেক কিছু মনে নেই আগের মতো, তবে যেটুকু মনে আছে বেশ মজার স্মৃতিগুলোই মনে আছে কি বলিস?
-ঠিক বলেছিস। আচ্ছা যাই রে আজ মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে.....
নীলিমা চলে যাবার পর আমি হেলেদুলে একেলা নিজের বাড়ি যাবার সময় সেই স্মৃতিগুলোতে আবার কড়া নাড়তে শুরু করলাম। এ স্মৃতিগুলো যেন আমাকে আবার সেই যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এ এক আশ্চর্য অনুভূতি, এক স্বর্গীয় পাওয়া......
আপনি অনেক সুন্দর বিষয় নিয়ে লিখেছেন।