স্যার যখন ডেঞ্জারাস ক্রেজি বর।

0 141
Avatar for Israt24
3 years ago
Topics: Relationship

Part-১

লেখিকাঃ- ছদ্মবেশী লেখিকা।

মা মা কই তুমি তাড়াতাড়ি খাবার দেও।

মাঃ- রানী কি হলো তোর এতো সকাল সকাল তুই কই যাবি?

রানীঃ- কেনো মা তুমি কি ভুলে গেলে আজ আমার ভার্সিটির প্রথম দিন।

মাঃ- ও তাই তো ভুলে গেছি। আচ্ছা এখনই খাবার দিচ্ছি।

রানীঃ-একটু তাড়াতাড়ি করো ৭টা বেজে গেছে ৯টায় ক্লাস তুমি তো জানো মা বরিশাল যেতে বাসে করে ৪৫মিনিট সময় লেগে যায়। এখন যদি ৭.৩০মিনিটের বাস না পাই তাহলে আজ প্রথম দিনই লেইট হয়ে যাবে। এই সময় বাবা এসে আমাকে ডেকে বলল মারে আজ তোর ভার্সিটির প্রথম দিন এই নে তোর জন্য আমার পক্ষ থেকে একটা উপহার এবং সাথে কিছু টাকা। আমি তো উপহার দেখে খুব খুশি। খুব সুন্দর একটা কলম। খাবার খেয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরলাম।

ও Sorry এতো কথা বললাম কিন্তু আমার পরিচয় দিতেই ভুলে গেছি। আমি হলাম মুহসানা জান্নাত রানী। বাবা মুহসিন আহম্মেদ মা রাবেয়া বেগম। বাবা প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক মা গৃহিণী। আমরা মধ্যবৃত্ত পরিবারে বিলং করি। আমরা ৩ভাই বোন। আমি বড় আর ছোট্ট দু'টো ভাই আছে। আমার পর যে সে ইন্টারমেডিয়েট ১ম বর্ষে পড়ে। আর ছোটো ভাই ক্লাস ৫ম এ পড়ে। ওদের নাম হলো রোহান আহম্মেদ ও রাকিব আহম্মেদ। আমার বাড়ি বরিশাল জেলায়। আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে বাসস্টপে পৌঁছে গেছি। বাস থেকে নেমে একটা অটোতে করে কলেজের সামনে মানে ফাস্ট গেটে নামলাম। অবশ্য নতুল্লাবাদ অথাৎ বাসস্টপ থেকে কলেজ মাত্র পায়ে হাটার ৫থেকে ৭মিনিটের পথ। তারপরও অটো করে গেলাম প্রথম দিন বলে কথা। কলেজ গেটে পা রাখা মাত্রই একটা অন্য রকম অনুভুতি কাজ করা শুরু করল।

দেখলেন কি ভুলো মন আমার আপনাদের বলতেই ভুলে গেছি আমি কোন বিষয়ে অর্নাস করছি। আমি ইসলাম শিক্ষায় অর্নাসে ভর্তি হয়েছি। অবশ্য আমার ইচ্ছে ছিলো বাংলায় অর্নাস করার। কিন্তু আমার বাবার ইচ্ছে ছিলনা বাংলায় অর্নাস করি। বাবা চায় মুসলিম যেহেতু সেহেতু ইসলাম সম্পর্কে জানার এটা একটা ভালো মাধ্যম। তাই বাবার ইচ্ছেটাই মেনে নিলাম। ডিপার্টমেন্টে গিয়ে ক্লাস রুম খুঝে বের করলাম। তারপর ক্লাস রুমে ঢুকলাম। দেখলাম সবাই আমার অপরিচিত কাউকে চিনি না। আর একটা বিষয় দেখে আমি তো পুরো অবাক। কারন আমার যারা ক্লাসমেট তারা প্রায়ই মাদ্রাসার স্টুডেন্ট। এর মধ্যে একজনের সাথে পরিচয় হলো।

আসসালামু আলাইকুম আমি তাসমিয়া জাহান মিনা। আর তুমি? অবশ্য তুমি আমাকে মিনা বলে ডাকতে পারো।

ওয়া আলাইকুমুছ সালাম। আমি মুহসানা জান্নাত রানী। আর তুমি আমাকে রানী বলে ডাকতে পারো।

এরপর শুরু হলো আমাদের নবীন বরন অনুষ্ঠান। আমাদের হেঁট অব দি ডিপার্টমেন্ট স্যার হলেন আবদুর রহমান। তিনি নবীনদের উদ্দেশ্য মূল্যবান কিছু বক্তব্য রাখলে। এবং বাকি স্যারগনও পরিচিত হলেন।এরপর আমাদের ক্লাসের অনেকেই কোরআন তিলাওয়াত করল। সবাই খুব সুন্দর তিলাওয়াত করল আমি তো পুরো অবাক। হবোই বা না কেনো কারন এরা তো হাফেজ ও হাফেজা।

ঠিক তখন একজন স্যার আমাকে বলল এই মেয়ে কি নাম তোমার।

রানীঃ- জি স্যার আমি মুহসানা জান্নাত রানী।

স্যারঃ- তুমি কি কোরআন তিলাওয়াত করতে পারো?

রানীঃ- জি স্যার পারি কিন্তু এদের মতো এতো সুন্দর করে পারিনা। কারন আমি ছিলাম জেনারেল স্টুডেন্ট। তবে স্যার আমি গজল গাইতে পারি।

স্যারঃ- শুনাও তো।

রানীঃ- জি স্যার। বলে গাইতে শুরু করলো

"তুমি আসমানে থাকো প্রভু আমি জামিনে তুমিই প্রেম জমে হৃদয় গহীনে আমি তোমারই গোলাম ওগো অন্য কারো না--------------"

সবাই আমার গজল শুলে বাহবা দিলো। এরপর বড় ভাইয়েরা ছেলেদের ফুল দিয়ে বরন করে নিলো। বড় আপুরাও মেয়েদের সাথে ঠিক তাই করলো।

অনুষ্ঠান শেষ হলে রানী মিনা একসাথে বের হলো।

মিনাঃ- তোমার বাড়ী কোথায়?

রানীঃ- কুন্দিহার আমাদের বাড়ি।

মিনাঃ- আরে আমার বাড়িও তো আহম্মেদাবাদ। আমাদের পাশের গ্রাম কুন্দিহার।

রানীঃ- তাহলে তো ভালোই হলো একসাথে আসা যাওয়া হবে। তোমার ফোন নাম্বার দেও। কাল একসাথে কলেজে যাবো।

মিনাঃ- আচ্ছা। চলো এবার বাসে উঠি। এভাবে তিন চার দিন কেটে গেলো।

আজ কলেজে আসার সময় মিনাকে পেলোনা রানী। আজ মিনা আগেই চলে গেছে কলেজে। তাই রানী একা একা কলেজে আসলো। কলেজ গেট থেকে দুপা হাটতেই হঠাৎ একটা ছেলের সাথে খুব জোরে ধাক্কা লাগলো। টাল সামলাতে না পেরে রানী পরে গেলো। নিচে পরে ছিলো কিছু কাচের টুকরো। কাচের টুকরোর উপর পরে অনেকটা পা কেটে যায়। কিন্তু পা কাটার দিক খেয়াল না করে রানী। উঠে দাঁড়িয়ে ধাক্কা দেওয়া ছেলেটাকে ডাকদিল।

রানীঃ- এই যে মিস্টার Arrogant. আর মনে মনে বলল কি অসভ্য ছেলেরা বাবা ধাক্কা মেরে চলে যাচ্ছে।

ডাক শুনে ছেলেটা দাঁড়ালো। ছেলেটা ফোনে কথা বলতে বলতে হাঁটছিল। রানী প্রথমেই ছেলেটার কাছে গিয়ে একটা ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো তার ফর্সা গালে। তারপর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে আচার মেরে ভেঙে ফেলল।

রানীঃ- এই যে মিস্টার Arrogant আল্লাহ সুন্দর দুটো চোখ দিয়েছে তার সঠিক ব্যবহার করার জন্য।আর আপনি যদি দিনকানা হয়ে থাকেন তাহলে ডাক্তার কেনো দেখান না? এভাবে গন্ডারের মতো হেটে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন কেনো? জিম করা হুলো বিড়াল, বৈদ্যুতিক খুঁটি, শরীর না যেনো লোহার দানব। এতোই যখন মেয়েদের ধাক্কা মারার শখ তাহলে নিজের বৌকে গিয়ে মারেন তাহলে অন্তত চড় খেতে হবে না। অস্ট্রেলিয়া ক্যাঙ্গারু, আটলান্টিক সাগরের পেঙ্গুইন, আমাজান জঙ্গলের গরিলা, মহিষের বয়ফ্রেন্ড, সাত চুন্নির জামাই। তোর বৌ তোকে কোনো দিন ভালবাসবে না। তুই অকালে বিধবা হবি থুক্কু বৌ হারাবি।

রানী কিছু বোঝার আগেই রানীর হাত ধরে টানতে টানতে একটা সি এন জিতে তুলল। রানী বার বার চেষ্টা চালাচ্ছে হাত ছাড়ানোর জন্য। কিন্তু ছেলেটার শক্তির সাথে পেরে উঠলো না। জিম করা হুলো বিড়াল বলে কথা😄। কিছু সময় পর সিএনজি থাকলো। রানী সিএনজি থেকে নেমে এদিক সেদিক দেখলো একটা কাজী অফিসের সামনে। ছেলেটা সিএনজির ভাড়া মিটিয়ে। আবার রানীর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করলো।

রানীঃ- কি হলো আপনি কেনো আমাকে এখানে নিয়ে এলেন?

কিন্তু ছেলেটা একটাও কথা বলল না। সরাসরি রানীকে কাজী অফিসের ভিতর নিয়ে গেলো। জোরে একটা হেচকা টান দিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিলো। সে নিজেও রানীর পাশের চেয়ারে বসে পরলো। তারপর কাজী সাহেবকে বলল কজী সাহেব আমাদের বিয়ে পরান। আমরা বিয়ে করবো।

তার এমন কথা শুনে রানীর চক্ষু তো চড়কগাছ।

রানীঃ- আপনার মাথা টাতা কি ঠিক আছে? আমি আপনাকে চিনি না জানি না আপনাকে বিয়ে করবো কোন সুখে। আমি আপনার মতো পাগল হয়ে যাই নি।

এই কথা শুনা মাত্রই।

ছেলেটাঃ- চুপ একদম চুপ। আর একটা কথা বললে কিন্তু খুন করে গুম করে দিবো। লাশটাও কেউ খুজে পাবেনা (রানীর কানের কাছে গিয়ে)

কাজীঃ- আপনারা যে বিয়ে করবেন সাক্ষী এনেছেন? সাক্ষী ছাড়া তো বিয়ে সম্ভব না।

ছেলেঃ- ওয়েট, আমি দেখছি।

এই বলে বাহিরে চলে গেলো। কিছু সময় পর কয়েক জনকে নিয়ে হাজির। হয়তো এদের টাকা দিয়ে ভাড়া করেছে।

ছেলেঃ- এবার তো বিয়ে পরান।

কাজীঃ- বাবা আপনার পরিচয় বলেন।

ছেলেঃ- আমি মঈনুল হাসান রাজ। বাবা মোঃ সিরাজুল খান। মা মারজান বেগম। বাড়ি ঢাকা।

কাজীঃ- এবার তোমার পরিচয় বলো মামনি।

রানীঃ- ভয়ে চাপা চাপা কন্ঠে তুতলিয়ে বলতে লাগলো আমি মুহসানা জান্নাত রানী। বাবা মুহসিন আহম্মেদ। মা রাবেয়া বেগম। বাড়ি বরিশাল।

তারপর ৫লাখ টাকার দেন মোহরের কাবিননামা রানীর দিকে এগিয়ে বলল মা এখানে সই করো। রানী কাপা কাপা হাত মুজাটা খুলল। ও আপনাদের বলতেই ভুলে গেছি। রানী ফুল পর্দাওয়ালী। সই করার জন্য যখনই কলমটা হাতে নিতেই ঠিক তখনই আবার ধমক শুনলো।

রাজঃ- এই মেয়ে তুমি বাম হাতে কলম ধরছো কেনো ডান হাতে নেও কলমটা।

রানীঃ- আমি বাম হাত দিয়ে লিখি (কাপা কাপা কন্ঠে)

রাজ মনে মনে বলল হাতের রং দেখে তো মনে হয় শ্যামলা একটা মেয়ে। তার আবার এই গুন বাম হাতি। গুনের বাহার।

রানীর সই করা হলে পেপারটা কাজীর দিকে এগিয়ে দিলো।

কাজীঃ- এবার বাবা তোমার পালা। তুমি সই করো।

এমন করে বিয়ে হয়ে গলো রানী আর রাজের। সব কিছু রানীর মাথার উপর থেকে গেলো। রানীকে আবার হাত ধরে টেনে উঠালো

রাজঃ- চলো এবার কলেজে যাও।

রানীর হাত ধরে যখনই টেনে উঠিয়ে চলা শুরু করলো তখনই জোরে উফ করে কান্না শুরু করলো সাথে খুরাতে।

রানীঃ- আমার হাতটা ছাড়ুন পায়ে খুব ব্যথা করছে। রাক্ষস একটা।

এবার রাজ রানীর পায়ের দিকে তাকালো। পা থেকে অনেক রক্ত বের হচ্ছে।

চলবে...........

2
$ 0.00
Avatar for Israt24
3 years ago
Topics: Relationship

Comments