।প্রিয় বৃষ্টিলেখা, সেদিন বাইরে হাওয়া পিছলে পিছলে, আমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে জোছনা ঝরছিল। আমি জানলার গ্রিল ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে দৃষ্টি ছুড়ে ছুড়ে জোছনাছোঁয়ায় মগ্ন ছিলাম। হঠাৎ তোমার বাবা ফোন করে বলল, একটা কবিতা ঠিক করে দাও তো! আমরা দুজনেই কবিতা ভালোবাসি। ফোন পেয়ে আমিও নেমে পড়লাম কবিতাবুননে। একটা জায়গায় 'বৃষ্টি ছুঁয়ে লেখা'র কথা উঠল। দেখি, সেখানে তোমার বাবা ‘বৃষ্টিলেখা’ শব্দটা ব্যবহার করেছে। শব্দটা শুনেই ভীষণ মায়ায় পড়ে গেলাম। আমি আনন্দে চিৎকার করে বললাম, হুররে, আমার মেয়ের নাম হবে বৃষ্টিলেখা। তোমার বাবাও সানন্দে সায় দিয়ে দিল। হ্যাঁ, ঠিক সেদিন থেকে তোমার জন্ম। জেনে রাখো, তোমার বাবাও তোমায় ভীষণ ভালোবাসে ঠিক তোমার মায়ের মতোই। তুমি দেখতে কেমন হবে; তোমার চোখ দুটো বাবার মতো হবে, না কি মায়ের মতো; তোমার প্রথম বুলিটা মা দিয়ে শুরু হবে, না কি বাবা দিয়ে---জানো, এসব নিয়ে কত যে ছেলেমানুষি ঝগড়া বেধে যেত তোমার বাবার সাথে! তোমার চুলগুলো হবে মায়ের মতো ঝরঝরে, তোমার ঘরভর্তি থাকবে পুতুলের সংসার। তোমার বাবার মতো তুমিও হবে বইপোকা, তোমার ঘরের একটা কোনায় থাকবে ছোট্ট একটা সাজানো লাইব্রেরি। আহা, আমাদের মনে কত কত কী স্বপ্ন ঘুরত তোমাকে ঘিরে! প্রিয় বৃষ্টিলেখা, তুমি তো জানোই, তোমার বাবা প্রতি বার চলে যাবার সময় আমি ভীষণ করে টেনে ধরে রাখতাম। যেতে দিতে চাইতাম না। তুমিও নিশ্চয়ই আমার মতোই তোমার বাবা চলে যাবার সময় ‘বাবা, ও বাবা, তুমি যেয়ো না!’ বলে আহ্লাদে, আবদারে পা জড়িয়ে ধরে আটকে রাখতে চাইতে, তাই না, বলো? তোমার বাবা বলে, তুমি নাকি মায়ের চেয়ে বাবাকেই বেশি ভালোবাসো! মেয়েরা নাকি বাবাভক্ত হয় খুউব! বাবা প্রতি বার ঘরে ফেরার সময় তোমার জন্য চকলেট আনত, সুন্দর সুন্দর জামা কিনত, আর তোমার যত পছন্দের খেলনা, সব নিয়ে ঘরে ফিরত। তখন তুমি সে কী মহানন্দে ‘বাবা বাবা’ বলে বাবার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়তে, আর বাবার চোখে মুখে গালে গলায় সারাগায়ে খুব করে চুমুতে চুমুতে আদর মেখে দিতে, তাই না? খুউব ভালোবাসতে বাবাকে, হ্যাঁ, বলো? প্রিয় বৃষ্টিলেখা, এবার আসি আসল কথায়। তোমার বাবা আর তোমার মায়ের বিচ্ছেদ হচ্ছে। আমরা চলে যাচ্ছি নদীর দুইটি বিপরীত পাড়ে। আমরা সিদ্বান্ত নিয়েছি, তোমাকে আমরা আর এই পৃথিবীতে আনব না। কারণ তুমি এলে তোমার পিতৃপরিচয় নিয়ে নাকি তৈরি হবে নানান সংকট। তোমার বাবা তাই বুঝে শুনেই সিদ্বান্ত নিয়েছে যে, তোমাকে এই দুনিয়ার মুখ দেখাবে না। ও-পারে তোমার বাবার সুন্দর ঘরসংসার হবে। ও-ঘরে তোমার বড়োমায়ের সন্তানেরা আছে। তোমার বাবা তোমাকে নিমিষেই ভুলে যাবে। হ্যাঁ, যাবে, যেতে পারবে। কিন্তু আমি? আমি তো মা, তোমাকে ভুলে থাকতে আমি যে একদমই পারি না! আচ্ছা বৃষ্টিলেখা, তুমি সত্যি দেখতে কার মতো হতে? আমার মতো, না কি বাবার মতো? চোখ দুটো বাবার মতো খুব সুন্দর হতো বুঝি? হাসলে কি গালে টোল পড়ত? তোমার থুতনিতেও কি তোমার বাবা-মা দুজনের মতো টোল থাকত? গায়ের রংটা বাবার মতো ফর্সা হতো, না কি মায়ের মতো শ্যামলা? চুলগুলো বাবার মতো কোঁকড়া হতো, না কি মায়ের মতো লতানো? খুব বই পড়তে ভালোবাসতে বুঝি বাবার মতো? বাবার মতো খুব মেধাবী হতে নিশ্চয়ই? পায়ে ঘুঙুর পরে ঝুমুর ঝুমুর গানের তালে নাচ করতে সারাঘর দাপিয়ে, তাই না? মায়ের মতো বিশাল হৃদয়ের একজন মানুষ হতে, না, বলো? বাবাকে জড়িয়ে ধরে বাবার সাথে গলা মিলিয়ে নিশ্চয়ই গান ধরতে…নয়নসরসী কেন ভরেছে জলে… আচ্ছা, তুমি এলে তোমার মায়ের জীবনটা একদমই পালটে যেত, তাই না? সে আর একা একা প্রতিদিন মাঝরাতে হু হু করে কেঁদে উঠত না, তাই না? তোমার কান্না থামাতেই তো তার সমস্ত সময় কেটে যেত। তোমার মা তোমার ভবিষ্যতের কথা ভেবে খুব গোপনে লালন-করে-রাখা স্বেচ্ছামৃত্যুর দীর্ঘপরিকল্পনাটা একদমই বাদ দিয়ে দিত, ঠিক না? তুমি এলে তোমার মায়ের ঘর সুখে ভর্তি হয়ে যেত নিশ্চয়ই? এ-ঘর ও-ঘর, তোমার মায়ের যত শূন্য ঘর, সবখানে আনন্দের জোয়ার বয়ে যেত, তাই না? প্রিয় বৃষ্টিলেখা, সেদিন বাইরে হাওয়া পিছলে পিছলে, আমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে জোছনা ঝরছিল। আমি জানলার গ্রিল ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে দৃষ্টি ছুড়ে ছুড়ে জোছনাছোঁয়ায় মগ্ন ছিলাম। হঠাৎ তোমার বাবা ফোন করে বলল, একটা কবিতা ঠিক করে দাও তো! আমরা দুজনেই কবিতা ভালোবাসি। ফোন পেয়ে আমিও নেমে পড়লাম কবিতাবুননে। একটা জায়গায় 'বৃষ্টি ছুঁয়ে লেখা'র কথা উঠল। দেখি, সেখানে তোমার বাবা ‘বৃষ্টিলেখা’ শব্দটা ব্যবহার করেছে। শব্দটা শুনেই ভীষণ মায়ায় পড়ে গেলাম। আমি আনন্দে চিৎকার করে বললাম, হুররে, আমার মেয়ের নাম হবে বৃষ্টিলেখা। তোমার বাবাও সানন্দে সায় দিয়ে দিল। হ্যাঁ, ঠিক সেদিন থেকে তোমার জন্ম। জেনে রাখো, তোমার বাবাও তোমায় ভীষণ ভালোবাসে ঠিক তোমার মায়ের মতোই। তুমি দেখতে কেমন হবে; তোমার চোখ দুটো বাবার মতো হবে, না কি মায়ের মতো; তোমার প্রথম বুলিটা মা দিয়ে শুরু হবে, না কি বাবা দিয়ে---জানো, এসব নিয়ে কত যে ছেলেমানুষি ঝগড়া বেধে যেত তোমার বাবার সাথে! তোমার চুলগুলো হবে মায়ের মতো ঝরঝরে, তোমার ঘরভর্তি থাকবে পুতুলের সংসার। তোমার বাবার মতো তুমিও হবে বইপোকা, তোমার ঘরের একটা কোনায় থাকবে ছোট্ট একটা সাজানো লাইব্রেরি। আহা, আমাদের মনে কত কত কী স্বপ্ন ঘুরত তোমাকে ঘিরে! প্রিয় বৃষ্টিলেখা, তুমি তো জানোই, তোমার বাবা প্রতি বার চলে যাবার সময় আমি ভীষণ করে টেনে ধরে রাখতাম। যেতে দিতে চাইতাম না। তুমিও নিশ্চয়ই আমার মতোই তোমার বাবা চলে যাবার সময় ‘বাবা, ও বাবা, তুমি যেয়ো না!’ বলে আহ্লাদে, আবদারে পা জড়িয়ে ধরে আটকে রাখতে চাইতে, তাই না, বলো? তোমার বাবা বলে, তুমি নাকি মায়ের চেয়ে বাবাকেই বেশি ভালোবাসো! মেয়েরা নাকি বাবাভক্ত হয় খুউব! বাবা প্রতি বার ঘরে ফেরার সময় তোমার জন্য চকলেট আনত, সুন্দর সুন্দর জামা কিনত, আর তোমার যত পছন্দের খেলনা, সব নিয়ে ঘরে ফিরত। তখন তুমি সে কী মহানন্দে ‘বাবা বাবা’ বলে বাবার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়তে, আর বাবার চোখে মুখে গালে গলায় সারাগায়ে খুব করে চুমুতে চুমুতে আদর মেখে দিতে, তাই না? খুউব ভালোবাসতে বাবাকে, হ্যাঁ, বলো? প্রিয় বৃষ্টিলেখা, এবার আসি আসল কথায়। তোমার বাবা আর তোমার মায়ের বিচ্ছেদ হচ্ছে। আমরা চলে যাচ্ছি নদীর দুইটি বিপরীত পাড়ে। আমরা সিদ্বান্ত নিয়েছি, তোমাকে আমরা আর এই পৃথিবীতে আনব না। কারণ তুমি এলে তোমার পিতৃপরিচয় নিয়ে নাকি তৈরি হবে নানান সংকট। তোমার বাবা তাই বুঝে শুনেই সিদ্বান্ত নিয়েছে যে, তোমাকে এই দুনিয়ার মুখ দেখাবে না। ও-পারে তোমার বাবার সুন্দর ঘরসংসার হবে। ও-ঘরে তোমার বড়োমায়ের সন্তানেরা আছে। তোমার বাবা তোমাকে নিমিষেই ভুলে যাবে। হ্যাঁ, যাবে, যেতে পারবে। কিন্তু আমি? আমি তো মা, তোমাকে ভুলে থাকতে আমি যে একদমই পারি না! আচ্ছা বৃষ্টিলেখা, তুমি সত্যি দেখতে কার মতো হতে? আমার মতো, না কি বাবার মতো? চোখ দুটো বাবার মতো খুব সুন্দর হতো বুঝি? হাসলে কি গালে টোল পড়ত? তোমার থুতনিতেও কি তোমার বাবা-মা দুজনের মতো টোল থাকত? গায়ের রংটা বাবার মতো ফর্সা হতো, না কি মায়ের মতো শ্যামলা? চুলগুলো বাবার মতো কোঁকড়া হতো, না কি মায়ের মতো লতানো? খুব বই পড়তে ভালোবাসতে বুঝি বাবার মতো? বাবার মতো খুব মেধাবী হতে নিশ্চয়ই? পায়ে ঘুঙুর পরে ঝুমুর ঝুমুর গানের তালে নাচ করতে সারাঘর দাপিয়ে, তাই না? মায়ের মতো বিশাল হৃদয়ের একজন মানুষ হতে, না, বলো? বাবাকে জড়িয়ে ধরে বাবার সাথে গলা মিলিয়ে নিশ্চয়ই গান ধরতে…নয়নসরসী কেন ভরেছে জলে… আচ্ছা, তুমি এলে তোমার মায়ের জীবনটা একদমই পালটে যেত, তাই না? সে আর একা একা প্রতিদিন মাঝরাতে হু হু করে কেঁদে উঠত না, তাই না? তোমার কান্না থামাতেই তো তার সমস্ত সময় কেটে যেত। তোমার মা তোমার ভবিষ্যতের কথা ভেবে খুব গোপনে লালন-করে-রাখা স্বেচ্ছামৃত্যুর দীর্ঘপরিকল্পনাটা একদমই বাদ দিয়ে দিত, ঠিক না? তুমি এলে তোমার মায়ের ঘর সুখে ভর্তি হয়ে যেত নিশ্চয়ই? এ-ঘর ও-ঘর, তোমার মায়ের যত শূন্য ঘর, সবখানে আনন্দের জোয়ার বয়ে যেত, তাই না? তোমার চিরদুঃখিনী মায়ের চোখে চিরআনন্দের রেখা পড়ে যেত, তাই না, বলো? তোমার মা তোমায় অঙ্ক, ইংরেজি শেখানোর চেয়ে বরং মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, দয়া, দায়িত্বশীলতা বোঝাত আর মহৎ হতে শেখাত, তাই না? তুমিও মায়ের মতো খুব দরদি মানুষ হতে নিশ্চয়ই? প্রিয় বৃষ্টিলেখা, আমি দুঃখিত। দুঃখিত আমরা দুজনই। তোমার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হচ্ছে। তুমি বাবা-মা দুজনকেই ক্ষমা করে দিয়ো। আমরা তোমাকে পৃথিবীতে আসতে দিইনি। তুমি আমাদের হয়ে আমাদের কোলজুড়ে আসতে আর পারোনি। তোমার সবচেয়ে কাছের দুজন মানুষই আজ তোমাকে সবচেয়ে বেশি দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তোমাকে কেবলই একটা নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রেখেছি আমরা। তোমাকে কেবলই একটা নাম দিয়েছি, জীবনটা আর দিলাম না...দিতে আর পারলাম না। ক্ষমা করে দিয়ো, বৃষ্টিলেখা। বৃষ্টিলেখা, তোমার মতো অগনিত বৃষ্টিলেখা এই পৃথিবীতে জন্মে কেবলই একটা নাম হয়ে, মানুষ হয়ে জন্মে আর ওঠে না। তোমাকে কেবল নামেই সীমাবদ্ধ করে রাখার জন্য আমাদের তুমি ক্ষমা কোরো। একটা কথা নিশ্চিতভাবে জেনো, তোমাকে তোমার বাবা-মা সত্যিই অনেক ভালোবাসত, ভালোবাসে, ভালোবাসবে। ইতি তোমার ভীরু-স্বার্থপর বাবা-মা
তোমার চিরদুঃখিনী মায়ের চোখে চিরআনন্দের রেখা পড়ে যেত, তাই না, বলো? তোমার মা তোমায় অঙ্ক, ইংরেজি শেখানোর চেয়ে বরং মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, দয়া, দায়িত্বশীলতা বোঝাত আর মহৎ হতে শেখাত, তাই না? তুমিও মায়ের মতো খুব দরদি মানুষ হতে নিশ্চয়ই? প্রিয় বৃষ্টিলেখা, আমি দুঃখিত। দুঃখিত আমরা দুজনই। তোমার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হচ্ছে। তুমি বাবা-মা দুজনকেই ক্ষমা করে দিয়ো। আমরা তোমাকে পৃথিবীতে আসতে দিইনি। তুমি আমাদের হয়ে আমাদের কোলজুড়ে আসতে আর পারোনি। তোমার সবচেয়ে কাছের দুজন মানুষই আজ তোমাকে সবচেয়ে বেশি দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তোমাকে কেবলই একটা নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রেখেছি আমরা। তোমাকে কেবলই একটা নাম দিয়েছি, জীবনটা আর দিলাম না...দিতে আর পারলাম না। ক্ষমা করে দিয়ো, বৃষ্টিলেখা। বৃষ্টিলেখা, তোমার মতো অগনিত বৃষ্টিলেখা এই পৃথিবীতে জন্মে কেবলই একটা নাম হয়ে, মানুষ হয়ে জন্মে আর ওঠে না। তোমাকে কেবল নামেই সীমাবদ্ধ করে রাখার জন্য আমাদের তুমি ক্ষমা কোরো। একটা কথা নিশ্চিতভাবে জেনো, তোমাকে তোমার বাবা-মা সত্যিই অনেক ভালোবাসত, ভালোবাসে, ভালোবাসবে।
ইতি
তোমার ভীরু-স্বার্থপর বাবা-মা
ধন্যবাদ