বেকারত্ব আসলেই এক মারাত্মক অভিশাপ যা কেবল একজন শিক্ষিত বেকার ই বুঝে। স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া থাকলেও বেকারের দু'পা শিকল দিয়ে বাঁধা থাকে যাতে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে অগ্রসর না হয়। তবে মহান আল্লাহ তা'আলা সবাইকে কখনোই বেকার রাখেন না। উত্তম রিজিকের সন্ধানকারী একমাত্র আল্লাহ। তিনি অবশ্যই প্রতিটি মানুষের জন্য রিজিকের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। মহান আল্লাহ তা'আলার উপর বিশ্বাস রেখে বাবা-মা'য়ের দো'আ নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে আপনি আপনার যথাযোগ্য জায়গায় যাওয়ার জন্য টেবিলে মনোযোগ দিতে হবে এবং আপনাকে সর্বাত্মক পরিশ্রম করতে হবে। আপনি চাকরি করুন বা বিজনেস করুন এমনকি বিদেশে গিয়ে চাকরি করবেন এসবের জন্যও পড়াশোনার দরকার রয়েছে। আর মনে রাখবেন পড়াশোনা জানা না থাকলে লেবার ছাড়া বিদেশে কোন কাজ পাবেন না। হয়তো অনেকে বিদেশে গিয়ে অনেক টাকার মালিক হয়েছে কিন্তু একজন শিক্ষিত মানুষ যা জানে সেই টাকা অলা ব্যক্তি তা জানে না।
আজ অনেকদিন যাবত অনেক গুলো পোস্ট দেখছি ফেজবুকে যে "চাকুরী করে পড়াশোনা করা কি সম্ভব"।আপাতদৃষ্টিতে দেখতে গেলে বলতে হয় আমি বলবো " #ছোটখাটো_প্রাইভেট_জবের_পাশাপাশি_পড়াশোনা_করা_উচিত"। বাসায় কখনোই আপনি স্থির হয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন না। বাসায় থাকলে আপনি মানসিক টেনশনে থাকবেন যা আপনার পড়া গুলো ভুলিয়ে দিতে পারে। বাসায় যখন পড়তে বসবেন বাসায় প্রয়োজনীয় কাজে আপনাকে টেবিল ছেড়ে উঠতেই হবে। আর ঘুম থেকে ত আপনি সকাল ৯/১০ বাজলেও উঠবেন কিনা সন্দেহ আছে। টেলিভিশন, মোবাইল, কম্পিউটার, অনলাইন ইত্যাদির দিকে একটু একটু চোখ দিতে ইচ্ছা করবে সব সময়। আজ বাসায় অমুক মেহমান আসলো, অমুক বন্ধু আসলো এমনকি পাশের বাসার মেহমানরাও আসলো বলেন ত সেদিন আপনার পড়াশোনা হবে কিনা! আর পকেটে যখন বিড়ি খাওয়ার পয়সা থাকবে না তখন বুঝবেন বেকারের পকেট মানিটা কত প্রয়োজন। আর বাসায় থেকে পড়াশোনা হবে না যখন দেখবেন আপনার আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবসহ রাস্তার কুকুরটিও আপনাকে কটু কথা হবে আপনার মনটাকে ছোট করে রাখবে।তখন মুখ লুকিয়ে ওয়াশরুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নির্ঝরে অশ্রু ঝরানো ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। এমন অবস্থা আমিসহ অনেকের ই হয়েছে।
ধরুন আপনি কম বেতনে একটা চাকুরি করছেন। বেতনের কথা বাদ দেন! আপনার চাকুরির অভিজ্ঞতা হচ্ছে, অল্প পকেট মানি আসছে, চাকুরির আবেদন করার সময় আবেদন ফি কারও কাছে চাইতে হচ্ছে না, অফিসে যাবেন তাই সেই ভোরেই ঘুম ভেঙে যাবে, চাকুরির পরিক্ষা দিতে গেলেও ভাড়ার জন্য কারও কাছে হাত পাততে হচ্ছে না, নিজের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনতে পারছেন, প্রিয়তমাকে ছোট ছোট উপহার দিতে পারছেন এমনকি পরিবারের মুখ গুলোও একটু স্বস্তিতে থাকবে আপনি চাকুরি করেন বলে। এই ভালো লাগার মুহূর্তটুকু যদি থাকে তবে আপনি পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারবেন। তাই বলা চলে " বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতম স্বার্থ ত্যাগ করাই উত্তম"। মধ্যবিত্ত পরিবারের পড়ুয়া স্টুডেন্টদের এটা মেনে চলা উচিত আমি মনে করি। আপনার ডিউটি ১২-১৪ ঘন্টা, চাকুরি শেষে পড়াশোনা করতে মন চায় না, পড়াশোনা করলেও মনে রাখতে পারেন না, ঘুম ঘুম ভাব থাকে, শরীর নিতে পারে না চাকুরির শেষে টেবিলে বসা। আরে ভাই এগুলো "অজুহাত", এতো অজুহাত দেখান কেন? আপনি চাকুরি না করেই বা বাসায় কতটুকু সময় পড়াশোনা করেন সেটা হিসাব করে দেখেন ত! আপনার যদি ইচ্ছা থাকে, আপনি যদি মনে করেন আপনাকে দিয়ে সম্ভব, আপনি যদি মনে করেন সমাজের মধ্যে আপনার একটা পরিচয় প্রয়োজন, আপনি যদি মনে করেন আপনার বাবা-মা'য়ের মুখে হাসি ফোটাবেন, আপনি যদি মনে করেন আপনার প্রিয়তমা অন্যজনের হাত ধরে না যাক, আপনি যদি মনে করেন বন্ধু-বান্ধব আপনাকে নিয়ে মজা না করে বরং আপনাকে নিয়ে গর্ব করুক ইত্যাদি এর জন্য হলেও আপনাকে কষ্ট করে পড়াশোনা করা উচিত। চাকুরি করলে আপনার সম্মান কমবে না বরং সম্মান বাড়বে। কষ্ট করে যে পড়াটা পড়বেন সেটা মনে থাকবে। কয়জন ই বা বাসায় পড়াশোনা করে সরকারি চাকুরিজীবী হয় বলেন ত। হ্যাঁ যদি আর্থিকভাবে সচ্ছল হন সেটা অন্য ব্যাপার।
আপনি ১০-১২ ঘন্টা জব করে বাসায় আসলেন খুব ট্রায়াড লাগছে। শরিরে জোর নাই টেবিলে মনোযোগ দেয়ার। কিন্তু টেবিলে না বসে আপনি দিব্বি ফোন নিয়ে ফেজবুকিং করতে করতে রাত বারোটা বাজিয়ে দেন। আপনি জব থেকে বাসায় ২-৩ ঘন্টা ঘুমিয়ে নিন, ঘুম থেকে উঠে দেখবেন আপনি ফ্রেস হয়ে গেছেন। মাথায় কোন রকম চাপ থাকবে না এমনকি আপনার মনও ফুরফুরে হয়ে যাবে। ঠিক এমন সময় ৩/৪/৫ ঘন্টা পড়ুন দেখবেন আপনার মনোযোগ বইয়েই থাকবে। সাথে পড়াও মনে থাকবে। আপনি পড়ার সময় কিছু কিছু জিনিস আপনার মোবাইল ফোনে রেকর্ড করুন যা আপনার অবসর সময়ে যেমন গাড়িতে চড়ার সময়, রাতে ঘুমার সময়, বাহিরে হাটার সময় ইত্যাদি সময়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে সেই পড়াগুলো শুনতে থাকুন। আপনি কোন একটা টপিক্স বুঝতেছেন না আপনি সেই টপিক্সটা নোট করে রেখে আপনার অফিস কলিক (যার সাথে আপনি মিশুক বা আপনার মত যিনি জব করে পড়াশোনা করছে) এর সাথে অফিস বিরতির সময় আলোচনা করুন দেখবেন আপনার অজানা পড়াটাও শিখে যাবেন। আর আপনার চাকুরির অভিজ্ঞতাও হয়ে যাবে। তাই আপনি যদি পারেন পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট একটা চলার মত জব ধরে নিন অথবা টিউশনি করুন।
আমি নিজেসহ অনেককেই দেখেছি জব বা বিজনেস করেও তারা সরকারি চাকুরিজীবী। তাই আজ ই আপনাকে প্রস্তুত করুন আপনার পরিশ্রম দিয়ে আর বাকিটা না হয় আল্লাহর উপর ছেড়ে দেন....😊
মোহাম্মদ মীর হোসাইন মীরা,
উপ-সহকারী প্রকৌশলী,
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি),
বিদ্যুৎ বিভাগ- বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, ঢাকা।
ধন্যবাদ।