#বাংলাদেশ_কি_সত্যি_উন্নয়নের_পথে_যাচ্ছে?
পোস্টটির আলোচনা কিছু ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে। তাই খারাপ লাগলে এড়িয়ে চলুন।
আজ বিশ্ব খাদ্য দিবস। বরাবরের মত এবারো বিশ্ব ক্ষুধা সূচক ২০১৮ প্রকাশ করেছে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা কন্সার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড এবং জার্মান ভিত্তিক সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড। এই সূচকে বাংলাদেশ এখন গত বছর থেকে দুই ধাপ এগিয়ে ৮৬ তম অবস্থানে। ভারতের অবস্থান আমাদের থেকে ১৭ ধাপ পেছনে ১০৩ তম এবং পাকিস্তানের অবস্থান ১০৬ তম।
প্রশ্ন হল আসলেই বাংলাদেশ দারিদ্র এবং ক্ষুধার বিরুদ্ধে সফল হতে পেরেছে? রাজনৈতিক মতাদর্শ বাদ দিয়ে একটু ভাবুন।
বেশি না, এখন থেকে ১৫-২০ বছর আগের কথা। যশোরে আমাদের বাসায় কিছুক্ষণ পর পর ভিক্ষুক আসত। ভিক্ষা দেবার জন্য সিলভারের চৌকোনা ৫ পয়সা এবং ঢেউ খেলানো ১০ পয়সা রেখে দেয়া হত। নিয়মিত ভিক্ষুক আসলে তাকে ৫ পয়সা এবং যার অবস্থা দেখে একটু অসহায় মনে হত তাকে ১০ পয়সা দেয়া হত। পয়সা না থাকলে এক মুঠো চাল দিলেও তারা খুশি ছিল। প্রতিটি ভিক্ষুক একটা ব্যাগ হাতে করে ভিক্ষা করত। সারাদিনের জমা ৪-৫ কেজি চাল হাতে করেই ভিক্ষা করে বেড়াতো। প্রসঙ্গত আমরা ধনী পরিবারের কেউ নই তাই ৫ বা ১০ পয়সা ভিক্ষা দেয়া বা এক মুঠো চাল ভিক্ষা দেয়ায় আমাদের সামর্থ্যের ভেতর ছিল।
যাদের বয়স একটু বেশি তারা হয়ত ওই সময়ের কথা মনে রাখবেন।
এখনকার মত এত ফ্রিজ ছিলনা তখন। তাই রাতে খাবার পর ভাতে পানি দিয়ে রাখা হত। সকালে পান্থা ভাত যদি না পচতো তাহলে খেতাম। যেটি একটু বেশি পচে যেত সেটাকে ফেলে দেবার আগে ভিক্ষুকদের জিজ্ঞাসা করা হত খাবেন কিনা? হয়ত ডাল পচে টক হয়ে গেছে। সেটাও দেয়া হত। খুব কম ভিক্ষুক কে দেখেছি যে প্রত্যাখ্যান করতে। একটা মরিচ এবং পিয়াজ দিলেই ঘরের বারান্দায় বসে সুন্দর মত চেটে পুটে খেয়ে উঠত। অনেকে ভাতের মাড় ও খেতো।
আচ্ছা এখন কি আপনারা সেরকম কিছু দেখেন বাংলাদেশে? মনে হয়না। এখন ভাত বা ডাল পচে গেলে সেটা ফেলে দিতে হয়। চেয়ে খাবার মত কেউ নাই। এমনকি জেলা সদরে ভিক্ষুকের পরিমান অনেক কমে গেছে।
এবার আসি আরেকটা বিষয়ে। সেই সময়ের কথা যদি আপনাদের মনে থাকে তবে বুঝবেন কাজের লোক বা বোয়া খুজতে বেশি বেগ পাওয়া লাগত না। ২০০ টাকা দিলেও তারা সারামাস কাজ করে দিত। বেতন বাড়ানোর হুমকি দিত না। একটু বড়লোক ছিল যারা তারা গ্রাম থেকে ছোট বাচ্চাদের এনে রাখত ঘরের কাজ করানোর জন্য। কিন্তু এখনকার বাংলাদেশ কি সেই অবস্থানে আছে? ঢাকা শহরে মেসে যারা থাকেন তারাও জানেন বুয়া খুজে পাওয়া কতটা কষ্টকর। চাইলেই পাওয়া যায়না। গার্মেন্টস এর মত অনেক খাত দাঁড়িয়ে যাবার ফলে এখন বাসায় কাজ করার মানুষ অনেক কমে গেছে। অনেকে হয়ত স্বীকার করবেন না। কিন্তু এটাই সত্য।
ক্ষুধার বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাংলাদেশের যে সাফল্য সেটার স্বীকৃতি মিলেছে সারা বিশ্বে। ২০০০ সালের দিকেও এদেশে অর্ধেক মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বাস করত। আর এখন সেটা ২৪% এ নেমে এসেছে। অতি দরিদ্র এখন মাত্র ১২%। আমাদের ছোট কাল কেটেছে পরীক্ষায় বাংলাদেশের বদনাম করে। এদেশে যেন কিছুই হওয়া সম্ভব ছিলনা। কিন্তু পরিবর্তন টা এখন আমরা দেখছি। সারা বিশ্ব দেখছে। আজ ক্ষুধা সূচকে আমরা ভারত পাকিস্তানের মত দেশকে টপকে গেছি। এই অর্জন ছোট না।
বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, সেই সময়ে একটি ডিম ভেজে সেটাকে ৪-৫ ভাগ করে একটি পরিবারের সবাই খেত। কিন্তু এখন ঢাকা শহরের কোন হোটেলের পাশে সকাল বেলা ১০ মিনিট সময় করে দাঁড়িয়ে লক্ষ করবেন। ডিম ভাংতেছে আর কড়াইতে ছাড়তেছে। অনবরত যেন কোন এক অদ্ভুত নৃত্য চলছে। হোটেলে খাওয়া ছিল বিলাসিতা। মাসে একবার মুরগি দিয়ে ভাত খাওয়া অনেক বড় ব্যাপার ছিল। এখনকার ছোট বাচ্চাগুলা প্রতিবেলায় মুরগি ছাড়া খেতে চায়না।
প্রতিটি জেলা শহরে আগে খাবারের দোকান ছিল গুটিকয়েক। এখন রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া আর সেলফি তুলে আপ না করলে সে যেন সমাজবিচ্ছিন্ন কোন প্রানী। একটা আরেকটার সাথে পাল্লা দিয়ে আরো উন্নত ডেকরেশনে রেস্টুরেন্ট খুলে বসেছে। কোন কোন রেস্টুরেন্টে বসার স্থান পেতেও বেগ পেতে হয়।
শত শত টাকা প্রতিদিন মোবাইলের পেছনে আর ডাটা কিনে ব্যয় করা এখন হাল ফ্যাশন। এই প্রজন্ম কি কখনো জানতে পারবে আগের বাংলাদেশের অবস্থা কি ছিল? হয়ত পারবে না। কেএফসি বা পিজা হাটের কোন আউটলেট উদ্বোধন হলে এখন ভীড় লেগে যায়। কিছুক্ষন পর পর টাইমলাইনে চেক ইন করে @অমুক রেস্টুরেন্ট। পরিবর্তন টা চোখে পড়ার মত।
অনেকে বলেন এখনো অনেক মানুষ আছে আসহায়। চোখ থাকলে দেখতে পেতেন। হ্যা। কথা সত্য। দেশে এখনো ১২% মানুষ অতি দরিদ্র। তবে এখনকার অতি দরিদ্ররাও হয়ত পান্থা ভাত আর টক ডাল খেতে রাজি নয়।
একটা দেশ উন্নত হচ্ছে কি হচ্ছে না সেটা বাস্তব জীবন থেকে বুঝা যায়। আবার একটি দেশের সামগ্রিক বিভিন্ন সূচক থেকেও অনুধাবন করা যায়। যেমন ধরুন ২০০২ সালেও বাংলাদেশে মাথা পিছু বিদ্যুৎ ব্যাবহার ছিল ১৩০ কিলোওয়াট ঘন্টার কম। ২০১৮ সালে এসে সেটি ৪৮০ কিলো ওয়াট ঘন্টা হয়েছে। হ্যা বিদ্যুৎ এর দাম বেড়েছে ঠিক। কিন্তু আপনার আয় বৃদ্ধি না পেলে কি আপনি বিদ্যুৎ ব্যাবহার এত বাড়াতে পারতেন? আয় ও বৃদ্ধি পেয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন বা ব্যাক্তিগত বাসা বাড়ির অবস্থা কতটা উন্নত হয়েছে সেটাও বুঝা যাবে মাথা পিছু সিমেন্ট ব্যাবহার থেকে। ২০০২ এর দিকে যেখানে মাথা প্রতি সিমেন্ট ব্যাবহার ছিল ২০-২২ কেজি সেটা ২০১৮ তে এসে ১৬৪ কেজি হয়েছে। এর বিশ্লেষণে বুঝা যায় যে আগের দিনের টিনের ঘর গুলি এখন পাকা বিল্ডিং এ পরিনত হবার হার বেড়েছে। সেই সাথে রিয়েলএস্টেট খাতেও বিনিয়োগ বেড়েছে। আপনারা কয়জন সুন্দরবনের গোলপাতার ঘর দেখেছেন জানিনা। এখন নিজ জেলায় একটি ঘর ও নেই সুন্দরবনের গোলপাতার।
বাংলাদেশের যে উন্নতিটা হয়েছে এটা চোখে পড়ার মত। কিছুদিন আগেও বিশ্বব্যাংক এর দক্ষিণ এশীয় প্রধান বলে গেলেন সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ একটি উত্তম উদাহরণ দারিদ্র হ্রাসের ক্ষেত্রে৷
ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যত বাংলাদেশ আরো উন্নত হোক। আমাদের তুলনা যেন আমরা ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়ার মত দেশের সাথে করতে পারি সেই অপেক্ষায়.....
Defence research forum
লেখাটা ২০১৮ সালের। সময়ের সাথে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আমার অভিজ্ঞতাও। এদেশের মুক্তি এবং শান্তির জন্য অন্যায্য বাজার ব্যাবস্থা বন্ধ করতে হবে। দূর্নীতি বন্ধ করতে হবে। আর দুর্নীতি বন্ধ করতে গেলে দুটি জিনিস লাগবে। নৈতিকতা এবং দেশপ্রেম। আপনার ধর্ম আপনাকে শেখায় না অন্যের হক মেরে খেতে। আপনি আমি যখন ঘুষ দুর্নিতী করছি তখন একি সাথে তিনটি অপরাধ করছি।
এক. আমরা অন্যের হক নষ্ট করছি। যেটার জন্য আল্লাহ বলেছেন হাশরের সময় হক্কুলিবাদের দায়িত্ব তিনি নিবেন না।
দুই. দেশের সাথে বেইমানি করছি।
তিন. নিজের বিবেক ধ্বংশ করছি।
আসুন নিজের দেশকে ভালবাসি। নিজেদের বিবেককে জাগ্রত করি। আর অবশ্যই এই দেশটাকে ভালবাসি। বেইমানি না করি।
ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময়ের জন্য।