জাতির উদ্দেশে ওলামায়ে কেরামের ৮ নির্দেশনা
(১) তওবা, ইস্তেগফার ও দুআ : পৃথিবীতে যা কিছু হয় আল্লাহ তাআলার হুকুমেই হয়। রোগবালাই, মহামারি সবই আল্লাহর হুকুমে আসে। আবার তাঁর হুকুমেই নিরাময় হয়। এ বিশ্বাস সকল মুমিনেরই থাকতে হবে। এ মহামারি থেকে বাঁচার জন্য মহান আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে। আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য হলো সকল গুনাহ ও অপরাধ হতে বিরত থেকে বেশি বেশি তওবা ও ইস্তিগফার করা এবং নিম্নের দুআগুলো সর্বদা পড়তে থাকা।
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
বাংলা উচ্চারণ: ‘বিছমিল্লা হিল্লাযি লা ইয়াদুররু মা‘আছমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিছছামায়ি ওয়া হুয়াছ্ ছামিয়ুল আলিম।’
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ، وَالْجُنُونِ، وَالْجُذَامِ، وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ
বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘উজুবিকা মিনাল বারাছি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুযামি ওয়ামিন সায়্যিইল আসকাম।’
لَّاۤ إِلَـٰهَ إِلَّاۤ أَنتَ سُبۡحَـٰنَكَ إِنِّی كُنتُ مِنَ ٱلظَّـٰلِمِینَ
বাংলা উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুন্তু মিনাজ্ জলিমীন।’
(২) সতর্কতা অবলম্বন : রোগ ও ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য সতর্কতা অবলম্বন ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সতর্কতা অবলম্বন তাওয়াক্কুল পরিপন্থী নয়। বরং নবীজী (সা) এর সুন্নত।
(৩) মসজিদ সংক্রান্ত : মসজিদে নিয়মিত আযান, ইকামত, জামাত ও জুমার নামাজ অব্যাহত থাকবে। তবে জুমআ ও জামাতে মুসল্লিগণের অংশগ্রহণ সীমিত থাকবে অর্থাৎ নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গ জুমআ ও জামাতে অংশগ্রহণ করবেন না:
(১) যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত, (২) যাদের সর্দি, জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট আছে, (৩) যারা আক্রান্ত দেশ ও অঞ্চল থেকে এসেছেন, (৪) যারা উক্তরূপ মানুষের সংস্পর্শে গিয়েছেন, (৫) যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, (৬) বয়োঃবৃদ্ধ, দুর্বল, মহিলা ও শিশু, (৭) যারা অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ও (৮) যারা মসজিদে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন তাদেরও মসজিদে না আসার অবকাশ আছে।
যারা জুমআ ও জামাতে যাবেন তারা সকলেই যাবতীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা অবলম্বন করবেন। ওযু করে নিজ নিজ ঘরে সুন্নাত ও নফল আদায় করবেন। শুধু জামাতের সময় মসজিদে যাবেন এবং ফরজ নামাজ শেষে দ্রুত ঘরে চলে আসবেন। সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, মাস্ক পড়া, জীবাণুনাশক দ্বারা মসজিদ ও ঘরের মেঝে পরিস্কার রাখাসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সকল নির্দেশনা মেনে চলবেন। হঠাৎ হাঁচি-কাশি এসে গেলে টিস্যু বা বাহু দিয়ে মুখ ঢেকে রাখবেন।
(৪) খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মসজিদ কমিটির করণীয় :
(১) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পূর্বে সম্পূর্ণ মসজিদকে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং কার্পেট-কাপড় সরিয়ে ফেলা।
(২) জামাত সংক্ষিপ্ত করা। (৩) জুমার বয়ান, খুতবা ও দোয়া সংক্ষিপ্ত করা। (৪) বর্তমান সংকটকালে দরসে হাদীস, তাফসির ও তা’লীম স্থগিত রাখা। (৫) ওযুখানায় অবশ্যই সাবান ও পর্যাপ্ত টিস্যু রাখা। (৬) বর্তমান পরিস্থিতিতে জামাতের কাতারে ফাঁক ফাঁক হয়ে দাঁড়ানো। (৭) ইশরাক, তিলাওয়াত, যিকির ও অন্যান্য আমল ঘরে করা। (৮) ঢাকাসহ দেশের কোন মসজিদে যদি কোন বিদেশী মেহমান অবস্থানরত থাকেন তাদের বিষয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে সত্ত্বর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(৫) করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন ও জানাযা : হাদিসের বর্ণানুযায়ী মহামারিতে মৃত মুমিন ব্যক্তি শহীদের মর্যাদা লাভ করেন। করোনায় মৃত ব্যক্তির কাফন, জানাযা ও দাফন যথাযথ মর্যাদার সাথে করা জরুরি। করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফনে সহযোগিতা করুন। তাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব প্রকাশ বা কোনরূপ অসহযোগিতা করা শরীয়তবিরোধী ও অমানবিক।
(৬) দান-সাদকা : হাদিস শরীফে আছে দান-সাদকা দ্বারা বালা মছিবত দূর হয়। এই সংকটকালীন সময়ে আল্লাহর রহমত লাভের উদ্দেশ্যে দুস্থ ও অসহায়দের বেশি বেশি দান-সাদকা করুন। নিম্ন আয়ের মানুষের নিকট খাদ্যপণ্য পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করুন।
(৭) গুজব সৃষ্টি না করা : এ সমস্ত বিষয়ে গুজব মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই গুজব সৃষ্টি করা বা গুজবে বিশ্বাস করা সর্বোতোভাবে বর্জন নিশ্চিত করতে হবে।
(৮) প্রচার-প্রচারণা : ওলামায়ে কেরামের এ আহ্বান আন্তরিকতার সাথে ব্যাপক প্রচার ও বাস্তবায়নের জন্য দেশের সকল মসজিদের খতিব, ইমাম, মসজিদ কমিটি, গণমাধ্যম, জনপ্রতিনিধি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা/কর্মচারী/শিক্ষকসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।
(সুত্র: আওয়ার ইসলাম ২৪)
0
2
Written by
Imran16
Imran16
4 years ago
Written by
Imran16
Imran16
4 years ago