মাহিম,সরকারি চাকুরে।ভালোবেসে বিয়ে করেছে একসময়ে একসাথে কলেজ পড়ুয়া বান্ধবী শশিকে।বিয়েতে অবশ্য বাবা-মায়ের একটু মনঃক্ষুন্ন হয়েছিল। কেননা, তারা মাহিমকে মামাতো বোন ফাতিমার সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
মাহিমের স্ত্রী প্রথম থেকেই শ্বশুর-শাশুড়ির তেমন টেক কেয়ার করে না।মাহিমকে প্রায় সময় সেপারেট হওয়ার কথা বলে।মাহিম আপত্তি করলে মাসিক খরচাপাতি বাবদ টাকা পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলে।
মাহিম জোর দিয়ে কোনো কথা বলে না।ফলশ্রুতিতে, ছয় মাসের মাথায় মাহিম শহরে পোস্টিং নিয়ে স্ত্রীসহ চলে যায়।
মা-বাবা অনেক আগে থেকে বুঝতে পেরেছিল তাদের সাথে এমনটা হতে চলেছে। তাই নিয়তির ফের বলে মেনে নিয়েছে।
মাহিম বিদায় নেয়ার সময় মা-বাবাকে বলে--"আপনাদের যেকোনো সুবিধা অসুবিধার কথা আমাকে অবশ্যই জানাবেন। ”
মাহিমের বাবা মুচকি হেসে উত্তর দিয়েছিলেন --"ঠিক আছে বাবা,তোমরা ভালো থেকো।
তারপর আরও একটি বছর কেটে গেল। মাহিমের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। কয়েকদিন থেকেই মাথাঘোরা, বমি বমি ভাব,খাবারে অরুচি দেখা দিয়েছে। মাহিম তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। ডাক্তার সমস্ত চেক-আপ করে মাহিমকে বাবা হতে চলার খুশির খবর দিলেন। সাথে সাথে রোগীর যত্ন নিতে এবং ভারী কাজ করা থেকে বিরত রাখার পরামর্শ দিয়ে যখনই সমস্যা দেখা দেবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দিলেন।
অবশেষে যাওয়ার সময় উপস্থিত হলো।মাহিম খুব ব্যস্ত হয়ে উঠলো।মা-বাবার কাছে ফোন দিলো,বললো--"মা,শশিকে হাসপাতালে নিচ্ছি। তার ইচ্ছা সিজার করাবে।সে তার এক বান্ধবীর কাছে শুনেছে সিজারের ব্যাপারে।
মাহিমের মা আপত্তি করে বলে--"বাবা,বৌমার কি খুব অসুবিধা যে সিজার না করালে নয়?"
---না মা,তেমন না।তোমার বৌমার এটা একটা ইচ্ছা বলতে পারো।আর এখন সিজারই করে সবাই।
---ও,আচ্ছা। কিন্তু, বাবা!আমাদের সময় তো সিজারের কথা জানতই না অধিকাংশ মানুষ। তবু, অনেক বাচ্চা তারা জন্ম দিত কোনো সমস্যা ছাড়া।বাবা,তোমরা আমাদের কোনো কথার কি মূল্য দেবে না?
ফোনটা স্ত্রীর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে এবার মাহিমের বাবা বলতে লাগলেন --"দেখো মাহিম,আমি তোমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বরাবরই যায়নি আর আজও যাবো না।তোমাদের যেটা ভালো মনে হয় সেটা তোমরা করবে।বুঝতে পারছি যুগের দোহাই দিয়ে এত বড় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কেও তোমরা ফ্যাশন বানিয়ে ফেলেছো।দেখো,জীবন বিপন্ন হতে পারে,ক্ষতি হতে পারে এমন কিছুকে ফ্যাশন ভেবে মস্তবড় বোকামি কোনোদিন কোরো না।তোমাকে আমি ইসলামের শিক্ষা যথেষ্ট দিতে পারি নি।তার জন্য আমি মনে করি তুমি জ্ঞানে অনেক অপূর্ণ। তুমি কী জানো আমাদের পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা(A complete code of life) ইসলাম এ সম্পর্কে কি বলে?
"শরীরের কোনো ক্ষতি হোক ইসলাম তা কখনো সমর্থন করে না।মানুষের দেহও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটা ছেঁড়া হারাম।তাছাড়া এতে বিনা প্রয়োজনে কোনো পুরুষ চিকিৎসক হলে তাকে সতর দেখানো হয়।এটা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না।
নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হলে সিজার করা জায়েয নেই। কোন ডাক্তার বা প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বার্থের জন্য বাধ্য করলে তারা অবশ্যই মারাত্মক গুনাহগার হবেন এবং দুনিয়াবী দিক থেকেও এটা মারাত্মক অপরাধ হবে।
দেখো,প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সন্তান হলে অনেক সমস্যামুক্ত হতে পারে। অন্যদিকে সিজারের ফলে অনেক ক্ষতি হতে পারে। তোমার মামাতো ভাইয়ের কাছে এবিষয়ে শুনলাম -সিজারের ফলে প্রায়ই কাটা জায়গায় বা মেরুদণ্ডে ব্যথা ওঠে। অন্যান্য নানা রোগ বালাইয়ের পথ উন্মুক্ত করে। এছাড়া ভারী কোন কাজ করা যায় না। তিনটি সিজারিয়ান অপারেশনের পর পরবর্তী জীবনে কখনো পেটে অপারেশনের প্রয়োজন হলে জীবনের জন্য বড় ধরণের ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হতে হয়।
নবজাতক ও মাতৃস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চিকিৎসাশাস্ত্রের বিবেচনায় প্রয়োজন নেই এমন ক্ষেত্রে সিজার করা হলে মায়ের প্রসব-পরবর্তী সংক্রমণ বাড়ে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। অঙ্গহানিও হতে পারে। শুধু তাই নয়, অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান ডেলিভারি সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রেও একটি বড় প্রতিবন্ধকতা।
তুমি কি শুনছো আমার কথা?
---ওপাশ থেকে কোনো উত্তর নেই।
কথাগুলো শেষ হওয়ার আগেই লাইন কেটে গিয়েছিল হয়তো।
মাহিমের মা মাহিমের বাবাকে জিজ্ঞাসা করলেন -"কিগো,মাহিম কি বললো?"
---তোমার ছেলের কাছে তার বউয়ের কথার চেয়ে, বউয়ের ইচ্ছার চেয়ে বড় কোনো বস্তু পৃথিবীতে নেই। বউ যেটা বলবে ও গুনধর সেটাই করবে।কাঁদছো কেন? না কেঁদে ওদের জন্য দোয়া করো যেন যেকোনো অবস্থাতে ওরা ভালো থাকে।
---ওগো,আমাদের নাতি/নাতনির মুখ দেখতে যাবে না ?
---সেই সৌভাগ্য দিয়ে হয়তো পৃথিবীতে আমাদের পাঠাননি উনি।শুনলে না তোমার ছেলে বললো,আব্বা আপনাদের কষ্ট করে এখন আসা লাগবে না। আমি আপনাদের জানিয়ে দেব।
[সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক।অতি সামান্য জ্ঞানে লেখা তাই,ত্রুটি মার্জনা করবেন, দয়া করে।]
অসাধারণ লেখনি। অনেক ধন্যবাদ এমন কিছু আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।