#গল্প:--ইচ্ছার মৃত্যু(একটি টাক মাথার উপাখ্যানঃ

1 30
Avatar for Imran-420
4 years ago

আজ আফিয়ার বিয়ে। প্রচণ্ড খারাপ লাগছে। সাথে প্রচুর রাগ হচ্ছে তার পরিবার এবং বর বেয়াদবটার ওপর।ইচ্ছা করছে গোটা দশেক বাচ্চা পোলাপান হায়ার করি।তারপর ইচ্ছামতো ঢিল ছুঁড়ি বিয়ে বাড়িতে। একটা নাবালক মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছে তাও আবার এক চাচা বয়সি পোলার সাথে।

মনে হচ্ছে পুলিশ এনে বাল্যবিবাহের দায়ে গ্রেফতার করিয়ে দেই বরটাকে।

কিন্তু, সেটা আর হওয়ার জো নেই। পনেরো বছরের মেয়ের বয়স এখন একদিনেই ঊনিশ হয়ে গেছে।

তাই আমার তিন বছরের প্রেমের আজ সমাপ্তি ঘোষণা করে মেয়েটা আজ চলে যাবে চাচার ঘরে।

ক্লাস এইট থেকে প্রেম করি কিন্তু, আজ বুঝলাম মেয়েটার আমার প্রতি কোনো প্রেমই হয়তো ছিলনা।সেই বাপের পছন্দে বিয়ে করে নিল।

ইচ্ছা ছিল দুজনে এবার একসাথে কলেজে উঠবো, একসাথে মেঠোপথে সাইকেলে করে কলেজে যাবো।কিন্তু, সাইকেলে চড়ার আগেই কার-এ চড়িয়ে দিল তার জাম্বুরূপি বাপ।

এরপর ছ্যাকা খেয়ে জীবনে যা কোনোদিন করিনি তাই করেছি। প্রচুর সিগারেট খেয়েছি।একেবারে গোপাল,আকিজ থেকে শুরু করে গোল্ডলিফ,বেনসন এণ্ড হ্যাজেস।

একসময় ফ্যামিলি দেখলো আমার অবস্থা বেগতিক। তখন তারা অনেক উপায়ে বোঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ফল নেতিবাচক।

একদিন দূরসম্পর্কের ফুফু এসে বললো--"বাবা,ভালোভাবে পড়াশোনা করো।ভালো একটা চাকরি করো ওরকম হাজার মেয়ে তোমার পেছনে লাইন দিবে।”

মনে মনে ভাবলাম --"কি বলে,হাজার মেয়ে লাইন দিবে তার মানে কি? আমি কি টিকিট কাউন্টার নাকি?আর হাজার মেয়ে দিয়ে আমি করবোটা কি।একটার চাহিদাই তো ভালোমতো মিটাতে পারতাম না। গিফ্ট দিতে দিতে তো বাবার পকেটওয়ালা শার্টগুলো বিলুপ্ত করে দিলাম।”

কোনোরকম সম্মতির ভাব না দেখে এবার আমার দাদি বলে উঠলো --"আইচ্ছা, দাদুভাই তুই পড়াশোনা কর তোরে আমি রাজরাণী আইনে দিমু।আর না পারলে আমাগো রাণী মাকে নাহয় তোর সাথে বিয়া দিমু।”

কথাটা বলে দাদি ফুফুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ফুফুও তেমনি।

বুঝলাম রাণী হয়তো ফুফুর মেয়ে।

আমি বললাম--"আচ্ছা, আমাকে নিয়ে এত ভাবার দরকার নেই। আমি পড়াশোনা করে চাকরি করে বিয়ে করবো।"

বলে চলে এলাম।

তারপর রুমে বসে শুনছি দাদি আর ফুফু জমিয়ে গল্প করছে আর হাসাহাসি করছে।

যতই হাসাহাসি করুক।আর রাণী দেখতে যতই রাণীর মতো হোক আমার একটা ইচ্ছা আছে।

আমি ক্লাস এইট থেকে এ পর্যন্ত অনেক উপন্যাস পড়েছি।এজন্য অল্পতে পেকে গেছিলাম।আফিয়া মেয়েটাকেও আমি অনেক উপন্যাস কিনে দিয়েছি।কিন্তু, ফাঁকিবাজ হয়তো সেগুলো পড়তো না ভালোভাবে। নাহলে,আজ আমার এইদশা হয়??

আমার ইচ্ছা ছিল -কোনো রোমান্টিক উপন্যাস পড়ুয়া, সাহিত্যপ্রিয় মেয়েকে বিয়ে করা।আমি তাকে প্রতিদিন উপন্যাস পড়ে শোনাবো,সেও আমাকে উপন্যাস শোনাবে।

তারপর পুরোদমে পড়াশোনা করে আজ আমি একটা বেসরকারি ব্যাংকের ম্যানেজার।মোটা টাকা বেতনও পাই।কিন্তু, দুঃখের বিষয়, আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়- পড়াশোনা করে আমি সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস হারিয়েছি।

আর সেটা হলো-মাথার চুল। আজ আমি স্টেডিয়ামওয়ালা।যে স্টেডিয়াম একদিন দর্শকে পরিপূর্ণ ছিল। কালের বিবর্তনে আজ সেখানে শূন্য খা খা গড়েরমাঠ।

রাণীকে আমার পছন্দ ছিল না।মেয়েটা সত্যি রাণীর মতো সুন্দর ছিল।আমাকে দেখে ভাবও নিতো।কলেজে একসাথে পড়তাম দু-একবার কাগজও ছুড়ে মেরেছে। কিন্তু, চানাচুর খাওয়া কাগজ নাকি,লাভ আঁকানো সেটা আমি ফিরেও দেখিনি।

কিন্তু, উপন্যাস এবং সাহিত্য অপছন্দ করায় আমার কাছে পেত্নীর মতো মনে হত।

আজ রাণী দুই বাচ্চার মা।ফুফুর আমার সাথে বিয়ে দেয়ার মত থাকলেও রাণী অগ্রাহ্য করে অন্য জায়গায় বিয়ে করে।

তাতে অবশ্য আমার এতটুকু খারাপ লাগেনি।

আমি তখন ক্যারিয়ারের চিন্তায় পড়াশোনায় মত্ত।

একবার উপহাস করে দাদিকে বলেছিলাম --"কিগো বুড়ি! তোমার রাণী তো বিয়ে করে রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করলো?”

দাদি বলেছিলো--"তুই আমাকে মাফ কর দাদুভাই। আমি তোকে রাণীর চেয়ে ভালো মাইয়ার সাথে বিয়া দিমু।”

রাণীর চেয়ে ভালো মাইয়া!! বলে আমি হা হা করে হেসে চলে এসেছিলাম।

আজও ঘটক নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটা মেয়ে জোগাড় করে বিয়ে দিতে।যেই সেই ঘরের মেয়ে হলে চলবে না বলেই আজ পর্যন্ত আঁটকে আছে। কিন্তু, ভালো ঘরের মেয়ে,মেয়ের বাপ আমার টাকে(টাক মাথা) তাদের মেয়েকে তুলে দেবে না বলে ঘটক দাদাঠাকুরকে বারবার তিরস্কারের সহিত ফিরিয়ে দেয়।ঘটকও বাবার সামনে এসে দুঃসংবাদ দিয়ে চলে যায় এবং বলে যায় এবার আমায় মুক্তি দিন সাহেব।

কিন্তু, পরদিন বাবা ঠিকই আবার ঘটককে ডেকে পাঠায়।

একদিন আমি রুমে বসে শুনছি বাবা ঘটককে জিজ্ঞাসা করায় ঘটক এক আজব ঘটনার বিবরণ দিচ্ছে এভাবে --"সাহেব, আপনার শুনতে খুব খারাপ লাগবে আজ কি হয়েছে জানেন?একজন মেয়ের বাপ আপনার ছেলের ছবি দেখে বললে-"কি!ছেলে স্টেডিয়ামওয়ালা? না,না আমার মেয়ে কোনো বল না যে স্টেডিয়ামে গড়াগড়ি দিবে আর আমি দর্শক হয়ে তালি মেরে হাতের চামড়া তুলে ফেলবো।আপনি যান।”বলে আমাকে একপ্রকার তাড়িয়ে বিদেয় করলে।

আমি রুম থেকে একথা শুনতে পেয়ে রাগে উপন্যাসের বইটাকে ছুঁড়ে ফেলে এক লাফে চলে গেলাম দাদির রুমে। টাক বলে অপমান করবে এটা একদম সহ্য করতে পারিনি।দাদিকে গিয়ে বললাম --"দাদি আজকেই তুমি আমার জন্য মেয়ে খুঁজবা।গরীব ঘরের মেয়ে, কানে কম শুনবে। একদম না শুনতে পেলেও সমস্যা নেই। যদি না পারো তবে,আজই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।কোনোদিন আর ফিরবো না।"

দাদিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই গড়গড় করে রুমে চলে আসলাম। আমি জানি ব্যবস্থা ঠিকই হবে। কারণ, বাড়ির সবাই জানে আমি ফালতু কথা বলি না আবার রাগি কম কিন্তু, যখন রাগি তখন রাগ থামানো দুষ্কর হয়ে পড়ে।

ব্যবস্থা হয়ে গেল কথা মতো। একটা মেয়ে নাকি ঠিক হয়েছে। নাম নাদিয়া।কাল আমার বিয়ে। বাড়িতে তেমন কোনো আয়োজন নেই। একমাত্র ছেলের বিয়ে তবুও। বুঝলাম সবাই অখুশি। কিন্তু, আমি খুশি।

দাদির কাছে ছুটে গেলাম --"কি বুড়ি!তুমিও অখুশি নাকি? ”

দাদি বললো--"না,দাদুভাই। আমি খুশি।গ্রাম্য মাইয়া,আমাগো পাশের গ্রামের। দেখতে সুন্দর তবে, তোর কথামতো কানে কম শোনে।”

আমি--"খুব ভালো কথা।”

দাদি--"তা দাদুভাই! তুই কালা মেয়ে দেখতে বললি কেন একবার যদি বোলতি?”

আমি--"শুনতেই হবে? তবে শোনো,আমি তো উপন্যাসের পাগল তুমি জানো।চেয়েছিলাম উপন্যাস জানা কাউকে বিয়ে করবো।প্রতিটা রাত গল্পে গল্পে কাটাবো।এই উপন্যাসের নেশা আর এই ভাবনার জন্য আজ আমার এই দশা।টাক নিয়ে অপমান।এজন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া। যাতে রাতে ঘুমানোর সময় উপন্যাসের নায়ক নায়িকার গল্প না বলতে পারি।আর অনেকদিনের ইচ্ছা তো তাই বলে ফেললেও যেন সে না শুনতে পায়। বুঝেছো??”

দাদি--"বুঝেছি।তবে,গরীব ঘরের মাইয়া। সুখে রাখিস দাদুভাই।”

আলহামদুলিল্লাহ,বিয়ের আজ পঞ্চম দিন। অফিসে যাবো নাদিয়া নাদিয়া বলে কয়েকবার ডাকার পর কোটটা নিয়ে এসে পরিয়ে দিলো।নাদিয়া এমনি কয়েকবার ডাকার পরে তবে,শুনতে পায়।

কপালে একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

ধন্যবাদ সবাইকে।

2
$ 0.00
Sponsors of Imran-420
empty
empty
empty
Avatar for Imran-420
4 years ago

Comments