জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি জটিল আর্থসামাজিক সমস্যা।এ সমস্যা একদিনে সৃষ্টি হয়নি দীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন কারণে বিশ্ব জনসংখ্যার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেসব কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তার কয়েকটা বিশেষ শ্রেণী হল:
১. প্রাকৃতিক কারণ
২. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক
৩. অর্থনৈতিক কারণ
এখন আমি আলোচনা করব জনসংখ্যা বৃদ্ধির কয়েকটা শ্রেণি নিয়ে:
প্রাকৃতিক কারণ
ভৌগলিক অবস্থান জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি প্রাচীনতম কারণ। মৌসুমী অঞ্চল অবস্থিত দেশগুলোর উর্বর পলিমাটির দেশ এসব দেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ।এখানে সব কিছুই সহজলভ্য সহজে ফসল ফলে এবং জীবনযাত্রা ও বেশ আরামদায়ক যার কারণে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত।
এ অঞ্চলের মানুষের উচ্চ প্রজননক্ষমতা ভৌগলিক অবস্থান খাদ্যভ্যাস জীবন প্রণালী প্রভৃতি কারণে নারীদের প্রজনন ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে যার কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় তাছাড়া মানুষের জনসংখ্যা এবং এর ফলে উচ্চ জন্মহার ও মৃত্যুহার এর নিম্ন বর্তমান যুগে বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়ন জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন সচেতনতা প্রভৃতি নানাবিধ কারণে মৃত্যুর অনেকাংশে কমে এসেছে। যার ফলে জনসংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণ
নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের মানুষ সাধারণত যৌথ পরিবারে বসবাস করে। যৌথ পরিবার জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি সহায়ক কারণ। যৌথ পরিবারের সন্তান লালন-পালন কম ঝামেলাপূর্ণ।তাছাড়া কৃষি নির্ভর অর্থনীতি দরিদ্র কৃষক তার কাজে সহায়তার জন্য অধিক সন্তান কামনা করে। এবং এখানে আরেকটি বড় সমস্যা হলো বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ।বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ স্বাভাবিকভাবে অধিক সন্তান জন্মদানে কার্যকারী ভূমিকা রাখে যার ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির এটা একটা অন্যতম কারণ।
এসব অঞ্চলের মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে তাদের জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত নিম্ন পর্যায়ে যার ফলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মত সচেতনতামূলক কর্মসূচি তাদের আগ্রহ ও জ্ঞানের স্বল্পতা পরিলক্ষিত হয় অনেক সময় এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম অর্থব্যয়ের মত সামর্থ্য তাদের থাকে না ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় তার নিজস্ব গতিতে।
এখানে নারী শিক্ষার সঙ্গে জনসংখ্যার ঘনত্ব সম্পর্ক বিদ্যমান দেশের নারী শিক্ষার হার যতক্ষণ সে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার তত বেশি কারণ শিক্ষিত মেয়েরা নিজেদের স্বাস্থ্য ও সন্তান প্রতিপালন সম্পর্কে অবগত সন্তান পছন্দ করে কিন্তু বাংলাদেশে নারী শিক্ষার ফলে জনসংখ্যার আধিক্য ঘটছে।
জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমাদের খাদ্যভ্যাস কম দায়ী নয়।নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে ভাত চিড়া-মুড়ি ইত্যাদি শ্বেতসার এর পরিমাণ বেশি এবং মাছ মাংস ডিম ইত্যাদি আমিষ জাতীয় খাদ্যের পরিমান খুবই নগন্য খাদ্যে আমিষের অভাব এবং শ্বেতসার আধিক্য মানুষের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।আমাদের দেশের নিরক্ষর লোক তো বটেই অনেক শিক্ষিত লোক ও পারিবারিক ও নাচে জীবনে অধিক জনসংখ্যার কুফল সম্পর্কে সচেতন নয় সামাজিক সচেতনতা দায়িত্ববোধ এর অভাব জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আমাদের সমাজে পুরুষের নিরঙ্কুশ প্রাধান্য এ সমাজে কোন ব্যাপারে মহিলাদের মতামতের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় না এমনকি মহিলাদের গর্ভধারণ সম্পর্ক নয় নারীদের তাদের সন্তান ধারণ করতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
অর্থনৈতিক কারণ
কৃষিভত্তিকঅর্থনীতি হওয়ার কারণে বাংলাদেশের 80 ভাগ পরিবার কিসের সাথে জড়িত এ দেশের কৃষি ব্যবস্থা এখনও পুরানো পদ্ধতিতে অধিক লোক প্রয়োজন হয় তাই এদেশের কৃষক পরিবারের অধিক সন্তান লাভের প্রবণতা দেখা যায়।তাছাড়া মহিলাদের কর্মসংস্থানের সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে আমাদের দেশে কর্মজীবী মহিলা সংখ্যা খুবই কম বেকার অবসর মহিলাদের সন্তান লালন-পালনে অসুবিধা হয়না বলে তারা অধিক সন্তানের মা হতে দ্বিধা করে না এদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির এটিও একটি অন্যতম কারণ।
আমাদের নিম্ন জীবন-মান জনসংখ্যা বাড়ছে ।কারন দরিদ্র গোষ্ঠী জন্মনিয়ন্ত্রণ আগ্রহী নয় দেশে ব্যাপক সংখ্যক লোক দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে সন্তান সংখ্যা বৃদ্ধি কে তারা তাদের পথ বলে মনে করে ফলে জনসংখ্যা বাড়ছে অধিকারে।
জনসংখ্যায় স্মৃতি ভবিষ্যৎ নিরাপত্তায় ভিত্তি হিসেবে অতিরিক্ত সন্তানকে আর্থসামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে পছন্দ করা হয়। অর্থনীতিবিদদের মতে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে দরিদ্র শ্রেণীর লোক সন্তান সংখ্যা বৃদ্ধি হয় কারণ নিজের পরিবারের উপার্জনের জন্য অন্য সদস্যরা দরিদ্রদের আর কোন অর্থনৈতিক সম্পদ নেই। তারা অতিরিক্ত সন্তানের ভবিষ্যৎ উপার্জনের উৎস বলে মনে করে এজন্য অধিক সন্তান জন্মদানের তারা উৎসাহী হয়।
বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ব্যাপক রূপ ধারণ করেছে।জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে সারা বিশ্বেই খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে এবং দ্রব্যমূল্যের দাম ঊর্ধ্বগতি দেখা দিচ্ছে।যত দিন যাচ্ছে ততই যেন এই সমস্যাটা বেশি হচ্ছে আর এভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে এই সমস্যাটা আরো ব্যাপক আকার ধারণ করবে। তাই এই বিষয়ে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।