কিরে নিতেন, এবার দোকানটা বন্ধ করে আয় ? এগারোটা বাজতে চলল। অধুল খুবই অবাক হয়েছে আজ নিতেনকে এতটা সময় দোকান খোলা রাখতে দেখে। সবসময় নিতেনই ওদের সবাইকে ডাকাডাকি করে বাড়ির পথ ধরে। আজ অধুলই সবাইকে এক করেছে। একটু বস তোরা, আমি ময়ঙের মালগুলো রেডি করে বন্ধ করছি। তোর ছোকড়াটা কোথায় ? ওকেতো অনেক আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিরে, সুখন, পিজুস, মৈত্রাং ওরা কোথায় ? নেপাল এর দোকানে চা খাচ্ছে। পড়শু ময়ঙ পালইর মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান, নিতেন এর দোকান থেকে যাবতীয় খরচা-পাতি নিচ্ছে। চম্ফাইয়ে নিতেন এর এই দোকানটিই সবথেকে বড়। শুধু বড় বলে নয়, দোকানের মালামালের গুনাগুনে সারাদিনই তার দোকান সমাগম থাকে কাস্টমারের ভীড়ে। বাইশটি বছর ধরে চম্ফাইয়ে ব্যবসা করছে নিতেন, কোনদিন গায়ে পড়ে কারো সাথে রেশারেশির কোন ঘটনা নেই তার। বেশ নামডাক হয়েছে এই চম্ফাইয়ে লোকটির। চম্ফাইয়ের দক্ষিনে আদুর পালই পশ্চিম বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতিও সে। থেজাওয়াল থেকে তারা মোট পাচজন এসে চম্ফাইয়ে ব্যবসা করে। প্রত্যেকের বাড়িই এঘর আর ওঘর। সুখন আর মৈত্রাং নিতেন এর চাচাত ভাই। পিজুস দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। আর অধুল তার ভাইপো কিন্তু রক্তের নয়, তবে বয়সে সমবয়সী। কিরে হল তোর ? হ্যা চল। দোকান বন্ধ করে এবার বাড়ির পথ ধরল সবাই। এত রাতে কেউ হেটে হেটে থেজাওয়াল যাবেনা এটা সবারই জানা আছে। তবু একটি গাড়ি আছে যেটা ওরা নিজেরাই চালিয়ে নিয়ে যাবে। এটা নিজেরাই ম্যানেজ করে নিয়েছে। এতে ঝামেলাও আছে বেশ, এই পাঁচজনের মাঝে সকালে যে আগে চম্ফাই আসবে সে গাড়িও সাথে নিয়ে আসবে। আর যাত্রিও নিয়ে আসতে হবে। এভাবেই ওরা প্রায়শই আসে যায়। এছাড়া কোন উপায় নেই। আর এত রাতে গাড়িবিহীন থেজাওয়াল যাওয়াও অসম্ভব প্রায়। গাড়ি চালাচ্ছে পিজুস। যেন রাতের স্বর্গ পথে নেমে যাচ্ছে সবাই নিজ নিজ ঠিকানায়। খুবই আয়েশ করে একটি সিগারেট ধরাল সুখন, এ সময় এটা যথার্থই সুখময়। সাথে সাথেই সুখনকে আরেকটি সিগারেট ধরাতে বলে ওর সিগারেটটি নিয়ে নিল নিতেন। দুই পাশে পাহাড়, খানা-খন্দকবিহীন রাস্তা, আকাশে তারার মেলা যেন অন্যরকম সুখ অনুভব করছে মৈত্রাং। কিন্তু হঠাৎই তার কিছু একটা ভেবে যেন চৈতন্যোদয় হল। বেশ ভীত লোক বেচারা। গতকালই ওর ছেলে ফিরে এসেছে ভানটাওয়াং থেকে। একটা রিসোর্টে কাজ করত পিয়ন হিসেবে। ছেলের মুখেই শুনেছে, ভানটাওয়াং আর নাহুথিয়ালের লোকজন নাকি নিজেদের ঘড়বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে। প্রতিদিন রাতে নাকি ওরা কিসব ভয়ঙ্কর আওয়াজ শুনতে পায় নিজেদের ঘরের আশেপাশে। দু দুটি মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে আজ দুইদিন হল। এদিকে গতকালই আরেকটি মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে উলজঙ্ঘাতে। মেয়েটির সারা শরীর ছিল একদম রক্তশূন্য। একটি কাল্পনিক ছবি যেন ভেসে উঠল মৈত্রাং এর চোখে আর অমনিই তার পুরোটা শরীর একটা ঝাড়া দিয়ে উঠল, পাশেই বসা ছিল নিতেন। ওকে এভাবে কেঁপে উঠতে দেখে আশ্চর্য হল। কিরে কি হয়েছে ? কিছু দেখেছিস টেখেছিস নাকি ? নাহ! কিন্তু কেমন যেন বিপদের গন্ধ পাচ্ছি। কিসের বিপদ ? শুনিসনি ভানটাওয়াং আর নাহুথিয়ালের অবস্থা ? তা শুনেছি বৈকি। কিন্তু তুই কি বিপদ টের পেলি? আমাদের এলাকাতেও একই ঘটনা ঘটল। এগুলো আসলে কি ঘটছে কিছুই বুঝতে পারছিনা। খুব ভয়ে আছিরে। আমার ছেলেটাও ফিরে এসেছে। ওদের রিসোর্টটাও নাকি বন্ধ করে দিয়েছে। তাই নাকি? আরে হ্যা। তবেতো ঘটনা খুবই গুরুতর। আমার ভয়টা ওখানে না। আমাদের ঘরেওতো মেয়ে আছে। বুঝতে পারছিস তুই কিছু ? শুধু মাত্র মেয়েগুলাই কেন এভাবে মারা পড়ছে ? আচ্ছা এটাতো কোন জন্তুর কাজ হবেনা, নয়ত অমন করে একপাশে মাংস তুলে রেখে যেতনা। পুরোটাই সাবাড় করে যেত। সুখনের অমন কথায় ফের শরীরটা ঝাড়া দিয়ে উঠে মৈত্রাং এর। অমন করে বলিশনা ভাই। সেটা যাকিছুই হোকনা কেন ওটা যে শুধু মেয়ে মানুষ ধরে নিয়ে যায় এটা স্পষ্ট। কোন এলাকার কাকে ধরে নিয়ে গিয়ে কোথায় মেরে ফেলে রাখে কোন খবর আছে? আমার কিন্তু এসব সুবিধের ঠেকছেনারে। কিছু একটা করা উচিৎ আমাদের। আমার মেয়েটাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে। যুবতি মেয়েগুলোই বাসা বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। তোর কি মাথা খারাপ নাকি? আর মেয়ে কি তোর একাই, আর কারো নেই? আমার ঘরেও দু দুটো মেয়ে আছে। সুখনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো মৈত্রাং। একটা পরাজিত চাহনি নিয়ে মুখটি ঘুরিয়ে বলতে শুরু করল, তোরা যে যাই বলিস সাবধান থাকা ভাল।
6
33
Xoss post