ছাদে বসে থাকতে আর ভালো লাগছিলো না... আর সন্ধান হয়ে গেছে,, তাই ছাদে বসে না থেকে দুজনে রুমে চলে আসলাম..
পুরো রাতটা মিথিলা আর আম্মুর সাথে গল্প করে শেষ করে দিলাম...
সকালে...
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ জামাকাপড় চেন্চ করে অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিলাম.. তারপর নিচে খাবার টেবিলে বসলাম.. সবাই মিলে একসাথে নাস্তা করতে লাগলাম...
তখন আম্মু বললো....
আম্মুঃ নয়ন তোকে কালকে কী বলছি মনে আছে তো...!!
আমিঃ হুমম,, মনে আছ,,, মিথিলাকে ডক্টরেট কাছে নিয়ে যতে হবে,,,
আম্মুঃ হুমম,,,আর একটা কথা,, ওর প্রেগন্যান্সির রিপোর্ট চেক করাবি,,,যদি পজেটিব আসে তাহলে সোজা দিয়ে যাবি...
আমিঃ আম্মু তারমানে আমি বাবা,, ( আর বলার আগেই আম্মু মাথা নাড়িয়ে হা সূচক উত্তর দিলো,,,)
মিথিলার দিকে তাকালাম,, মিথিলা নিচের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে,, আমার আর তর সইছে না,,,মন চাচ্ছে মিথিলাকে জড়িয়ে ধরে বলি,,,মিথিলা তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ যে আমাকে এতো বড় একটা উপহার দেওয়ার জন্য,,,আমি বলে বুঝাতে পারবো না যে আমি কতোটা খুশি হয়েছি,,,,
আম্মুঃ কিরে কী ভাবছিস,,,
আমিঃ নাহ কিছু না,,,,
আম্মুঃ তাহলে খাবারটা শেষ কর...
আমিঃ হুমমম,,,
তারপর আম্মুকে বলে মিথিলাকে নিয়ে সোজা ডক্টরেট কাছে চলে আসলাম.. আসলে আগেই সিরিয়াল দিয়ে রাখছি তাই কোনো সমস্যা হয়ে নি.. ভিতর ডুকরা জন্য..
যাই হোক ডক্টর সব কিছু চেকাপ করে আমার হাতে একটি রিপোর্ট ধরিয়ে দিয়ে.. বললো...
ডক্টরঃ Congratulations আপনি বাবা হতে চলছেন...
আমি মিথিলার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে আবার ডক্টরেট দিকে তাকিয়ে বললাম...
আমিঃ ডক্টর আমার বউ এর এখন কীভাবে যত্ন নিবো এবং কী কী খাবে একটু বলে দিতেন....
ডক্টরঃ অবশ্যই সেগুলো বলবোই....
তারপর আমাকে ডক্টর বড় একটা লিস্ট করে দিলেন.. এখানে মিথিলার খাওয়া,, এবং চলাফেরা সব কিছুর ডিটেইল দেওয়া আছে.. এখন থেকে মিথিলাকে এগুলো মেনেই চলতে হবে...
আমিঃ আচ্ছা ডক্টর তাহলে আমারা আজকে আসি..
ডক্টরঃ হুমম,,আর উনার কোনো ধরনের সমস্যা হলে আমাকে কল করবেন.. আর উনার যত্ন নিবেন...
আমিঃ হুমমম,,,
ডক্টরের রিচার্ডসন থেকে বের হয়ে সোজা গাড়িতে এসে বসলাম...
আমিঃ তুমি জানো আমার যে কী করতে ইচ্ছে করছে,, আমি নিজেও জানি না...
মিথিলাঃ তাই,, তোমার ইচ্ছা তাই করো...
আমিঃ আমার ইচ্ছা করছে... আজকে পুরো পৃথিবীকে চিৎকার বলতে যে আজকে আমার থেকে বেশি খুশি আর এই পৃথিবীতে কেউ নেই....
মিথিলাঃ তোমার কথা বন্ধ করো আর এখন চলো... আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে...
আমিঃ তুমি এখন কোথায় যাবে...
মিথিলাঃ কেনো...?? ব্যাংকে যাবো...সেখানে অনেক কাজ পড়ে আছে...
আমিঃ আম্মু না তোমাকে বলছে বাসা চলে যেতে...
মিথিলাঃ দেখো অামি অফিস থেকে এখনো ছুটিও নেই নি...
আমিঃ তো কি হয়েছে,, আমি নিয়ে নিবো... তাও তুমি এখন বাসায় যাবে...
মিথিলাঃ প্লিজ নয়ন আর কয়েকটা দিন যাক তারপর না হয়ে বাসায় বসেই থাকবো...
আমিঃ আচ্ছা,, কিন্তু আম্মু যদি বকা দেয় তাহলে আমার দোষ নেই...
মিথিলাঃ আচ্ছা....এবার চালাও...
আমিঃ হুমমম,,,
মিথিলাকে সাথে নিয়ে চলে আসলাম.. মিথিলার অফিসের সামনে তাকে সেখানে নামিয়ে দিয়ে আমি আমার অফিসে চলে আসলাম...অফিসে সবাইকেই দেখলাম.. কিন্তু আজকে মিমকে কোথাও দেখছি,, তাই নিজের কেবিনে এসে পিওন কে ডাক দিলাম...
পিয়নঃ স্যার আসবো....
আমিঃ হুমমম,,,,,আসুন.....
পিয়নঃ জ্বী স্যার বলুন,,,কেনো ডাকছেন...
আমিঃ আচ্ছা ২৩৩ নম্বর ডেক্সে যে মিম নামের একটি মেয়ে বসতো সে আজকে কোথায়... অফিসে আসে নি...
পিয়নঃ না... স্যার সে নাকি আর চাকরি করবে না.. আর রিজাইন লেটার আমার দিয়ে কাছে দিয়ে বলছে.. আপনাকে দিয়ে দিতে...( পিয়ন আমার দিকে একটি কাগজ এগিয়ে দিয়ে বললো...)
আমিঃ হুমম,,আপনি এখন যেতে পারেন...!( কাগজটা হাতে নিয়ে...)
পিয়ন চলে যাওয়ার পরে কাগজটা রেখে ভাবতে লাগলাম.. হঠাৎ করে মিম অফিস থেকে রিজাইন নেওয়ার কারন কি... এমন সময় মোবাইলে একটি কল আসে.. মোবাইলটি হাতে নিয়ে দেখি.. সেই আগের নম্বরটি.. তাই আর রিচিব করলাম.. না.. রেখে দিলাম..
আবারো কল আসলো,, একই নম্বর থেকে তাই এবার রিচিব করলাম,,
আমিঃ হ্যালো,,...
- Congratulations,,
আমিঃ কেনো..???
- এই যে তুমি বাবা আর তোমার বউ মা হতে চলছে...
আমিঃ আপনি কী করে জানলেন....
-এমা তুমি তাহলে সত্যি সত্যি আমাকে চিনতে পারছো না...
আমিঃ না...আর আপনি আমাদের ক্ষতি করতে চাইছেন কেনো বলুন তো...!!!
- আচ্ছা তাহলে আমি তোমাকে আগে আমার পরিচয়টা দেই,, তারপর বুঝবা.. আমি কেনো তোমার ক্ষতি করতে চাচ্ছি...
আমিঃ হুমম,,,বলুন আপনি কে আর আমি আপনার কী ক্ষতি করছি....
- আচ্ছা তাহলে শুুনো... আমি হলাম মিম,, এবার আশা করি চিনতে পারচো....
আমিঃ মিম তুমি তাহলে এতোদিন এরোকম করচো...
মিমঃ হুমম,,,কী করবো বলো.. আমি যে তোমাকে ভালোবাসি...
আমিঃ দেখো মিম আমি মিথিলাকে ভালোবাসি আর মিথিলাও আমাকে ভালোবাসে,, প্লিজ আমাদের এই সুখের সংসারে কোনো এনো না...
মিমঃ আচ্ছা আবোনা.. যাও... তুমি আমাকে বিয়ে করে নাও.. তারপর দেখবে,, মিথিলা সুখে মিথিলার পেটে যে সন্তান সে আছে,, এবং তুমি আর আমিও সুখে থাকবো..
আমিঃ এই তুই,,.. তুই আমার সন্তানের দিকেও নজর দিছোস...
মিমঃ তুমি যদি আমাকে বিয়ে না করো তাহলে নজরটা তো যাবেই...
আমিঃ তোকে যদি আমি একবার কাছে পাই না,, দেখবি তোর কী হাল করি...
মিমঃ ওকে বাবু তুমি একটু ওয়েট করো,, আমি আসতেছি.. এতো বেহুশ হওয়ার কিছু নেই...
আমিঃ দেখো তুমি আমাকে যা করার করো,, আমার স্ত্রী আর আমার সন্তানের যেনো কিছু না হয়....
মিমঃ আচ্ছা আমি বললাম তো তুমি শুধু আমাকে বিয়ে করো তাহলে কারো কোনো ক্ষতি হবে না....
আমিঃ আমি পারবো না.. তোকে বিয়ে করতে,, তোর যা করার করে না.. যাহ....
বলেই কলটা কেটে দিলাম.. মেজাজ পুরাই খারাপ করে দিলো... হাতের কাছে পাইল গুলো টেবিলের এক সাইডে রেখে কেবিন থেকে বের হয়ে চলে আসলাম. একটি চায়ের দোকানে.. সেখানে এসে একটা সিগারেট নিয়ে খেতে লাগলাম..( আসলে যখন প্রচুর রাগ বা প্রচুর মন খারাপ হয়ে তখন দুই একটা সিগারেট খাই.)
সিগারেট খাওয়া শেষ করে মেজাজটাকে শান্ত করে আবার অফিসে চলে আসলাম...
অফিসে এর ভিতর এসে নিজের কেবিনে ডুকে সব চিন্তাভাবনা এক জায়গায় রেখে আবার কাজে মনো যোগ দিলাম...
সারাটাদিন কাজ করতে করতে চলে গেলো..
বিকেলে কাজ শেষ করে গাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি.. প্রায় পাঁচটা বেজে গেছে,, মাথা পুরো গরম হয়ে গেলো এতো সময় হয়ে গেলো অথচ একটু টের ও পেলাম না.. আজকে প্রচুর দেরি হয়ে গেছে..তাই তারাতরি ফাইলগুলো গুছিয়ে বের হয়ে পড়লাম..,,