পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে,
কিন্তু একজনও খারাপ বাবা নাই।
''মৃত্যুর যন্ত্রণার চেয়ে বিরহের যন্ত্রণা যে কতো কঠিন,কতো ভয়ানক তা একমাত্র ভুক্তভুগিই অনুভব করতে পারে''
একটি মেডিক্যালীয় লাভ
স্টোরি
লিখেছেন - বিকেল চড়ুই
মেয়েটি ছেলেটির দিকে এক পলক তাকিয়েছিল।
আইটেমে সেদিন ছেলেটি পেন্ডিং খেয়েছিল।
ক্যাডাভারের মাসলে মাসলে ভিসেরার দেয়ালে
দেয়ালে আর মাইক্রোস্কোপের নিচে তখন
থেকে শুধু মেয়েটি আর মেয়েটি।
ছেলেটি উদাস মনে সাপ্লি খায়। প্রফ আসে চলে
যায়। পরীক্ষার
হলে ছেলেটি এবং মেয়েটি খুব কাছাকাছি।
এনাটমি পরীক্ষার সময় মেয়েটি রাবারটা ধার
নেয়, পরে সেই রাবারটার ঠাঁই হয় ছেলেটার বুক
পকেটে। অসপির দৌড়াদৌড়িতে মৃদু ধাক্কা আর
ছেলেটার চোখের সামনে হার্ট লাংস সব ভিসেরা
এলোমেলো হয়ে যায় ।
দিন কাটে। সাপ্লির সংখ্যা বাড়ে। বাড়তেই
থাকে।
তারপর ..
বিয়েতে মেয়েটি ফিরোজা রংয়ের শাড়ি পরেছিল।
বন্ধুরা সবাই গ্রুপ ফটো তুলছে। খাওয়াদাওয়া
পর্ব চলছে। বর ঐ মেডিকেলের সার্জারি
ডিপার্টমেন্টের লেকচারার। মেয়েটির দশ বছরের
সিনিয়র। মেয়েটি দূর থেকে একদৃষ্টিতে ছেলেটির
খাওয়া দেখছে।
ছেলেটা গোগ্রাসে বিরানি গিলছে। সহপাঠীনির
বিয়ে খাওয়ার মজাটাই অন্যরকম! বিরানির স্বাদ
চোখে পানি এনে দেয় !
আহা বুক পকেটে রাবারটা বড়ো যন্ত্রণা করছে !
শরীরে ছোট হাত পায়ের স্পর্শ লেগে ঘুমটা
ভেঙে গেল।
আবার বালিশ থেকে মেয়েটা পড়ে গেছে।
ইশশ!! হিসু করে কাঁথাটাও ভাসিয়েছে।
ইরিনার মাকে ডাকবো কিনা ভাবতেছি।
নাহ, ডাকা উচিত হবেনা।
বেচারিকে জব করে এসেও বাসার মেলা কাজ
করতে হয়। ঘুম ভাঙানো ঠিক হবেনা।
আমারই পালটানো লাগবে মনে হচ্ছে।
ধুর!!!
পুরুষমানুষকে দিয়ে এসব হয় নাকি?
এটা বললেও আরেক ঝামেলা।
উত্তর কি দিবে জানা আছে।
ঝাঁঝালো গলায় বলবে,
"পুরুষ মানুষ হয়ে রান্নাতো পারো আর মেয়ের
সামান্য কাঁথাটা পাল্টাতে পারবা না কেন?"
ইরিনার মারে এতো করে বললাম মেয়েটারে
তোমার সাইডে দাও!
না, মেয়ে দুজনের মাঝে থাকবে।
এখন ভেজাল যত আমার..।
ইচ্ছে হচ্ছে একটা ধমক লাগাই।
"এই মেয়ে, মার দিকে হিসু করতে পারিস না?
বাপের দিকে কি, হুম??"
ডিম আলোয় মেয়েটার মায়াভরা ছোট্ট মুখখানি
দেখছি। কি সুন্দর ছোট্ট হাত, আংগুলগুলো মুঠি
করে রেখেছে।
নাহ! এত্তো কিউট এইটারে বকা দেয়া যায় না।
বকা দেয়ার চিন্তা বাদ।
"এই, তুই এতো কিউট ক্যানরে??
মার চেহারা পুরোটাই পাইছিস, ভ্রু ছাড়া বাপের
তো আর কিছুই পাইলি না,
তো ভেজা কাঁথা বাপে পালটানো লাগে কেন,
হুম!
কাল থেকে মার পাশে হিসু করবি, খবরদার!
এদিকে না।"
ইরিনার মারে মনে মনে একশো বার বকা দিয়ে
কাঁথা পালটে দিলাম।
মা, মেয়ে দুজনেই ঘুমাচ্ছে। হাত বাড়িয়ে
দু'জনকেই একটু স্পর্শ করলাম।
ক'দিন আগেও তো পিচ্চিটা এখানে ছিলো না।
এখন মাঝে শুয়ে দুপাশ থেকে ভালোবাসার ভাগ
নিচ্ছে। কি অদ্ভুত!!
ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি, জানি না।।
কাওকে কষ্ট দিয়ে, সুখে থাকার
আশা করাটা বোকামি ছাড়া আর
কিছুই নয় । মনে রেখো, এর থেকেও
প্রখর কষ্ট তোমার জন্য অপেক্ষা
করছে"