শুক্রবারের নিষ্কাম মিশুক বিকেলের আদরটা মনে মাখতে মাখতে হাঁটছিলাম নয়াসড়কের পথে ।চৌরাস্তার মোড়টার কাছে আসতেই ছেলেবেলার একটা চেনা মুখের দেখা পেলাম হঠাৎ । সুদীপ্তদা -সুদীপ্ত সেন টিটু । আমার কাছে তার অনেক পরিচয় - প্রথমত সে আমার মার্বেল খেলার প্রথম শিক্ষক , তার কাছেই শিখেছিলাম টানা অক্ষরে বড় হরফের A,B,C,D----- । সে-ই আমাকে শিখিয়েছিল - বরাক নদীতে জোয়ার এলে কেমন করে গা ভাসিয়ে দিতে হয় তার জলে, কেমন করে এক পশলা উদাসীন বৃষ্টির প্যাকেজ নাটকের পরে মালিক হতে হয় শারদ রংধনুটার।সে-ই আমাকে একদিন বলেছিল - ছোটবেলায় ভাত খাওয়ানোর সময় আমার মা আমাকে যে গল্প গুলো শুনাতো , ওইগুলো সব মিথ্যে , সব ফাও।দাদার হাতে নাটাই না দেখলে আমার নন্দীমাঠের নীল ঘুড়িটা আকাশ ছুঁতে চাইত না। তার হাত ধরেই প্রথম গিয়েছিলাম কানাইপুরের মেলায়,আবার সেই হাতেই জমা দিয়েছিলাম আমার সব মিথ্যে বাহাদুরি ।তার ভরসাতেই মায়ের চোখরাঙানি আর বাবার জালিবেতের ভয় করতাম না ।দাদার সঙ্গ খুঁজে পেলেই আমার হাতঘড়িটা সরল অংকে ভুল করে যেত বারবার।তার চিলেকোঠা ঘরের পাশদেয়ালেই প্রথম পরিচিত হয়েছিলাম সূর্যসেন আর লেনিনের সাথে ।তার কাছেই প্রথম শুনেছিলাম –----
“ যদি মরীচিকা সুখ দুঃখ নিয়ে কভু যুদ্ধ ঘোষণা করে , তবে মিষ্টি হাসির ভান করে পরে লুকিয়ে কাঁদিস তুই ।”
তার সেই কথাগুলো খুব কঠিন ঠেকত তখন।এখন তার অর্থ খুঁজি, কিছু অর্থ বুঝি,কিছু তার বুঝি না ।
আর সবশেষ যে কথাটা সে আমায় বলেছিল , সেটা ক্লাস টেনে পড়ার সময়কার -
“ ছোটভাই , তুই ক্লাস নাইন পাস করে ফেলেছিস !!!! দেখিস প্রেম-টেম শুরু করিস না আবার । জানিস তো, প্রেম করলে ছেলেদের রেজাল্ট খারাপ হয় , মেয়েদের হয় না ।”
সেদিন অলস বিকেলের ফালতু অবসরের আড্ডায় আচমকা দাদার মুখে এই কথাটা শুনে আমি বোকার মত ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছিলাম অনেকক্ষণ। তখন হয়তো প্রেমের সাথে রেজাল্টের সম্পর্কটা দশম শ্রেণীতে পড়া একজন ছাত্র হিসেবে ( তাও আবার আরও ১০-১২ বছর আগের দুনিয়ায় ) আমার বোধগম্যতায় তেমন জোরালোভাবে নাড়া দেওয়ার মতো শক্তি অর্জন করে নি ।কিন্তু বয়োঃসন্ধির কৈশোরে দাঁড়িয়ে তখন একটা বিষয় আমি ঠিকই অনুধাবন করতে পেরেছিলাম যে,সুদীপ্তদা তার কথার মতোই খোলামেলা,তার হাসির মতোই আপনভোলা, আর নিজের মতো করেই সবার চাইতে আলাদা ।
Be carefull....good luck