Tumi aco hridoye8

0 4
Avatar for Foysal
Written by
4 years ago

#তুমি_আছো_হৃদয়ে💙💙

(পর্ব-৮)

রোদ নিজেকে পরিপাটি করে রুম থেকে বের হচ্ছে।রোদ সাদা টিশার্ট,কালো কোর্ট,কালো জিন্স,কালো সু পড়ে রেডি হয়ে নিয়েছে।কালো ওয়াচ,টিশার্টে সানগ্লাস গুজা,সিল্কি চুলগুলো কপালের কাছে কিছুটা পড়ে আছে।

রোদ রুম থেকে বের হয়েই কেমন জুই ফুলের ঘ্রাণ পাচ্ছে।যা ওকে পাগল করে দিচ্ছে।রোদ এই ঘ্রাণের উৎস খোজতেই সামনে ফুলকে দেখতে পায়।ফুলকে দেখে ওর দৃষ্টি স্থির হয়ে গেছে।ফুলের দিক থেকে চোখ ফিরাতে পারছেনা।এ যেন নতুন ফুলকে দেখছে।

ফুল কালো ড্রেস পড়েছে,সিল্কি চুলগুলো চিকন রাবার ব্যান্ড দিয়ে উচু করে ঝুটি করেছে।কানে ব্লাক স্টোনের এয়ারিং,ঠোঁটে লিপস কালার হালকা লিপব্রুজ।কাধে লেডিস ব্যাগ এক কাধে ঝুলছে,বা হাতে ফোন।পায়ে ব্লাক সু।শরীরে জুই ফুলের পারফিউম।

রোদ যেন ওর সামনে তরতাজা ফোটা একটা কালো গোলাপ দেখছে।ফুলকে বরাবরই কালো রঙের ড্রেসে সুন্দর লাগে।রোদের কাছেও অপূর্ব লাগছে।কিন্তু ওকে এ ড্রেসে ভার্সিটিতে যেতে দিতে ইচ্ছে করছে না।

--আমি রেডি।

ফুলের কথায় রোদের ঘোর ভাংলো।

--এই তুই এটা কি পড়েছিস?কাকের মতো লাগছে।আমরা ভার্সিটি যাচ্ছি কারো শোক পালন করতে নয়।

--কি বলছো ভালো লাগছে না?কিন্তু সবাই তো বলে আমাকে কালো রঙে অনেক সুন্দর লাগে।

--ভুল বলেছে।তুই তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে আয়।

আমি একটু চিন্তিত হয়ে বললাম,

--কিন্তু চেঞ্জ করতে গেলে অনেক সময় লাগবে।চুল নষ্ট হবে,চুল আবার বাধতে হবে।এয়ারিং চেঞ্জ করতে হবে,পারফিউম।আমি আর রেডি হতে পারবোনা।

--ঠিক আছে।আজকের মতো।বাট নেক্সট টাইম কালো রঙের কিছু পড়ে বের হবিনা।

--আচ্ছা,,

গাড়িতে আমি আর রোদ ভাইয়া পাশাপাশি বসে আছি।উনি চুপচাপ ড্রাইভ করছেন।আমি অনেক এক্সাইটেড নিউ ভার্সিটি কখন দেখবো তা নিয়ে।আমার ভিতরের উচ্ছ্বাস বাইরে প্রকাশ পাচ্ছে।আমি রোদ ভাইয়ার দিকে তাকালাম।ভ্যাম্পায়ারকে আজ অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে।যদিও সবসময়ই হ্যান্ডসাম লাগে।তবে আজ একটু বেশিই লাগছে।তবে মুখ কালো করে ড্রাইভ করছে।আর কোনো কথাও বলছেনা।আমার কেমন খটকা লাগছে।উনার কি মন খারাপ?

--রোদ ভাইয়া,তোমার কি মন খারাপ?

রোদের গতকাল রাহাতের সাথে কথা বলার পর থেকেই মন খারাপ।কেমন অপরাধবোধে ভুগছে।এমন একটা ফুলকে ও ভুল বুঝেছে।তবে ফুলের মুখে রোদ নামটা শুনে এতকিছুর পরেও ভালো লাগছে। মেয়েটা ওর কথা রেখেছে আজ তুমি করেও বলেছে।

ফুল তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।তোর মনে আমার জন্য নেগেটিভ ভিউ তৈরি হয়েছে।সব শোধরে নিবো।নিজের পজিটিভ পজিশন তৈরি করেই তোকে মনের কথা জানাবো।

রোদ ভাইয়া হালকা হেসে আমার দিকে চেয়ে বললো, নাহ।

কিন্তু আমার সন্দেহ কাটছে না।মনে হচ্ছে কিছু হয়েছে।আমি উনার দিকে ভালোভাবে তাকালাম।মুখের দিকটা মলিন হয়ে আছে।উনার হাতের দিকে চোখ গেলো।হাতটা কেমন লাল হয়ে ফুলে আছে।

আমি বিচলিত হয়ে বললাম,

--রোদ ভাইয়া তোমার হাতে কি হয়েছে?এমন লাল হয়ে ফুলে আছে কেন?

অজান্তেই আমার হাত তার হাতের উপর চলে গেলো।ভাইয়ার হাতের উপর হাত দিতেই উনি ব্যথায় আহ,,করে উঠলেন।আমি হাত সরিয়ে নিলাম।

--কিছুনা,,ওই একটু লেগেছে।

--এমন করে কিভাবে লাগলো?

ভাইয়া আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে মৃদু হেসে বললো,

--তুই এতো ভাবছিস কেন?এমনি লেগেছে।

আমি চোখ ছোট ছোট করে নাকি ফুলিয়ে বললাম,

--সত্যি করে বলোতো কি হয়েছে?তোমার মুখটা শুকনো লাগছে?হাসছো ও কেমন মলিনভাবে।তোমার হাসি তো এমন নয়।

--আমার হাসি কেমন?

এখন আমি কি বলবো?উনার হাসি কেমন?হাসি তো হাসিই,,কেমন আবার হবে?

তবুও বললাম,

--কেমন মুগ্ধতা ছড়ানো।খুব সুন্দর।এখন বলো কি হয়েছে?

--নিজেকে শাস্তি দিয়েছি।

--শাস্তি!!কেন?

--একজনকে বিনা অপরাধে অনেক কষ্ট দিয়েছি।তাই নিজেকে শাস্তি দিয়েছি।

--তাতে কি হয়েছে?অপরাধবোধ কমেছে?তার চেয়ে যার সাথে খারাপ বিহেভ করেছো তাকে সরি বলো।অপরাধ বোধ কমে যাবে।শান্তি পাবেন।

--সে কি আমাকে ক্ষমা করবে?

--কেন করবে না অবশ্যই করবে।ভালো মনে ক্ষমা চাইলে কেউ আবার ক্ষমা না করে?করবে।

রোদ ভাইয়া গাড়ি থামিয়ে দিলো।তারপর আমার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে বললো,

--ফুল তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস।আমি তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি।অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি তোর সাথে প্লিজ ক্ষমা করে দে।

আমি অবাক হয়ে রোদ ভাইয়াকে দেখছি।আর দেখে অবাক হচ্ছি।আমাকে সরি বলছে।

--মানে?আমাকে বলছো?

--হ্যা,,আমি তোকেই বলছি।প্লিজ ক্ষমা করে দে।এতদিন অনেক কষ্ট দিয়েছি তোকে।অনেক কষ্ট পেয়েছিস তাই না?

--উহু,,আমার এসব মনে থাকেনা।এসবে আমি অভ্যস্ত।

--তুই কি আমাকে ক্ষমা করলিনা?

আমি একটু হেসে বললাম,

--আমি তোমার উপর রাগ করিনি।আর তাছাড়া তোমার জন্য আমার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ।সব ভুলে যাও।তোমার উপর আমার কোনো রাগ নেই।

রোদ ভাইয়া মুচকি হেসে বললো,এবার আসলেই শান্তি লাগছে।এবার বল এখন আমার হাসি কেমন লাগছে?

--পারফেক্ট।

বলেই আমি আলতো হাসলাম।আসলেই হাসিটা এখন পারফেক্ট লাগছে।

ভাইয়া গাড়ি চালাতে শুরু করলো।

ভার্সিটিটা অনেক বড় আর সুন্দর।আমার খুব ভালো লাগছে।ভাইয়ার সাথে সাথে হাটছি।একজন ছেলে এলো ভাইয়ার কাছে তিনিই সম্ভবত সেই বন্ধু।আমাদের একটা রুমে নিয়ে গেলো ভর্তি করার জন্য।ভাইয়া নিজেই সব ফর্মালিটি পূরণ করছে আমি শুধু তার পাশে বসে আছি।

ভর্তি কমপ্লিট সামনের সপ্তাহ থেকে ক্লাস।উফফ কি যে মজা লাগছে।

--ফুল কলি চল তোর ক্লাসরুম দেখে আসি।

পাশ থেকে ভাইয়ার বন্ধু সাব্বির বললো,

--ফুল কলি!!ফুল কলি আবার কে?ফরমে তো অন্য নাম দেখলাম।

আমি উনার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেলাম।ভাইয়াও বোকা বনে গেলো।

--আরে এমনি মজা করে ফুল কলি ডাকি।তুই আবার এই নামে ডাকিস না।এটা আমার জন্য স্পেশাল।

বলে কি আমার এই নামও নাকি স্পেশাল ভাইয়ার কাছে।অদ্ভুৎ মানুষ।

ক্লাসরুমটা অনেক বড় আর সুন্দর।পরিষ্কার পরিছন্ন হয়তো ক্লাস শুরু হয়নি তাই।ভাইয়া একে একে লাইব্রেরি,গার্লস কমন রুম,ক্যান্টিন,আশেপাশের প্রয়োজনীয় সবকিছু দেখিয়ে দিলেন।যাতে পরবর্তীতে এসে আমার কিছু খোজতে না হয় কিংবা সমস্যা না হয়।

--এই ক্ষুধা পেয়েছে তোর? কিছু খাবি?

--না,,

তবুও তিনি ফুচকার সামনে গিয়ে ফ্রেন্ডকে জিজ্ঞেস করলো,

--ওই সাব্বির ফুচকা খাবি?

--মেয়েদের খাবার আমি খাইনা।তুই খা।

রোদ ভাইয়া বললেন,

--খাবার তো খাবার ই ছেলেদের আর মেয়েদের কি?তুই না খেলে নাই।গিয়ে মুড়ি খা।

বলেই ফুচকাওয়ালাকে বললো,

--মামা,দুই প্লেট ফুচকা দিন।ঝাল করে।

ঝাল আমি তো আবার ঝাল খেতে পারিনা।কিন্তু কিছু বলতেও পারছিনা।যদি বলি আমি ঝাল খাইনা।তাহলে যদি রোদ ভাইয়া বলে ঝালও খেতে পারিস না?

ভাইয়া একটা চেয়ার টেনে টিস্যু দিয়ে মুছে বললো,

--ফুল নে বস।

আমি কিছু না বলে চুপ করে বসে পড়লাম।কিছুক্ষণ পর ভাইয়া আমাকে ফুচকার প্লেট দিলো।তারপর নিজেরটা নিলো।তার পাশে

সাব্বির ভাইয়া বসে বসে ফোন টিপছে।

ভাইয়া খেয়েই চলেছে।একটা ছেলে যে এভাবে ফুচকা খেতে পারে জানা ছিলোনা।আমি একটা মুখে দিয়েছি তো তার ৪টা শেষ।আমি অবাক হয়ে তাকে দেখছি।

--ওই খাবি না আমাকে দেখবি?

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

--আমি আপনাকে দেখছি না আপনার ফুচকা খাওয়া দেখছি।কিভাবে খাচ্ছেন?

--তোর মতো ঢং করে খাচ্ছিনা।আমার ফুচকা অনেক পছন্দ।আর তাছাড়া কতদিন পর খাচ্ছি।

বলেই আরেকটা মুখে পুরলো।আমি আড়চোখে চেয়ে দেখি সাব্বির ভাইয়া হাসছে।

আমি আবার আরেকটা মুখে দিলাম।তাতেই আমার দম বন্ধ হয়ে গেলো।ঝালে কান ধরে গেছে।

আমি ধাপ করে প্লেট রেখে বললাম "ঝাল"।ভাইয়া আমার দিকে চেয়ে বললো,

--কি হয়েছে?

--ঝাল,,পানি।আমার চোখে পানি চলে এসেছে কান জ্বলছে।

ভাইয়া নিজের প্লেট রেখে দৌড়ে পানি নিয়ে এলো।আমি হা করে মুখের ভাপ বের করছি আর হাত দিয়ে মুখের সামনে বাতাস করছি।

ভাইয়া হন্তদন্ত হয়ে আমার জন্য পানি নিয়ে এসে বললো,

--নে পানি খা।

আমি বোতল নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেলাম।তবুও যেন কমছে না।

ভাইয়া তার বন্ধুকে বললো,সাব্বির একটা আইসক্রিম নিয়ে আয় প্লিজ।তাড়াতাড়ি।

সাব্বির ভাইয়া আইসক্রিম আনতে চলে গেলো।

রোদ ভাইয়া বললো,

--ফুল অনেক ঝাল লাগছে?আরেকটু পানি খা।সাব্বির এখনি আইসক্রিম নিয়ে আসছে।একটু ওয়েট কর।

আমি ভাইয়ার দিকে চেয়ে অবাক হয়ে গেলাম।তাকে দেখে মনে হচ্ছে আমার না তারই ঝাল লেগেছে।

সাব্বির ভাইয়া আইসক্রিম আনতেই ভাইয়া তাড়াতাড়ি করে প্যাকেট ছিড়ে আমার মুখের সামনে আইসক্রিম ধরলো।

আমার জান ফিরে এলো।আমি আইসক্রিম খাচ্ছি ভাইয়া আমার দিকে চেয়ে আছে।আমাকে শান্ত ভাবে খেতে দেখে বুঝতে পারলো আমি ঠিক আছি।আমি আড়চোখে সাজ্জাত ভাইয়ের দিকে চেয়ে দেখি সে মিটমিট করে হাসছে।আশ্চর্য এভাবে হাসার কি হলো।

আমার প্রতি রোদ ভাইয়ার কেয়ারিং দেখে অনেক ভালো লাগছে।সেই ছোট বেলায় যেমন কেয়ার করতো ঠিক তেমন।

কলেজের এক দিনের কথা মনে পড়ে গেলো।আমি বান্ধবীদের সঙ্গে ফুচকা খাচ্ছি।রাহাত আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো।আর বিরক্ত হচ্ছিলো।আমি ওকে জোর করে দাড় করিয়ে রেখেছিলাম।হটাৎ এমন ঝাল লাগে।ঝাল ঝাল বলছিলাম আর ফাজিল রাহাত আমার মুখে আরেকটা ফুচকা ঢুকিয়ে দেয়।তারপর বলে আরেকটু ঝাল খা।

সে কথা মনে পড়তেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো।সেটা রোদ ভাইয়ার চোখ এড়ায়নি।

--ওই হাসছিস কেন?

আমি বললাম,কলেজের কথা মনে পড়ে গেলো।আরেকবার এমন হয়েছিলো রাহাত আমার মুখে আরেকটা ফুচকা ঢুকিয়ে দিয়ে বলেছিলো আরো খা ঝাল।

--ভালোই করেছে।তোর আর ফুচকা খেতে হবেনা,রাখ।আচ্ছা,তুই ঝাল খেতে পারিস না?

আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম।

ভাইয়া বললো,

--হায়রে,,,গাধী।

আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ফ্রেন্ডের সামনে আমাকে অপমান করছে।উনি আমার ভ্রু কুচকানোর কারণ বুঝে কানের কাছে এসে আস্তে করে বললো,

--তোর সামনেই তো অর্ডার দিলাম।কিছু বলিস নি কেন?ইচ্ছা করছে কানের নিচে দেই একটা।যেটা পছন্দ নয় সেটা বলতে হয়।চুপ করে থাকতে হয়না।

ভাইয়াও আর খেলোনা।

--তুমি আর খাবে না?

--না,,ইচ্ছে নেই।

চল উঠা যাক।

আমরা সাব্বির ভাইয়াকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে উঠলাম।

ভাইয়া ড্রাইভ করছে তবে বাড়ির দিকে নয়।

--আমরা কোথায় যাচ্ছ?

--আমার একটু কাজ আছে।

গাড়ি শপিংমলের সামনে থামলো।আমরা ভিতরে গেলাম।গার্লস স্টলে।ভাইয়া আমাকে কতগুলো ড্রেস দেখিয়ে বললো,

--দেখ কোনটা কোনটা পছন্দ হয়।

--মানে?

--মানে তোর জন্য শপিং করতে এসেছি।

--আমার শপিং করার প্রয়োজন নেই।

--আরে ওয়েট ওয়েট।

তারপর পকেট থেকে একটা ক্রেডিট কার্ড বের করে আমাকে দেখিয়ে বললো,

--এটার কাকাই দিয়েছে আর বলেছে আসার সময় যেন তোকে শপিংয়ে নিয়ে যাই।তাই এসেছি।ভাবিস না আমার টাকা খরচ করছি।তোর বাবাইয়ের টাকাই।

আমি এখন বুঝতে পারলাম।ভাইয়া ভেবেছে তার দেওয়া কিছু নেবোনা তাই ক্রেডিট কার্ড দেখালো।

আমি আমার পছন্দ মতো কয়েকটা ড্রেস নিয়েছি।হটাৎ চোখ পড়লো কালো রঙের একটা ড্রেসের উপর।আমি ড্রেসটা হাত দিয়ে ধরে দেখছি।

ভাইয়া পিছনে থেকে বললো,

--নিয়ে নে,,ড্রেসটা অনেক সুন্দর।

আমি চট করে বললাম,

--না আমি নেবোনা।

--কেন নিবি না?দেখে তো মনে হচ্ছে ড্রেসটা তোর পছন্দ হয়েছে।

আমি অভিমানী মুখে বললাম,

--তুমি আমাকে সকালে কি বলেছো ভুলে গেলে?কালো রঙে আমাকে কাকের মতো লাগে।তাই আমি নিবোনা।

ভাইয়া হটাৎ থমথমে মুখে বললেন, হ্যা মানে।ঠিক আছে নিয়ে নে।

--না আমি নিবো না।

ভাইয়া আমাকে লোভ দেখাচ্ছে নেওয়ার জন্য।

--দেখ,,ড্রেসটা কত সুন্দর।কি সুন্দর ডিজাইন এমন ড্রেস আর পাবিনা।নিয়ে নে নয়তো পরে পস্তাবি।দেখবি পরে সারারাত ঘুম হবেনা।

--আমি নিবোনা।তোমার ভালো লাগলে তুমি নেও।

--আমি নিয়ে কি করবো?আমি পড়বো?আমি কি মেয়ে নাকি?

আমি ঠেস মেরে বললাম,

--তাতে কি হয়েছে?কয়দিন পর বিয়ে করবে তখন বউকে পড়াবে আর নয়তো তোমার একতরফাকে গিফট করবে।

রোদ ভাইয়া আমার কথা শুনে হাসছে।তারপর বললো,

--ভালো বলেছিস।আমিই নিয়ে যাই।

উনি নিজেই ওই ড্রেসের বিল মিটিয়ে নিয়ে নিলেন।দুঃখে আমার কান্না চলে আসছে।আমার পছন্দের ড্রেস সে তার বউয়ের জন্য নিয়ে গেল।

সারা রাস্তা গাল ফুলিয়ে বসে ছিলাম।একটা কথাও বলিনি।কেন বলবো?আমি নেইনি,,সে কেন নিবে?

রোদ ফুলকে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।

--হায়রে গাধী...তুই কবে বুঝবি তুই আমার একতরফা ভালোবাসা।

আর ড্রেসটা তো তোর জন্যই নিয়েছি।এত্ত অভিমানী তুই।সেই ছোট্ট অভিমানীটাই রয়ে গেলি।

তোকে কালো পড়লে পরী লাগে।কেউ যদি আমার অগোচরে আমার পরীকে নিয়ে যায়।একবার আমায় বিয়ে কর দিনরাত তোকে কালো পড়াবো।কালো পড়তে পড়তে বিরক্ত হয়ে যাবি।দেখিস।

আমি নিজের রুমে যাচ্ছি শপিং ব্যাগ নিয়ে।রোদ ভাইয়ার সাথে আর কথা বলিনি।ভাইয়া তখনই ডাক দিলো।

--ফুল!!

আমি দাঁড়িয়ে গেলাম।আমার সামনে এসে হালকা হেসে শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বললো,

--এইটা আমি তোর জন্যই এনেছি।ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিস সে উপলক্ষে আমার পক্ষ থেকে তোর জন্য গিফট।

প্লিজ না করিস না।প্লিজ।

প্লিজ কথাটা একটু করুন ভাবেই বললো।আমি কিছুতেই নিতাম না কিন্তু শেষে করুন ভাবে প্লিজ বলে আমার মন গলিয়ে দিয়েছে।তাই না করতে পারলাম না।

ব্যাগ নিয়ে মুচকি হেসে বললাম,ধন্যবাদ।

তারপর ভাইয়াকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বললাম, আপনার জন্য।

উনি হাসি মুখে নিয়ে ব্যাগটা খোলে কালো রঙের পাঞ্জাবি দেখে আবারো মুচকি হাসি দিলো।

তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলো,

--হটাৎ??

কেন দিয়েছি নিজেও জানিনা।তবে দেখেই পছন্দ হয়ে গেলো।কিনতে ইচ্ছে হচ্ছিলো কিন্তু কাকে দিবো।তখনই রোদ ভাইয়ার কথা মাথায় আসে।আমি ভাইয়ার দিকে একবার চেয়ে কল্পনা করে নিয়েছিলাম তাকে পড়লে কেমন লাগবে।কল্পনা বলছিলো এই পাঞ্জাবিতে তাকে দারুণ লাগবে।তাই নিয়ে নিলাম।

--এমনি,,আপনি এতো কিছু করলেন আমার জন্য ?

--আচ্ছা, ঋণ শোধ করছিস?

--ঋণ??কি যে বলো ভাইয়া তুমি এভাবে কারো ঋণ শোধ করা যায়?আমি তো এমনি দিলাম।জাষ্ট এমনি।

ভাইয়া আর কিছু বলেনি।কিন্তু তাকে দেখে মনে হচ্ছিলো পাঞ্জাবি দেওয়ায় অনেক খুশি হয়েছে।

আমি রুমে গিয়ে ব্যাগগুলো রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।সারাদিনের কথা ভাবছি।রোদ ভাইয়ার সাথে কাটানো সময় গুলোর কথা ভাবছি।সময়গুলো অনেক ভালো ছিলো,অনেক সুন্দর।আমি অন্যরকম রোদ ভাইয়াকে আবিষ্কার করছি।একদম অন্যরকম।

চলবে...

1
$ 0.00
Avatar for Foysal
Written by
4 years ago

Comments