#The_Cobra_King
#Mafia_Boss_Season4
part:83
→বিজলি বেগমকে দেখে রুহী চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়।ওর কারোর প্রতি সম্মান আসছেনা।এই নারী ও হয়ত এই লোকটার মতোই জঘন্য প্রকৃতির।রুহীর চোখ বেয়ে অনবরত অশ্রু গড়াচ্ছে তা বিজলি বেগমের চোখ এড়ালো না।নাতিকে একপলক দেখে রুহীর দিকে তাকান ওনি।তারপর বলেন,
.
.
-''তোমাকে খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে। পানি খাবে?"
-''এ বাড়ির এক ফোঁটা পানি ও আমার জন্য বিষ হয়ে যাবে।"
.
.
জয়ের দিকে ঘেন্না ভরা চাহনি দিয়ে বলে রুহী।বিজলি বেগম বলেন,
.
.
-''আমি জয়ের দাদি।আমার নাতি এমন কি করেছে যে তুমি এতো রেগে আছো।বলতে পারো আমায়।
-''আপনার নাতিকেই জিজ্ঞেস করুন কি করেছে সে?"
.
.
জয় অন্যদিকে চেয়ে আছে।ওর চোখজোড়া লাল বর্ন ধারন করেছে।বিজলি বেগম জয়ের দিকে তাকান।কিন্তু জয় কিছু বলছেনা।রুহী বলল,
.
.
-''ওনি হয়ত বলতে পারবেননা।এর চেয়ে ভালো আমিই বলে দেই ওনি আমার হাজবেন্ড কে প্রানে মারতে চেয়েছে এটা জানার পর ও যে আমি মা হতে যাচ্ছি।আপনার নাতির মতে তার সাথে ধোঁকা হয়েছে যেখানে ওনাকে আমি চিনতামই না।আপনার নাতির কারনে আমার হাজবেন্ড হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে।দুব্যাগ রক্ত লেগেছে।মাথা বেয়ে অনেক রক্ত ঝরেছে।আজ যদি ওনার কিছু হতো আমার বাচ্চা জন্মের আগেই এতিম হয়ে যেতো।আর আমার কি হতো একটু ভেবে দেখুন?কই যেতাম আমি?ওনি ও তো এতিম।ওনি কি বুঝেনা মা বাবা ছাড়া বেঁচে থাকা কতো কঠিন।আজ যদি আমার হাজবেন্ডের কিছু হয়ে যায় ওনার জীবন অভিশপ্ত করে দিবো আমি।ওনাকে আমি বাঁচতে দিবোনা যতক্ষন পর্যন্ত আমার হাজবেন্ডকে তাকে মাফ করে।ওনি যা করেছেন সেটার প্রায়শ্চিত্ত ওনাকে করতে হবে।আমি চললাম।"
.
.
কথা গুলো রেগে বলে রুহী বেরিয়ে গেলো।এদিকে বিজলি বেগম রুহীর কথা গুলো শুনে জমে গেছেন।এটা কিভাবে সম্ভব?তার জয় তো এমন না।জয়তো খুব বু্দ্ধিমান ছেলে।জয় কিভাবে করলো এ কাজ?বিজলি বেগম নাতিকে দেখছেন সন্দেহের চোখে আতঙ্কের চোখে।তারপর ও নিজের মনকে শান্তি দেবার জন্য বলেন,
.
.
-''জয় ঐ মেয়ে যা বলেছে সব সত্যি?"
.
.
নিশ্চুপ জয় কিছুই বলছেনা।বিজলি বেগম চেঁচিয়ে উঠলেন,
.
.
-''বলিস না কেন জয়?কথা গুলো সত্যি?তুই কি কাজ টা করেছিস?বল??"
-''হ্যা।করেছি আমি।"
.
.
কথা গুলো বলে দাদির দিকে তাকাতেই বিজলি বেগম স্বজোরে চড় দিলেন নাতিকে।ওনি বলতে লাগলেন,
.
.
-''আশা করিনি এমনটা।তোকে কখনো মা বাবার অভাব পূরন হতে দেইনি।চাওয়ার আগেই সব তোর হাতের নাগালে এনে দিয়েছি।ভেবেছিলাম আমার নাতি হীরা।কখনো অন্যায় করতে পারেনা।কিন্তু তুই যে এতো বড় পশু সেটা আজ জানলাম।তোকে ঘর থেকে বের করবোনা আবার আমার চোখের সামনে কোন ক্রিমিনালকে সহ্য ও করতে পারবোনা।আমার সামনে আসলে মনে করবি তোর দাদি মারা গেছে তোর জন্য।ওই লোক তোকে মাফ করলে ও আমার থেকে মাফ পাবি না কখনো। "
.
.
কথা গুলো বলে দূর্বল পায়ে হেঁটে যেতে থাকেন।বিজলি বেগম।জয় কিছুই বলতে পারেনা।থামাতে পারেনা দাদিকে।কোন মুখে থামাবে?আজ ওর কর্ম ফল ভারি পড়ে গেছে ওর ওপর।এদিকে রুহী এসে দেখলো শামীম এখনো বসে আছে।রোয়েন ঘুমুচ্ছে।রুহী ফিসফিসিয়ে বলল,
.
.
-''উঠেছিলো ও?"
-''না রুহী।কথা হলো?"
-''হ্যা।"
-''তোমার কোন ক্ষতি করতে চায়নি তো?"
-''না ভাইয়া।আজ তার হাত পা বাঁধা পাপের জালে।কিছু করতেই পারবেনা।"
.
.
শামীম কিছু বললনা।রুহী ফ্রেশ হতে চলে গেলো।শামীম আরো কিছুক্ষন গল্প করে চলে গেলো।রুহী রোয়েনের মাথার কাছে বসে আছে।রোয়েনের গালে হাত বুলাচ্ছে।হঠাৎ চোখ খুলে রোয়েন মৃদ হাসে।রুহী মুখ নামিয়ে ওর কপালে চুমু খেয়ে বলল,
.
.
-''ভালবাসি।"
-''অনেক ভালবাসি।রুহী খুব খিদে পেয়েছে।"
-''তুমি শোও।আমি খাবার রেডি করে আনছি।"
.
.
সরে এসে বাটিতে সুপ আর মগে গরম দুধ ঢেলে রোয়েনের কাছে এসে বসে।রোয়েন বলল,
.
.
-''কিছু খাওনি কেন?"
-''খেয়েছি আমি।তুমি খাও।"
-''রুহী তুৃমি তোমাকে যতোটুকু চেনো তার চেয়ে বেশি আমি চিনি।আর আমার বাচ্চাটা ও বলছে ও সারাদিন কিছু খায়নি।"
-''তুমি খাও।পরে খেয়ে নিবো আমি।"
.
.
রোয়েন আর কিছু বলেনা।রুহী ওকে খাইয়ে দেয়।রুহী নিজে ও খেয়ে নেয়।এদিকে রামীন ঘরে ফিরে আসে।রাতে রোয়েনের সাথে দেখা করেই ঘরে ফিরে এসেছে।আশফিনা রোয়েনের কথা জানতে চাইছে কিন্তু জিজ্ঞেস করতে পারছেনা।রামীন খেয়াল করলো আশফিনা ঘুরঘুর করছে।কিছুটা অস্থির হয়ে আছে।রামীন বুঝতে পেরে বলল,
.
.
-''রোয়েন ঠিক আছে।রুহী বেশ খেয়াল রাখছে ওর।"
.
.
আশফিনা শুনে কিছুটা খুশি হলে ও না শোনার ভঙ্গি করে চুল আাঁচড়াতে থাকে।রামীন শার্ট পাল্টে একটা সাদা গেঞ্জী পরে আশফিনার দিকে তাকিয়ে খাটে এসে বসে বালিশে মাথা রেখে চোখ বোজে।বেশ ক্লান্ত ও।আশফিনা চুল খোপা করে দেখলে রামীন ঘুম।ও আস্তে করে রামীনের পাশে শুয়ে পড়ে।রামীনের দুহাত ওর মুখের ওপর।আশফিনা সাহস করে রামীনের বুকে হাত রেখে ঘুমাতে চেষ্টা করে।হঠাৎ কেন যেন মনে হলো রামীন নড়ে উঠেছে।আশফিনা ব্যাপারটা বুঝার পর সরে যাওয়ার আগেই রামীন একদম জড়িয়ে নেয় আশফিনাকে।আশফিনা চোখ বড় করে রামীনকে দেখছে।রামীন তো দুষ্টু হেসে বলল,
.
.
-''চুরি করে ভালবাসা দেখানো হচ্ছে?"
-''একদম না।ছাড়েন আমাকে।"
-''আমি জানি তুমি আমাকে খুব ভালবাসো।কিন্তু তোমার মস্তিস্কে একটা কীড়ার আক্রমন ঘটেছে সেটা যখনই তোমার মাথায় কামড় দেয় তখনই তোমার টালবাহানা গুলো শুরু হয়ে যায়।ব্যাপার না। আমার ভালোই লাগছে বৌকে জোর করে আদর করে।তবে জানেমান বেশিদিন সইবেনা এমন।নইলে আমাদের বংশবিস্তার কি করে হবে বলো?"
-''ছিহ!!জঘন্য চিন্তাধারা।"
-''সেটা জন্মগত।বলে কি লাভ বলো।তার চেয়ে তুমি এই চিন্তাধারায় ইউজড টু হয়ে যাও।নয়তো একটু কষ্ট করতে হবে।আমাকে সহ্য করা আবার বেশ কঠিন বলে কথা।"
-''সরে যান।দম আটকে আসছে।আপনার নোংরা কথা বার্তা নিজের মাঝে রাখুন।ঘুমুতে দিন।"
-''তা কি হয়?নোংরা কথা তোমাকে বলবো নাতো কাকে বলবো বলো?তাঞ্জুম ভাবিকে।সেটাতো বিশ্রী দেখা যাবে তাইনা।"
-''ছিহ।"
-''তোমার ছিহটা ও না উফ হৃদয় কেড়ে নেয় ঠিক দেবদাসে ঐশ্বরিয়ার ইসস কথাটার মতো।"
.
.
আশফিনা মুখ বেঁকিয়ে অন্যদিকে মাথা ঘুরিয়ে নেয়।রামীন এবার আশফিনার মুখ টা নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়।আশফিনা মাথা শক্ত করে রেখেছে।রামীনের সেদিকে কোন খেয়াল নেই।আশফিনার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওর ঠোঁটের কাছে আসতেই আশফিনা জোরে ধাক্কা দিলো রামীনের বুকে।কিন্তু রামীন আরো জোরে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়।ঘন ঘন চুমু খাচ্ছে আশফিনার গলায়।আশফিনা অনবরত ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইছে রামীনকে কিন্তু রামীনের হাত দুটো ওর পিঠে ওর শক্ত হতে থাকে।এভাবেই অনেকটা সময় কেঁটে যায়।রামীন সেভাবেই একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ে।এদিকে রোয়েন আর রুহী একে একে পনেরদিন কাঁটিয়ে দেয় হাসপাতালে।রোয়েন এখন কিছুটা সুস্থ।মাথার ব্যান্ডেজ ও খোলা হবে আজ।এরপরই ঘরে যাবে ওরা।রামীন আর শামীম চলে এসেছে।রোয়েনের ব্যান্ডেজ খোলা হলো।কপালের ডান সাইডে সেলাইয়ের দাগ ফুঁটে উঠেছে।নার্স চলে গেলে ওরা সকল বিল পে করে ঘরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।রুহী আর রোয়েন ঘরে ফিরে আসে।রোয়েন কে গোসল করিয়েছে ও। তবে মাথায় পানি দেয়নি।গোসল করিয়ে রোয়েনের কাপড় পাল্টে দেয়।রোয়েনকে খাইয়ে দিয়ে ও অল্প করে খেয়ে নেয় ধমক শুনে।খাবার সেড়ে রুহী রোয়েনের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।রোয়েন এক হাত দিয়ে রুহীর কপালের চুল গুলো সরিয়ে দিচ্ছে।রুহীর মুখে স্নিগ্ধ হাসি।কতোদিন পর এভাবে লোকটার বুকে শুয়েছে ও।রোয়েন রুহীকে আচমকা সরিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়।তবে কিছু করছেনা।দুজনের চোখে নেশাযুক্ত চাহনি।রুহী হঠাৎ এগিয়ে এসে রোয়েনের ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়।দীর্ঘ এক ঘনিষ্ঠ চুম্বনের পর সরে আসে ওরা।
রাতে আনিলা রেজোয়ান,শামীম ওর বৌ আর মেয়ে আর রামীন আশফিনা দেখতে আসে রোয়েনকে।
আনিলা অনেক কিছু রান্না করে এনেছেন ওর জন্য।সবাই একসাথে নাস্তা করে আর বেশকিছুক্ষন গল্প করে যে যার ঘরে চলে গেলো।পরদিন রোয়েন আর রুহী নিজেদের রুমে বাবুর তিনমাসের ছবি ক্যামেরায় বন্দী করে।এগুলো হলো স্মৃতি বাবুকে দেখানো যাবে।কতোটা ভালবাসে তার বাবাই আর মা।আরো কয়েকটা দিন পার হতে থাকে।রুহী খুব খেয়াল রাখে রোয়েনের।বের হতেই ভুলে গেছে মেয়েটা।তবে মাঝে মাঝে দুজনে একসাথে হাঁটতে বের হয়।সপ্তাহ খানিক যেতেই কাজে যাবার জন্য প্রস্তুত হয় রোয়েন।নিজের আগের রুপ ধারন করে বেরিয়ে পড়ে।অফিসে আসতে দেখেই সবাই ভীষন খুশি।লিডার কে কতোদিন পর দেখছে ওরা।রোয়েন সবার সাথে হালকা কথা বলে কেবিনে চলে আসে।রামীন এসে জড়িয়ে ধরে রোয়েনকে।
.
.
-''হয়েছে।কেমন আছিস?"
-''ভালো।তোর কি খবর?"
-''এইতো বেশ ভালো।"
-''রুহী খুব খেয়াল রেখেছে তোর।"
-''হুম।তোর ও তো আশফিনা আছে। "
.
.
কথাটা বলে নিজের আসনে বসে রোয়েন।রামীনের মুখের হাসি চলে গেলো।রোয়েন আবার বলল,
.
.
-''ভুল বললাম?"
-''নাহ তা কেন? কাল জুয়েলের সাথে কথা হয়েছিলো।ওরা বলছে আমি বিয়ে করলাম রুহী প্রেগন্যান্ট হলো ওদের ট্রীট দেইনি।"
-''তো তুই কি বললি?"
-':বললাম তোর শরীর ভালোনা।ওরা কিভাবে ট্রীট চায় এখন?"
-''হুম।"
-''তা কি করবি ভেবেছিস কিছু?"
-''পাঁচদিন পর রুহীর মামী ফিরবে দুবাই থেকে।আর আমার এক কাজিন আর তার ওয়াইফ আসবে।ওরা আসার পরেই না হয় পার্টি দিবো।ওদের জানিয়ে দিস।"
-''ওককে বস।"
চলবে
0
4