#সেলিব্রেটি_স্বামী
#পর্ব_১৫
#Mst_Liza
আমার স্বামী নিশিথকে অনেক মেরেছিলো। নিশিথের শার্টের কলার ধরে বলেছিলো, সব ভুলে তোকে আমি আশ্রয় দিয়েছিলাম।দিয়েছিলাম আমার অফিসে জব।আর তুই কি করলি? লজ্জা করলো না তোর নিজের ভাবির দিকে কুদৃষ্টিতে তাকাতে??তোকে তো আমি।।
উনি নিজের প্যান্টের বেল্ট টা খুলে ফেললেন।নিশিথের উপর নিজের সমস্ত রাগ নিয়ে যখনই হাত উঁচু করলেন নিশিথ উনার হাতের বেল্টটা ধরে নিলো।উনাকে মারতে থাকলো।আহান এই দৃশ্য দেখে প্রথমবার উনার প্রতি মায়া বোধ করলো।নিশিথ যখন উনাকে মারতে মারতে বললো তোর বউ নস্টা ভাইয়া। আমাকে কোন সাহসে তুই মারিস? তখন আহান এই কথাটা শুনে আর চুপ থাকতে পারলো না।এগিয়ে এসে বেঘোরে পিটালো নিশিথকে।তুই দূর থেকে শুধু নিজের বাবাকে মারতে দেখলি।ছুটে আসলি।আর আহানের পা জড়িয়ে ধরে বললি মেরো না আমার বাবাকে।আমার বাবা সত্যিই খুব ভালো।তোমার মা পঁচা। তোমার মাকে বলো যা বলবে।আহান রেগে তোর চুলের মুঠি টেনে ধরে।আমি আর মিরা আহানের থেকে তোকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসি।তোর বাবা মাইর খাওয়ার পর ঢুলতে ঢুলতে উঠে দাড়িয়ে একটা ফোন করে।কিছুক্ষণ পর একজন উকিল এসে বলে উনার সব সম্পত্তি তোর বাবাকে স্বইচ্ছায় লিখে দিয়েছেন।উকিলের কাছে থেকে দলিলটা নিয়ে দেখার পর উনি কস্টে হার্ট অ্যাটাক করেন।উনি ভাবতেও পারেন নি উনার ভাই এভাবে কৌশলে সব কিছু লিখে নিবেন।মাটিতে পরে উনি বুকে হাত দিয়ে আমার আর আহানের দিকে অন্য হাত ইশারা করলেন।আমি ছুটে উনার কাছে আসলেও আহান আসে না।উনি আহানকে ডাকে, বাবা একবার আমার কাছে আয়! আমি বোধ হয় আর বাঁচবো না। আমার শেষ সময়ে অন্তত একটাবার আমাকে বাবা বলে ডাক? উনার কথাটা শুনে আমার বুকের ভেতরটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করছিলো।আহান নিজেকে আর ধরে না রাখতে পেরে ছুটে এসেছিলো।উনাকে প্রথমবার ডেকেছিলো বাবা বলে।আর কিছু বলার আগেই উনি মারা যান।উনি মারা যাবার পর নিশিথ আমাকে আর আহানকে অনেক অপমান করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেছিলো।আহান রেগে নিশিথের দিকে আগাচ্ছিলো আমি আহানকে আটকায়।তোর মা নিশিথকে কিছু বলতে আসলে তোর মাকে নিশিথ চর মারে।আর তুই তোর বাবার সাথে তাল মিলিয়ে বলেছিলি ঠিক হয়েছে ওই লোকটা মরে গিয়েছে।পঁচা বউ নিয়ে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো।আহান নিজের ভেতরে রাগ সরিয়ে ভালোবাসা টুকু নিয়ে তোর কাছে গিয়ে বলেছিলো, আরু তুই আমাদের সাথে চল।তোকে ছাড়া তো আমি একটা মুহূর্তও থাকতে পারি না।তুই বলেছিলি আমার কি মাথা খারাপ নাকি যে বাবা মাকে ছেড়ে তোমাদের মতোন ভিকারিনীর সাথে যাবো?তোমাদের তো কিচ্ছু নাই এখন।তাছাড়া তোমরা তো নোংরা, পঁচা। যাও বেড়িয়ে যাও আমার বাবার বাসা থেকে। তোকে টেনে মিরা একটা চর বসিয়ে দিয়েছিলো।বলেছিলো বড়দের সাথে ঠিক ভাবে কথা বলতে। তুই মুখের উপরে বলেছিলি, ওদের আমি সম্মান করতে পারবো না।ওরা নোংরা।
আমারা চলে আসছিলাম।আমাদের আশার সময় তোর মা অনেক কেঁদেছিলো।কিন্তু তুই একটুও আমাদেরকে বুঝলি না।আমার আহান মাঝ রাতে ঘুমের মধ্যে ধুকড়ে কেঁদে উঠতো তোকে পাশের বালিশে না পেয়ে।তোর জন্য অনেক কাঁদত।আর নিজের শত কস্টকে রাগে পরিণত করতো।তবুও বলতো মা আমি আরুকে ছাড়া থাকতে পারছি না।আমার খুব কস্ট হচ্ছে।বিয়ে করলে দেখও মা আমি কিন্তু আরুকেই করবো।
দুই বছর পর কলেজ লাইফ শেষ করে আহান ভার্সিটিতে পা রাখলো।ভার্সিটির ক্লাস করতো না।শুধু পরীক্ষা দিত।আহানের বয়স তখন ১৯ আর তোর বয়স তখন মাত্র ৮।প্রতিদিন ও তোর স্কুলে যাওয়ার রাস্তায় বসে থাকত।তোকে একবার দূর থেকে দেখবে বলে।আবার তুই খুব কাছে চলে আসলে আহানের কস্ট হতো, খুব রাগ হতো তোর ব্যাবহারটা মনে পরলে।যার জন্য তোকে আর ডাকতো না।সবার আগে আমার গল্প পেতে নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজে আসবেন।সেদিন তোকে দেখার জন্যই আহান বসে ছিলো।হঠাৎ একটা গাড়ির এক্সিডেন্ট হয়।শব্দ শুনে আহান এগিয়ে আসে। লোকটার মুখ দেখা যাচ্ছিলো না।কেউ তাকে তুলছিলোও না।বলছিলো পুলিশ আসুক।এক্সিডেন্ট কেস।আমরা ধরলে বিপদে পরতে পারি। কেউ হাত দিও না।কিন্তু আহান শোনে নি তাদের কথা।আহানের নিজের বাবার কথা মনে পরে গিয়েছিলো। এরকম একটা এক্সিডেন্টেই তো ও বাবাকে হারিয়ে ছিলো।আহান সাহশ করে তাকে উঠায়।তার মুখ দেখে আহান অবাক হয়ে যায়। সে যে কেউ না। দেশের অনেক বড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ফিল্ম মেকারের মুখ।তাকে নিয়ে আহান হসপিটালে আসে।তাকে নিজের রক্ত দিয়ে বাঁচায়।যা নিউজ হয়ে যায়।সাহসী নাগরিকের পুরষ্কার পাই আমার আহান।লোকটি সুস্থ হলে খোঁজ নিয়ে আমার আহানের সাথে দেখা করতে আসে।আর বলেন তিনি কারও কাছে ঋণী থাকেন না।আহানকে একটা ব্লাঙক চেক দেয়।আহান চেকটা না নিয়ে একটা কাজ চায় তার কাছে।সে আহানকে ভালোভাবে দেখে বলেন অভিনয় যানো? আহান উত্তরে জবাব দেয় বলতে পারবো না।উনি আহানকে নিয়ে একটা ফিল্মের কল্পনা করে।আর আহানকে তার নতুন ফিল্মের নায়ক হিসেবে সিলেক্ট করে চেকটা আহানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে যায়।উনি ভেবে পারে নি আহান এতো ভালো অভিনয় করবে।প্রথম দিনের শুটিং এ উনি অনেক খুশি হয়।মুভি যখন রিলিজ হয় তখন একটার পর একটা অফার আহানের কাছে আসতে থাকে যার পরি প্রেক্ষিতে আজ আমার আহান সুপারস্টার আহান খান নামে সকলের কাছে পরিচিত একটা মুখ।
কথাগুলো বলে শ্বাশুড়ি মা থামলেন।কিন্তু আমি আরও কিছু জানতে চায়। শ্বাশুড়ি মাকে প্রশ্ন করতে যাবো তার আগেই উনি হাতের ইশারায় আমাকে থামিয়ে দিলেন।আমাকে বললেন,
বলছি। দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে আবারও বলতে লাগলেন,
তোর বাবা যেভাবে আমাদের ঠকিয়ে ছিলো ঠিক সেভাবে তোর বাবাকেও তার প্রেমিকা ঠকিয়ে ছিলো।যার সাথে তোর বাবা পরকিয়া করতো সে কৌশলে তোর বাবার থেকে সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়েছিলো। তোর বাবা আর মাকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছিলো।তারপর তোর মৃত বাবার আঙুলের ছাপ দিয়ে সবকিছু নিজের নামে লিখে নিয়ে খুনের দায় আমাদের বহুদিনের পুরাতন রাধূনী মিনি খালার উপর চাপিয়ে দিয়েছিলো। নিজেকে তোর বাবার বউ বলে দাবি করে ওবাড়িতে থেকে যায় সেই মেয়েটা।আর তোকে একটা অনাথ আশ্রমে রেখে আসে।আমার আহান তোর সামনে না গেলেও দূর থেকে সবসময় তোকে ঠিকই দেখতো। কিন্তু রাগের কারণে তোর সামনে যেতে পারতো না।তোকে যখন তোর পালিত বাবা-মা দপ্তক নেয় তখনও আহান সবসময় তোর পিছে নজরে নজরে কাউকে লাগিয়ে রাখতো।
গত দশ বছর ধরে আহানের বিয়ে দিতে চেয়েছি আমি।কত মেয়ে দেখেছি।আহানের পছন্দ হয় না।তোর বয়সটা খুব কম হলেও আমার আহানের বয়সটা এমন ছিলো যে ভালোবাসার মানে বুঝতো।জ্বলে পুড়ে ভেতরে ভেতরে শেষ হতো।তোকে পাগলের মতোন ভালোবাসতো তাই বিয়ে করে নি আহান।এখন তুই বড় হয়েছিস।তাই এইবার আমি জেদ ধরে ছিলাম বিয়ে ওকে করতেই হবে।হোক তুই নইতো অন্য কেউ।তাই আহান প্লান করে সেদিন তোর ভার্সিটির সামনের রাস্তায় তুই আসার পথে ওই ভাবে একজনকে রিক্সাওয়ালা সাজিয়ে পিটাচ্ছিলো।আহান রাস্তা অনেক আগেই খালি করে ফেলেছিলো।শুটিং বলে যত পাবলিককে এনেছিলো সবই ভাড়ার।শুধু তুই একবার প্রতিবাদ করলেই তোকে উঠিয়ে আনবে এটা চেয়েছিলো আহান।কিন্তু তুই চর মেরে বসলি আহানকে।যেটা আহানকে সেই পুরোনো চরটার কথা মনে করিয়ে দেয়।আর এই জন্যই আহান তোর সাথে এমন করে।তোর মনে নেয় অতীতের কথা।কারণ তুই তখন খুব ছোট ছিলি। কিন্তু সেগুলো অত্যন্ত কস্টের আরু।যা আমার আহানকে এতো পাষাণ করে তুলেছে।তুই বদলেছিস।তোর চিন্তা ধারা বদলেছে।কিন্তু আমার আহানের ভেতরে জমিয়ে রাখা কস্টগুলো এখনো ঠিক আগের মতোই আছে।
🍁🍁🍁
শ্বাশুড়ি মায়ের সব কথা শুনে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।এতোটা খারাপ ব্যাবহার আমি করেছি ভাবতেই আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে।না জানি আহান কিভাবে সহ্য করেছে এসব।এতোগুলা বছর ধরে একটা মানুষ আমাকে ভালোবেসে এসেছে।এতোটা কস্ট পেয়েছে আমার জন্য আর আমি তাকে এতোকিছু শোনালাম? ভালোবাসে বলেই তো সইতে পারে নি উনি।যার জন্য মনে আঘাত পেয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছে।উনার ভালোবাসা আর কস্টের মাঝে আমার এই কয়দিনের কস্ট তো কিছুই না।কথাগুলো মনে মনে ভেবে আমি ছুটে এলাম উনার কেবিনের সামনে।কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই নার্স আমাকে ইশারায় বুঝালো শব্দ না করতে উনি ঘুমাচ্ছে।মুখে অক্সিজেন মাক্স। চোখ দু'টো বন্ধ।নার্স উনাকে একটা ইনজেকশন পুশ করে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বলেন এবার ভেতরে যেতে পারেন ম্যাম।
চলবে,,,,,,,
0
1