অপ্রত্যাশিত ➖
ফয়সাল
Part:9
দেখলাম ছোটবোন(রিয়া) দরজাটা খুলে দিলো, অনেকটাই অবাক হচ্ছি কেননা সবসময়ই রাতে বাসায় ফিরলে আম্মু এসে দরজা খুলে কিন্তু আজ ভিন্ন মানুষ।
তাহলে কি আম্মুও আমাকে বুঝবে না?
সবসময় বাসাটা অনেক আনান্দময় থাকে কিন্তু আজ যেনো অনেকটাই নিস্তব্ধ, রিয়া কোনো কথা না বলে চলে গেলো -
বুঝতে পারছি আমার একমাএ আদরের বোনটাও আমাকে আজ অনেক খারাপ ভাবছে,
আস্তে করে দরজাটা লক করে দেখলাম আব্বু-আম্মু আর রিয়া সোফায় বসে আছে, কারো মুখে কোনো কথা নেই, অনেকটাই শোকে আছ্যন্ন হয়ে বসে আছে।
আম্মুর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, ধীরে ধীরে আম্মুর কাছে যেতে লাগলাম,
হঠাৎ আব্বু সোফা থেকে উঠে এসে -ঠাসসসসস ঠাসসসস ঠাসসসসস
আব্বু: এইদিন দেখার জন্য তোকে মানুষ করেছিলাম (অবিরাম মেরেই চলেছে )
আমি কোন কথায় বলতে পারছি না, চোয়াল দুটো লাল হয়ে গেছে, মনে হয় ফেটে রক্ত বের হবে
আব্বু: এমন কুলাঙ্গার জন্ম দিয়েছি জানলে তোকে জন্মের সময় গলা টিপে মেরে দিতাম ( কাদতে কাদতে )
বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে, এমন অমানুষকে আমি আমার চোখের সামনে দেখতে চাইনা,,
বেরিয়ে যা........(জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে)
আমি আব্বুর পা দুটো জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে
- আব্বু আমাকে মাপ করে দাও,
দয়া করে আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিও না প্লিজ আব্বু
আব্বু: চুপ,, তোর ওই মুখে আমাকে আব্বু বলবি না,,
চলে যা আমার চোখের সামনে থেকে (পা দিয়ে অনেক জোরে ধাক্কা মেরে )
আম্মু তুমি অন্তত কিছু বলো, আম্মু আমি নীলাকে ভালোবাসি......
ঠাসসস ঠাসসসসস
চলে যা আমার চোখের সামনে থেকে
(অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কাদছে ) অবশ্য কাদবে না কেন আমি তো তাদের ভালোবাসার সম্মান দিতে পারিনি বরং তাদের কে অন্যের চোখে খারাপ করে দিয়েছি
ছোটবোনটাও একনাগাড়ে কেদে চলেছে, সেও আমাকে ভূল বুঝছে।
আজ আমি সবার চোখে খারাপ, আমার আদরের পরিবারের কাছে একটা কুলাঙ্গার, অমানুষ। চোয়াল দুটো ফুলে গেছে, চোখের পানিকে আটকাতে পারছি না, ক্ষুদায় মাথাটা ঝিমঝিম করছে -
যে আম্মু আমার কোনো কষ্ট সহ্য করতে পারতো না আজ সেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে
যে আব্বু আমাকে নিজে হাতে খাইয়ে দিতো সে আজ আমার ক্ষুদার কষ্ট দেখতে পারছে, চলে যেতে বলছে এই বাড়ি থেকে
যে আব্বু আম্মু আমাকে এতটা ভালোবাসতো আজ তারাই বের করে দিচ্ছে আমাকে,
আমি: আব্বু, তোমাদের অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি,
চাইনি তোমাদের কষ্ট দিতে সেজন্য নিজের ভালোবাসাকে বিসর্জন দিতে চলেছিলাম শুধুমাত্র তোমাদের সম্মানের কথা ভেবে,
আমি তো পারতাম সবকিছু ভূলে নীলাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে কিন্তু তোমরা কষ্ট পাবে ভেবে সেটাও করিনি,
আম্মু তুমিও আজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো, শুনেছি সন্তান যতই ভূল করূক সবকিছু ভূলে মা তাকে আপন করে নেই কিন্তু আজ বুঝছি এটা ভূল কথা,,
চলে যাচ্ছি আমি এই বাড়ি থেকে, আর আসবো না,
ভালো থেকো আব্বু, ভালো থেকো আম্মু
নিজেদের শরীরের খেয়াল রেখো আর পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও
(আব্বু মাথা নিচু করে বসে আছে অনেক রাগ নিয়ে, আম্মু অন্যদিক ফিরে কেদেই চলেছে, আমার দিকে একবার ও তাকাই নি। মনে আমাকে তারা সহ্য করতে পারছে না, বিরক্ত লাগছে আমাকে, ঘৃনায় তাকাতে পারছে না আমার দিকে )
ছোটবোনটার কাছে যেয়ে
ভালো থাকিস বোন, আব্বু আম্মু কে ভালো রাখিস তাদের শরীরের দিকে খেয়াল রাখিস
কাদতে কাদতে আমাকে জড়িয়ে ধরে
রিয়া: ভাইয়া তুই যাসনা, তুই চলে গেলে আমার অনেক কষ্ট হবে থাকতে পারবো না তোকে ছাড়া, আব্বু আম্মু রাগের বশে তোকে এসব বলেছে,, প্লিজ তুই যাসনা এই বাড়ি ছেড়ে (তার কান্না থামার নয়)
আমার চোখ দিয়ে আর অশ্রু বের হচ্ছে না, আর কতো অনেক হয়েছে। আর পারছি না সহ্য করতে চলে যেতে হবে এখান থেকে,
আমি : না বোন তোর আব্বু আম্মু চাইনা যে আমি এই বাড়িতে থাকি, তারা ভূল করেছে আমার মতো একটা কুলাঙ্গার জন্ম দিয়ে।
ভালো থাকিস তুই,
ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে উঠে দরজার দিকে যাচ্ছি,
মন চাচ্ছে না এই বাড়ি থেকে যেতে, আমার ছেলেবেলা আর আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বাড়িতে।
আব্বু আম্মুকে অনেক ভালোবাসি তাদের ছেড়ে কিভাবে থাকবো আমি,,
আর হয়তো এই বাড়িতে আসা হবে না, আব্বু আম্মুকে দেখতে পাবো না,
শেষ বারের মতো তাদের কে সালাম করে চলে যাবো-
আব্বুর কাছে গিয়ে তাকে সালাম করবো এমন সময় আব্বু পা সরিয়ে নিলো তারপরেও মেঝে থেকে সালাম করলাম, আম্মুর কাছে গিয়ে সালাম করলাম তবুও আম্মু কিছু বললো না অন্য দিক ফিরে কাদছে
কেদোনা আম্মু তোমাদের কুলাঙ্গার ছেলেটা চলে যাচ্ছে তার মুখ আর তোমাদের দেখতে হবে না। আর কারো জন্য তোমাদের সম্মান নষ্ট হবে না
অনেক ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমার দিকে তাকালো কিন্তু কিছূ বললো না, অনেক কষ্ট হচ্ছে তবুও যেখানে আমি মূল্যহীন সেখানে থাকতে চাইনা-
বাইকের চাবি আর ফোনটা আব্বুর সামনে টেবিলের ওপর রেখে ওখান থেকে চলে আসলাম বাইরে, ভালোবাসার বাড়িটার দিকে শেষ বারের মতো দেখলাম, স্বপ্নের বাইকটা ছড়ে চলে এলাম রাস্তাই। চোখদিয়ে একফোটাও অশ্রু পড়ছে না অনেক পাষান হয়ে গেছি।
নীলার কথা খুব মনে পড়ছে, পার্ক থেকে এসেই মনে হয় মামা-মামি ওকে নিয়ে চলে গেছে,
নীলাকে শেষবারের মতো একটু দেখতে ইচ্ছা করছে কিন্তু না,,
সুখে থাকুক সে অন্য কাউকে নিয়ে, আমি গেলে সে আরো বেশি কষ্ট পাবে ওর চেয়ে তার বিয়ে হয়ে গেলে ঠিক আমাকে ভূলে যাবে, অনেক সুখে থাকবে
তাই ওর সামনে যেয়ে আর ওর সুখ টা কেড়ে নিতে চাচ্ছি না, হয়তো কিছুদিন কষ্ট পাবে কিন্তু তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।
রাত অনেক হয়েছে কোথায় যাবো কি করবো কিছু ভেবে পাচ্ছি, অনেক ক্ষুদাও লেগেছে কিন্তু খাওয়ার ইচ্ছা নেই। কাছে বড়োজর দুই হাজার টাকা আছে কিন্তু এই টাকায় কতোদিন? খুব বেশি হলে ১৫ দিন তারবেশি না। ভাবছি দূরে কোথাও চলে যাব যেখানে অচেনা মানুষের ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলবো নিজের কষ্টটা সিগারেটের ধোয়ার সাথে উড়িয়ে দেবো -
এখান থেকে ৩ কিলো দূরে বাসস্টপ, সেখান থেকেই রংপুর এর টিকিট কেটে চলে যাবো অচেনা শহরে। অনেক কষ্টে একটা রিক্সা পেলাম, অনেক আকুতি মিনতি করে তাকে বাসস্টপ যেতে রাজি করালাম কিন্তু অনেক বেশি ভাড়া দিতে হবে। রিক্সায় উঠে পকেটে থাকা সিগারেট ধরিয়ে বুকটা হালকা করার ব্যার্থ চেষ্টা করতে থাকলাম,
কিছুক্ষণ পর চলে আসলাম বাসস্টপ অনেক কষ্টে একটা টিকিট পেলাম আর ১৫ মিনিট পর বাস ছাড়বে। আর হয়তো এই প্রানের শহরে বসে আড্ডা দিতে পারবো না, আড্ডা দেওয়া বন্ধুদের ও পাবোনা তাদেরকে অনেক মিস করবো, মিস করব ভালোবাসার পরিবার।
মিস করবো আমার কলিজা, আমার ভালোবাসা নীলাকে, ভূলতে পারবো না তাকে কোনদিন।
গাড়িতে উঠে বাইরের দিকে চেয়ে এসব ভাবছি তার মধ্যেই বাস তার আপন গতীতে চলতে লাগলো, কিছুক্ষণ পরেই ছেড়ে আসলাম ভালোবাসার সব কিছু,,
শরীরটা অনেক ক্লান্ত সাথে পেটে অনেক ক্ষুদা, মাথাটা সিটের সাথে এলিয়ে দিলাম, কখন যেনো চোখটা লেগে গেলো বুঝতেই পারিনি...........
পরবর্তী পর্ব সবার আগে পেতে লাইক এবং কমেন্ট করে সাথে থাকুন...........
ধন্যবাদ 💖💖💖💖