কাল্পনিক এক চিড়িয়াখানার বাজেট
১.
দীর্ঘদিনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও স্বার্থান্বেষী মহলের দুর্নীতিতে পর্যুদস্ত কোন এক চিড়িয়াখানার প্রাণীরা ক্রমাগতভাবে জীর্ণশীর্ণ রোগাক্রান্ত হয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় মৃতপ্রায়। চিড়িয়াখানার কিউরেটর মুখেই বলে যাচ্ছেন দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীলতার কথা। অথচ তার নিযুক্ত কর্তাবাবুরা চিড়িয়াখানার প্রাণীদের বরাদ্দ টাকা চুরি করে নিজেরাই বরং মোটাতাজা হচ্ছে। গত দশবছরে চিড়িয়াখানার ৯ লক্ষ কোটি টাকা কিউরেটরের লোকজন চুরি করে বিদেশে পাচার করে দিলো। বানরের একটি কলা ৫৬ লাখ টাকা এবং ছাগলের এক পিস কাঠালপাতা ৮ হাজার টাকা মূল্য দেখিয়ে কেনা হচ্ছে। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তো দুরের কথা। এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ বা সমালোচনা করলে তাকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে জেলে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। দেখতে দেখতে পুরো চিড়িয়াখানায় সংক্রামক রোগের ভয়াবহ বিস্তার ঘটলো। প্রাণীদের বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ২৫০০ টাকার চটের বস্তা ৪৭০০ টাকা এবং ৫০০ টাকার দড়ি ৫০০০ টাকা মূল্য দেখানো হলো।
২.
এরই মধ্যে দূর্নীতিবাজদের জন্য মহা প্রতিক্ষিত বাৎষরিক বাজেট ঘোষিত হলো। সংক্রামনে জর্জরিত প্রাণীদের স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন নিশ্চিতে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেই এই বাজেটে। এতদিন ধরে কিউরেটরের দুর্নীতিবাজরা যে টাকা চুরি করেছে। বাজেটে চিড়িয়াখানায় ফাস্টফুডের দোকান ও সিনে কমপ্লেক্স নির্মান খাতে সেই চুরিকৃত অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা সাদা করার অবারিত সুযোগ দিয়ে দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অর্থের বা সম্পদের উৎস নিয়ে দুর্নীতি দমন সংস্হা বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন তোলার বিধানটিও রহিত করা হয়েছে। অর্থাৎ বানরের একটি কলা ৫৬ লাখ টাকা মূল্য দেখিয়ে কিনে যে অবৈধ উপার্জন করা হলো সেই কালোটাকা সাদা করার চমৎকার সুযোগ দিয়ে দেয়া হলো।
৩.
গত দশবছরে যে ৯ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হলো। ঘোষিত বাজেটে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে অর্থপাচার ঠেকাবার নামে ৫০ শতাংশ জরিমানার বিধান রেখে পাচারকারীদের সেই টাকাকে বৈধতা দেয়া হলো। অর্থাৎ ছাগলের এক পিস কাঠালপাতা ৮ হাজার টাকা মূল্য দেখিয়ে কেনা যে টাকাগুলো বিদেশে পাচার করা হলো সেটাকে বৈধ করে দেয়া হলো।
৪.
পুরো চিড়িয়াখানার গত ১২ বছরের মহাদূর্নীতিতে ভেংগে পরা বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির মূলোৎপাটনে কোনো পরিকল্পনাই নেয়া হলো না। বরং উল্টা দূর্নীতিবাজ ও অর্থপাচারকারীদের জন্য চলমান পরবর্তী দূর্নীতির মহোৎসবের সুযোগ দিয়ে দেয়া হলো। আশ্চর্যজনক ভাবে এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে শতাংশের হিসেবে মোট বাজেটের ৫ দশমিক ১ শতাংশ বরাদ্দ বিদায়ি বছরের ৫ দশমিক ৮ শতাংশ চেয়েও কমিয়ে দেয়া হলো।
৫.
চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাবাবুরা এবারও বেশ খুশি। ৫০০০ টাকা বেতনের ঝাঁড়ুদার এখন ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদশালী। চুরিকৃত অপ্রদর্শিত কালোটাকা সাদা করে তিনি এখন বিশাল চিড়িয়ানেতা। কাঠালপাতার সরবরাহকারী কিউরেটরের দলের কর্তা এখন বিদেশের শীর্ষ ধণী। বানরের কলা সরবরাহকারী কর্তাবাবু এখন ব্যাংক বীমা টিভি চ্যানেলের মালিক। সবাই তারা এখন মহা সম্মানিত। চিড়িয়াখানার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাদের সম্মান রক্ষার্থে জোড়ালো ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিদ্যমান। তাই তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে হলে অন্যকোন এক দেশের কাল্পনিক চিড়িয়াখানার গল্প দিয়েই বলতে হয়।
0
11
Written by
Foysal
Foysal
4 years ago
Written by
Foysal
Foysal
4 years ago