আজ আমার বাসর রাত।
বোরখা পরে বসে আছি বাসর ঘরে। আমার বিয়েটা সব মেয়েদের মতো হয় নি। আমার বিয়েটা একটু অন্য রকম ভাবেই হয়েছে। আমি আমার সদ্য বিবাহ করা স্বামীর জন্য বসে আছি। জানি না সে কখন আসবে।আদও কি আসবে নাকি আসবে না তাও আমি জানি না। আমার প্রিয় স্বামী আসার আগে আমার পরিচয়টা দিয়ে দেয়।
আমার নাম নুরজাহান আক্তার নূর। আমরা সিলেট এ থাকি। আমি মধ্যবৃত্ত পরিবারের মেয়ে, আমি মাদরাসায় দর্শম শ্রেনীতে পড়তাম। আমার বাবা একজন ইমাম ও মাদরাসার শিক্ষক, আমার মা গৃহীনি, আমার ছোট একটা ভাই আছে নাম ইব্রাহিম হাসান, আমার ভাইটা হাফিজী পড়ছে, আমার বাবা অনেক ধার্মিক, ছোট কাল থেকেই আমার মায়ের মতো আমাকেও পর্দায় রেখেছে, আমিও পর্দায় থাকতে পছন্দ করতাম তাই এখনো পর্যন্ত আমাকে কেউ দেখেনি।
যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে সে বড়লোক বাবার বখাটে ছেলে। সে আমাকে এখনো দেখে নি, আমিও তাকে এখন পর্যন্ত দেখিনি। তারা দুইভাই-বোন।
আমার শাশুড়ির ছোট বোন আমাদের এখানে থাকে।একদিন আমার শাশুড়ি এখানে বেড়াতে এসে তার ছোট বোনের কাছে আমার কথা শুনে আমাকে দেখতে আসে। তারপর আমাকে দেখে আমার শাশুড়ির খুব পছন্দ হয়। আমার বাবার কাছে আমার শশুড়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু ছেলে বখাটে শুনে আমার বাবা না করে দেয়। কিন্তু তাতে তারা ফিরে যায় নি তারা আমার বাবার কাছে অনেক আকুতি মিনতি করে আমার বাবাকে রাজি করান। এই ছেলের কাছে আমার বাবা কিছুতেই বিয়ে দিতে চাই নি।
তাদের জোরা জোরিতে একপর্যায় রাজি হয়ে যায়।আমার বিয়ে ছোট-খাটো করে ঘরে বসেই হয়।
তারপর আমাকে ঢাকা নিয়ে আসে। সিলেট থেকে ঢাকা আসতে আসতে রাত হয়ে যায়। কিছুক্ষন আগেই আমাকে আমার ননদ রিনা একটা রুমে বসিয়ে দিয়ে বলে যায়। রাহাত ভাইয়াকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
আমি মনে মনে বললাম ও তাহলে আমার স্বামীর নাম রাহাত। জানি না আমাকে মেনে নিবে নাকি মেবে না।এসব ভাবছি হঠাৎ করেই দরজায় জোরে শব্দ হলো। আমি ভাবনার জগত থেকে ফিরে এসে সামনে তাকিয়ে দেখি আমার স্বামী আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম।
মৃদ স্বুরে লম্বা একটা সালাম দিয়ে খাট থেকে নিচে নেমে তাকে সালাম করতে গেলাম আর আমার স্বামী তার পা পিছিয়ে গেল আর বলতে লাগলো...
রাহাত: এই মেয়ে আমাকে Touch করবে নাহ্।
আমি শুধু আমার মম এর কছম রাখতে তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। আর না হলে এই রাহাত খান তোমার মতো আনকালচার মেয়েকে কখনই বিয়ে করতো না। বাহিরে সবাই জানবে আমরা স্বামী স্ত্রী,
কিন্তু এ ঘরের ভিতরে আমি তোমাকে স্ত্রী হিসাবে কখনই মেনে নিবো না। কখনো স্ত্রীর আধিকার ফলাতে আসবে নাহ্। আর এই কথা আমার মম কে বললে তোমাকে আমি জানে মেরে ফেলবো, কথাটা মনে রেখো,,!!(রাগি গলায় কথা গুলা বললো)
নুরজাহান: আপনে নিশ্চিন্তে থাকুন আমি এই কথা কাউকেই বলবো না। (মৃদ স্বুরে)
রাহাত : হুমম। যাও নিচে বা সোফায় গিয়ে ঘুমাও। আমার খাটে কখনই ঘুমানোর সাহস করবে না।
(বালিস খাতা ছুড়ে ফেলে দিয়ে বললো)
তার এই ব্যবহারে আমার খারাপ লাগলো।
তারপর ও মনকে সান্ত করে বালিস খাতা ওঠিয়ে সোফার উপর রাখলাম। আমার স্বামীর দিকে তাকিয়ে দেখি সে খাটের উপর শোয়ে মাথার উপর হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। আমি একটা শাড়ি নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি সে ঘুমিয়ে গেছে। আমি এশারের নামাজ আদায় করে সোফায় গিয়ে শোয়ে পড়লাম। ফজরের আজান শুনে ঘুম থেকে ওঠলাম, ওজু করে এসে আমার স্বামী কে আসতে করে ডাক দিলাম.....
নুরজাহান: প্রিয় স্বামী,,, ফজরের আজান দিচ্ছে আপনে ঘুম থেকে ওঠে নামাজ পড়তে মশজিদে জান।একবার ডাক দিলাম কিন্তু তার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে তার গায়ে হাত দিয়ে ডাকতে লাগলাম।
প্রিয় স্বামী ফজরের আজান দিচ্ছে, আপনে দয়া করে ঘুম থেকে ওঠে নামাজ পড়তে যান।
এবার আমার স্বামী আমার দিকে ঘুম চোখে তাকিয়ে এক লাফ দিয়ে খাটের অই পাশ দিয়ে পড়ে গেল।
আর আমি তার এই কান্ড দেখে একটু মুচকি হাসলাম।সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো
রাহাত: ঘুমিয়ে ছিলাম হঠাৎ করে কারো ডাক শুনে সামনে তাকিয়ে আমি ভয়তে লাফ দিয়ে খাটের নিচে পড়ে গেলাম। আর সে এটা দেখে মুচকি হাসতে লাগলো,,ভয় ভয় আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,,, ত,,,,ত,,তুমি কে আমার রুমে কেন এসেছো,,,,,???
নুরজাহান: প্রিয় স্বামী আমি আপনার স্ত্রী, কাল যাকে আপনি পবিত্র কালেমা পাঠ করে বিয়ে করেছেন।
আমি সেই নারী আর আপনার স্ত্রী!!!(মৃদ স্বুরে).
রাহাত: আমি ওর কথা শুনে কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম এক অপরূপ সুন্দরর্য্যের নূর ছড়াচ্ছে ওর মায়াবীনি চেহারা দিয়ে। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। এবাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর সন্দর কন্ঠে বললো.....??
নুরজাহান: প্রিয় স্বামী এই ভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন?
রাহাত: ওর মুখে প্রিয় স্বামী ডাকটা শুনে আমার ভিশন রাগ হলো। তাই দাড়িয়ে বললাম এই মেয়ে আমাকে প্রিয় স্বামী বলে ডাকবে না আর আমার ঘুম কেন নষ্ট করেছো? কেন আমাকে ডাক দিয়েছো ?(রাগি গলায়)
নুরজাহান: না মানে। ফজরের আজান দিয়েছে তাই নামাজ পড়তে ডাক দিয়েছিলাম।(ভয়ে মৃদ স্বুরে বললাম)
রাহাত: এই কথা শুনে আমার ভিষন রাগ হলো।
তাই আমি ওর কাছে গিয়ে গালে জোরে একটা চড় বসিয়ে দিলাম ঠাসসস.....আর বলতে লাগলাম আবার যদি আমার ঘুমের সময় আমাকে ডির্স্টাব করেছিস তো তোকে আমি জানে মেরে ফেলবো।
যাহ্ এখান থেকে (জোরে ধমক দিয়ে বললো)
নুরজাহান: আমি কিছুক্ষন গালে হাত দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে চলে গেলাম নামজ পড়তে।
আর আমার প্রিয় স্বামী রাগে ফোস ফোস করতে করতে বিছানাতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
আমি নামাজ শেষ করে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম....
হে আল্লাহ্,,,
আমার কোন কষ্ট ও দুঃখ নেয়।
তুমি শুধু আমাকে একটু ধৈর্য্য দিও,
আমি যেনো আমার স্বামী কে
খারাপ রাস্তা ও বখাটে থেকে
সঠিক পথে এবং তোমার রাস্তায়
ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারি।
আমার প্রিয় স্বামী কে তুমি সুস্থ
রেখো ভালো রেখো। তুমি তাকে
হেদায়েত দান কর আল্লাহ্,,,
(আমিন)(মনে মনে)..
মোনাজাত শেষ করে কিছুক্ষন কোরআন শরীফ পাঠ করলাম। তারপর বোরখা পড়ে নিচে গিয়ে সবার জন্য নাস্তা রেডি করলাম। নাস্তা তৈরি করতে করতে সবাই ওঠে গেল শুধু আমার স্বামী ছাড়া।
আমার শাশুড়ি মা নিচে এসে আমাকে রান্না ঘরে দেখে খুব খুশি হলো। আর আমি তাকে সালাম করলাম।
আর সে আমাকে বললো....
শাশুড়ি: বেঁচে থাকো বৌমা। তুমি এতো সকালে রান্না ঘরে কেন এসেছো মা কাজের বুয়া আছে তো রান্না করার জন্য??
নুরজাহান: তাতে কি হয়েছে মা সে তো সব সময় রান্না করে , তাই আমি তাকে বলেছি রেস্ট নিতে আজ আমি রান্না করবো। মা আপনারা টেবিলে গিয়ে বসেন ,আমি খাবার দিচ্ছি..!!
শাশুড়ি: আমার লক্ষি বৌমা,,আচ্ছা আমি তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি???
নুরজাহান: হ্যাঁ! মা বলুন কি বলতে চান!??
শাশুড়ি: রাহাত কি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে,,??(চিন্তিত স্বুরে).
নুরজাহান: আমি এখন তাকে কি বলবো??
মিথ্যা বলা যে পাপ হে আল্লাহ্ তুমি আমাকে মাফ করিও,(মনে মনে)
না মা সে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে নি।
শাশুড়ি: আমি জানি রে মা তুই মিথ্যা কথা বলছিস।জানিস মা আমার ছেলেটা খুব ভালো ছিল।
কোনো নেশা করতো না, মেয়েদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতো না।কিন্তু এই ৩ বছর দরেই আমার ছেলেটা কেমন যেনো হয়ে গেছে। রাত করে বাসায় ফিরতো আর শরীর থেকে মদের গন্ধ আসতো আমি কিছু জিজ্ঞেস করলে কিছু বলতো না।
চুপচাপ রুমে চলে যেতো দেখতে দেখতে আমার ছেলেটা একটা বখাটে ছেলে পরিনত হয়।
আমাদের কারো কোনো কথা শুনে না। সব রকমের নেশা জাতিও জিনিস ও সেবন করে। আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস মা আমি তোর জীবনটা নষ্ট করে দিলাম। আমার বখাটে ছেলের সাথে তোকে বিয়ে দিয়ে
ক্ষমা করে দিস মা,,(কান্না করতে করতে বললো).
নুরজাহান: মা আপনে এভাবে বলবেন না। আমার আর তার জুটি মহান আল্লাহ্ ঠিক করে রেখেছে সেটা তো আমরা বদলাতে পারবো না। আপনে দয়া করে আমার কাছে ক্ষমা চাইবেন না।
শাশুড়ি: মা তুই আমার ছেলেটা কে বখাটে থেকে ভালো পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারবি না??
আমি আমার ছেলেকে তোর হাতে তুলে দিলাম।
(কান্না জড়িত কন্ঠে).
নুরজাহান: দোয়া করবেন মা আপনার মনের আশা মহান আল্লাহ্ ঠিক পুরন করবে,,!!
শাশুড়ি: তাই যেনো হয় রে মা...!!
নুরজাহান: এখন চলেন টেবিলে খাবার দিচ্ছি ,,!!
শাশুড়ি: হুমম,,,মা ! রাহাত কি ঘুম থেকে ওঠেছে??
নুরজাহান: না মা তিনি এখনো ঘুমোচ্ছে,,??
শাশুড়ি: ও। মা রাহাত সকালে কফি খায়। তুমি বুয়া কে বলে কফি উপরে পাঠিয়ে দেও??
নুরজাহান: মা আমি তাকে কফি বানিয়ে দিয়ে আসছি আপনারা নাস্তা করেন,,??
শাশুড়ি: ঠিক আছে মা??
আমি কফি বানিয়ে উপরে রুমে নিয়ে গেলাম।
তারপর আস্তে করে ডাক দিতে লাগলাম,,,প্রিয় স্বামী আমি আপনারা জন্য কফি নিয়ে এসেছি,,প্রিয় স্বামী উঠুন সকাল হয়ে গিয়েছে,,,,?
রাহাত: ঘুমুচ্ছিলাম কে যেনো প্রিয় স্বামী বলে ডাকছে।ওঠে দেখি সেই মেয়েটি কফি হাতে দাড়িয়ে আছে।
ওকে দেখে আমার রাগ ওঠে গেল,,তাই আমি কফির মগটা ওর হাত থেকে নিয়ে ওর ডান হাতটা ধরে গরম কফির মগের ভিতরে ঢুকিয়ে দিলাম।
ওর মুখ থেকে আস্তে করে একটাই আওয়াজ বের হলো: আহহ,,,
আমি আবাক হয়ে তাকিয়ে আছি, কিছুক্ষন পর দেখলাম ওর চোখ থেকে পানি বের হচ্ছে তাই আমি ওকে ছেড়ে দিয়ে washroom এ চলে গেলাম??
নুরজাহান: দুইবার ডাকার পর সে ওঠলো, তার চেহাতে রাগি ভাব ছিল। সে ওঠেই আমার হাতের থেকে কফির মগটা নিয়ে আমার ডান হাত মগের ভিতরে ঢুকিয়ে দিল। কফিটা অনেক গরম ছিল তাই আমি ব্যাথায় আহহ করে উঠলাম। তারপর ও সে আমার হাত মগের ভিতরে ধরে রেখেছে। আমি শয্য করতে পারছি না। আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো, এটা দেখে সে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বাথরুমে চলে গেল।
আর আমি সামনের জগের ভিতরে হাত দিয়ে বসে আছি,,আমার চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে।
তারপর সে হটাৎ.........
গল্পঃ #বখাটে_ছেলের_পর্দাশীল_বউ
0
2