গল্প: আপন মানুষ
পার্ট ২
পুকুর পাড় থেকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে গেলাম।
বাড়িতে অনেক মানুষ। অনেক আত্মীয় স্বজন।
এদের মধ্যে থেকে কে ফোন করলো বুঝতে পারছি না।
আমি সোজা আমার রুমে ঢুকলাম।
ফোনটা হাতে নিয়ে ঐ নাম্বারে কল দেবো ওমনি আমার বউ এসে আল্লাদি ভঙ্গিমায় আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।
-কি গো, কাকে ফোন করো। (বউ)
-আচ্ছা মৌ কার নাম? (আমি)
-তোমার দুষ্টু বউয়ের নাম তুমিই জানোনা মশাই?
গতকাল কাজি সাহেব যখন বিয়ে পড়াইছে তখন কানটা বন্ধ ছিল নাকি?
হা আমারি নাম মৌ। একটু আগে আমিই তোমায় ফোন করেছিলাম।
নতুন বউকে ফেলে কোথায় গিয়ে থাকো হুমম?
এই বলেই মেয়েটি আমার বুকের উপর ঝুকে পড়েছে।
আমার গলাটা দুহাতে জড়িয়ে দেহটাকে আমার উপর নিয়ে বিছানায় এলিয়ে দিচ্ছে আমাকে
আমি মাথাটা খাটের উপর কোনরকম রেখে বোবার মতো তাকিয়ে দেখছি আমার বউকে।
মেয়েটার চোখে দুষ্টু, মিষ্টি হাসি।
ওর চোখের ভাষা বলছে ও স্বামীর একটু ভালোবাসা চায়।
কিন্তু আমি কি করবো? আমি তো ভালোবাসি জুঁই।
ওকে যে আমি কথা দিয়েছি ওকে ছাড়া কাউকে জীবনসঙ্গী করবো না।
-কি হলো? কি ভাবছো গো মশাই?
-প্লিজ ছাড়ো আমায়। বাইরে একটু কাজ আছে আমার।
এই বলে কোনরকম জোর করেই ওকে ছাড়িয়ে খাট থেকে নেমে ঘরের বাইরে এসেছি।
এর মধ্যেই দেখি ভাবি, নানি, দাদিরা প্রস্তুত বাইরে আমাকে গোসল করানোর জন্য।
আমাকে দেখেই তারা আমায় টেনে নিয়ে গেল।
ভাবিরা গেল আমার বউকে ডেকে আনতে আমার ঘরে।
এরপর কতো রকমের মজা, খেলা হলো এই গোসল করানোর আগে।
পাশাও খেলতে হলো দুজনকে।
কিন্তু এই আনন্দময় মুহুর্তে আমি খেয়াল করছি আমার বউ মৌ এর মনটা ভার।
এটাই স্বাভাবিক। একটা মেয়ে বিয়ের পর চায় শুধু দু-বেলা দু-মুঠো খাওয়া আর স্বামীর একটু ভালোবাসা।
কিন্তু আমি এখনো পর্যন্ত ওকে বউ হিসেবে মেনে নিতেই পারিনি।
কি করে পারবো? আমার জন্য যে জুঁই অপেক্ষায় আছে।
ওকে যে আমি খুবই ভালোবাসি।
গোসল শেষ করে প্যান্ট, শার্ট পড়ে একটু রাস্তায় বের হলাম।
আবার জুঁই এর নাম্বারে কল দিলাম….
হা এবার কল ডুকেছে। একটু পরেই রিসিভ হলো।
-কি হয়েছে, কল দাও ক্যান? তোমার তো এখন বউ আছে।
এইটুকু বলেই ফোন রেখে দেয় জুঁই। আমাকে কথা বলার সুযোগ ই দিলো না।
আবার কল করতে যাবো তখনি বাবার নাম্বার থেকে কল আসলো।
-তোর কি মাথায় একটুও বুদ্ধি নাই? বাড়িতে মেহমানে ভরা, একটুপর মেয়ে পক্ষের লোক আসবে আর তুই থাকিস দূরে গিয়ে…
এই বলেই রাগ করে ফোন কেটে দেয় বাবা।
আবার বিষন্ন মনে বাড়ির দিকে রওনা দেই।
বাড়িতে ঢুকেই মাথাটা খারাপ হয়ে গেল।
কাজের লোকের কি অভাব আছে?! সবাই তো বিয়ে বাড়ির কাজ নিয়েই ব্যস্ত। আমার কাজটা কোথায়?
মনে মনে বাবার উপর ভীষণ রাগ হলো। তাদের কথায় প্রিয় ভালোবাসার মানুষকে ফেলে আজ অন্য কাউকে বিয়ে করতে হলো।
কিছুই ভালো লাগছে না এখন। ঘরে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
চোখটা একটু বুঝতেই মনে হলো কেউ এসে আমার বুকের উপর মাথা রেখেছে।
তাকিয়ে দেখি মৌ(বউ) দুই হাত আমার বুকের দুপাশে ভর করে মাথাটা বুকে রেখেছে।
-আমাকে তোমার পছন্দ হয়নি? (মৌ)
এই বলে মাথাটা তুলে আমার মুখের সামনে মুখ এনে আমার জবাবের অপেক্ষা করছে মেয়েটা।
আমি ওর মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
গোসল করিয়ে ভাবিরা ওকে শাড়ি পড়িয়ে, গয়না পড়িয়ে সাজিয়ে দিয়েছে।
ওকে দেখে কল্পনার কোন পরীর মতো লাগছে।
কি অপরুপ হাসি, অপরুপ মুখ এই মেয়েটার। হাল্কা লিপস্টিক করা মিষ্টি ঠোট দুটো ঠিক আমার মুখের সামনে নিয়ে আমার জবারের অপেক্ষায় আছে।
কি বলবো ওকে? ওর মতো সুন্দরী মেয়েকে পছন্দ হয়নি এটা বললে আমাকে পাগল বলবে লোকে(নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে আজ)।
তবে কি সত্যটা ওকে বলে দেব এখনি?
নাহ, বিয়ের কটা দিন শেষ হোক তারপর না হয় বলবো।
কি হলো বললে না? বলো তোমার কি সমস্যা?
তুমি কি অন্য কোন মেয়েকে ভালোবাসো?
ওর এই প্রশ্নে আবার আমি ওর মুখের পানে তাকালাম।
হাসি মুখটা সামান্য ভার করে আমার দিকে চেয়ে আছে আমার মুখের উত্তর শোনার জন্য?(অসাধারণ তার মুখ)
তবুও আমি নিরব হয়ে আছি কি বলবো ওকে?
মৌ এবার কপালে একটা চুমো দিয়ে বলল’ তোমার যে কোন সমস্য থাকলে আমায় বলো।
বউ নয়, বন্ধু হয়ে তোমার উপকার করবো বলো প্লিজ।
আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনি বাইরে থেকে বলছে মেয়ে পক্ষের লোক এসেছে।
সাথে সাথে আমার দুই শালী ঢুকে পড়লো আমার রুমে।
তখনো বউ আমার বুকের উপর ঝুকে আছে।
ওরা ঢুকতেই মৌ উঠে স্বাভাবিক হলো।
বড় শালীটা লজ্জা পেলেও ছোটটা এসেই চোখটিপ মারলো আমায়।
দুজনি এসে আমার পাশে বসলো।
-কি খবর দুলাভাই? (ছোট শালী)
-খবর জানতে টিভিতে চোখ রাখো। (আমি)
-হা হা হা… সে খবর না আপনাদের খবর বলেন (বড় শালি)
-আমাদের খবর তোমাদের আপুর মুখ থেকে শুনতে পাবে বাড়িতে গিয়ে।
তবে খবর শুইনা আবার তোমরা ২ বোন আমারে মারতে আইসো না।
আমার কথা শুনে হাসছে শালীরা, সাথে বউও।
আমি চেয়ে দেখছি বউয়ের সেই অসাধারণ হাসি।
হাসিতে নেই কোন অভিমান, নেই কোন অভিযোগ।
যেন আমি ওকে হাসিখুশিতেই রেখেছি।
অথচ মেয়েটিকে স্বামীর অধিকারটাই দেইনি আমি।
এইদিকে মেয়েপক্ষের লোক এক এক করে সবাই ঘরে আসছে তাদের মেয়ে ও জামাইকে দেখতে।
আমিও ভদ্র মানুষের মতো চুপ করে দুই শালীর মাঝখানে বসে আছি।
আর মৌ সবাইকে চেয়ার টেনে বসতে দিচ্ছে।
ছোট শালীটা আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ছোট ছোট শব্দে আমাদের রাতের ব্যপারে জানতে চাইতেছে।
আর বড় শালিটা ওর মুখ বুঝে হাসছে আর ছোট বোনকে চিমটি কেটে বলতেছে চুপ করবি?
আমিও এতো মানুষের সামনে ওদের এমন কানাকানিতে লজ্জা পাচ্ছি।
হঠাৎ বাইরে থেকে শুনতে পেলাম খাবার টেবিলে বসতে বলছে সবাইকে।
সবাই চলে গেল খাওয়ার জন্য।
আমার শালী দুইটা হাত ধরে আমায় নিয়ে যেতে চাইলেও বল্লাম যাও তোমরা খাও।
ওরা তখন ওর আপুকে নিয়ে গেল।
আমিও উঠে গেলাম মেয়ে পক্ষকে খাওয়ানোর দিকে খেয়াল রাখতে।
এভাবে দিনশেষে রাত হয়ে এলো।
রেডি হয়ে ওদের নিয়ে আসা গাড়িতে উঠলাম।
আমি আর মৌ একসাথে বসেছি। দুই পাশে দুই শালী সারা রাস্তা আমায় হাসিয়ে মেরেছে।
এতো দুষ্টু আর মিষ্টি শালী পেয়েছি বলে বুঝাতে পারবো না।
প্রায় ঘন্টাখানেক এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ কাঠের পুলের কাছে চলে এলাম।
একটুপরই তেলকুপি গ্রাম।
রাস্তার পাশেই আমার একমাত্র খালার বাড়ি।
এই খালাই আমার এই বিয়েটা ঠিক করেছে।
খালার পছন্দ আছে বলতেই হয়।
কারন মেয়েটা সত্যিই ভালো সবদিক থেকে।
যদিও আমি কখনোই মৌ কে বউ হিসেবে মেনে নিতে পারবো না।
গাড়িটা ব্রেক করলো আমার শ্বশুরবাড়ির সামনেই।
রাস্তার পাশেই বাড়ি। আমার খালার বাড়ির দুই বাড়ি পরই।
গাড়ি থেকে নামতেই দেখি ভিড়।
সবাই আমার দিকে চেয়ে আছে।
রাত দশটা পর্যন্ত খাওয়া দাওয়া এটা সেটায় কেটে গেল।
আমি আমার বউ মৌ রুমে শুয়ে আছি।
মৌ ও বাড়ির মহিলারা খেতে বসেছে।
একটু পড়েই ও আসবে।
আমি একটা সিগারেট ধরিয়েছি ওমনি দরজা ঠেলে কেউ ঢুকে পড়লো।
তাকিয়ে দেখি দুই শালি।
ওরা আমার সাথেই খেয়ে নিয়েছে আমাকে জ্বালানোর জন্য।
ওদের দেখে সিগারেট টা আড়াল করেছি।
-আরে লুকাতে হবেনা খেয়ে নেন, সমস্যা নাই। (বড় শালী)
-দুলাভাই আমরা কিন্তু আজ রাতে আপনার কাছে থাকবো।
গল্প করবো সারারাত। (ছোট শালী)
-তাহলে তোমাদের আপু কোথায় থাকবে?
-আপু আমাদের রুমে থাকবে। এই বলে হাসছে দুই বোন।
সিগারেটটা দুটো টান দিয়ে ফেলে দিয়ে ওদের বসতে বললাম।
-আচ্ছা তোমাদের আপুটা কি ভালো নাকি খারাপ? (আমি)
আমার কথায় দুই বোন চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে!
-কেন, কিছু হইছে ভাইয়া?! আপু কোন কষ্ট দিছে আপনাকে? (বড় শালী)
-আরে নাহ। জানতে চাইলাম ও কোন টাইপের?
আমার প্রশ্নটা ঠিকভাবে করা হয়নি।
-আসলে আমাদের আপুটা অনেক ভালো। আমাদের কোনদিন কখনো কষ্ট দেয়নি। নিজে না খেয়ে আমাদের দুই বোনকে খাইয়ে মানুষ করেছে ভাইয়া।
আমাদের কাছে আমাদের আপু অনেক ভালো।
জানেন ভাইয়া? ও না কখনোই কষ্ট পেতে দেয়না আমাদের।
একটু চাপা স্বভাবের।
তবে ওর বুকে অনেক মমতা, ভালোবাসা আছে।
এই বলে ছোট শালিটা চোখ মুছছে।
বড়টাও চোখ মুছছে আর বলছে ভাইয়া… ওকে আমরা খুবই মিস করবো।
আমাদের কোন ভাইয়া নেই। ঐ আপুই আমাদের সব।
এরমধ্যেই মৌ ঘরে ঢুকলো। ওরা চুপ হয়ে গেল।
বউ এসেই আমার সামনে এক গ্লাস দুধ দিলো।
খেয়ে নিলাম।
শালী দুইটা উঠে যাচ্ছে।
বললাম কি ব্যাপার যাও ক্যান? থাকবে না আমার সাথে?
-না ভাইয়া, অন্য সময় গল্প করবো আপনার সাথে।
এখন আমাদের এই মিষ্টি আপুটাকে নিয়ে গল্প করেন।
এই বলে হাসতে হাসতে বের হয়ে গেল শালীরা।
বউ দরজা লাগিয়ে খাটে এসে আমার পাশে শুয়ে পড়লো।
একটু নিরব থাকার পর মৌ আমায় বলল কি সমস্যা তোমার বলো এখন?
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। চুপ করে আছি।
হঠাৎ মৌ উঠে আমার পাশে একটা হাত রেখে আধশোয়া হয়ে আমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল কি কাহিনী তোমার মাঝে?
আমায় বউ হিসেবে মেনে নিচ্ছো না ক্যান?
নাকি কাউকে ভালোবাসো? বাসলে বলো সমস্যা নাই।
আমি তোমায় এ বিষয়ে বন্ধুর মতো হেল্প করবো।
শুধু আমায় আপন মানুষ ভেবে সব খুলে বলো।
আমি মৌ এর দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বললাম…
-আমি একজনকে ভালোবাসি।
ওকে ছাড়া আমি কাউকে জীবনসাথী করার কল্পনাও করতে পারছি না।
আমার কথা শুনে মৌ সুন্দর মুখটা কালো হয়ে গেল।
-ঠিকাছে। সে কি তোমাকে এখন মেনে নিবে তার কাছে ফিরে গেলে।
-হা নেবে। কিন্তু তুমি? তোমার কি হবে?(আমি যে তোমার মায়ায়াও ভূলতে পারবোনা জীবনে)
-হা হা হা… আমার আবার কি হবে? কপালে যা আছে তাই হবে।
এখন তুমি ঘুমাও। তোমায় আমি হেল্প করবো এ বিষয়ে।
এই বলে গয়না শাড়ীটা খুলে ফেলছে মৌ (আজ নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে এমন একটা বউ কে জীবনে ভালোবাসতে পারলামনা বলে)।
আমি অনেক কষ্ট নিয়ে অপরদিকে মুখ করে শুইলাম।
একটুপর হাতটা আমার উপর তুলে দিলো মৌ।
-কিছু মনে করো না।
আমি ছোট বোনদের এভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতাম। অভ্যাস হয়ে গেছে।
চলবে…….
To be Continue…….
0
3