সকাল প্রায় সাড়ে ৮টা বাজে। সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের কান্দিরপাড় শাখা অফিসে নিজ চেয়ারে বসে ঢুলছে নাহিদ । মাত্র দুমাস হলো কাজে জয়েন করেছে সে। এখনো ধাতস্থ হতে সময় বেশ লাগছে তার। কাল রাতে অনলাইনে বেশ কিছুক্ষণ কাজে ব্যাস্ত ছিল সে। ফলস্বরূপ ঘুমাতে দেরি হয়ে যায়। সকাল আটটার মধ্যে অফিসে উপস্থিত থাকতে হয়। তাই খুব সকালেই ঘুৃমের মায়া ছেড়ে উঠে আসে। শীতকাল চলছে এখন, এসময় লেপ কম্বলের ভেতর থেকে আরামের ঘুম হারাম করে কাজে আসা কতটা কষ্টকর তা সকলেই বুঝে। কতক্ষণ পরপর হাই তুলছে আর মনে মনে গালি দিচ্ছে চা সাপ্লাই করা ছেলেটাকে। এসময় একটা কড়া চা না পেলে ঘুম ঘুম ভাব যাবে না । হঠাৎ কারো গলা খাঁকারির আওয়াজে সামনে তাকায় সে। স্যুট বুট পড়া এক ভদ্রলোককে মুখে হালকা হাসি নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো। ভদ্রলোকের পরনে কালো কোট চড়ানো, পরনের প্যান্টটিও কালো। তবে ওনার চোখদুটো কেমন যেনো ঘোলা! ঘুম ঘুম চোখে হয়তো ভুল দেখেছে তা ভেবেই ভদ্রলোকলে জিজ্ঞেস করলো নাহিদ," আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি স্যার?"
"আমার একটা কুরিয়ার আজ এসেছে কিছুদিন আগে আজ নিতে আসলাম।" কোন ভুমিকা ছাড়াই উত্তর দিলেন ভদ্রলোকটি।" "বেশ কিছুদিন আগে তাহলে কম্পিউটারে রিপোর্ট আছে,রিপোর্ট বুকে চেক করে লাভ নেই । কম্পিউটারেই দেখি বরং," মনে মনে ভাবলো নাহিদ । কিবোর্ডে আলতো করে আঙুল ছুইয়ে রিপোর্ট অ্যাপ্লিকেশনে প্রবেশ করলো। "প্রাপকের নাম এবং ফোন নাম্বার বলুন স্যার, " আগন্তুকের পানে না চেয়েই বললো নাহিদ। "নাম মো জাহিদ । নাম্বার ০১৪++++++, " ভারি কন্ঠে লোকটি উত্তর দিল। নাম এবং নাম্বার এন্ট্রি করাতেই চলে আসলো কাঙ্খিত পার্সেলের ডিটেইলস চলে আসলো। কিন্তু এর সম্পুর্ন ডিটেইলস দেখে ওর চোখ কপালে উঠলো! তারিখটা আজকেই তবে আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে পার্সেল এখানে আসে! এতদিন পরে কে এ ভদ্রলোক যিনি এ পার্সেলের খোঁজে এসেছে? পার্সেলটা অলরেডি ট্র্যাস সেক্টরের আওতায় রেখে দেওয়া হয়েছে। ৬ মাসের বেশি ধরে জমা থাকা পার্সেলগুলো ট্র্যাস সেক্টরে রাখা হয়। ঠিক একবছর পর সেগুলো নিলামে তোলা হয়। কারণ কুরিয়ার কতৃপক্ষের পক্ষে এরচেয়ে বেশি করা সম্ভব না। অবশ্য এ জাতীয় পার্সেল খুব কমই আছে। ডিটেইলস অনুযায়ী মাত্র ২৮ টা। কি আশ্চর্য! কালকেই পার্সেলটি নিলামে তোলা হতো! যদিনা ভদ্রলোকটি আজ আসতো। বিস্মিত নয়নে সামনে থাকা লোকটার দিকে তাকালো নাহিদ। "আজ এতবছর পর আপনি পার্সেলটি নিতে আসলেন। এতদিন কই ছিলেন? " না চাইতেও প্রশ্নটা করে ফেললো নাহিদ। "তা আমি আপনাকে বলতে বাধ্য নই " ঠান্ডা গলায় উত্তর দিয়ে নাহিদের দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন তিনি। ভ্রু কুঁচকে পার্সেল রুমের দিকে এগুলো নাহিদ। লোকটার চোখের দৃষ্টি ভয়ংকর। যত তাড়াতাড়ি বিদায় করা যায় মঙ্গল। কিছুক্ষণের জন্য দারুণ অস্থিরতায় ফেলে দিচ্ছিলো লোকটার দৃষ্টি। পার্সেলটি নিয়ে লোকটাকে দিতেই বিনা বাক্যব্যায়ে অফিস থেকে প্রস্থান করলেন তিনি। "কি হলো! একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত দিল না " গজরাতে গজরাতে নিজ ডেস্কে গিয়ে বসলো নাহিদ। ইতিমধ্যে চা এবং সংবাদপত্র তার ডেস্কে সোভা পাচ্ছে।পত্রিকাটি স্থানীয় "দৈনিক কুমিল্লার কাগজ" । চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে সংবাদপত্রের প্রথম পেজে তাকালো নাহিদ," বড় করে হেডলাইন দেওয়া 'কুমিল্লা মর্ডান হাইস্কুলের প্রয়াত প্রধান শিক্ষকের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে শোকসভার আয়োজন' "। হাত থেকে চায়ের কাপটি পড়তে পড়তে বেচে গেলো। প্রচন্ড ভয় এবং বিস্ময় এর মিশ্রানুভুতি তার চেহরায় প্রকাশ পেলো পেলো নাহিদের চোখে। সর্বনাশ! ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে গেছে!কেননা তারিখ সময় সব ঠিক অাছে । শুধু পত্রিকায় দেওয়া স্থির চিত্রে যে শিক্ষক লোকটার ছবি দেওয়া তিনি আর কেও নন! যিনি মাত্র এখান থেকে পার্শেল নিয়ে বের হয়ে গেলেন তিনিই!