আমি ডাঃ ফারহানা, পাঁচ বছরের প্রেমের সম্পর্ক, তারপর বিয়ে এবং এগারো বছর একসাথে চলা অতঃপর আমার হাজব্যান্ড ডাঃ রায়হানকে ডিভোর্স দিতে আজকে আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমিরি সুলতানার চেম্বারে এসেছি।
ভিতরে আসতে পারি?
হ্যা অবশ্যই, ভিতরে আসুন।
ধন্যবাদ।
আপনি?
জ্বী আমি ডাঃ ফারহানা।
ওহ্ গতকাল রাতে তাহলে আপনিই কল দিয়েছিলেন?
জ্বী।
আচ্ছা বসুন আগে। এবার বলুন কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?
আমি আমার হাজব্যান্ড ডাঃ রায়হানকে ডিভোর্স দিতে চাই।
উনার বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগ কি?
কোনো অভিযোগ ছাড়া কি আমি ডিভোর্স দিতে পারিনা?
হ্যা পারেন, আপনি আপনার হাজব্যান্ডকে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছেন ভালো কথা কিন্তু একজন আইনজীবী হিসেবে আমাকে জানতে হবে কেন আপনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
রায়হানের সাথে আমার পক্ষে সংসার করা আর সম্ভব নয়।
ঠিক আছে, আপনি আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিন।
বলুন কি জানতে চান?
আপনার স্বামী কি আপনার সাথে কোনো দূর্ব্যবহার কিংবা আপনাকে মারধোর করে?
না আমার স্বামী কখনোই আমার গায়ে হাত তুলে নি।
তাহলে কি আপনার শশুর বাড়ীর লোকজন আপনাকে কোনো শারীরিক নির্যাতন বা যৌতুকের কোনো বিষয় আছে?
না এমন কোনো সমস্যা নেই।
আপনাদের বিয়ে কি পারিবারের পছন্দে হয়েছিল?
আমরা দুজন দুজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি।
উনার কি এখন অন্য কোনো মেয়ের সাথে পরকীয়া আছে?
না, ও এমন পুরুষ না।
তারপরও পুরুষ মানুষের মনের কথা বলা যায় না। কত বছরের সংসার আপনাদের?
এইতো আগামী মাসে ছয় বছর পূর্ণ হবে।
আপনাদের ছেলে মেয়ে কয়জন?
ছেলেটার বয়স পাঁচ বছর আর মেয়েটার বয়স দুই বছর এখনো হয়নি।
আশ্চর্য! আপনারা দুজন দুজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন, ছয় বছর সংসারও করেছেন আবার দুটি সন্তানও আছে তাহলে এত বছর পর কি এমন ঘটলো যে, আপনি আপনার হাজব্যান্ডকে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছেন?
শুনুন তাহলে।
এইচএসসি পাশের পর আমি একটা সরকারি মেডিকেল কলেজে চান্স পাই। সেখানেই রায়হানের সাথে আমার প্রথম পরিচয়। আমরা দুজনেই ব্যাচম্যাট ছিলাম। দুজনেই খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম। আমাদের মাঝে পড়াশুনা নিয়ে সবসময়ই প্রতিযোগিতা চলত কে কার চেয়ে ভালো করব। তবে বেশিরভাগ সময়ই আমি রায়হানের চেয়ে এগিয়ে থাকতাম। এই নিয়ে ও খুব মন খারাপ করতো। প্রতিযোগিতা করতে করতেই একসময় দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলি। আমরা দুজনেই তখন পড়াশুনার বিভিন্ন বিষয়ে একে অপরকে সাহায্য করতাম। কলেজ লাইফটা আমাদের হাসি আনন্দে ভালোই কেটে যায়। এমবিবিএস কোর্স শেষে আমরা দুজন দুটি প্রাইভেট হাসপাতালে চাকরি নেই। বেশ কিছু দিন পর আমাদের দুই পরিবারের সম্মতিতে আমরা বিয়েও করি। বেশ ভালোভাবেই আমাদের সংসার জীবন কাটছিলো। পরিবারে আমার শশুরবাড়ির লোকজনদের সাথে আমার নিজের পরিবারের মতোই আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমার শশুর-শাশুড়ি আমাকে অনেক স্নেহ করতো। আমার কখনো মনেই হতো না যে আমি শশুর বাড়িতে আছি। ছয় মাস ভালোভাবে পার হলো। আমাকে ও রায়হানকে প্রায়সময় রাতেও ডিউটি করতে হত। আমাদের আলাদা আলাদা সময়ে ডিউটি পড়তো। যার জন্য আমাদের দুজনের একসাথে থাকা খুব কম হতো। আর এই বিষয় নিয়ে প্রথম কথা বলা শুরু করল আমার শাশুড়ি। বাড়ীর বউ রাতে বাড়ীর বাইরে থাকে আর স্বামী একা একা থাকে, এসব কেমন জীবন! আরো অনেককিছুই বলতো তখন। এরপর আস্তে আস্তে রায়হান নিজেও বলতো যে আমাকে ঠিকমত কাছে পায় না। ওর খুব কষ্ট হয়। তারপরে আমি যতটুকু সম্ভব রায়হানের সাথে ব্যালান্স করে ডিউটিগুলো করতাম। আরো কিছু দিন পর আমরা বেবী নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি যখন কনসিভ করি তখনও চাকরি করেছি। আর রায়হান তখন চাকরির পাশাপাশি পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্স FCPS এ ভর্তি হয়ে যায়। আর আমি মা হবার কোর্সে ভর্তি হলাম। তখন রায়হান এত বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়লো যে আমার সাথে তেমন একটা দেখাই হতো না। আমার প্রেগন্যান্সির পুরো সময়টা আমি একাই লড়াই চালিয়ে গেছি। রায়হান পড়াশোনা এবং হাসপাতালের কাজে ব্যস্ত থাকতো বলে আমি ওর কাছে কোনো অভিযোগ করিনি। আমি ব্যালান্স করে নিয়েছিলাম। আমার ছেলে হওয়ার পর শশুর-শাশুড়ি আমাকে যথেষ্ট পরিমাণে যত্নআত্নি করেছেন। প্রেগন্যান্সি এবং প্রেগন্যান্সির পর কয়েকমাস আমি চাকরি করিনি। ছেলেটা একটু বড় হলে শশুর শাশুড়ির কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আমি আবার চাকরিতে যোগ দেই। আমার ছেলের বয়স যখন এক বছর হলো তখন আমি রায়হানকে বলি যে, আমিও FCPS করবো। রায়হান তখন আমাকে সাপোর্ট করলো না। বলল একসাথে বাচ্চা, চাকরি আবার FCPS করতে পারবো না। ও বললো, "মায়ের শরীর বেশি ভালো যাচ্ছেনা সংসারের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। তাছাড়া ছেলেটা ঠিকমতো তোমাকেও পাচ্ছে না আমিও সময় দিতে পারি না। মা এসব নিয়ে আমাকে অনেক কিছু বলে।"
আমি ওকে বলি আমিও উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চাই।
রায়হান তখন আমার উপর রেগে যায় "তাহলে চাকরি ছেড়ে দাও, নয়তো তোমার মায়ের কাছে আরিয়ানকে রেখে যেও।"
আমার ছেলের নাম আরিয়ান।
আমি তাই করলাম আমার ছেলেকে আমার মায়ের বাসায় রেখে রেখে চাকরি, FCPS করতে লাগলাম। এই নিয়ে রায়হানের সাথে এবং শাশুড়ির সাথে বেশ কয়েকবার আমার কথা কাটাকাটিও হয়েছে। কিন্তু আমি আমার পড়াশোনা ও চাকরি কোনোটাই বন্ধ করিনি।
এভাবেই চলে যাচ্ছিল, হঠাৎ করে একদিন শাশুড়ির হার্ট অ্যাটাক হলো। আমার উপর সংসারের সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ল। আমি সকালে রান্না করে বাসায় সবাইকে খাইয়ে দিয়ে হাসপাতালে শাশুড়ির সেবা করতাম। আবার আমার ডিউটিও থাকতো। ছেলেটাকে মায়ের বাসায় রেখে যেতাম। তখন রায়হান বলেছিল ওর কোর্সটা বন্ধ করে দিতে। কিন্তু আমি বললাম "তুমি মাঝপথে চলে এসেছ, এখন পিছিয়ে আসা ঠিক হবে না। আমি সবদিক সামলে নিতে পারব। আমিই বরং কোর্সটা বন্ধ করে দেই। পরে আবার সুযোগমতো করব। তুমি তোমার লক্ষ্য পূরণে মনোযোগ দাও।" এইভাবে সংসারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার FCPS কোর্সটা আর করা হলো না। রায়হানের চেয়েও বেশি মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলাম আমি। রায়হান FCPS কোর্স শেষ করে রেজাল্ট পেয়ে যেদিন মিষ্টি নিয়ে আসলো সেদিন অনেক খুশি হয়েছিলাম। সেইসাথে নিজের জন্য আমার খারাপও লাগছিল। আমার অনেক ইচ্ছা ছিল আমি উচ্চতর ডিগ্রি নিবো। যাইহোক আমি সব কষ্ট ভুলে গিয়ে শুধু চাকরি, ছেলে আর সংসার নিয়েই জীবনে সুখী হবার চেষ্টা করলাম।
কিছু দিন পর আমি আবার কনসিভ করি। আর এবার রায়হান FRCP করতে আয়ারল্যান্ডে সুযোগ পেল। কিন্তু আমি প্রেগন্যান্ট, শাশুড়ি মা অসুস্থ এই অবস্থায় ও যেতে চাইলো না। ও কিছুতেই দেশের বাইরে যাবে না সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। শেষে আমি অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে ওকে আয়ারল্যান্ড যেতে রাজি করাই। ও চলে যাওয়ার পর আমার একটা মেয়ে হয়। আমার মেয়ের নাম আরিশা। ছেলে-মেয়ে লালন পালন, শশুর-শাশুড়ির দেখাশোনা, চাকরি করে সংসার চালানো সবকিছু একসাথে সামলেছি। যতোই সমস্যা হোক, যতোই কষ্ট হোক আমি কখনো রায়হানকে কিছু জানাইনি। আমি চাইনি ওকে কোনো চিন্তা দিতে। আমি শুধু চেয়েছি ও কোর্সটা ভালোভাবে সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসুক। ও ভালোয় ভালোয় FRCP কোর্স শেষ করে দেশে ফিরেও আসে। দেশে এসে একটা বড় হাসপাতালে প্র্যাকটিস করা শুরু করে দিল। আমি তখনও MBBS সার্টিফিকেট নিয়ে ডিউটি ডাক্তার হিসেবে চাকরি করছি।
এবার রায়হান আমাকে বললো, "এই কয়েকটা বছর তোমার উপর অনেক ধকল গেছে এবার চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে শুধু ছেলেমেয়েদের মানুষ করার জন্য চেষ্টা করো।"
আমি রায়হানকে বলি "আমি আমার ডাক্তারি পেশা ছাড়তে পারবো না। আমি আরো উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চাই। স্কুল জীবন থেকেই আমার স্বপ্ন আমি অনেক বড় একজন ডাক্তার হবো।"
রায়হান তখন আমাকে ভালোমন্দ কিছুই বললো না।
ও ওর মত চেম্বার করছে আর আমি আমার মতো করে চাকরি করছি। সেইসাথে দেশের বাইরে MD করার জন্য এপ্লিকেশন করতে লাগলাম।
অনেক চেষ্টা করার পর আমেরিকায় MD করার জন্য স্কলারশিপ পেয়েও যাই। আমি আমার এত বড় সু-সংবাদটা প্রথমে রায়হানকে জানাই। ভেবেছিলাম রায়হান জেনে খুব খুশি হবে। কিন্তু না রায়হানের মুখ কালো হয়ে গেল। রায়হান বলল,
ছেলেমেয়েদের কে মানুষ করবে? সংসার, মা-বাবা উনাদের কে দেখাশোনা করবে? তুমি কোথাও যেতে পারবে না। আর তোমার চাকরি করারও দরকার নেই।
আমি প্রতিবাদ করি,
এ তুমি কি বলছো রায়হান? আমি সবকিছু ছেড়ে দিবো!
হ্যা, তুমি সংসার আর ছেলে মেয়েদের দেখাশোনা করো। তোমার আর চাকরি বা পড়াশোনা করার প্রয়োজন নেই।
রায়হান আমি ছোটবেলা থেকে একজন বড় ডাক্তার হবার স্বপ্ন দেখেছি। এইজন্য আমি অনেক পড়াশোনা করতে চাই।
তুমি পারবেনা।
আমি পারবোনা? তুমি ভুলে গেছো যে, আমি তোমার চেয়েও ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম। আমি MD করবোই।
তুমি যেযেতু আমার কোনো কথাই শুনবে না তাহলে তুমি দেশেই করো।
আমার ইচ্ছে আমি দেশের বাইরে করবো।
না তুমি করতে পারবে না।
একশো বার করবো।
তুমি কিন্তু জেদ করছো ফারহানা।
হ্যা আমি আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য জেদই করছি।
রায়হানের সাথে আমার অনেক ঝগড়া হয়। ও আমাকে থাপ্পর মারতেও চেয়েছিলো। কিন্তু পরে আর মারে নি। সেদিনের পর আমার আর রায়হানের মাঝে কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। একদিকে ছেলে-মেয়ে, সংসার আরেক দিকে আমার ছোটবেলা থেকে লালন করা স্বপ্ন।
আমি কিভাবে দুই কুল বাঁচাবো বুঝতে পারছিলাম না।
আরো কিছুদিন পার হয়ে যায়। আমি রায়হানকে বললাম,
আমি কি করবো?
আমি তো যা বলার বলে দিয়েছি।
কিন্তু আমি তো বিদেশ যেতে চাই।
তাহলে একেবারে আমাকে ছেড়ে চলে যাও।
কি বলতে চাচ্ছ তুমি?
যদি তোমার বিদেশ যেতেই হয় তবে আমি তোমাকে ডিভোর্স দিবো। তোমার সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। আমার সন্তানদেরও তোমার সাথে কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
তোমার সন্তান মানে? ওরা আমার সন্তান। আমি যখন এই ছয়টা বছর একা একা ওদের বড় করেছি কোথায় ছিলে তুমি? তুমি বাবা হয়ে কোনো দায়িত্ব পালন করেছ?
আমি কেন দায়িত্ব পালন করতে পারিনি তা তুমি ভালো করেই জানো।
তুমিই আমাকে FCPS বন্ধ করতে দাওনি। তুমিই আমাকে বিদেশ যেতে বাধ্য করেছ।
হ্যা আমি করেছি, আমি তোমার স্বপ্ন পূরণের জন্য সাহায্য করেছি। আমি নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছি তোমার জন্য। আমি তোমার পাশে না দাঁড়ালে তুমি আজকে দেশ সেরা একজন ডাক্তার হতে পারতে না। তোমার অবর্তমানে তোমার সন্তানদের, তোমার মা-বাবার সবার দায়িত্ব আমি একা পালন করেছি।
একজন স্ত্রী হিসেবে একজন মা হিসেবে এসব দায়িত্ব পালন করা তোমার কর্তব্য।
আচ্ছা ঠিক আছে তোমার কথা মেনে নিলাম এসব আমার কর্তব্য। কিন্তু তোমার কি কোনো কর্তব্য নেই?
আমি তো তোমাকে বলেছি এখন পরিবারের সব দায়িত্ব আমার, আমি সব টাকা পয়সা দিবো। তুমি শুধু তাদের দেখাশোনা করো।
টাকা দিলেই সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? আর আমার স্বপ্ন? আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য তুমি সাহায্য না করে উল্টো বাঁধা দিচ্ছ?
দেখো ফারহানা আমি এসব নিয়ে তোমার সাথে আর কথা বলতে চাই না। তোমার যদি বিদেশ যেতেই হয় তবে সব সম্পর্ক শেষ করে দিয়ে তবেই যাবে।
সব তো শুনলেন। আর এইজন্য আমি রায়হানকে ডিভোর্স দিতে চাই। আপনি সব কাগজপত্র তৈরি করুন।
হুম বুঝলাম সবকিছু। আপনি এবার শান্ত হোন আর আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
হ্যা বলুন।
আপনি তো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যেভাবেই হোক বিদেশ যাবেন।
হ্যা।
আপনি এক কাজ করুন, আপনি আপনার মেয়েকে আপনার মায়ের কাছে রেখে বিদেশ চলে যান।
আর আমার ছেলে? আমি কিছুতেই আরিয়ানকে ওর হাতে তুলে দিতে চাই না।
আপনাদের তো ডিভোর্স হবে না।
মানে?
মানে আমি আপনাদের ডিভোর্স করাবো না।
কি বলতে চাচ্ছেন আপনি, আর কি করতে চাচ্ছেন?
আমি বলতে চাচ্ছি আপনি আপনার হাজব্যান্ডকে ডিভোর্স না দিয়ে, উনাকে না জানিয়ে বিদেশ চলে যাবেন।
এতে করে তো পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।
দেখুন আপনাদের প্রায় এগারো বছরের সম্পর্ক।
তাতে কি?
সম্পর্ক এত ঠুনকো নয় যে এত সহজে ভেঙে যাবে। আপনার কথা শুনে আমার মনে হয় আপনারা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসেন। যা বলছেন আর যা করতে চাচ্ছেন সবকিছু রাগ থেকেই। দেখুন চাইলেই একটা সম্পর্ক ভেঙে ফেলা যায়। কিন্তু একবার ভেঙে গেলে সে সম্পর্ক কিন্তু আর জোড়া লাগানো যায় না। তাই আমি যা বলি তাই করুন।
ঠিক আছে বলুন, আপনি আমার আইনজীবী আপনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই হবে।
আপনি আপনার ছেলেকে আপনার শশুরবাড়ীতে আর মেয়েকে আপনার মায়ের কাছে রেখে আমেরিকা চলে যাবেন। আর যাওয়ার আগে আপনার হাজব্যান্ডকে শুধু একটা চিঠি লিখে যাবেন।
শুধু একটা চিঠি!
হ্যা শুধু একটা চিঠি। আর চিঠিতে কি লিখবেন, কিভাবে লিখবেন সেটার বিষয়ে আমি আপনাকে সাহায্য করবো। তারপর কি করতে হবে সবকিছু আমি বুঝিয়ে বলছি।
ব্যারিস্টার আজমিরি সুলতানা আমাকে কিভাবে চিঠি লিখতে হবে তা বুঝিয়ে বললেন। আজমিরি সুলতানার পরামর্শ আমার পছন্দ হলো।
এখন আপনি আপনার ফ্লাইট কনফার্ম করতে পারেন। আপনি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিন। আমাদের প্ল্যানিং যদি সফল না হয় অথবা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যায় তাহলে আপনারা পরবর্তীতে নাহয় আলাদা হয়ে গেলেন।
ঠিক আছে। আপনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই হবে। আমি তাহলে আসি আজকে।
আমি ব্যারিস্টার আজমিরি সুলতানার চেম্বার থেকে বের হয়ে জরুরী কিছু কেনাকাটা সেরে নিলাম। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে নিলাম। আর সবকিছু করেছি রায়হানকে না জানিয়ে। এখনও রায়হান আর আমার মাঝে কথাবার্তা হয়না। আগামী ২৭ তারিখে আমার ফ্লাইট। আমি মাকে সবকিছু খুলে বললাম। মা প্রথমে আমার সিদ্ধান্ত সাপোর্ট করলো না। কিন্তু ভালোভাবে বুঝিয়ে বলার পর আমার পাশে থাকবে বলে আস্বস্ত করলো।
আমি চিঠিটা লিখে ড্রয়ারে রেখে দিলাম। আরিয়ান রাতে ওর চাচ্চুর সাথেই থাকে। ওকে নিয়ে আমার তেমন কোনো চিন্তা নেই। একটু কষ্ট হবে প্রথম প্রথম কিন্তু ও আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে। এখনও আরিয়ান কিছুই জানে না।
আগামীকাল আমার ফ্লাইট তাই আমি আরিয়ান ও আরিশাকে নিয়ে মায়ের বাসায় চলে এলাম।
আমি আরিয়ানকে বুঝিয়ে বললাম যেন বাবার কথা শুনে চলে। আর ঐ বাড়ীতে ওর দাদা, দাদু, চাচ্চু সবাই আছে। সবাই ওকে চোখে চোখে রাখবে। আর মা আরিশাকে দেখে রাখবেন।
আজকে আমার ফ্লাইট। নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লাইট হলো আর আমি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আমেরিকায় এসে পৌঁছলাম।
আমি রায়হানকে কল দিলাম।