পরিচিতা (পর্ব-০১)

0 3
Avatar for Fariha2020
3 years ago

বিয়ের এক সপ্তাহ আগে প্রেগ্ন্যাসির টেস্ট রিপোর্টে পজেটিভ আসাতে শরিনের মাথায় যেনো বাজ পরলো। রিপোর্ট হাতে নিয়েই সে চিন্তা করছে তার ভবিষ্যতের কথা। সে যে দু বছর আগে তার ক্লাসমেট সিয়ামের সাথে বিয়ে করেছিলো সেই কথা তো পরিবারের কেউ জানেনা৷ পারিবারিক ভাবে এক সপ্তাহ পর অন্য কারো বউ হওয়ার কথা চলছে। রিপোর্ট হাতে নিয়েই সে তার আগের কথাগুলো চিন্তা করতে লাগলো,

-- তুমি কি জানো, তোমাকে লুকিয়ে বিয়ে করাটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ডিসিশন ছিলো। আমার জন্য বাবা পাত্র দেখছেন। পরিবারের সবার কথায় আমি আর পেরে উঠছি না। তোমার এই সামান্য চাকরিতে আমি ম্যানেজ করে নিবো। প্লিজ কিছু একটা করো।

-- আমার ব্যাপারে ভালো করেই সব জানা আছে তোমার। বেতনের পুরো টাকাটা আমি গ্রামে পাঠিয়ে দিই। নিজের জন্য যা হাত খরচ রাখি এতে পুরো মাস চলে না, আবার বন্ধুদের থেকে টাকা ধার নিতে হয়। তোমার থেকেই তো কতবার টাকা চাইলাম। এর মধ্যে আমি কেমনে তোমাকে নিয়ে আলাদা বাসা ভাড়া নিবো? এতো খরচ চালাবো কেমনে? আরো কিছু সময় দাও। আমি সব ঠিক করে দিবো।

-- তাহলে তুমি আমাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাও। আমার আর বাসায় থাকা সম্ভব না।

-- এখন বাবা অসুস্থ। এসব কথা বলে উনাকে টেনশন দিতে পারবো না। সময় হলে আমাদের বিয়ের কথা জানিয়ে দিবো।

-- প্রায় এক বছর ধরেই তোমার এই কথা শুনছি। এতোই যখন সমস্যা ছিলো তখন বিয়ে করেছো কেনো?

-- উফফ! আর বিরক্ত করো না তো! এর জন্যই আমি তোমার সাথে এখন দেখা করতে চাই না। এমনিতেই চাকরির এতো প্রেশার। তার উপর তোমার এতো ঘ্যানঘ্যানানি ভাল লাগে না। পাত্র দেখতে আসলে দেখা করো। দেখলেই কি বিয়ে হয়ে যায় নাকি?

সিয়ামের সাথে শরিনের এটাই ছিলো শেষ কথা। এরপর আর কখনো সিয়ামের সাথে যোগাযোগ হয়নি। কল দিলেও মোবাইল বন্ধ। বন্ধুদের সাথে যেখানে ভাড়া নিয়ে থাকতো ওখানেও কোনো খোঁজ নেই। তারপর একসময় বাবার পছন্দের একটা ছেলের সাথে শরিনের বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। শরিন এখন সিদ্ধান্ত নেয় যে করেই হোক সিয়ামকে খুঁজে বের করবে। নতুন অতিথির আসছে এই কথা শুনলে নিশ্চয়ই সিয়াম তাদের বিয়ের কথা সবাইকে জানাবে। সে তারাতাড়ি বাসায় গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে সিয়ামের গ্রামের বাড়িতে রওনা দেয়।

সিয়ামদের বাড়ি খুঁজতে কোনো কষ্ট করতে হয়নি শরিনের। তার মায়ের দেয়া একটা চিঠিতে ঠিকানা ভালো করে দেয়া ছিলো। বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে হয়তো। হঠাৎ সিয়াম এসে শরিনেকে বাড়ির পিছনে নিয়ে যায়।

-- তুমি আমার বাড়িতে চলে এসেছো তাও আমাকে না বলে?

-- কি করবো আর? আমি তোমার বিয়ে করা স্ত্রী। অনেকদিন তোমার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না তাই দেখতে এসেছি এখানে আছো কিনা।

-- শরিন আমাকে ভুলে যাও। আমাদের বিয়ের কথাও ভুলে যাও। বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। আজকেই আমার বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে। অসুস্থ বাবাকে আমি এখন আমাদের বিয়ের কথা জানিয়ে প্রেশার দিতে পারবো না।

-- তুমি এই কথা আমাকে এতোদিনে জানাচ্ছো? আমি যদি এখানে না আসতাম তাহলে তো আজকেও জানতে পারতাম না। আর সিয়াম আমি প্রেগন্যান্ট। এখন আমার বাচ্চার দায়িত্ব তো তোমাকেই নিতে হবে তাইনা?

-- কি বলছো তুমি এইসব? দেখো এখন মজা করার সময় না।

-- এইসব ব্যাপারে মজা করার মতো মেয়েও আমি না সিয়াম। আমি যা বলছি সত্যি বলছি। সাথে করে প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট এনেছি, চাইলে দেখাতে পারি।

অনেক্ক্ষণ যাবত রিপোর্ট ঘাটাঘাটি করার পর সিয়াম বলে,

-- এইটা কোনো ব্যাপার না শরিন। প্রেগ্ন্যাসির তো বেশিদিন হয়নি। এ্যবরশন করে ফেলো। চিন্তা করো না, বাচ্চার দায়িত্ব তো নিতে পারবো না। তবে তোমাকে এ্যবরশন করানোর দায়িত্ব আমার।

ট্রেনে বসে শরিনের মাথায় সিয়ামের কথাটি ঘুরপাক খাচ্ছে। তাদের অতীতের কথা মনে পরছে তার।বান্ধবীরা সবাই এই রিলেশনের বিরুদ্ধে থাকলেও সে সিয়ামকে খুব ভালোবাসতো৷ তার প্রিয় বান্ধবী নাইমার সাথেও ঝগড়া হয়েছে সিয়ামকে নিয়ে। নাইমাকে সিয়াম বাজে বাজে ম্যাসেজ পাঠাতো। কিন্তু নাইমা শরিনকে সব কথা জানালেও অন্ধ ভালোবাসার কারণে সিয়ামকে অবিশ্বাস করতে পারেনি। আর এখন কঠিন বাস্তবতা বুঝতে বুঝতে অনেক দেরি হয়ে গেছে।

-- আন্টি আমাকে একটু সিটে বসিয়ে দিন। প্লিজ

শরিন মাথা ঘুরিয়ে দেখলো একটা চার-পাঁচ বছরের বাচ্চা মেয়ে তার সাথে কথা বলছে।

-- কি বলছি শুনছেন না আপনি? আমাকে সিটে তুলে দিন প্লিজ।

শরিন সাথেসাথে কথা না বাড়িয়ে তাকে সিটে তুলে দিলো। বাচ্চাটির হাতে একটি বই আর সাথে বড় একটা ব্যাগ নিয়ে বসেছে। আশেপাশে আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ শরিনের কাশি শুরু হওয়াতে মেয়েটি তার থেকে পানি বোতল নিয়ে দেয়।

--আপনার আব্বু আপনাকে শেখাইনি যে কেউ সাহায্য করলে ধন্যবাদ বলতে হয়। আমি আপনাকে পানি দিয়ে সাহায্য করেছি তাই আমাকে ধন্যবাদ দিন।

-- তাহলে তো আমিও ধন্যবাদ এর প্রাপ্য। আমি তোমাকে সিটে উঠিয়ে দিয়েছি। আমাকে ধন্যবাদ বলনি কেনো?

--আমি তো ছোটো মেয়ে। ভুল করতেই পারি। আপনি কেনো ভুল করলেন।

এই মেয়ের পাকনা পাকনা কথায় শরিন না হেসে পারে না। কথায় কথায় জানতে পারে মেয়েটির নাম হচ্ছে লিলি। বাবার সাথে রাগ করে ব্যাগ গুছিয়ে নানুর বাড়ি চলে যাচ্ছে একা একা। এই কথা শুনে তো শরিনের মাথায় হাত! এতোটুকু বাচ্চার কত্তবড় সাহস। এই মেয়েকে তো মোটেও একা ছেড়ে দেয়া যাবে না। ইদানীং পত্রিকায় সকল পাতায় শুধু ধর্ষণের খবর।

1
$ 0.02
$ 0.02 from @TheRandomRewarder
Sponsors of Fariha2020
empty
empty
empty
Avatar for Fariha2020
3 years ago

Comments