আমি ভেবেছি ও এখন আমার ঘোমটা তুলবে।দেখবে ওর বউটাকে কেমন লাগছে।
কিন্তু আমাকে অবাক করার মাত্রা ছাড়িয়ে দিয়ে সে আমার পাশে রাখা একটা বালিশ আর কাঁথা নিয়ে চলে গেলো বারান্দায়,
আর ওখানেই সে বিছানা পেতে শুয়ে পড়লো।
আমি ভাবছি,
কি হলো এটা?আজকের রাত টা নাকি সবার জীবনের সব থেকে মধুর রাত।স্পেশাল রাত।আর আমার জীবনে দেখছি নিম পাতার রাত হয়ে গেলো।
অনেক কিছু ভেবে,পরে ভাবলাম,তাতে কি।আপন করে তো পেয়েই গেছি যাকে চেয়েছি আমি।কোন একদিন না হয় হবে চিনির রাত।
এই ভেবে লাইট অফ করে দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি।
কিন্তু ঘুম কি আর আসে?একের পর এক স্মৃতি গুলো মনে পড়ছে।কত রাত আমরা না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি।ভালবাসি ভালবাসি বলতে বলতে কখন যে ফজরের আজান দিয়ে দিতো টেরই পেতাম না।অথচ আজ আমরা কতটা কাছাকাছি।নেই কোন ভয়,নেই কোন বাধা।কিন্তু তবুও কত দূরত্ব দেখো আমাদের মাঝে।
ভাবতে ভাবতেই চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।
কিছু ক্ষণ পর অনুভব করলাম কি যেন খাটের উপর ভর করেছে।মনে মনে ভাবছি ভূত নাতো?নাকি এ বাসায় বিড়াল আছে। চোখ খুলছিনা আমি।দু চোখ বন্ধ আমার। একটু পরে অনুভব করলাম রুমের লাইট জ্বলে উঠলো।এবার আমার মাথায় কেউ হাত রাখলো।আমার আর বুঝতে বাকি রইলোনা,এ যে আমার মেঘ।আমি চোখ বন্ধ করেই আছি।আর সে ভেবেছে আমি ঘুমিয়ে আছি।প্রায় ৩০ মিনিট হয়ে গেছে সে আমাকে দেখছে।কিন্তু কোন কথা বলছেনা।আমার হঠাৎ মনে হলো,
আমরা এই নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া করতাম যে,
কে আগে ঘুমাবে,ও বলতো তুমি।আমি বলতাম না তুমি।
কারণ যে পরে ঘুমাবে সে মন ভরে অপর জনকে দেখতে পারবে।কারণ দুজনি আমরা খুব লাজুক।দুজন দুজনের মুখের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকতে আমাদের একটু সমস্যাই হবে।যে লাজুক আমরা।
ভিডিও কলে কথা বলার সময়ই আমরা দুজন দুজনের দিকে দুই মিনিট স্থির ভাবে তাকিয়ে থাকতে পারিনা।নয় ও লজ্জায় মুখ লুকায় নয়তো আমি।আর বিয়ের পর তো সামনাসামনি থাকবো।তখন তো আরো লজ্জা লাগবে হয়তো।
-তুমি আগে ঘুমাবা ঠিক আছে?আর আমি তোমায় মন ভরে দেখে কপালে একটা চুমু খেয়ে ঘুমিয়ে যাবো।
-না তুমি আগে ঘুমাবা আমি তোমায় মন ভরে দেখে ঘুমিয়ে যাবো।
এই নিয়ে আমাদের প্রায় ঝগড়া হতো।
আজ বুঝি সে নিজেকে বিজয়ী ভেবে আমাকে দুচোখ ভরে দেখছে।
দেখো আবার আমার উপর রাগ করে আছে ঠিকি।
এত জেদের মাঝেও আমার ইচ্ছে গুলো ঠিকই এক এক করে পূরণ করছে,আর তার ইচ্ছে গুলোও।অথচ আমাকে বুঝতেও দিলোনা। (মনে মনে ভাবছি)
অনেক ক্ষণ পর আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে সে চলে যাবেন সেই মুহূর্তেই আমি হাত টা ধরে বললাম।কারো অনুমতি ছাড়া তার গায়ে স্পর্শ করা ঠিক না,জানেন না?
এই বলে উঠে বসে পড়লাম ঘোমটা টেনে।
সে লজ্জা পেয়ে বলে উঠলো,আমার বউ আমি যা খুশি তাই করবো এতে অনুমতি লাগবেনা কারো।কিছু ক্ষণ আগে তিন কবুল পড়ে বিয়ে করেছি,কেউ কি ভুলে গেলো নাকি?
-আমি ভুলিনি।কিন্তু কেউ হয়তো ভুলে গেছে আমাদের বাসর রাতের প্ল্যানিং কি ছিলো।আমরা সারারাত গল্প করবো,আমার কোলে মাথা রেখে কেউ সারারাত কাটিয়ে দিবে।আমি তার চুলে হাত বুলিয়ে দিবো।আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করবো,সে তার লক্ষী বউটাকে অপলক চেয়ে দেখবে।সব ভুলে গেছে।
-উঁহু একটুও ভুলে নি।
এই বলে সে তার লক্ষী বউটাকে এক ঝাটকায় বুকে টেনে নিলো।
-আমি না হয় রাগ করে আছি।রাগ টা কি ভাঙানো গেলোনা?
-না গেলোনা।এত কষ্ট কেন দিলা আমায়?
-বাহ্ রে।তুমি যে আমায় এত দিন দিয়েছো সেটা কিছু ছিলোনা না?
-তাই বলে আমায় তুমি অস্বীকার করবে?(মেঘের বুকে মাথা রেখে বলছে মেঘা)
-আমি বাসায় এসেই মাকে তোমার কথা বলে দিয়েছি।আর বলেছি তুমি বাবাকে বলে বিয়ের ব্যবস্থা করো।আমি এই মেয়েকে ভালবাসি।ওর নাম মেঘা।আমাদের অনেক দিনের রিলেশন।আর আমি ওকেই বিয়ে করবো।ওর জন্যই আমি দেশে এসেছি।
আর আমি খালার বাড়ী থেকে এসে আজই তোমার বাসায় যেতাম পাগলী।
-যদি আমার বিয়ে হয়ে যেতো?
-হতোনা,আর হলেও আমি সেখান থেকে তোমায় তুলে নিয়ে আসতাম।আর শোনো কলিজা,সব চেয়ে বড় কথা আমার বিশ্বাস আছে যে,আমার মেঘা আমারই হবে।শুধুই আমার।
-তাহলে এসব তোমার অভিনয় ছিলো?
-জ্বী লক্ষীটা।আপনাকে বোঝাচ্ছিলাম,আপনার জীবনে আমার মূল্যটা কত খানি।আর আমি তো জানিই আজ আমাদের বিয়েটা হবেই।মায়ের সাথে সব প্ল্যান করা না?আর ছোট আপু সব জানেন।যে তোমায় আমার পছন্দ মত সাজিয়েছেন।আর এরা দুজন বাবাকেও ম্যানেজ করে ফেলেছেন।আর বাবার উপরে ভাইয়া ভাবীরা কিছুই বলতে পারেন না।বুঝেছো?
-অনেক বড় অভিনেতা হয়ে গেছো না?যাও ছাড়ো,সরো আমার কাছ থেকে।আজ অনেক কষ্ট দিয়েছো আমায়।
-ছাড়ার জন্য তো হাত টা ধরিনি।সারাজীবনের কষ্ট দূর করার জন্য হাতটা ধরেছি।
-তাহলে আমার ঘোমটা তুলে মুখ না দেখে,কাঁথা বালিশ নিয়ে বারান্দায় চলে গেলে কেন?
-আমি তো ভেবেছি তুমি বারান্দায় এসে আমার রাগ ভাঙিয়ে রুমে ডেকে নিবে।আমি অভিমান করবো,তুমি আদর করে কাছে ডেকে নিবে।কিন্তু আমি কি জানি?আমার মহারানী আমার রাগ না ভাঙিয়ে পড়ে পড়ে ঘুমাবে?
-তাহলে লুকিয়ে লুকিয়ে এসে আমার কপালে চুমু খেয়ে আবার চলে যাচ্ছিলে কেন?
-আরে পাগলীরে,আমি চলে যাচ্ছিলাম না।আমি লাইট অফ করে আপনার কাছেই আসছিলাম।কিন্তু তার আগেই আপনি আমার হাত ধরে ফেলেছেন।
-ইশ!হয়েছে,থাক ঘুমান এখন অনেক রাত হয়েছে।সকালে উঠতে হবে।
-উঁহু!আজ তো ঘুমাতে দেয়া যাবেনা।বলেছিলাম না বাসর ঘরে ঘুমানো চলবেনা?
আমি লজ্জায় দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললাম।
আর মেঘ লাইট অফ করে দিয়ে তার লক্ষী বউটাকে তার বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো।যেন কত দিন পর সে তার দেহে প্রাণ ফিরে পেলো।
আর মেঘাও মেঘের বুকে তার সারাজীবনের ঠিকানা খুঁজে নিলো।
অপূর্ণতার মাঝে খুঁজে পেলো জনম জনমের পূর্ণতা।