আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে,তাই আমি আমার ভালবাসার মানুষের সাথে জঘন্যতম ব্যবহার করে ওর সাথে ব্রেকাপ করেছি।
আমি চেয়েছি ও যেন আমার এই ব্যবহার মনে রেখে আমাকে ভুলে যেতে পারে।আমাকে ঘৃণা করতে পারে।হয়েছেও তাই।
ও আমাকে লাস্ট মেসেজ দেয় যেটা তা হলো,
"আজ থেকে আমি তোকে ঘৃণা করতে শুরু করলাম।
আই হেট ইউ"
আমার এপাশের কান্না সে সেদিন দেখেনি।পরিবারের জন্য যে আমি তাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি তাও সে বুঝেনি।চাইলে পারতাম আমি তার হাত ধরে পালিয়ে যেতে।কিন্তু সে প্রবাসী।আসতে সময় লাগবে।আর এদিকে আমার সব কিছু ঠিক ঠাক।আব্বু বলে দিয়েছেন,তার সম্মান হানি হলে সে মারা যাবেন।
চুপ চাপ সব সয়ে যাচ্ছি।
বার বার আরাধ্যর কথা মনে পড়ছে।ফোন টা হাতে নিয়েও রেখে দিচ্ছি।ফোন দিতে পারছিনা।
এদিকে আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,
হঠাৎ করে কে যেন এসে বল্লো,ছেলের তো আগের বউ বাচ্চা আছে।জেনে শুনে মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছো তো?আমার ফুফু দৌড়ে তার সাথে খবর নিতে তার বাড়ীর আশে পাশে ঘুরাঘুরি শুরু করলো।
জানতে পারলো সত্যিই ছেলের বউ আর মেয়ে আছে।
ছেলেটাকে আমি জনসম্মুখে ঠাস করে একটা চড় মেরে বললাম,
বউ বাচ্চা থাকতেও কেন আমার সর্বনাশ করতে আসছিস?যা এখান থেকে।বেরিয়ে যা।
সে বল্লো প্রতিশোধ নিতে,
বলেছিলাম না একদিনের জন্য হলেও তোকে বিয়ে করে ছাড়বো?পাগলের মত ভালবাসতাম।পাত্তা দিস নি।আজ কলংক লেপে দিয়ে গেলাম।
সবাই চলে গেলো।আমি কাঁদছি।আব্বুকে বললাম,আমি একটা ছেলেকে ভালবাসি।ওকে ই বিয়ে করবো আমি।
সবাই না করলো।বল্লো,না।এই ছেলের কাছে বিয়ে দেয়া হবেনা।অন্য পাত্র ঠিক করা হবে।আমি চিৎকার করে কাঁদছি।আমি মেঘ ছাড়া আর কাউকে এখন আর বিয়েই করবোনা।আর তাদের এক্টাই কথা,বিয়ে না দিলেও মেঘের কাছে আমাকে বিয়ে দিবেনা।
মেঘের ফেসবুক আইডি,মোবাইল নাম্বার সব ট্রাই করছি।সব বন্ধ।দিন রাত ট্রাই করছি।কিন্তু বন্ধ বন্ধ বন্ধ।
এক পর্যায় পাগলের মত হয়ে গেলাম।
আবার আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করেছেন আমার ফুফাতো ভাইয়ের সাথে,বলেছেন গায়ে হলুদের কাপড় পড়ে নিতে।যদি গায়ে হলুদের সাজে না সাজি তবে সে সুইসাইড করবেন।ফুফাতো ভাই ছোট বেলা থেকেই আমাকে পছন্দ করতেন।তাই আর তার কোন আপত্তি ছিলোনা।
আমাকে হলুদের সাজে সাজানো হলো।হলুদ শাড়ী,ফুলের গহনা।টানা নথ।
সবাই এসে বলে যাচ্ছে কেউ যেন নজর না লাগায় আবার।কাজলের টিপ দিয়ে বসো।
ভাবছি কি করবো?রুমে রাখা স্লিপিং পিলস গুলাই এখন আমার সম্বল।এক গ্লাস পানি দিয়ে ঢক ঢক করে গিলে নেই...
পরক্ষণেই মনে হলো,
তাহলে আমার মেঘের কি হবে?আমাদের স্বপ্ন গুলো?
সব তো আমার সাথে সাথে মৃত্যু বরণ করবে।আমাদের মেয়েটাকে তো আর পৃথিবীতেই আনা হবেনা।যাকে নিয়ে আমাদের এত কল্পনা।এত স্বপ্ন দেখা।যদিও বা ও এখন আল্লাহ্র কাছে।ওর স্পর্শেই তো আমি ওকে পাবো।
এসব ভাবতে ভাবতে আমি সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে ঘর ছেড়ে পালালাম।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে,ও তো দেশের বাইরে।আমি এখন করবো টা কি?
চিন্তা করতে করতে হঠাৎ মনে হলো,
ও একদিন আমাকে বলেছিলো,
এই নাও বাসার ঠিকানা।যদি ইচ্ছে হয় কখনো,তবে চলে যেও আমার বাসায়।
আমি আর দেরি করলাম না,মোবাইলের মেসেজ ঘেটে ঠিকানাটা বের করে ওর বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
জীবনের প্রথম আমি আমার এলাকা ছেড়ে অন্য একটা জেলায় যাচ্ছি।তাও আবার একা।
রাস্তার সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আমার সেদিকে কোন নজর নেই।আমার উদ্দেশ্য এখন শ্বশুরবাড়ী।
অনেকটা পথ পেড়িয়ে পৌছে গেলাম আরাধ্যর বাসায়।গিয়ে দেখি বাইরে থেকে তালা দেয়া।
এখন তো চিৎকার করে কান্না পাচ্ছে।কই যাবো এখন?কি করবো এখন?
চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বললাম বাসায় কেউ আছেন?বাসায় কি কেউ নেই?একটু পরে দেখি,ভেতর থেকে একজন দরজা খুলে দিচ্ছেন।অবাক হলাম,বাইরে তালা।ভেতর থেকে খুলে কি করে।
আমার এসব চিন্তা করে লাভ নেই।ভেতরে ঢুক্লাম।দেখি সবাই ঘুমাচ্ছিলো।এখন সবাই একে একে বের হয়ে আসছেন।
আমি মায়ের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলাম।
সবাই জিজ্ঞেস করছেন,কে আমি?কাকে চাই?কেন এসেছি আমি?
আমি বললাম,মেঘ ...
আর ওর বোন বলে উঠলো,মেঘ তো বাসায় না।ও গত কালই দেশে ফিরেছে। সকালে আমার খালার বাসায় গেছে।ওকে কি দরকার তোমার?
আমি কাঁদবো,না হাসবো বুঝতে পারছিনা।ও দেশে এসেছে।
আমি বললাম ওকে একটু আসতে বলবেন ফোন করে প্লিজ?
ওর ভাবী বলছেন,তুমি কে?ওকে কেন চাই সেটা আগে বলো।আর তোমায় দেখেতো মনে হচ্ছে তুমি গায়ে হলুদের কনে।এই অবস্থায় আসছো কেন?
মেঘের মা এবার সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বল্লো,হয়েছে এবার থাম তোরা।মেয়েটাকে বসতে দে একটু,জিরিয়ে নিতে দে।
মা আমাকে মেঘের রুমে নিয়ে গেলো।পানি দিলো।আমার হাত কাঁপছে।মা নিজেই আমার মুখে পানি তুলে দিলো।আমি পানি খেয়ে বসে আছি।অনেকটা ভয় কাজ করছে।
বাসার সবাই আমাকে মেনে নিবেতো?আর মেঘ?মেঘ আমাকে রাখবেতো?নাকি আমাকে ফিরিয়ে দেবে?এসে শুনলাম,মেঘের ভাবীর বোনের সাথে ওর বিয়ে ঠিক করেছে ওর ভাই ভাবী।
ও যদি আমাকে ফিরিয়ে দেয় তবে মৃত্যু ছাড়া আমার আর কোন পথ থাকবেনা।
মা আমাকে রেস্ট নিতে বলে চলে গেলো। কিছু ক্ষণ পর দরজায় নক।আমি উঠে বসে পড়লাম।দেখি মেঘ এসেছে,
এই প্রথম আমরা দুজন দুজনকে সামনা সামনি দেখছি।যেহেতু আমাদের পরিচয় টা ফেসবুকের মাধ্যমে।
আমি কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব না রেখে ঝাঁপিয়ে পড়লাম ওর বুকে।আমি চিৎকার করে কাঁদছি।আমার নথের আচড়ে ওর বুকে দাগ লেগে গেলো।ও উফফ শব্দ করে আমাকে ওর বুক থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বল্লো,কে আপনি?