সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বাধিক ভালোবাসা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। তাকে ভালোবাসা ব্যতীত পরকালে মুক্তির পথ অকল্পনীয়। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,"হে নবী! আপনি বলে দিন, যদি তোমাদের নিকট তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা তোমরা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় করো, তোমাদের ঘর, পূজা তোমরা পছন্দ করো তা যদি আল্লাহু তার রাসুলএবং তার পথে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয় তবে আল্লাহর আযাব আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর"(সূরা তাওবা: ২৪) উক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, দুনিয়ার সবকিছু চাইতেও রাসূলের প্রতি ভালোবাসা রাখতে হবে অপারীসীম।
রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার নিকট নিজের জীবন নিজ পিতা মাতা সন্তান সন্ততি এবং অন্যান্য সকল লোক থেকে অধিক প্রিয় হব।
নবী করিম (সা:) এর প্রতি এই ভালোবাসা শুধু মৌখিক স্বীকৃতিতে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, কার্যক্ষেত্রে তার প্রমাণ থাকতে হবে। প্রিয় নবীর প্রিয় সাহাবীদের দিকে তাকালে দেখা যায় তাদের পবিত্র জীবনী নবীর প্রেমের কি উজ্জ্বল উপমা তারা রেখে গেছেন।
উহুদের লড়াই শেষ। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে এসেছেন সাহাবায়ে কেরাম। মদিনার সবাই শহরের উপকণ্ঠে এসে সমবেত হয়েছেন। তারা খুঁজে দেখছেন নিজ নিজ আত্মীয়-স্বজনকে। মুজাহিদ দলগুলো একে একে এগিয়ে আসছেন। এ অবস্থায় ভীড় ঠেলে বেরিয়ে এলো এক মহিলা, প্রথম দলটি দেখে উৎকণ্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি আমার নবীজিকে দেখেছো? কেমন আছেন তিনি?
তাকে বলা হল উহুদের ময়দানে আপনার পিতা শহীদ হয়েছেন। শোকার্ত কন্ঠে তিনি পড়লেন ইন্নালিল্লাহে...... রাজেউন। পরবর্তী দলের কাছে তিনি একই প্রশ্ন করলেন। তারা জবাব দিলেন আপনার স্বামী শহীদ হয়েছেন। মহিলাটি বেদনার্ত কন্ঠে বললেন, ইন্নালিল্লাহি...... রাজেউন। এগিয়ে আসছে অন্য একটি দল। মহিলাটি পুনরায় একই প্রশ্ন করলেন। তারা বললেন, আপনার ভাই শহীদ হয়েছেন। তিনি ব্যাথাতুর কন্ঠে উচ্চারণ করলেন ইন্নালিল্লাহি...... রাজিউন। পেরেশান হয়ে আবার প্রশ্ন করলেন, কিন্তু আমার রাসূল কেমন আছেন? তারা বললেন,"তিনি ভাল আছেন ওই কাফেলায় তিনি আসছেন।"মহিলা দৌড়ে ঐ কাফেলায় চলে গেলেন এবং দেখতে পেলেন কাফেলার মাঝে একটি উট এ চড়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু ইসলাম এগিয়ে আসছেন। মহিলাটি হুজুর পাক (সা:) এর চাদর আঁকড়ে ধরে বললেন, ইয়া রাসুল আল্লাহ! আমার স্বামী, ভাই ,পিতা, পুত্র সবাই শহীদ হয়েছেন কিন্তু আপনি যখন বেঁচে আছেন তখন আমি আর কারো মৃত্যুর পরোয়া করিনা। প্রিয় নবীজীর প্রতি এমন নিখাদ নির্মল ভালোবাসা দেখে সাহাবারা অভিভূত হয়ে গেলেন।
পৃথিবীর এক মহামানব, কোন রাষ্ট্রনায়ক, কোন বিজ্ঞানী কি এমন পবিত্র প্রাণ উৎসর্গীকৃত ভালোবাসা পেয়েছেন। একমাত্র রাসূল (সা:)ই পেয়েছেন এমন ভালোবাসা।
আল্লাহতালা আমাদের অন্তরে রাসুল (সা:) এর প্রতি সীমাহীন ও অফুরন্ত ভালোবাসার সৃষ্টি করে দিন এবং আমাদেরকে ঈমানের সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তৌফিক দান করুন।