Love story all

0 7
Avatar for Fahad22
3 years ago

রিকশায় বসা আমি। জ্যামে আটকে আছি। এদিক-সেদিক তাকাচ্ছিলাম এমন সময় দেখলাম ডানপাশের রিকশার চাকার উপর কারোর ওড়না ঝুলছে। বৃষ্টির মাঝেই মাথাটা হালকা বের করে বললাম,

-এক্সকিউজ মি!

যেহেতু ঐদিকেই মুখ ফিরিয়ে বলেছি তাই রিকশায় থাকা মেয়ে লোকটি সহজেই বুঝে গেছে যে আমি তাকেই বলছি। সে বললো,

-ইয়েস, হোয়াট হ্যাপেন?

দ্বিধায় পড়ে গেলাম আমি। 'এক্সকিউজ মি' বলে কি ভুল করলাম নাকি! এখন যদি বাংলায় বলি তাহলে তো নিজের প্র্যাসটিজ বলে আর কিছুই থাকবেনা। তাই আমিও স্মার্টলি বললাম,

-ইউর রূবি ইজ হ্যাংগিং অন হোয়েলস্। ইট ক্যান বি পিল্যাড এট এ্যানি টাইম। লিফট্ ইট আপ!

মেয়েটি তাকিয়ে দেখলো সত্যিই তো তার ওড়নাটি চাকার উপর ঝুলছে। তাড়াতাড়ি সেটা টান দিয়ে উপরে তুলে নিলো সে৷ আমিও আর থ্যাংকস পাবার আশায় বৃষ্টিতে ভিজলাম না। মাথাটা ভেতরের দিকে নিয়ে আসলাম। কয়েক মুহুর্ত যেতেই মেয়েটি বললো,

-এক্সকিউজ মি!

আমি তার কথা শোনে শুধু মাথাটা একটু বের করে তার দিকে তাকালাম। অমনি সে একগাল হাসি দিয়ে বলে উঠলো,

-থ্যাংকস এ লট ভাইয়া!

আমিও বড্ড জোড় করে মুখ দিয়ে একটুখানি হাসি বের করলাম আর বললাম,

-ইটস্ মাই প্লেজার।

কেন আমাকে জোড় করে নিজের মুখ দিয়ে হাসি বের করতে হলো সেটা শুধুমাত্র আইনস্টাইনের বংশধররাই হয়ত আবিস্কারে সক্ষম হবেন। সে যাইহোক, ক্লাসে গেলাম ক্লাস করলাম। বিকেলবেলায় ফেরার সময় ওয়েদার ভালো থাকায় হেটেই রওয়ানা দিলাম হোস্টেলের উদ্দেশ্যে। গ্রীনরোডে এশিয়া ইউনিভার্সিটির বিপরীত পার্শ্বে চিতই পিঠা বিক্রি করেন এক লোক। প্রায় ডজনখানেকের উপরে হবে শুধু ভর্তার আইটেম। আসার পথে প্রতিদিনই এগুলো দেখে দেখে আমার জিভে পানি চলে আসে তবে, প্রতিদিন খাওয়া হয়না। কিন্তু আজ খেতে মন চাইলো। পকেটে হাত দিয়ে দেখি চল্লিশ টাকা খুচরা আছে। শুরু করলাম পিঠা খাওয়া৷ একটা পিঠা খেতেই কোত্থেকে যেন সাত-আটজন মেয়েলোক চলে আসলো। তারাও পিঠা খাওয়া শুরু করলো।

আমার একটা বদঅভ্যেস হলো, যেকোন মেয়েলোক সামনে পড়লেই অটোমেটিক তার পায়ের দিকে নজর চলে যায় আমার। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলোনা। আমি পিঠা খাচ্ছি আর পা দেখছি ওদের। পা বলতে, টাখনুর নিচের যে অংশটি থাকে শুধু সেটুকুই। একজন বাদে বাকি সবারই নখ ছোট করে কাটা। উল্লেখ্য, এখানে কারোরই পায়ে মোজা ছিলনা। আমি ভর্তা খাচ্ছি কম পিঠা খাচ্ছি বেশি। আর ওরা পিঠা খাচ্ছে কম তবে ভর্তা খাচ্ছে বেশি। আর ঝালের ঠেলায় 'উউউউ..., আআআআ...' করছে। একপর্যায়ে ওদের খাওয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে মনে হলো। আমারো প্রায় শেষের পথে। এমন সময় ওরা সবাই বলে উঠলো, 'ঐ তো, তানহা চলে এসেছে। ও এখন বিল দিয়ে দিবে। তোরা যে যে পিঠা নিতে চাস নিয়ে নে। হোস্টেলে খেতে পারবি।' তখন ওদের মধ্যে দু'তিনজন কয়েকটা পিঠা নিয়ে নিলো।

মেয়েগুলো হাইটে আমার থেকে এক-দেড় ফিট করে কম হলেও প্রত্যেকের মাথার উপর চুলগুলো ছিল খুব গুছানো । এমনভাবে গুছানো যে, যার ফলে ওদের চুলের কারনে তানহা নামের মেয়েটির মুখটিও দেখা সে মুহুর্তে আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। আমি দাঁড়িয়ে পিঠা খেয়েই চলেছি আর দোকানদার তার কমে আসা ভর্তার বাটিগুলো ফিলাপ করায় ব্যস্ত। বুঝতেই তো পারছেন ভর্তার উপর দিয়ে কত মাত্রার ভূমিকম্পটা বয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে।

কেউ পেছন থেকে বলে উঠলো,

-আরে, আপনিই সেই না, যে কিনা আজ সকালে রিকশায় আমার ওড়না তুলতে বলেছিলেন?

'আরে' কথাটা শুনেই আমি পেছনে ফিরি আর আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মেয়েটিও বিরতিহীনভাবে কথাগুলো বলে ফেলে।

হুমম সত্যিই তো, এটা তো দেখছি সকালের মেয়েটিই। আমিও জবাব দিলাম,

-জ্বী আপু, আমিই সেই।

সবার সামনে তাকে আপু বলায় কিছুটা বিব্রত হলো সে। এটি বুঝতে পারলাম মুহুর্তেই চেহারার পরিবর্তন দেখে। আর কোন অতিরিক্ত কথা না বাড়িয়ে সরাসরি আমাকে কফি অফার করে বসলো। একটু ভাব নিতে গিয়ে আমি সেটা রিজেক্ট করে দিই। তবে সেটাও পোলাইটলি-

আমি বলি,

-নো থ্যাংকস, ইনজয় ইউর টাইম। এন্ড হেপি বার্থডে।

আমার কথা শোনে সবাই হতবাক হয়ে গেল। তানহা বলে উঠলো,

-আপনি কি করে জানলেন আজ যে আমার বার্থডে?

আমি বললাম,

-বিষয়টা খুব সিম্পল। কোন মেয়ে তখনই তার বান্ধবীদেরকে ট্রিট দেয় যখন তার বিশেষ কোন দিন বা বিষয় থাকে। আমার কাছে মনে হলো আপনার ক্ষেত্রে আজ বার্থডেই হবে। জাস্ট এটাই।

-ওহ রিয়্যালি গ্রেড এন্ড থ্যাংক ইউ! আজ সত্যিই আমার বার্থডে। আচ্ছা, আপনার নামটিই তো জানা হলোনা।

-আমার নাম রিয়াদ। রিয়াদ ভাই। বন্ধু-বান্ধবরা সবাই 'রিয়াদ ভাই' বলেই ডাকে। আপনারাও সবাই 'রিয়াদ ভাই' বলেই ডাকতে পারেন।

-বাদ দিন তো এসব। আপনার ফেসবুক আইডির নামটি বলুন তো! (মোবাইলটি হাতে নিয়ে তানহা বললো)

-সরি, আমি ফেসবুক ব্যবহার করিনা।

আমার এমন উত্তর শুনে সবাই যেন আকাশ থেকে পড়লো।

তানহা আবার বললো,

-আচ্ছা, ফোন নম্বরটা দিন পরে কথা বলে নিবনে এখন যেতে হবে আমার।

-আমি পার্সোনাল কোন ফোনও ইউজ করিনা। পৃথিবীটা খুব ছোট। যদি আবারো কোনদিন সরাসরি দেখা হয় তাহলে বাকি কথা না হয় সেদিনই হবে।

আমার মুখে এমন আজগুবি কথা শুনে মেয়েগুলো আমার দিকে বিস্ময়ের নজরে তাকিয়ে রইলো। মনে হচ্ছিল, আমি চিড়িয়াখানায় বন্দী কোন ভাল্লুক আর ওরা দর্শানার্থী।

তখন আমি শুধু মনে মনে এটুকুই বললাম,

-বোনেরা, তোমরা যে যার মতো চলে যাও। ব্যাচেলর বেকার মানুষ। এখনি এতগুলো মুখের খাবারের বিল দেয়ার সামর্থ্য আমার হয়নি!

রম্য বাস্তব :

প্রচলিত_প্রেম_ব্যাচেলর_বেকারের_জন্য_নহে

লিখা: Fahad shikder

2
$ 0.00
Avatar for Fahad22
3 years ago

Comments