শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন: বাড়ছে নৈতিক অবক্ষয় ।

0 23
Avatar for Fahad2020
4 years ago

গােটা মানবসভ্যতাই আজ এগিয়ে চলছে সুপার স্যায়েন্সের যুগে । আমাদের এই পৃথিবীতে যত বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি আবিস্কার হয়েছে তার প্রতিটিতেই ভাল - মন্দ দুটি দিকই রয়েছে । শুধু স্বভাব চরিত্রগত তারতম্যের উপর এর সুফল ও কুফল নির্ভর করে । কথায় বলে , একই ফুল থেকে ভ্রমর আহরণ করে মধু এবং মাকড়সা আহরণ করে বিষ । সাধারণ জীবজন্তুর সাথে মানুষের প্রধান পার্থক্য হলাে এই যে , মানুষ বুদ্ধিমান এবং বিবেকসম্পন্ন জীব । আমাদের দেশে মােবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয় । ফেসবুক , টুইটার , স্কাইপ , ইউটিউব , ই মেইল , উইচ্যাট লাইন ইত্যাদির ব্যবহার তরুণদের কাছে খুবই জনপ্রিয় । তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশেষ করে স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেটের যথেচ্ছ ব্যবহার অনেকটা বই বিমুখ করেছে । বইয়ের সাদাকালাে মুদ্রিত বর্ণগুলাে এখন শিক্ষার্থীদের কাছে একঘেয়েমি নিরস মনে হয় । অন্যদিকে সামান্য স্পর্শেই ক্ষুদ্র যন্ত্রের মাধ্যমে খুলে যায় বিশ্বের বৈচিত্রময় রঙিন দুয়ার । এখন আর শিক্ষার্থীদের কাছে মা - বাবা , শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নীতিকথা ও নিয়ম - শৃঙ্খলা মেনে ক্লাসের বন্দি জীবন ভালাে লাগে না । শিক্ষা এখন জিপিএ সর্বস্ব । শিক্ষা বলতে শিক্ষার্থীর মনােদৈহিক , আত্মিক , সামাজিক বিকাশ বা সামাজিকিকরণকে বােঝায় । পাশাপাশি শিক্ষার্থীকে চরিত্র গঠন , নৈতিকতা , নিয়মানুবর্তিতা , দেশপ্রেম , ধর্মীয় - সামাজিক মূল্যবােধ চর্চা , সততা ও পরিশ্রমী মনােবৃত্তিকে তৈরি করা শিক্ষার কাজ । এসব কিছু বাদ দিয়ে এখন শিক্ষা বলতে বুঝি পরীক্ষা শেষে ভাল জিপিএ অর্জন । ফলে শিক্ষাক্রমে নানামুখী যুগােপযােগী পরিবর্তন আসলেও শিক্ষার্থীর ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এর প্রভাব খুবই ক্ষীণ । ছাত্ররাই হচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ পরিচালক । দেশ তথা সমাজকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাদের । কাজেই ছাত্রদের এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে এবং নিজেদের সেভাবেই গড়ে তুলতে হবে । বর্তমান প্রজন্মের অবক্ষয় আমাদের হতাশা থেকে হতাশার অন্ধকার গহ্বরে ঠেলে দিচ্ছে । কাদের তৈরি করছি আমরা ? তৈরি করতে পারছি কি ? চারদিকে নৈতিকতার এত অবক্ষয় কেন ? এত হিংসা , ঘৃণা , প্রতারণা , হিংস্রতা , লােভ , মিথ্যাচার নিয়ে ওরা বেড়ে উঠছে কেন ? তবে কী আমরা ব্যর্থ ? না এত সহজেই স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় আচ্ছন্ন হতে চাই না । আমরা রুখে দাঁড়াতে পারি , কঠোর হাতে দমন করতে পারি তাদের যারা আমাদের ভবিষ্যৎকে কলুষিত করতে উদ্যত করছে । কীর্তিমান বিজ্ঞানীরা যখন তাদের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে মানব সভ্যতাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে , তখন কিছু অসৎ স্বার্থপর ও লােভী মানুষ বিজ্ঞানকে অকল্যাণ , অমঙ্গল ও অন্যায়ের পথে ব্যবহার করছে ।

এ প্রসঙ্গে আমার অভিযােগের তীর প্রথমে নিক্ষিপ্ত হবে মােবাইল ফোনের প্রতি । যােগাযােগের এই জনপ্রিয় মাধ্যমটির আশঙ্কাজনক অপব্যবহার হচ্ছে । এর অসহায় শিকার আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম । আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে এক একটি মােবাইল ফোন যেন আলাদিনের জাদুর চেরাগের মতাে ইচ্ছাপূরণের বাক্স । মােবাইল ফোন এখন কেবলমাত্র যােগাযােগের মাধ্যম হিসেবে নয় , মােবাইল ফোনের অপব্যবহার সমাজ - সংসারকে দূষিত করছে , করতে ব্যবহৃত হচ্ছে । ভাবতে অবাক লাগে এই দেশে যখন নিত্যপ্রয়ােজনীয় জিনিসগুলাে ক্রমন্বয়ে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে তখন মােবাইল ফোনটি প্রায় প্রত্যেকের হাতে হাতে শােভা পাচ্ছে । এর অপব্যবহারে হত্যা , রাহাজানি , লুটতরাজ , ব্ল্যাকমেইলিং , প্রতারণা ইত্যাদি ব্যাপক হারে বেড়ে যাচ্ছে । দূরত্ব রচিত হচ্ছে- বাবা - মার সাথে সন্তানের , স্বামীর সাথে স্ত্রীর , ভাইয়ের সাথে বােনের , বন্ধুর সাথে বন্ধুর । মােবাইল ফোন কোম্পানিগুলাে আবেগময় উপস্থাপনায় এর প্রয়ােজনীয়তাকে তুলে ধরে । দেখা যায় রাতে তাদের কলরেট থাকে সবচেয়ে কম । আমরা যারা সচেতন নাগরিক তারা কখনােই চাইবাে না কম কলরেট ব্যবহার করে নিজের ও অন্যের মূল্যবান বিশ্রামের সময়টুকু নষ্ট করতে । তাহলে রাতে কথা বলবে কে ? যারা সত্যকে গােপন করে নীতিহীন অসামাজিক কোন সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় তারাই রাতকে বেছে নেবে নিজেকে লুকিয়ে পাপে নিমগ্ন হতে । আতঙ্কের সাথে দেখতে পাচ্ছি , আমাদের কিশাের ও তরুণ প্রজন্ম এই কম কলরেটের ফাঁদে পড়ে কথােপকথনের জন্য বেছে নিচ্ছে রাতের কম কলরেট এবং জড়িয়ে পড়ছে নানারকম অনৈতিক সম্পর্কে । এই সামাজিক অবক্ষয়ে গােটা জাতির ভবিষ্যৎ আজ অন্ধকারের মুখােমুখি । একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কর্তব্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক শিক্ষা দেয়া । আসুন , আমরা সবাই মিলে এই বিষাক্ত নীল ছােবলের বিষক্রিয়া থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসি এবং ছাত্রছাত্রীদের আলােকিত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলি ।

4
$ 0.00
Avatar for Fahad2020
4 years ago

Comments