গ্রীষ্মের এক সকাল । চারদিকে মাত্র ফুরফুরে বাতাস বইতে শুরু করল । নীল আকাশে পেজা তুলার মতাে ধবধবে সাদা মেঘ উড়ছিল । বিস্তৃত তৃণভূমি বুনাে হলুদ ফুল এক ধরনের আনন্দে ছন্দে ছন্দে দুলছিল । মৌমাছিদের জন্য মধু সংগ্রহের এটাই চমৎকার দিন । সব মৌমাছিরা আজ খুবই ব্যস্ত । সবার ভাবনা কীভাবে দিনটাকে আরও কাজে লাগানাে যায় । বুনােফুল থেকে আরও বেশি বেশি মধু সংগ্রহ করা , কিন্তু একটা মৌমাছি ছিল অন্যরকম , সে কোন কাজ করতে চাইত না । শুধুই ঘুমাতাে । তার নাম ছিল ফামবল । একদিন মৌমাছিদের মহারাণী নিজের ধৈর্য হারিয়ে ফামবলকে বললেন , তুমি কখনাে কোনাে কাজ কর না , শুধু খাও আর ঘুমাও । আর আমি পরিশ্রমী মৌমাছিদের আমার মৌচাকে রাখি । তুমি এখান থেকে চলে যাও ফামবল । ফামবলও কিছু চিন্তা করে তার বাদামী রঙের মৌ পােশাক নিয়ে মৌচাক থেকে বেরিয়ে পড়ে । মৌমাছিটি থাকার কোন জায়গা না পেয়ে আকাশে অলসভাবে ওড়লাে কিছুক্ষণ । খুবই ধীরে ধীরে সে বুনাে হলুদ ফুলে ঘুরে ঘুরে বেড়ালাে এবং একটু পর পরই প্রয়ােজনের বেশিই বিশ্রাম নিতে লাগল । এ কারণে সে মধু সংগ্রহ করতে পারল না । ফামবল বিশ্রাম নিতে নিতে রাত হয়ে গেল । হঠাৎ ফামবলের চোখ খুলল কারও কান্নার আওয়াজ শুনে । যেই ফামবল খুঁজতে লাগল তখন সে দেখল যে একটি গাছের ডালে একটি পরী কান্না করছে । ফামবল পরীটাকে জিজ্ঞাসা করল তুমি কেন কাঁদছ ? পরীটি বলে আমার পা গাছের ডালের ভেতর আটকে গেছে , এখন আমি বের করতে পারছি । । তখন ফামবল অনেক চেষ্টা করে পরীটির পা বের করল । তখন পরীটি খুশি হয়ে ফামবলকে বলল , তুমি আমায় সাহায্য করেছ , তাই ধন্যবাদ । তুমি আমার কাছ থেকে কী চাও আমি তােমাকে সব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত । ফামবলের মাথায় তেমন কিছু আসল না । তাই সে বলল , আমি কিছু চাই না , আমার কিছুর প্রয়ােজন নেই । এবার পরীটি বলল , ঠিক আছে তুমি যেহেতু কিছু চাও না , তাে আমি তােমাকে তেমন কিছু দিতে পারলাম না । কিন্তু তােমার যখনই আমার প্রয়ােজন হবে আমার কথা মনে করে এ গাছের সামনে আসবে , আমি এসে পড়ব । এ বলে পরীটি উধাও হয়ে গেল । ফামবল আবার ঘুমিয়ে গেল । এভাবে সময় যায় , গ্রীষ্মকালও চলে যায় , শীত এসে পড়ে । এদিকে ফামবলের খুব অসুখ । কিছুদিন খাবার না খাওয়ায় তার মরার মতাে অবস্থা হয়েছে । এখন তাে যেই শীত সব ফুলেরাও ঝড়ে গিয়েছে । এবার সে ভাবল কেননা তার মৌচাকে ফিরে যাওয়া যাক । সে তার মৌচাকে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে বলল , খােল আমি এসেছি । কিন্তু কেউ খুলল আবার অন্য একটি মৌমাছি ফামবলকে দরজার ফাঁক দিয়ে বলল , তুমি কোন কাজ পার না , তুমি অলস । তাই মহারাণী আমাদের নির্দেশ দিয়েছে তােমাকে মৌচাকে ঢুকানাে যাবে না । এ কথা শুনে ফামবল ভীষণ দুঃখ পেল । সে বনে আশ্রয়ের খোঁজে ঘুরতে থাকলাে । কিন্তু কোন জায়গায়ই পেল না । ঠাণ্ডায় ফামবল বরফের মতাে হয়ে কাপতে শুরু করল । এরপর সে একটি গাছের ডালে । গিয়ে বসল । তখন হঠাৎ করে কোথা থেকে যেন একটি পরী আসল- এটি সেই পরী যাকে ফামবল সাহায্য করেছিল ফামবলকে দেখে বলে তােমার কী হয়েছে ? তখন ফামবল পরীটিকে সব কথা খুলে বলল , ফামবলের কথা পরীটি বুঝতে পারল এবং সে তাকে বলল , তােমার গায়ে যে বাদামী রঙের মৌ পােশাকটি রয়েছে । তা তুমি আরও তৈরি কর । ফামবল তার কথামত অনেকগুলাে পােশাক তৈরি করল । এবার পরী তাকে সে পােশকগুলােকে মৌচাকের সকলকে উপহার দিতে বলল , ফামবল তাই করল । সবাই তাে পােশাক দেখে অবাক । রাণী বলল , এটা কী তুমি বানিয়েছ । ফামবল বলল হ্যা আমি বানিয়েছি , আমিও এখন কাজ করতে পারি । এ কথা শুনে রাণী খুব খুশি ও ফামবলকে আবার তাদের মৌচাকে থাকতে বলল । সেদিন থেকে ফামবল অনেক পরিশ্রম করতে লাগল ও সুখে শান্তিতে বাস করতে লাগল ।
0
26