পেছন থেকে তিশার পেটে দু'হাত বেঁধে কানের কাছে মুখ নিয়ে দিহান বলে ওঠে,
-সরি।
-ছাড় আমাকে,একদম আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করবে না।(বলেই নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে তিশা)
হাতের বাঁধন টা আরেকটু শক্ত করে দিহান তিশার কানের নিচের দিকটায় নাক ঘষে বলে ওঠে,
-বললেই হলো?আমার বিয়ে করা বউকে আমি ১০০ বার স্পর্শ করবো।
-ওহ।বিয়ে করসো ভোগ....
তিশার কথা শেষ হবার আগেই দিহান বলে ওঠে,
-ভোগ না আদর করবো।
-আমি কোনো বাচ্চা না যে আদর করতে হবে।
-হায়রে!স্বামী সোহাগ বুঝে না।কী এক বুড়ি বিয়ে করলাম।
-বুড়ি কাকে বললা!!(নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে রাগী কন্ঠে বলে ওঠে তিশা)
-তুমিই তো বললা, তুমি বাচ্চা না।
-তাই বলে বুড়ি ও না।
-২৭ বছর বয়স হয়ে গেসে আর সে কিনা বুড়ি না।তোমার বয়সে মেয়েরা ২/৩ টে বাচ্চার মা হয়।
-প্রতারিত না হলে হয়তো আমিও!
আর কিছু না বলে থেমে যায় তিশা।তিশার এ কথাটি সোজা দিহানের বুকে গিয়ে বিঁধে।তিশার চোখদুটো যে ছলছল করছে তা না দেখেও বেশ উপলব্ধি করতে পারছে দিহান।পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দিহান বলে ওঠে,
-এতো দিনে মা হওনি তো কী হয়েছে।চলো তোমাকে মা বানাই।(বলেই দিহান বাঁকা হেসে তিশার কানের নিচে নাক ডলতে আরম্ভ করে)
-ছাড় আমাকে।এসব ন্যাকামী করতে আসবা না আমার সাথে।আমার সহ্য হয়না........
তিশার কথা শেষ হওয়ার আগেই দিহান,তিশাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে দু'হাতে তিশার মুখ আঁকড়ে ধরে বলে ওঠে,
-আমি জানি,আমি ক্ষমার যোগ্য নই।কিন্তু শাস্তি টা অন্তত দেও।এভাবে নিজের মাঝে কষ্ট চেপে রেখে নিজেকেই কষ্ট দিচ্ছ!
শূন্য দৃষ্টিতে কিছুটা সময় দিহানের দিকে তাকিয়ে থাকার পর তিশা দিহানের হাত দুটো নিজের গাল থেকে সরিয়ে বলে ওঠে,
-আমার মাঝে কোনো কষ্ট নেই।আর দয়া করে আমার থেকে দূরে থাকবা।তোমার কাছে আসা টা সহ্য হয়না আমার।
কথাটি শেষ করেই তিশা বিছানায় যেয়ে শুয়ে পরে।দিহান নিজের জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে আছে।নিজেকে ভিষণ অপরাধী লাগছে তার।কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে থেকে দিহান ও এগিয়ে যায় বিছানার দিকে। তিশা উল্টো দিকে কাত হয়ে শুয়ে আছে।দিহান কিছু না ভেবে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে তিশাকে।তিশা বিরক্তি নিয়ে বলে ওঠে,
-কথা কী কানে যায় না?কাছে আসতে নিষেধ করেছি!
দিহান কোনো কথা না বলে ঘুমের ভান ধরে থাকে।তিশা নিজেকে ছাড়ানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পরে।তিশা ঘুমিয়ে গেসে বুঝতে পেরে চোখ মেলে তাকায় দিহান।তারপর আলতো করে তিশাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে তিশার কপালে চুমু এঁকে দেয়।কিছু টা সময় তিশার দিকে তাকিয়ে থাকার পর দিহান বলে ওঠে,
"আমি সত্যি খুব দুঃখিত,তিশা।আমি জানি আমি ভুল করেছি।তোমার রাগ,অভিমান সবটা জায়েজ।এই অভিমানের কারণ টা যেহেতু আমি তাই এই অভিমান ভাঙাবার দায়িত্ব টাও আমার।"
তিশাকে নিজের বুকের উপর নিয়ে তাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে দিহান।
!!
বারান্দায় রাখা দু খানা চেয়ারে বসে আছেন তিশার মা অনিমা বেগম ও তিশার বাবা তিতাশ সাহেব।মেয়ের বিয়ে দেবার পর প্রতিটি মা-বাবার দিনই দুশ্চিন্তায় কাটে।কিন্তু এমন কোনো চিন্তের ছাপ নেই তিশার মা-বাবার মুখে।তারা ফজরের নামাজ কায়েম করে নিশ্চিন্তে বসে ধোঁয়া উড়া গরম চায়ে চুমুক বসাচ্ছেন।
-তোমার মেয়ে আজ আসছে তো?(তিতাশ সাহেব)
-জ্বি।দিহান কল দিয়ে জানিয়ে ছিলো কাল।(অনিমা)
-ছেলে টা বড্ড দায়িত্ববান।
-ঠিক তাই।দিহানের চেয়ে ভালো ছেলে হতেই পারে না আমাদের তিশার জন্যে।
-সেজন্যেই নিশ্চিন্তে শ্বাস নিতে পারছি।তা কখন আসছে ওরা?
-দুপুরের মাঝে এসে পরবে।
-বাজার সব আছে তো?
-আছে।
-কোনো কমতি যেনো না রয় জামাই যত্নে।
-সে আর বলতে হয়!এ সেই দিহান যে ওমন ঘটনার পর আমাদের মেয়েকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছিলো আল্লাহর হুকুমে।ওর যত্নে কোনো ত্রুটি হবে না।
-আচ্ছা।এখন থেকেই কাজ শুরু করো নাহয় দেরি হয়ে যাবে।কাজের বুয়াকে জলদি আসতে বলেছো তো?
-হ্যা হ্যা,বলেছি।এসব নিয়ে তুমি চিন্তে করো না তো!সব টা সময় মতো ঠিকঠাকভাবে হয়ে যাবে।
তিতাশ সাহেব স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে একখানা মুচকি হাসি দিয়ে সংবাদ পত্রে মনযোগ নিবেশ করলেন।
তিশার মা চিন্তের ভার টা নিজের ঘাড়ে নিয়ে এগিয়ে গেলেন রান্নাঘরের দিকে।কত শত কাজ তার!বিয়ের পর প্রথম জামাই আসছে তাদের বাড়ি,খাতিরযত্নে কোণো ত্রুটি কাম্য নয়।
!!
ঘুম ভাঙতেই তিশা আধো আধো চোখ খুলে পাশে তাকাতেই দেখে দিহান ওর পাশে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।দিহানের মুখখানা ওর দিকেই ফিরানো ছিলো।তিশা এক নজরে তাকিয়ে আছে দিহানের মুখপানে। এই মানুষ টিকে পাওয়ার স্বপ্ন ৯ টা বছর ধরে দেখে আসছে ও।সেই ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরিক্ষার প্রস্তুতির জন্যে ভর্তি হওয়া কোচিং এ পড়ার সময় থেকে চেনে সে দিহানকে।একই কোচিং এ পড়তো দুজন।তখন থেকেই শুরু হয় ভালো লাগা।তারপর একই ভার্সিটিতে চান্স পায় তারা।সময়ের সাথে ধীরে ধীরে ভালোলাগা গুলো ভালোবাসায় রুপান্তরিত হয় ।ভার্সিটির শেষের দিকটায় ভালোবাসাটা প্রেম নামক সম্পর্কে ও আবদ্ধ হয়েছিলো।সেই সাথে নতুন নতুন কতো শত স্বপ্নও তো বুনেছিলো তিশা।কিন্তু এই স্বপ্নগুলোই পরের ৫ বছর তিশার হৃদয়ের দহনে পরিণত হয়েছিলো।
৯ বছর আগে থেকে দেখে আসা স্বপ্ন আজ পূরণ ঠিকই হলো তবে কেনো যেনো এতে কোনো ভালোলাগা কাজ করছে না তিশার।এমন তো নয় যে সে দিহানকে ভালোবাসে না তাহলে কেনো দিহানকে অসহ্য লাগছে তার!এ কী অভিমানগুলোরই বহিঃপ্রকাশ?অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে কী সে দিহানকে ছাড়াই বাঁচতে শিখে গিয়েছে?
আসলে অতিরিক্ত অপেক্ষা মানুষের মাঝে এক বিতৃষ্ণার জন্ম দেয়।তিশার ক্ষেত্রেও কী তাই হয়েছে?
নিজের অনুভূতি নিজেই বুঝে উঠতে পারছে না তিশা।তিশার ভাবনার মাঝেই দিহান ঘুমের মাঝে তিশার পেটের উপর হাত উঠিয়ে দেয়।দিহানের এমন স্পর্শে তিশা এক অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব করে।দিহানের হাত থেকে চোখ সরিয়ে দিহানের মুখের দিকে তাকাতেই দিহান তিশাকে চোখ মারে।তারমানে দিহান কাজ টা ইচ্ছে করেই করেছে বুঝতে পেরে তিশা এক ঝটকায় পেট থেকে দিহানের হাত সরিয়ে বিছানা থেকে উঠে পরে।
রাগী চোখে একবার দিহানের দিকে তাকিয়ে তিশা কাপর নিয়ে বাথরুমে চলে যায়।এদিকে দিহান একটি দুষ্টু হাসি দিয়ে আবারও চোখজোড়া বুজে আরেক দফা ঘুমায়।
!!
বিয়ের প্রথম দিকে নতুন বউকে একটু সাজসজ্জা করতে হয়।তাই ইচ্ছে না থাকলেও হালকা সাজগোজ করছে তিশা।গোসল সেরে এসেই নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছিলো সে।দিহানের টা দিহান রাতেই গুছিয়ে রেখেছিলো।মোটমাট তিশার বাড়ি যাবার সকল প্রস্তুতি শেষ।
গোসল সেরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আয়নার দিকে তাকাতেই দিহান দেখতে পায় তিশা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।বেশ ভালো লাগছে তিশাকে দেখতে।দিহান একটু দুষ্টু হাসি দিয়ে এগিয়ে যায় তিশার দিকে।আয়নায় দিহানকে নিজের দিকে আসতে দেখে দিহানের দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে তিশা।দিহান ধীরে ধীরে তিশার একদম কাছে চলে যায়।দুজনেই অপলক দৃষ্টিতে একে অপরকে দেখে চলছে।হটাৎ দিহান তিশার কোমর জড়িয়ে তিশাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
চলবে
#তোমারই❤
#পর্বঃ০১
#মাহযাবীন
বাহ গল্পটা সুন্দর, সুন্দর করে লেখাটাও একটা আর্ট। আর আপনার এই আর্ট দেখে খুব ভালো লাগলো। আর্টিকেলের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।