বইটা শেষ হল ভোর চারটা বাজে। আমি বেশ কিছুক্ষণ শেষ পৃষ্ঠায় চোখ মেলে তাকিয়ে থেকেছি। একটা সিগারেট পুড়িয়েছি। আগে সিগারেট খেতাম অল্প একটু তাও দিনের বেলায় আর সন্ধ্যা রাতে। তবে এখন রাত জাগার সাথে সাথে রাতে সিগারেটের নেশাটা বেড়েছে, সন্ধ্যার পর থেকে কেমন জানি অদ্ভূত সব চিন্তা মাথায় চলে আসে, আস্তে আস্তে মাথার ভেতর যেন এক প্রকান্ড পাথর চেপে বসে, ঘুম উড়ে যায়, এসট্রের উপর সিগারেটটুকু জোনাকির মত জ্বলে।
বারান্দার দরজা খুলে একটা ভ্যান গাড়ি দেখেছি। ভ্যান গাড়ি ওপরে ময়লা ধরা জীবন দেখেছি। তারপর আবার বইটা পড়তে শুরু করলাম একদম প্রথম থেকে। শেষ হল সকাল ৭ টায়।
একবার মনে হল আমার কান্না পাচ্ছে। খুব মাথা ধরেছে, বালিশের নিচে হাত দিয়ে বিড়বিড় করছি... মেয়েটার জানাজা হয়নি।
পতিতাদের জানাজায় কেউ আসতে চায় না। পাপ হবে। তবে পতিতাদের কাছে যাওয়া যাবে। এদের নগ্ন শরীরে পাপ নেই...
.... ফাহিম /২৮সেপ্টেম্বর ২০২০
ছোট বেলায় মায়ের হাতে যত ক্যালানি খাইছি তা যদি হিসেব করতাম।তাহলে গায়ের লোমের চাইতেও বেশি হইতো।
ছোটবেলায় একটি মেয়ে আমায় হ্যাপি বার্থডের কার্ড দিছিলো।যাকে লাভ লেটার ভেবে তিনদিন তিনরাত সেটাকে বুকে জড়িয়ে ছিলাম। না খেয়েছি, না ঘুমিয়েছি, না হিসু করেছি। তিনদিন পর মনে হলো- "ইরে!
আমাকেও তো একটা কার্ড দিতে হবে!"
একটা লাল লাল লাভ ছাপ ছাপ কার্ড নিয়ে এলাম। ওপরের দিকে কার্ডটা এমনি নরম্যাল, কিন্তু ভিতরের দিকে দুটো লাভ সাইন। আমি চাইনি। দোকানদার নিজেই দিলো।কার্ড টা নিয়ে স্কুলে গেলাম। কিন্তু মনে ছিলো না কার্ডটা যে বইয়ের ভাঁজে রেখেছিলাম,সেই বইটাই স্যার কে দিয়েছিলাম।
হঠাৎ করে পাতা উল্টাতে উল্টাতে কার্ড টা স্যারের সামনে পড়ে যায়।স্যার সুন্দর করে আমাকে ডেকে কাছে নিয়ে যায়,তারপর আমার চুলের মুঠি ধরে হাওয়ায় সাড়ে তের মিনিট ঝুলিয়ে রেখে বোঝালো যে;
"চিঠি লেখছো তা হাতের লেখা খারাপ কেন?"
এই কথা ভাবা যায়,এর জন্য আমার সাধের চুলের মুঠিখানা তিনবার ওপরে নীচে ঘুরিয়ে এতো মারলো।
ইস!
আমার সাধের চুল।
যেন ওটা আমার চুলের মুঠি নয় গরুর লেজ ! খুবই মানসিকভাবে আহত হয়েছিলাম।
কারণ, তখন মেয়েরা অল্পঅল্প আমাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে! আর সেই মেয়েদের হৃদয়ে বেলি ড্যান্স করা পুরুষ নাকি রোজ সন্ধেবেলা সাতটা থেকে সাড়ে আটটা উরু ছেঁড়া মার খায়। খুবই খারাপ ব্যাপার।ব্যাপারটা ভাবলাম,"এভাবে মার খেলে তো মেয়েরা পছন্দ করবে না।"
তো যেটা বলছিলাম;একদিন দুপুরবেলা সবার অলক্ষ্যে ঘরে বসে সেই লাভ ছাপ ছাপ কার্ডখানার উপর ভালো করে লিখতে গিয়ে মায়ের কাছে খেলাম ধরা।ঠিক যেন গন্ধ পেয়ে ঠিক সময় এসে পড়েছে।
~"এটা কিসের কার্ড? কোত্থেকে এলো?"
আমি বললাম-"একটা বন্ধু কে কার্ড দেব।"
আবার প্রশ্ন- "ছেলে বন্ধু?নাকি মেয়ে বন্ধু?"
আমি আমতা আমতা করে- ~~"মে..মে..মেয়ে.."
~~কি? "মেয়েদের চিঠি লেখা এই ছোট্র বয়সে,ধারা!তোর একদিন আর আমার যে ক'দিন লাগে।"
দৌড়াচ্ছি আমি আর মা কেলাচ্ছে আর বলছে,-"মদন ছেলে,মেয়েদের চিঠি লিখলেও তো হাতের লেখা ভালো করতে হয়।তাও তো করিস নি।এই লেখায় তো মেয়েও পটবে না।"
ইশ রে এতো মাইর দিছিলো যা দেখে এলাকার সবাই এখনো আমায় মদন কুমার বলে ডাকে।
বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই! "সেই থেকে জীবনে আর কোন মেয়েরে চিঠি লিখি নাই।"
হাতের_লেখা
----✍কাওসার রহমান খাঁন