তাজকিরাতুল আওলিয়া...
ছোট্ট একজন বালক, তখনও মক্তবে যাওয়া শুরু করেননি। বাসাতেই আম্মুর কাছে তালিম নেন। আম্মু ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ এবং আল্লাহ্ওয়ালী মহিলা। তিনি উনার সন্তানকে তাওয়াক্কুল (আল্লাহ্ পাক উনার উপর পরিপূর্ণ ভরসা করা) শিক্ষা দিতে চাইলেন। উনার ছেলে মিষ্টি খেতে খুব পছন্দ করতেন। তাই তিনি একদিন ছেলেকে ডেকে আদর করে বললেন, বাবা, আপনি যদি নিয়মিত নামায কালাম আদায় করেন, যিকির ফিকির করেন, আপনার প্রতিদিনের সবক সম্পন্ন করেন, তাহলে আল্লাহ্ পাক আপনাকে প্রতিদিন মিষ্টি হাদিয়া করবেন। ছেলে খুব খুশি হয়ে সম্মতি প্রদান করলেন।
এরপর থেকে প্রতিদিন ছেলে যখন ইবাদতে মশগুল হন, তখন আম্মু চুপিচুপি কিছু মিষ্টি একটি পোঁটলায় রেখে তা তাকের উপরে রেখে দেন। ছেলে ইবাদত, পড়াশুনা শেষ করে ফিরলে তিনি ছেলেকে আদর করে বলেন, বাবা, আপনি কি আপনার সব সবক, নামায-কালাম আদায় করেছেন? ছেলে সম্মতি জানিয়ে বলেন, জী, আদায় করেছি। তখন আম্মু বলেন, ঐ তাকের উপর দেখুন, আল্লাহ্ পাক আপনার জন্য মিষ্টি হাদিয়া করেছেন। ছেলে মিষ্টি পেয়ে মহাখুশি হন।
.
একদিন আম্মু কোন কাজে খুব ব্যস্ত ছিলেন। ছেলের জন্য তাকের উপর মিষ্টি রাখার কথা আর উনার খেয়াল ছিল না। পরে যখন খেয়াল হল, তিনি ছেলেকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, বাবা আপনি কি আপনার প্রতিদিনের সবক আদায় করেছেন? ছেলে উত্তর দিলেন, জী করেছি। আম্মু আবার বললেন, আর মিষ্টি কি খেয়েছেন? ছেলে বললেন, জী মিষ্টিও খেয়েছি। উনার আম্মু খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি মিষ্টি পেয়েছেন কোথায়? ছেলে বললেন, প্রতিদিন যেখানে পাই, সেখানেই পেয়েছি। এবার আম্মু বুঝলেন, উনার শিক্ষাদান সার্থক হয়েছে। উনার ছেলে এটাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, নিয়মিত নামায কালাম, যিকির ফিকির, সবক আদায় করলে আল্লাহ্ পাক খুশি হয়ে মিষ্টি হাদিয়া করবেন। তাই আজ যখন আম্মু মিষ্টি রাখতে ভুলে গিয়েছেন, তখন আল্লাহ্ পাক তিনি নিজেই কুদরতিভাবে মিষ্টির ব্যবস্থা করেছেন। সুবহানআল্লাহ! এই ছোট্ট বালক তিনি পরবর্তীতে মহান আল্লাহ্ পাক উনার বিখ্যাত অলী হযরত খাজা বাবা ফরীদুদ্দীন মাসঊদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
.
নেককার, পরহেজগার সন্তান সবাই আশা করে। কিন্তু সন্তানকে দ্বীনদার, আল্লাহ্ওয়ালা, আল্লাহওয়ালী বানাতে চাইলে পিতামাতাকেও দ্বীনদার, আল্লাহ্ওয়ালা, আল্লাহওয়ালী হতে হয়। বিশেষ করে সন্তান মায়ের সোহবতে বেশী থাকে। তাই মায়ের তাছির সন্তানের উপর বেশী পরে। ফলে দেখা যায়, মা যদি আল্লাহওয়ালী হন তাহলে সন্তানও খুব সহজেই আল্লাহ্ওয়ালা, আল্লাহওয়ালী হয়ে যায়। তাই প্রত্যেক পিতামাতার উচিত নিজেরাও আল্লাহ্ওয়ালা, আল্লাহওয়ালী হবার কোশেশ করা এবং সন্তানকেও আল্লাহ্ওয়ালা, আল্লাহওয়ালী বানাবার কোশেশ করা। যেহেতু আল্লাহ্ পাক আদেশ মুবারক করেছেন, “তোমরা সকলেই আল্লাহ্ওয়ালা, আল্লাহওয়ালী হয়ে যাও।“ (সুরা ইমরান-৭৯)