মাস দুয়েক আগেই খবর এলো তার বিয়ের। বিয়ের কথাবার্তা যখন পাকা হচ্ছে আমি তখন পাত্রের লিস্টে অবাঞ্চিত থাকা সবে মাত্র ভার্সিটির ফোর্থ ইয়ারে উঠা এক ব্যাক বেঞ্চার। আবেগ দিয়ে প্রেমিকার ভালোবাসা জয় করা যায় , তার বাবা-মা'কে জয় করা যায়না। দেখতে দেখতে তার বিয়ের দিন চলে এলো। কাল তার বিয়ে। কথাটা মাথায় না আনতে সারাদিন খুব ব্যস্ত ছিলাম। টিউশনি থেকে বের হতে হতেই রাত হয়ে গেলো। মনে হচ্ছিল আজকের সন্ধ্যা থেকে রাতের গভীরতাটা অন্য দিনের তুলনায় অনেক বেশী। হয়তোবা ছোটবোনেরা মিলে তার হাতে মেহেদী লাগাচ্ছে। আমি হাটছি ফ্লাইওভারের নীচে রাস্তার এক পাশ ঘেষে। মনের মধ্যে এলেমেলো চিন্তা যেন যুদ্ধে লিপ্ত। বারবার এটা-ওটা মনে আসছে। রাত ১০টায় রাস্তা খালি থাকার কথা হলেও সেদিন মোটামুটি মানুষের জটলা। কিছুদুরে গিয়ে দেখলাম রাস্তায় তাজা রক্ত। দুর থেকেই দেখছিলাম একটা লাশ পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। হয়তোবা এক্সিডেন্টের কোন লাশ। জায়গাটিতে পৌছে কিছুক্ষন দাঁড়ালাম। মুখের সিগারেটটা শেষ টান দিয়ে ফেলে যখন নেভাতে যাবো তখন নীল কাভারের ছোট্ট ডায়েরীটা চোখে পড়লো। ডায়েরীটা পকেটে নিয়ে ফ্লাইওভারে উঠে গেলাম। মানুষের জটলায় হেটে শান্তি লাগছিল না। সে তুলনায় উপরে চুপচাপ। আশেপাশের ছুটে যাওয়া গাড়িগুলোর আমাকে নিয়ে তেমন কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। ডায়েরীটা পকেট থেকে বের করে পড়া শুরু করলাম উল্টো দিক থেকে। শেষ কয়েক পাতায় একটা বিচ্ছেদের গল্পের শেষ কিছুঅংশ। ঐ কয়েক পাতা পড়েই ডায়েরীর পাতা আর সামনে উল্টানোর আর সাহস করলাম না। আমি জানি সামনের দিকে গেলে বৃষ্টিতে ভিজে ফুচকা খাওয়ার গল্প থাকবে, রিকশার হুড তুলে হাত ধরে ঘুরে বেড়ানোর গল্প থাকবে, লিখা থাকবে প্রথম গিফট কিংবা প্রথম দেয়া ফুলের বিস্তারিত বর্ণনা। থাকতে পারে প্রেমের শুরু কিংবা তারও বহু আগে থেকে তাকে ঘিরে দেখতে থাকা স্বপ্ন আর লিখতে থাকা কবিতাগুলো। কিশোর বয়সের প্রথম চুম্বনের দিনক্ষন আর তারিখের কথাও ভোলার কথা না। ফ্লাইওভার থেকে নিচে তাকালে রক্তভেজা সেই জায়গাটুকু দেখা যাচ্ছে..বিয়েবাড়ির সানাইর কথা যতোটা না মাথায় বাজছে তার চেয়ে জোরে যেন কেউ বাজাচ্ছে "আত্মহত্যা মহাপাপ/পুরুষ হলে কাঁদা যাবেনা"
0
13