"গল্প শুনেছিলাম, বঙ্গবন্ধু একদিন স্বপ্নে দেখেছিলেন, তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটি কোরবাণী করার জন্য!!
শেখ মুজিব হাসতে হাসতে বলেছিলেন, 'আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ মোশতাক ।
কিন্তু ওকে তো কোরবানী করতে পারবো না,আমার বউ ওকে ভাই ডাকে!!
বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমানের মৃত্যুতে বঙ্গবন্ধুর চেয়ে বেশি কেঁদেছিলেন একজন, কবরে নেমে নিজের হাতে দাফন করেছিলেন লাশ । তার কান্না থামাতে আসতে হয়েছিল স্বয়ং বঙ্গবন্ধুকে!!
.
তার নাম খন্দকার মোশতাক আহমেদ!!
.
বঙ্গবন্ধু তনয়, শেখ কামালের বিয়ের উকিল বাপ ছিলেন এই মানুষটি । এতোটাই ভালোবাসতেন বঙ্গবন্ধুকে, তার মাথার উপরে বঙ্গবন্ধুর ছায়া বোঝানোর জন্য সোনা দিয়ে একটা বটবৃক্ষ তৈরি করে বঙ্গবন্ধুকে উপহার দিয়েছিলেন।
.
বঙ্গবন্ধু তার পুত্র-কন্যাদের বলেছিলেন, যদি কখনো তার কিছু হয়ে যায়, মোশতাক কাকুর কাছে চলে যেতে । এতোটাই নির্ভরতা ছিলো তার উপরে, এতোখানি বিশ্বাস ছিলো তার প্রতি।
.
১৪ আগস্ট, ১৯৭৫ সালে, যে রাতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বাঙালির জাতির পিতাকে, নিজ হাতে হাঁসের মাংস রান্না করে বঙ্গবন্ধুকে খাইয়েছিলেন এই খন্দকার মোশতাক । যিনি ২রা আগষ্ট থেকেই জানতেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পুরো পরিকল্পনা।
.
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে হত্যাকারীরা যায় খন্দকার মোশতাকের বাসায় । নতুন জামা পরে, গোসল সেরে তিনি বঙ্গভবনে আসেন ক্ষমতা দখলের জন্য।
.
১৫ আগস্ট সকাল ১১ঃ৪৫ মিনিটে নতুন সরকার প্রধান হিসেবে খন্দকার মোশতাক বেতারে ভাষণ দিলেন । তিনি আবেগমন্থিত গলায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের "সূর্যসন্তান" আখ্যা দিলেন । বঙ্গবন্ধুর মৃতদেহ তখনো নিথর পড়ে আছে ৩২ নাম্বারের বাড়িটিতে।
.
রাষ্ট্রপতির দ্বায়িত্ব নেবার পর তিনি ইনডেমিনিটি বিল পাশ করেন। তিনি "জয় বাংলা" স্লোগান পরিবর্তন করে এর স্থলে "বাংলাদেশ জিন্দাবাদ" স্লোগান চালু করেন।
.
খন্দকার মোশতাকের প্রত্যক্ষ নির্দেশে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে বিনা বিচারে হত্যা করা হয় তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে।
.
মোশতাকের কোন বিচার হয়নি, মোশতাকদের কোন বিচার হয়না কখনো।
.
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হাজার বছরে একজনই জন্মায়। কিন্তু পথকুকুরের মত, মোশতাকেরা বারবার ফিরে আসে । তাদের বংশবৃদ্ধি ঘটে। বারবার জন্মায় মোশতাকের দল, নানা সময়ে, নানা চরিত্রে। একজন মুজিব আসেনা।
.
আজ আমি আমার চারপাশে শুধু মোশতাকদের দেখি। বঙ্গবন্ধুর প্রয়াণ দিবসে তারা বিরিয়ানীর প্যাকেট নিয়ে মারামারি করে, কার চেয়ে কার শোক বেশি সেটা প্রমাণ করতে টক শো গরম করে ফেলে। বিবৃতি আর কলামে ভরে যায় সংবাদপত্রগুলো,স্ট্যাটাসে শেয়ারে ছেয়ে যায় ফেসবুক। সড়ক ছেয়ে যায় তাদের শোকের পোস্টারে, ব্যানারে তাদের হাসি হাসি অসৎ মুখগুলো শেখ মুজিবের পাশে খুবই বেমানান লাগে । তাদের চোখের জলে ভিজে যায় সদ্যকেনা মুজিব কোট, গলা জড়িয়ে আসে কথা বলতে বলতে, টিভি উপস্থাপিকাও তাদের আবেগ দেখে সাবধানে চোখের কোণ মুছে নেন।
.
তোমাদের এই বিরিয়ানী আমার গলা দিয়ে নামতে চায়না।
.
হয়তো আমি তোমাদের মত শোকার্ত হতে পারিনি।আমার শুধু মনে হয়, একজন মানুষ যিনি তার পুরোটা যৌবন কাটিয়েছেন কারাগারে, জীবনের অনিশ্চয়তায় , শুধুমাত্র বাংলার গণমানুষের মুক্তির জন্য,তাদের বাকস্বাধীনতা প্রকাশের জন্য, তাদের দুইবেলা অন্নের নিশ্চয়তার জন্য, তাদের গণতন্ত্রের আস্বাদ দেবার জন্য – তার প্রয়াণদিবসে কালো ব্যাজ পড়ে, মাইক টানিয়ে, টেবিল চাপড়ে, ফেসবুক উপড়ে, বিরিয়ানীর গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে শোক প্রকাশ আমার সাজে না।
.
আজ আমি এমন কোন নেতা দেখিনা, যার জন্য একটি জাতির সব মানুষ হাসতে হাসতে জীবন দিতে প্রস্তুত। এমন কোন নেতা দেখিনা, যিনি সাধারণ মানুষের দুঃখে কাঁদেন, তাদের মুক্তির জন্য রাজপথে নামেন, তাদের দাবী আদায়ের জন্য হাসিমুখে কারাবরণ করেন । এমন কোন নেতা দেখিনা, যার তর্জনীর ইশারায় জন্ম হয় স্বাধীন একটি দেশের । যাকে ভালোবেসে মানুষ বঙ্গবন্ধু নামে ডাকতো!!
আমি আমার চারপাশে শুধু মোশতাক দেখি , শত শত মোশতাক, হাজার হাজার মোশতাক, লক্ষ লক্ষ মোশতাক!!
আজ বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে হয়তো একটি করে খন্দকার মোশতাক পাবেন কিন্তু সারা বিশ্ব খুঁজলেও একটি শেখ মুজিবকে পাবেন না।
আমি আর কোথাও একটি মুজিব দেখিনা!
মুজিবরা পৃথিবীতে বারবার আসে না, একবারই আসে কিন্তু মোশতাকরা পৃথিবীতে আজীবনই থাকে।
কবে পাবো মোশতাকবিহীন একটি বাংলাদেশ? যে দেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন বঙ্গবন্ধু!"