Coronavirus
বোঝা গেল যে শ্রেণীবিন্যাস বা ট্যাক্সনমি অনুযায়ী ভাইরাসটি “নিডোভাইরেল্স” অর্ডার অন্তর্ভুক্ত। ভাইরাসটির জেনেটিক উপাদান “আর.এন্.এ.” বা “রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড” হলেও আমাদের বহু পরিচিত আর.এন্.এ. ভাইরাসগুলির (যেমন : এইচ্.আই.ভি. বা হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস) মত এটি নিজের “আর.এন্.এ.” কে “ডি.এন্.এ.” বা “ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড”-এ পরিবর্তিত করে মানুষের কোষের “ডি.এন্.এ.”-তে তা মিশিয়ে দেয় না। বরং, এই ভাইরাস মানুষের কোষে প্রবেশ করার পর মানবকোষের নিজস্ব “বার্তাবহ আর.এন্.এ.”(মেসেঞ্জার আর.এন্.এ.)-কে নিষ্ক্রিয় করে দিয়ে নিজের “আর.এন্.এ.” কে মানবকোষের “বার্তাবহ আর.এন্.এ.”-র ভূমিকায় লাগিয়ে দেয়। আর মানবকোষের “রাইবোজোম” অঙ্গাণুটি কিছু টের না পেয়ে ভাইরাসের সেই “বার্তাবহ আর.এন্.এ.”-র নিউক্লিয়টাইড ক্রমকে অনুসরণ করেই দুই প্রকার পলিপ্রোটিন (পলিপ্রোটিন অণু হলো অনেকগুলি অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের প্রোটিন অণু একে অপরের সাথে সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তৈরি হওয়া একটি দীর্ঘ শৃঙ্খলের মত অণু) তৈরি করে ফেলে। এদের মধ্যে একপ্রকার পলিপ্রোটিন ভেঙে গিয়ে যে ষোলো প্রকার “ননস্ট্রাক্চারাল প্রোটিন”(যে প্রোটিন কোষের গঠন নয় বরং কোষের কার্যকারিতায় সাহায্য করে) তৈরি হয় তাদের মধ্যে কিছু প্রোটিন এমন আছে যারা ভাইরাসটির “আর.এন্.এ.”কে অনুকরণ করে “ট্রান্সক্রিপ্শন্”(ভাইরাসটির “আর.এন্.এ.”-তে নিউক্লিয়টাইডগুলি ঠিক কি ক্রমে আছে তা কপি করে নেওয়ার প্রক্রিয়া হলো ট্রান্সক্রিপ্শন্) ও “রেপ্লিকেশন্”(কপি করে নেওয়া নিউক্লিয়টাইড ক্রম অনুযায়ী নতুন “আর.এন্.এ.” তৈরি করার প্রক্রিয়াকে রেপ্লিকেশন্ বলে) প্রক্রিয়ায় আরও অনেক ভাইরাস জন্ম দেওয়ার জন্য দরকারি অনেকগুলি “আর.এন্.এ.” হুবহু তৈরি করে দেয় – অর্থাৎ অবলীলাক্রমে ভাইরাসটি মানুষের কোষের মধ্যেই নিজের বংশবিস্তারের পথটা সুপ্রশস্ত করে নেয়।
এই ভাইরাসের প্রকোপে মানুষের হওয়া নতুন ছোঁয়াচে রোগটির নাম দেওয়া হলো – “কোরোনা ভাইরাস ডিজিজ – ২০১৯” বা “কোভিড – ১৯” যা পৃথিবী জুড়ে মৃত্যুর তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে, পৃথিবীর অর্থনীতি ঠেকেছে তলানিতে। যে চার প্রকার প্রোটিন নিয়ে ভাইরাস কণাটি তৈরি হয়েছে, তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো “স্পাইক প্রোটিন”। একে “স্পাইক প্রোটিন” বলার কারণ হলো এই প্রোটিন ভাইরাস কণাটির সারা গায়ে “স্পাইক” বা “কাঁটা”-র মত অজস্র উপাংশ তৈরি করে যাদের মাইক্রোস্কোপে দেখতে লাগে ঠিক যেন “উজ্জ্বল সূর্যকে ঘিরে থাকা আভা” বা “সোলার কোরোনা”।এই দৃশ্য বিজ্ঞানীদের নিশ্চিত করে দিয়েছিল যে ভাইরাসটি “কোরোনাভিরিডে” ফ্যামিলি-র একজন। এই প্রথম মানবসভ্যতার গোচরে আসায় ভাইরাসটির নাম দেওয়া হয়েছিল “নভেল কোরোনা ভাইরাস” বা “নতুন জাতের কোরোনা ভাইরাস”। তবে “সার্স কভ্” ভাইরাসের “আর.এন্.এ.”-র নিউক্লিয়টাইড সিকোয়েন্স বা ক্রমের সাথে এই ভাইরাসের সত্তর শতাংশ সাদৃশ্য থাকায় এবং “সার্স কভ্” ভাইরাস যে সকল হোস্ট বা বাহককে (যেমন মানুষ) সংক্রমিত করে ঐ একই হোস্ট বা বাহকগুলিকে এই ভাইরাসের সংক্রমিত করার পদ্ধতি তুলনা করে পরে এই ভাইরাসের নাম দেওয়া হয় – “সার্স-কভ্ – ২” বা “সিভিয়র্ অ্যাকিউট্ রেস্পিরেটরি সিন্ড্রোম কোরোনাভাইরাস – ২”। ভাইরাসদের শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী এই ভাইরাসটি যে ফ্যামিলি-র অর্ন্তভুক্ত অর্থাৎ “কোরোনাভিরিডে” ফ্যামিলি, তার অর্ন্তগত চারটি জিনাস্ হলো – “আলফা কোরোনাভাইরাস”, “বিটা কোরোনাভাইরাস”, “গামা কোরোনাভাইরাস” ও “ডেল্টা কোরোনাভাইরাস”। এই ভাইরাসের “আইডেন্টিটি কার্ড”-এ জিনাস্ হিসাবে “বিটা কোরোনাভাইরাস”-কে চিহ্ণিত করা হয়েছে। এছাড়াও এর সাবজিনাস্ হলো “সার্বিকোভাইরাস” ও স্পিসিস্ হলো “সিভিয়র্ অ্যাকিউট্ রেস্পিরেটরি সিন্ড্রোম রিলেটেড্ কোরোনাভাইরাস”।