মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র ৫ দিন বাকি। শেষ সময়ের প্রচারণায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে দুই প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেনের। সর্বশক্তি দিয়ে চলছে প্রতিদ্বন্দ্বী ঘাঁটি দখল লড়াই।
২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে ভোট দেয়া ডেমোক্র্যাট রাজ্যগুলোতে দিন-রাত এক করে ফেলছেন ট্রাম্প। একই অস্ত্রে রণক্ষেত্রে বাইডেনও।
শেষ মুহূর্তের শেষ চেষ্টা হিসেবে ঝুলন্ত কিন্তু রিপাবলিকানপ্রবণ রাজ্যগুলোতে জোর প্রচার চালাচ্ছেন। একইসঙ্গে পুরোপুরি ঝুলন্ত রাজ্যগুলোতেও চষে বেড়াচ্ছেন দুই প্রার্থী। সবচেয়ে বেশি প্রচার চালাচ্ছেন ট্রাম্প।
নির্বাচনের এ টগবগে সময়ে দিনে অন্তত ২-৩টা রাজ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অন্যদিকে প্রচারণায় ট্রাম্পের তুলনায় কম গেলেও ঝুলন্ত রাজ্যে ও রিপাবলিকান অধ্যুষিত রাজ্যগুলোতেই প্রচার চালাচ্ছেন বাইডেন। বিবিসি।
শেষ ধাপের প্রচারণায় যেন আরও আক্রমণাত্মক, আরও মারমুখী হয়ে উঠছেন দুই প্রার্থী। দুই প্রার্থীর বক্তব্যের প্রায় প্রতিটি শব্দেই তার প্রমাণ পাচ্ছেন ভোটাররা।
মঙ্গলবার প্রথাগত রিপাবলিকান, কিন্তু ঝুলন্ত রাজ্য জর্জিয়ার এক প্রচারণায় বাইডেন বলেন, ট্রাম্প যেভাবে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করেছেন তা অনেকটা নির্বোধের মতো আত্মসমর্পণ।
অন্যদিকে ঝুলন্ত রাজ্য মিশিগানে প্রচারণায় ট্রাম্প সেখানকার ভোটারদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এটা আপনাদের অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকার প্রশ্ন। বাইডেন জিতলে ধসে পড়বে অর্থনীতি।
শেষ সময়ে এসে কৌশলেও পরিবর্তন এনেছেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। ট্রাম্প চেষ্টা করছেন ২০১৬ সালে জয়ী হওয়া ঝুলন্ত ও ডেমোক্র্যাটিক অধ্যুষিত রাজ্যগুলোতে জয় ধরে রাখতে।
অন্যদিকে বাইডেন চেষ্টা করছেন ঝুলন্ত কিন্তু রিপাবলিকান সমর্থনপ্রবণ রাজ্যগুলোতে নিজের পক্ষে জোয়ার তুলতে। জনমত জরিপগুলোতেও ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন বাইডেন।
তবে ব্যাটলগ্রাউন্ড বা ঝুলন্ত রাজ্য আরিজোনা, ফ্লোরিডা ও নর্থ ক্যারোলিনাতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস স্পষ্ট।
২০১৬ সালে জয় নিশ্চিত করতে ডেমোক্র্যাটিক দুটি রাজ্য- মিশিগান ও উইসকনসিন ছিনিয়ে নেন ট্রাম্প। এবারও সেগুলোতে নিজের জয় নিশ্চিত করতে উঠেপড়ে লেগেছেন প্রেসিডেন্ট।
মিশিগানের রাজধানী লানসিংয়ে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার প্রচারণায় ট্রাম্প বলেন, ‘এ নির্বাচন হচ্ছে মিশিগানের অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকার বিষয়।’
উচ্চশিক্ষিত নারীদের লক্ষ্য করে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনাদের স্বামীরা চাকরিতে ফিরতে চান। তাই তো? আমরা আপনাদের স্বামীদের কাজে ফেরানোর ব্যবস্থা করছি।’
শেষ মুহূর্তে এসেও ডেমোক্র্যাট সমর্থিত ডাক ভোটের সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস থেকে প্রচারণায় বের হওয়ার সময় তিনি প্রায়ই বলেন, ‘খুবই যুক্তিসঙ্গত হবে ৩ নভেম্বরই জয়ী ঘোষণা করে ফেলা। বিপরীতে দুই সপ্তাহ ব্যালট গণনা করা কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত হবে না।’
এদিকে প্রথমবারের মতো প্রচারণায় এসে এক বক্তব্যে জো বাইডেনকে সমাজবাদী বলে ব্যঙ্গ করেছেন ফার্স্টলেডি মেলানিয়া। মঙ্গলবার পেনসিলভানিয়ার ওই প্রচারণায় তিনি বলেন, বাইডেনের ৩৬ বছরের কংগ্রেস রেকর্ড ও ৮ বছরের ভাইস প্রেসিডেন্ট রেকর্ড দেখলে মানুষ বুঝতে পারবে তাদের চাহিদা পূরণ করতে তিনি সক্ষম কিনা?
একই দিনে জর্জিয়ার ওয়ার্ম স্প্রিংয়ে প্রচারণায় বাইডেন শপথ করে বলেন, তিনি এমন প্রেসিডেন্ট হবেন যিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বিভক্ত করবেন না, ঐক্যবদ্ধ করবেন। তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে নেয়ার প্রেসিডেন্ট।
১৯৯২ সালের পর থেকে জর্জিয়ায় জয়ী হননি কোনো ডেমোক্র্যাট প্রার্থী। এবার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যটিতে ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
ট্রাম্পের সমালোচনা করে বাইডেন বলেন, তিনি আমাদের ভয় নিয়ে খেলছেন, আমাদের বাজে পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন। বাইডেনের রানিং মেট কমলা হ্যারিসও রিপাবলিকান রাজ্যগুলোতে যাচ্ছেন।
১৯৯৪ সালের পর রাজ্য পর্যায়েও কোনো ডেমোক্র্যাট জয়ী না হওয়া রাজ্য আরিজোনা ও টেক্সাসে যাবেন তিনি। মিশিগান, উইনকনসিন ও ফ্লোরিডাতে যাবেন বাইডেন।
ফ্লোরিডায় নিজের ভাইস প্রেসিডেন্টের পক্ষে মঙ্গলবার প্রচারণা চালিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি ডেমোক্র্যাট ভোটারদের বলেছেন, ভোটের দিন অলস হওয়া যাবে না। সময়মতো গিয়ে ভোট দিতে হবে।