ভূমিকা :
দুর্নীতি বাংলাদেশের অন্যতম মারাত্মক সামাজিক সমস্যা। কারণ দুর্নীতি আজ এক শ্রেণির মানুষের প্রধান নীতিতে পরিণত হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সর্বস্তরের দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ে। দুর্নীতির ফলে জাতীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অগ্রগতির চাকা পিছন দিকে মোড় নিচ্ছে। আমাদের এই সামাজিক ব্যাধি দূর করতে হবে। দেশকে দুর্নীতি থেকে মুক্ত করে কাঙ্ক্ষিত মুক্তি অর্জন করতে হবে।
দুর্নীতির সর্বব্যাপী রূপ :
এটি দুঃখ ও লজ্জার বিষয়, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতে, বাংলাদেশ পর পর পাঁচবার বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হিসাবে স্থান পেয়েছে। দুর্নীতি সর্বস্তরে সর্বত্র বিস্তৃত। কোনও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অজান্তেই হস্তান্তর করা, সরকারী সম্পত্তির অবৈধ দখল, দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণ টিন, খাদ্য, পোশাক ইত্যাদি আত্মসাৎ, বিদ্যুৎ, জল, গ্যাস চুরি, আয়কর ফাঁকি , ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া, চাকরি খোলার সংস্থাগুলি, চোরাচালান, কালোবাজারি, শেয়ারবাজার জালিয়াতি, আসল অপরাধের জন্য থানায় মামলা না নেওয়া, কোথায় দুর্নীতি নেই ??
এমনকি অভাবগ্রস্থদের জন্য গম বরাদ্দ, অনাথদের বসার ব্যবস্থা, ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ওয়েভ টিন এবং দাতব্য সহায়তায় দুর্নীতি হয়েছে। উন্নয়নের নামে দরপত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, যোগাযোগ এমনকি বিচার বিভাগেও দুর্নীতি চলাচল করছে। প্রচুর দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষ আজ হারিয়ে গেছে। মানুষ আজ ন্যায়বিচারের মূল্যবোধ এবং নীতিগুলির প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে।
যে দেশের মানুষ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে তারা দুর্নীতির দ্বারা কখনই পরাজিত হতে পারে না। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন বাংলাদেশের দুর্নীতির ভয়াবহতায় জর্জরিত। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, প্রশাসন, বিচার বিভাগ সবই সর্বগ্রাসী দুর্নীতির দ্বারা দুর্নীতিগ্রস্থ হয়েছে। চাঁদাবাজাকে জাতীয়করণ করা হয়েছে, বিডিং, চাঁদাবাজি ইত্যাদির মাধ্যমে দুর্নীতি সন্ত্রাসীর চরিত্রটিকে গ্রহণ করেছে।
দুর্নীতি উন্নয়নের অন্তরায় :
দুর্নীতিই বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান বাধা। সাধারণ মানুষের শ্রমে অর্জিত সাফল্য দুর্নীতি দ্বারা কলুষিত হয়। দেশটি প্রেমহীন নেতা ও দলীয় ব্যবস্থায় বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, যা প্রত্যাশিত বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করছে, দেশের মূল্যবান সম্পদ লুটপাট হচ্ছে, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে, দুর্দশা ও দারিদ্র্য দূরীকরণ থেকে দূরে জনগণ, ভূমিহীন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সৃষ্টি বিশাল সম্পদের বৈষম্য। সম্প্রতি বিভিন্ন সংস্থা ও দাতারা দুর্নীতিকে বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে একটি বড় বাধা হিসাবে চিহ্নিত করেছে।
দুর্নীতি রোধ করতে কী করবেন :
আমরা জানি যে সন্ত্রাসবাদ, কালো টাকা, রাজনৈতিক অসদাচরণ দুর্নীতির এক ভয়াবহ সুযোগ দিয়েছে। ফলস্বরূপ, সাধারণ মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় সংস্থা এবং পরিষেবা সরবরাহকারীরা ইতিমধ্যে দুর্নীতির কবলে পড়েছে। আমাদের অবশ্যই এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
আমাদের বুঝতে হবে যে আমরা অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন দেশকে তার পতনের দিকে ঠেলে দিতে পারি না। যেহেতু রাজনীতি এবং অর্থনীতি একটি দেশের উন্নয়নের প্রধান চালক, তাই নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক দুর্নীতি প্রতিরোধকে প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে। রাজ্য প্রশাসন ও বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিস্তার যেহেতু রাজনৈতিক দুর্বলতার পথ প্রশস্ত করেছে, তাই দেশের বৃহত্তর স্বার্থে নৈতিকভাবে উন্নত লোকদের সংস্কার ও নিয়োগ করা দরকার।
স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা সব ক্ষেত্রে সরবরাহ করতে হবে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করুন। আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তি সমাজ এবং রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, জননেত্রীকে অবশ্যই নির্বাচিত হতে হবে। দুর্নীতি দমন আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষকেই জড়িত থাকতে হবে। দুর্নীতি অবশ্যই সমাজের সকল মানুষের ঘৃণা জাগাতে পারে। তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করা দরকার। এই আন্দোলনের স্লোগান হতে পারে: দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করুন, দেশকে দুর্নীতির হাত থেকে রক্ষা করুন, এখন সময় এসেছে দুর্নীতিবাজদের থামানোর।
উপসংহার :
দুর্নীতি দূরীকরণে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। সৎ, নিঃস্বার্থ, দেশপ্রেমিক মানুষদের এই কাজে যুক্ত হতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আজ সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। মিডিয়া, এনজিও, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। কালো টাকার মালিক এবং রাজনৈতিক দুষ্টামি অবশ্যই অবরুদ্ধ করতে হবে। দুর্নীতি রোধ ও উন্নয়ন অর্জনে সুশাসনের বিকল্প নেই।