মানুষের চাপা দুঃখগুলো মধ্যরাতেই প্রকাশ পায়। মানুশ যতই ‘আমি ভালো আছি’ এর মুখোশ পরে থাকুক না কেনো, মধ্যরাতে সেটা প্রকাশ পেতে বাধ্য।ছেলেরা হয়তো কাঁদতে জানে না। তারা জানে না কীভাবে কাঁদতে হয়। তাদের ছোটথেকেই আসলে শেখানো হয়না। তাই তো শুধু চোখ ঝাপসা হওয়া অব্দিই সীমাবদ্ধ তারা। আর খুব বেশি কষ্ট হলে? হয়তো মনের অজান্তেই দু’এক ফোঁটা জল। অবশ্য সেটা দৃষ্টিগোচর হয়না; নিজের কাছেও না।
খুব ঘুম পাচ্ছিলো অণির্বানের। ফোনে ফেলুদার অডিও স্টোরি না শুনলে ঘুমটা ঠিক আসেনা। পেলেও শান্তির হয়না। অডিও প্লে করে ঘুমনোর চেষ্টা করলো অণির্বান। কিন্তু ঘুম কি আর ফেলুদা এনে দিতে পারে? মনে যে তার চাপা বেদনা। আজ হঠাৎই তার নন্দিনীর কথা মনে পড়লো। প্রায় দেড় বছর পর।না, তাকে নিয়ে সে ভাবেনি, তার কথা কারো কাছে শোনেনি।তবুও একরকম আচমকাই। স্থির হয়ে শুয়ে থাকতে পারছিলো না সে। দেড় বছর আগের সব স্মৃতি সিনেমার মতো চলতে থাকলো তার মাথায়। কি যেন মনে হলো, তার ব্লক করা আইডি আনব্লক করলো সে। কতদিন দেখেনি তাকে, শোনেনি তার আওয়াজ। তার আইডি স্ক্রোল করতে করতে একটা ভিডিওতে তার আওয়াজ শুনতে পেলো। অণির্বান চোখ বুজলো। মন ভরে শুনতে লাগলো তার জীবনের প্রথম প্রেমিকার আওয়াজ। সবকিছু কেমন যেন থেমে গেলো। তার কানে শুধু ওর কণ্ঠই বাজছে। সে নিজেকে শান্ত করতে পারলো না। একে একে তার সব ছবি দেখলো। মন ভরে। তার খুব ইচ্ছে করলো তাকে একটা মেসেজ দেয়ার। কেমন আছে সে? এখনো কি ইনসমনিয়াটা যায়নি তার? আচ্ছা, রাতে যখন ঘুমোতে যায় আমাকে তার মনে পরে? মনে পরে আমার সেই প্রথম স্পর্শ? পরে না বোধ হয়।তবে অণির্বানের পরছে কেনো? সে তো আজ অন্য কারো।অন্যতেই সে সুখী। তবে অণির্বান কেনো? অণির্বানও ক’দিন আগে অন্যকারো ছিলো।এখন নেই। সে তার মধ্যে হারানো সেই নন্দিনীকে খুঁজতো। কিন্তু নন্দিনী তো নন্দিনীই, তাই না?
সে তার ফোন তন্ন তন্ন করে খুঁজলো ওর নম্বর। পেলো না। কিন্তু তার এমন কেন মনে হচ্ছে! সে তো অণির্বানকে ছেড়ে চলে গেছে।তবুও কেনো তার এরকম হচ্ছে? উত্তর খুঁজে পেলো না অণির্বান। তার খুব বলতে ইচ্ছে হয়, “ জানো, বড্ড মনে পরে তোমায়। মনে পরে তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত। মনে পরে আমাদের একসাথে হেঁটে হেঁটে আজগুবি গল্পগুলি। মনে পরে তোমার সবকিছু। খুউব মনে পড়ে”। কিন্তু কি করবে সে? ঘৃণাটা যে কম জন্মায়নি। তার দেয়া প্রতিটি কষ্ট,অপমান আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে তাকে; কিন্তু ভালোবেসে।
মানুষের মন বড্ড অদ্ভুত। বারবার তার কাছেই যায়, যে তাকে সবথেকে বেশি কষ্ট দেয়।আমাদের সকলেই মধ্যেই এই একটা করে অণির্বান থাকে। আমরা শুধু পালিয়ে বেড়াই সেখান থেকে। নিজের কাছ থেকে পালিয়ে আর কতই বা দূরে যাওয়া সম্ভব?
কিন্তু এই মনবদল শুধু এই দু’এক রাতের জন্যই। কাটলো না হয় এক নির্ঘুম রাত; তার, শুধুই তার ভালোবাসার জন্য!
ইতি-
অণির্বানের লুকানো ভালোবাসা
+ভোর ৫টা ৩২ মিনিট